সৈয়দ আব্দুল হাদীর জন্মদিনে গানে গানে তরুণ শিল্পীদের শ্রদ্ধা
Published: 1st, July 2025 GMT
‘সূর্যোদয়ে তুমি’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো’, ‘একবার যদি কেউ’, ‘যেও না সাথী’, ‘চোখের নজর এমনি কইরা’, ‘আমি তোমারই প্রেম ভিখারি’, ‘আছেন আমার মোক্তার’, ‘তেল গেল ফুরাইয়া’, ‘তোমরা কাউকে বলো না’, ‘এমনও তো প্রেম হয়’-সহ অসংখ্য কালজয়ী গানের শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদীর জন্মদিন আজ।
যদিও এ মুহূর্তে তিনি দেশের বাইরে অবস্থান করেছেন, তারপরও দেশবরেণ্য এই শিল্পীর ৮৫তম জন্মদিন আলাদাভাবে উদযাপনের উদ্যোগ নিয়েছে চ্যানেল আই। আজ সকাল ৭টায় সংবাদের পর প্রচার করতে যাচ্ছে সৈয়দ আব্দুল হাদীর সাড়া জাগানো কিছু গান নিয়ে সাজানো ‘গান দিয়ে শুরু’ অনুষ্ঠানের বিশেষ পর্ব। সরাসরি সম্প্রচারিত এ অনুষ্ঠানে সৈয়দ আব্দুল হাদীকে গানে গানে শ্রদ্ধা জানাবে এ প্রজন্মের তিন তরুণ শিল্পী মহারাজা, আলাউদ্দিন ও শানু। এ ছাড়াও থাকছে সৈয়দ আব্দুল হাদীকে নিয়ে নির্মিত একটি তথ্যচিত্র।
১৯৪০ সালের এই দিনে জন্ম নেওয়া সৈয়দ আব্দুল হাদী হতে চেয়েছিলেন একজন শিক্ষক। কিন্তু জীবনের গতিপথ বদলে গেছে গানের ভুবনে পা রাখার পর। কখনও ভাবতে পারেননি, শখের বশে গান গাইতে গিয়ে কণ্ঠশিল্পী পরিচিতি ও প্রতিষ্ঠা পেয়ে যাবেন। তাঁর অনিন্দ্য সুন্দর কণ্ঠ আর অনবদ্য গায়কি যখন শ্রোতাদের হৃদয় জয় করে নেওয়া শুরু করে, তখন আর চলার পথ বদলে ফেলার সুযোগ পাননি। ততদিন নিজেও সংগীতের প্রেমে ডুবে গিয়েছিলেন। অনুভব করেছিলেন, শিল্পী হিসেবে শ্রোতাদের প্রতি তাঁর এক ধরনের দায়বদ্ধতা তৈরি হয়েছে। সে কারণে নিরলস গান করে যাচ্ছেন তিনি। নিজের আত্মজীবনীতেও এ কথা অকপটে স্বীকার করেছেন তিনি।
একুশে পদক ও পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত সৈয়দ আব্দুল হাদী। তিনি শিল্পী হিসেবে শুধু গান গেয়ে যাওয়া নয়, সংগীত ভুবনে নতুন কিছু তুলে ধরা এবং নতুন প্রজন্মকে গড়ে তোলার বিষয়েও বিভিন্ন সময় নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন।
‘গানে গানে দেশে দেশে’ ও ‘স্মৃতিময় গানগুলো’ টিভি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্বের গানগুলোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন শ্রোতা ও তরুণ শিল্পীদের। আরও আগে বিটিভির প্রযোজক হিসেবে ভিন্নধর্মী আয়োজনের পাশাপাশি সম্ভাবনাময় শিল্পীদের পরিচিত করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
এ নিয়ে সমকালকে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘সবার জীবনে একটা সময় আসে, যখন নিজের পরিবর্তে আগামী প্রজন্মকে নিয়ে ভাবতে হয়। আমি কতটুকু কী দিতে পেরেছি, আরও কিছু দেওয়ার আছে কিনা– সেই ভাবনার চেয়ে বড় হয়ে উঠে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কী করা উচিত। সেই ভাবনা থেকেই ‘গানে গানে দেশে দেশে’, ‘স্মৃতিময় গানগুলো’সহ আরও কিছু অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্মের কাছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এবং আমাদের কালজয়ী গানগুলোর পরিচিতি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। নতুন আয়োজনেও উৎস জুগিয়েছি নানাভাবে।’
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘সময়ের সঙ্গে শ্রোতার চাহিদা বদলে যায়। এজন্য শিল্পী থেকে শুরু করে গীতিকার, সুরকার, সংগীতায়োজক’ সবাই সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নতুন কিছু করার চেষ্টা করেন। এই চেষ্টা থেকেই তো বিবর্তন। আমরাও চেষ্টা করছি, গানের কথা, সুর সংগীত এবং গায়কিতে সময়কে ধরে রাখার। একটা বিষয় সবসময় মাথায় রেখেছি, তা হলো গানে মেলোডি ধরে রাখা। কারণ, মেলোডি সুরের গানের চাহিদা কখনও ম্লান হয়নি।’ তার এই কথায় স্পষ্ট, দেশীয় সংগীতের সমৃদ্ধিতে নিরলস কাজ করে যেতে চান তিনি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন প রজন ম কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
সদ্য জন্ম দেওয়া সন্তানসহ ক্লিনিকে এইচএসসি পরীক্ষা দিলেন শিক্ষার্থ
