রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) নৃশংসভাবে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার মো. টিটন গাজীকে (৩২) পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত আজ শনিবার বিকেলে এ আদেশ দেন।

আলোচিত এ হত্যা মামলায় টিটন গাজীসহ মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি চারজন হলেন মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১), তারেক রহমান রবিন (২২), আলমগীর (২৮) ও মনির ওরফে ছোট মনির (২৫)।

পুলিশ ও আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ হত্যা মামলায় গত বৃহস্পতিবার মাহমুদুল হাসান মহিনকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন আদালত। তিনি এখন কোতোয়ালি থানা হেফাজতে রয়েছেন। আর গ্রেপ্তার তারেক রহমান রবিনকে সেদিন অস্ত্র মামলায় দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তারেককে দুদিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তাঁকে আজ কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। তাঁকে আজ লাল চাঁদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

এ ছাড়া এ মামলায় আলমগীর (২৮) ও মনির ওরফে ছোট মনিরকে (২৫) গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। তাঁদের আদালতে হাজির করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

গত বুধবার মিটফোর্ড (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালের সামনে ব্যস্ত সড়কে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে লাল চাঁদকে হত্যা করে একদল লোক। হত্যার আগে ডেকে নিয়ে তাঁকে পিটিয়ে এবং ইট-পাথরের টুকরা দিয়ে আঘাত করে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তাঁকে বিবস্ত্র করা হয়। তাঁর শরীরের ওপর উঠে লাফান কেউ কেউ।

লাল চাঁদ হত্যার ঘটনায় রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় গত বৃহস্পতিবার একটি মামলা হয়েছে। নিহত লাল চাঁদের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম (৪২) মামলাটি করেন। মামলায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

‘টাকা নাই জীবন নাই’ নামের আইডি থেকে হত্যার হুমকি দেওয়া হতো

জিম্মিদশা থেকে মুক্ত বাংলাদেশি আলমগীর হোসেনকে লিবিয়া থেকে ফিরিয়ে এনেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আরেকজনকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে। এ ঘটনায় সঙ্গে জড়িত অভিযোগে বাংলাদেশে দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপহরণকারীরা ‘টাকা নাই জীবন নাই’ নামের ইমো আইডি থেকে ভুক্তভোগীর স্বজনদের ফোন করে মুক্তিপণ না দিলে হত্যার হুমকি দিত।

পিবিআইবি ঢাকা মহানগর উত্তরের কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) মো. এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, আলমগীর হোসেন (৪২) লিবিয়ায় জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়ে গতকাল বুধবার দেশে পৌঁছেছেন। আর সিরাজ উদ্দিনকে দেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে।

অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, আলমগীর ও সিরাজ লিবিয়ার ত্রিপোলিতে একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতেন। চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি সেখান থেকে তাঁদের অপহরণ করা হয়। এরপর ইমো অ্যাপের মাধ্যমে দুজনকে নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে তাঁদের পরিবারের কাছ থেকে ২২ লাখ টাকা মুক্তিপণ চান অপহরণকারীরা। তাঁদের স্বজনেরা অপহরণকারীদের কাছে দেড় লাখ টাকা পাঠান। তবে মুক্তিপণের বাকি টাকার দাবিতে অপহরণকারীরা আলমগীর ও সিরাজকে নির্যাতন চালাতে থাকেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ ঘটনায় গত ২৯ জানুয়ারি আলমগীরের বড় ভাই আবদুল মালেক (৫২) অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে রাজধানীর আদাবর থানায় মামলা করেন। পিবিআই ঢাকা মেট্রো উত্তর মামলাটির তদন্ত শুরু করে।

পিবিআই কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত ৩০ জানুয়ারি ওই ঘটনায় রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার কড়ইতলা মোড় থেকে রাসেল হক (২৫) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাসেলের মামা কামাল হোসেন অপহরণের সঙ্গে জড়িত। তিনি লিবিয়ায় থাকেন। মুক্তিপণের টাকা লেনদেন নিয়ে কামালের সঙ্গে রাসেলের মুঠোফোনে কথা হয়েছে। রাসেলের মুঠোফোনে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। রাসেলের মুঠোফোনটি জব্দ করে পিবিআই।

পিবিআই কর্মকর্তা বলেন, রাসেলকে গ্রেপ্তারের পরও নির্যাতন বন্ধ না হওয়ায় আরও ৪ লাখ টাকা অপহরণকারীদের কাছে পাঠায় ভুক্তভোগীর পরিবার। লিবিয়ায় অপহরণকারী চক্রের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ থেকে মিন্টু ফরাজীকে (৩৯) গ্রেপ্তার করে পিবিআই।

পিবিআই কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারের পর অপহৃতদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন অপহরণকারীরা। কিন্তু অপহৃতদের ওপর নির্যাতন বাড়িয়ে দেন। তাঁরা বেশির ভাগ সময় অপহরণকারীদের মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করে কথা বলতেন। মাঝেমধ্যে ‘টাকা নাই জীবন নাই’ নামের ইমো আইডি থেকে স্বজনদের কল করে টাকা না দিলে অপহৃতদের হত্যাসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেওয়া হতো।

আলমগীর ও সিরাজের বরাত দিয়ে পিবিআই কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন বলেন, অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা তাঁদের হাত–পা বেঁধে মারধর করতেন। কখনো কখনো পায়ের তালুতে পিভিসি পাইপ ও বিদ্যুতের মোটা তার দিয়ে মারতেন। খাবার ও পানির কষ্ট দিতেন। এমনকি শীতের মধ্যে খালি গায়ে মুখে গামছা ভরে শরীর দেয়ালের সঙ্গে ঠেকিয়ে মারধর করা হতো। পরে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে লিবিয়ার ত্রিপোলির জিলজিয়া হাসপাতাল এলাকায় অপহৃত আলমগীর হোসেন ও সিরাজ উদ্দিনকে ফেলে রেখে যাওয়া হয়।

অপহরণকারীরা যাতে মুক্তিপণের টাকা তুলতে না পারে, সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সহায়তায় অপহরণকারীদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করা হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

পিবিআই কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, পিবিআই বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে আলমগীর ও সিরাজকে দেশে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেয়। আলমগীরের বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল এবং সিরাজের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে। তিনি বলেন, অপহরণের সঙ্গে দেশে যারা জড়িত, সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। লিবিয়ায় অবস্থানরত অপহরণকারীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের সহযোগিতা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • লন্ডন ঘোষণা বাস্তবায়ন নির্ভর করছে ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদনের ওপর
  • ‘টাকা নাই জীবন নাই’ নামের আইডি থেকে হত্যার হুমকি দেওয়া হতো
  • শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়ার আহ্বান ফখরুলের
  • নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতার পরিবর্তন হবে: মির্জা ফখরুল