জন্মস্থান থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে কবি নজরুলের ব্যবহার সামগ্রী!
Published: 8th, July 2025 GMT
বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মস্থান পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে তাঁর ব্যবহারকৃত সামগ্রী। সোমবার এমন অভিযোগ জানিয়ে চুরুলিয়ায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন কবির ভ্রাতুষ্পুত্র কাজী আলি রেজা। চুরুলিয়ায় নজরুল একাডেমিকে অন্ধকারে রেখে কবির স্মৃতিচিহ্নগুলো ওই জেলারই আসানসোলে অবস্থিত কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তুলে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ আলী রেজার।
নজরুল ইসলামের জন্মস্থান পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম বর্ধমান জেলার চুরুলিয়াতেই রয়েছে তাঁর ব্যবহার করা নানা ধরনের স্মৃতিচিহ্ন। কবির জন্মভিটা সেই পুরোনো মাটির বাড়িটি ১৯৫৬ সালে ভেঙে ফেলে ১৯৫৮ সালে সেখানেই তৈরি করা হয় একটি বহুতল ভবন- যা নজরুল একাডেমি নামে পরিচিত।
এই নজরুল একাডেমির নিচ তলায় রয়েছে একটি সংগ্রহশালা। এখানে রয়েছে কবির হাতে লেখা পান্ডুলিপি, প্রথম প্রকাশিত গল্প, কবিতা এবং গানের পত্রিকার কপি, তাঁর ব্যবহৃত পোশাক, বাদ্যযন্ত্র, বিভিন্ন সময়ে পাওয়া সন্মাননা, প্রমিলা দেবীর ব্যবহৃত খাট। আর দেয়ালে রয়েছে কবির বিভিন্ন সময়ের ছবি। ওই সংগ্রহশালায় রয়েছে ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট কবির মৃত্যু ও পরবর্তী শবযাত্রার আলোকচিত্র। সারা বছর তা দেখতে এই একাডেমিতে ভিড় জমান সাধারণ মানুষ। কিন্তু কবির সেসব স্মৃতিচিহ্নগুলো ওই জেলারই আসানসোলে অবস্থিত কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তুলে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।
বিষয়টি সামনে আসতেই একদিকে যেমন চুরুলিয়া গ্রামের বাসিন্দারা বিদ্রোহী হয়ে উঠেছেন, তেমনি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নজরুল একাডেমি কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, কোনো অবস্থায় সেই সমস্ত জিনিস গ্রামের বাইরে নিয়ে যাওয়া যাবে না। যদিও বিতর্ক ওঠার পরই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মিউজিয়ামকে বিশ্বমানের করে তোলার লক্ষ্যেই সেটি সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া হবে। তাই আপাতত মিউজিয়ামে থাকা কবির ব্যবহৃত জিনিসপত্র নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। সংস্কারের কাজ শেষ হলেই তা পুরনো জায়গায় রেখে আসা হবে।
কাজী আলি রেজা জানান, ‘শুধু ভারতবর্ষ নয়, এমনকি বাংলাদেশ থেকেও প্রতিবছর বহু মানুষ এই মিউজিয়াম দেখতে আসেন। সকলেরই এই মিউজিয়াম দেখার প্রতি একটা আগ্রহ থাকে। কিন্তু বর্তমানে সেই মিউজিয়ামটাকেই বলা হচ্ছে, কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে। অর্থাৎ এই মিউজিয়ামে থাকা কবির ব্যবহৃত জিনিসপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু আমরা বলেছি, এটা কোনোমতেই সম্ভব নয়। ইতিমধ্যেই এক ট্রাক ভর্তি সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আরেকটি ট্রাক ভর্তি করে সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়ার সময় আমরা সেটা বাধা দিয়েছি।'
তিনি বলেন, ‘কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য সাধন চক্রবর্তীর উপস্থিতিতে একবার বৈঠকে ঠিক হয়েছিল নজরুল একাডেমি থেকে কোনো জিনিসই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হবে না বরং এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, অন্য কোনো জায়গা থেকে কবির ব্যবহৃত অন্য জিনিসপত্র যেন সংগ্রহ করে আমরা এই মিউজিয়ামে রাখতে পারি। এর বদলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, এই মিউজিয়ামে যে জিনিসগুলো সংগ্রহ করে রেখেছি, সেগুলোই অন্যত্র চলে যাচ্ছে।’
কাজী আলি রেজা আরও বলেন, ‘নজরুল মেলা উপলক্ষে কয়েকদিন আগেই আসানসোলের তৃণমূল সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা কবি নজরুলের বাড়িটি সংস্কারের জন্য ১০ লাখ রুপি আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছিলেন। পাশাপাশি পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীও আলাদা করে ৫ লাখ রুপি আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই অর্থ কোথায় গেল, কি কাজ হয়েছে তা এখনও আমাদের জানা নেই। জানালা-দরজা ভেঙে পড়ছে, লাইট পাওয়া যায় না, দেওয়ালের রঙ চাইলে পাওয়া যায় না। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলেই তাদের দায় এড়াচ্ছেন। এই অবস্থায় আমরা সাধারণ মানুষের মতামত নিচ্ছি, যাতে কোনোভাবেই এই নজরুল একাডেমি বা এই সংগ্রহশালার কোনা জিনিস নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে না চলে যায়।’
কাজী আলি রেজার অভিমত, ‘কবিতীর্থ চুরুলিয়া মানুষের কাছে একটি আবেগ। কবির মিউজিয়াম থেকে সেসব জিনিস বিশ্ববিদ্যালয় চলে গেলে এটা অন্ধকার হয়ে যাবে। তখন আর কোনা মানুষ এখানে আসবেন না।’
সংবাদ সম্মেলনে আলি রেজা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নজরুলের ভ্রাতুষ্পুত্র রেজাউল করিমের মেয়ে ও নজরুল একাডেমির সঙ্গে যুক্ত থাকা সঙ্গীতশিল্পী সোনালি কাজীসহ স্থানীয় বাসিন্দারাও।
নজরুল একাডেমির এখন কোনো অস্তিত্ব নেই
অন্যদিকে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ড.
তার মতে, ‘নজরুল কারও ব্যক্তিগত বিষয় নয়। সারা বিশ্বের লোক নজরুলকে নিয়ে কাজ করছেন। আমার মনে হয়, কিছু মানুষ কবির পরিচয় দিয়ে এসব বিষয় নিজেদের কাছে কুক্ষিগত করে রাখতে চাইছেন।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক জ নজর ল ইসল ম নজর ল এক ড ম র ব র ব যবহ ত ই স গ রহশ ল জ ন সপত র অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
কোন আসনে বিএনপির প্রার্থী কে, দেখে নিন
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। কোন আসনে বিএনপির মনোনয়ন কে পাচ্ছেন, তার তালিকা প্রকাশ করেছে দলটি। জাতীয় সংসদের আসন ৩০০টি। এর মধ্যে কিছু আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি আর কিছু আসন জোট শরিকদের জন্য রেখে দিয়েছে বিএনপি।
আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি জানান, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ফেনী–০১, বগুড়া–০৭ ও দিনাজপুর–০৩ আসন থেকে প্রার্থী হচ্ছেন। আর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচন করবেন বগুড়া-৬ আসনে।
প্রার্থী ঘোষণার আগে দুপুর সাড়ে ১২টায় জরুরি বৈঠকে বসেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী চলা এই বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত এবং চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে ডিসেম্বরের শুরুর দিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিএনপির প্রার্থীর তালিকা নিচে তুলে ধরা হলো–