অদম্য ইচ্ছাশক্তির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন শরীয়তপুর সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগের একজন এইচএসসি পরীক্ষার্থী। সন্তান জন্মের দুই দিন পর রবিবার (২৯ জুন) ক্লিনিকেই এইচএসসি’র দ্বিতীয় পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তিনি।
শিক্ষার্থীর পরিবার জানায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার তুলাশার গ্রামের ইশা আলম নামে এই শিক্ষার্থীর বিয়ে হয় গত বছরের ২৮ জুন। তার বাবার নাম মো. শাহআলম সিকদার। স্বামী একই উপজেলার কাশাভোগ এলাকার মুজিবুর রহমানের ছেলে মাহবুবুর রহমান তুষার ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
সন্তানসম্ভবা অবস্থায় চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলেন ইশা। গত বৃহস্পতিবার বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা দিয়েছিলেন ইশা। শুক্রবার (২৭ জুন) রাতে প্রসব বেদনা শুরু হলে তাকে শরীয়তপুর সদর উপজেলার নিপুণ ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ওই রাতেই সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। এরপর রবিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ছিল তার বাংলা ২য় পত্র পরীক্ষা।
ইশার পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল সরকারি গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজে। তবে শারীরিক অবস্থার কারণে কলেজের শিক্ষক মো. মাসুম মিয়ার পরামর্শে কলেজ অধ্যক্ষের কাছে ক্লিনিকেই পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। অধ্যক্ষের অনুমতি পাওয়ার পর রবিবার সকালে একজন মহিলা শিক্ষক ও একজন মহিলা পুলিশ উপস্থিত থেকে নিপুণ ক্লিনিকের বিছানাতেই পরীক্ষার আয়োজন করা হয়।
ইশা আলম বলেন, ‘‘আমি আইন পড়তে চাই, বিচারক হয়ে নিপীড়িত নারীদের পাশে দাঁড়াতে চাই। সন্তান জন্মের পরও পরীক্ষা দিতে পেরে আমি আনন্দিত। আল্লাহ, শিক্ষক, পরিবার, সহকর্মী ও চিকিৎসকদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘গর্ভকালীন সময়েই পরীক্ষার সময় চলে আসে। তবে আমি মনোবল হারাইনি। পরিবারের উৎসাহ ও সহযোগিতায় এই অবস্থাতেও পরীক্ষায় বসার সিদ্ধান্ত নেই। আমি বিশ্বাস করি, মনোবল ধরে রাখলে প্রত্যেক মেয়েই নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।’’
ইশার মা সুহাদা বেগম বলেন, ‘‘মেয়ের এমন সাহস আর মনোবল দেখে গর্বিত। এমন অবস্থায়ও যে সে পরীক্ষা দেবে, তা কখনও ভাবিনি। সবাই দোয়া করবেন আমার মেয়ে ও নাতনির জন্য।’’
ইশার স্বামী তুষার বলেন, ‘‘ইশা সবসময় পড়াশোনার বিষয়ে আমাকে পাশে থাকতে বলেছে, আমি চেষ্টা করেছি সাপোর্ট দিতে। কিন্তু সন্তান জন্মের পরপরই পরীক্ষা দেবে তা কখনও ভাবিনি। পরে আমি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের কাছে লিখিতভাবে বিষয়টি জানাই। এরপরেই স্যারসহ সকলে ওকে সহযোগিতা করেছেন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। আল্লাহ ওদের সুস্থ রাখুক।’’
ক্লিনিকের গাইনি বিশেষজ্ঞ ও কনসালট্যান্ট ডা. হোসনে আরা বেগম রোজী বলেন, ‘‘২৭ জুন রাতে প্রসববেদনা নিয়ে ইশা আমাদের কাছে এসেছিলেন। তার প্রবল ইচ্ছে ছিল পরীক্ষা দেওয়ার। তার মনের শক্তির কারণে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দিয়েছে। এখন মা ও মেয়ে দুজনেই সুস্থ আছেন।’’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কেন্দ্র সচিব ও সরকারি গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. ওয়াজেদ কামাল বলেন, ‘‘শিক্ষকরা সবসময় মানবিক। সিজারিয়ান পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম দেওয়ার পরও পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অদম্য ইচ্ছা প্রকাশ করে ইশা আলম। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ হাসপাতালে এক নারী শিক্ষক ও নারী পুলিশ সদস্যের উপস্থিতিতে পরীক্ষার ব্যবস্থা করে। ইশার হাতের লেখা ছিল সুন্দর, পরীক্ষাও দিয়েছে ভালো। মা ও নবজাতক দুজনেই সুস্থ। আল্লাহর কাছে প্রার্থণা, একদিন এই শিশুকন্যাও গ্র্যাজুয়েট হয়ে মায়ের স্বপ্ন পূরণ করুক।’’