জানুয়ারি-জুন ছয় মাসে বিকাশের মুনাফা বেড়ে ৩০৮ কোটি টাকা
Published: 30th, July 2025 GMT
মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা বা এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশ চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ৩০৮ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। সব ধরনের খরচ ও কর বাদ দেওয়ার পর এই মুনাফা অর্জন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশ চলতি বছরের অর্ধবর্ষ (জানুয়ারি–জুন) শেষে যে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেখানে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বিকাশ ৩ হাজার ২০৬ কোটি টাকার ব্যবসা বা আয় করেছে। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। সে হিসাবে গত বছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বিকাশের ব্যবসা বেড়েছে ৭৪৪ কোটি টাকা বা প্রায় ৩০ শতাংশ। আয়ে ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও মুনাফা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বিকাশ মুনাফা করেছে ৩০৮ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১০৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে মুনাফা বেড়ে প্রায় তিন গুণ হয়েছে। গত বছরই প্রথমবারের মতো বিকাশের মুনাফা ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল। এবার ৬ মাসেই ৩০০ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
২০১১ সালে যাত্রা শুরুর পর গত বছরই ৩০০ কোটি টাকার রেকর্ড মুনাফা করেছিল বিকাশ। তার আগে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ মুনাফা ছিল ২০২৩ সালে, ওই বছর প্রতিষ্ঠানটি ৯৯ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল। গত বছরের শেষে তা এক লাফে ৩০০ কোটি টাকা ছাড়ায়। আর চলতি বছরের প্রথমার্ধেই ৩০৮ কোটি টাকার মুনাফা করেছে বিকাশ। বছর শেষে তা ৬০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশা করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এদিকে বিকাশের গত ১০ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৪ সালে বিকাশের আয় ছিল ৫৭৩ কোটি টাকা। আর ওই বছর প্রতিষ্ঠানটি মুনাফা করেছিল ১৯ কোটি টাকা। দুটোই এখন বেড়ে বিকাশকে বড় অঙ্কের লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে।
২০১১ সালে এমএফএস প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করা বিকাশের এখন গ্রাহক প্রায় ৮ কোটি। দেশজুড়ে প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার এজেন্ট ও সাড়ে ৫ লাখ মার্চেন্ট পয়েন্ট। আর্থিক লেনদেনের পাশাপাশি বিকাশে রয়েছে বিভিন্ন পরিষেবা বিল পরিশোধ, ন্যানো ঋণ ও ডিপোজিট সুবিধা। প্রতিষ্ঠানটির মালিকানার সঙ্গে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানি ইন মোশন, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন বা আইএফসি, গেটস ফাউন্ডেশন, অ্যান্ট ইন্টারন্যাশনাল ও সফটব্যাংক।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বছর র প রথম ছয় ম স গত বছর র ৩০০ ক ট ৩০৮ ক ট আর থ ক
এছাড়াও পড়ুন:
বিসিএস নন-ক্যাডার পদের নিয়োগে কেন সংকট তৈরি হলো
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম শ্রেণির ক্যাডার এবং কারিগরি বা পেশাগত পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে থাকে। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে এটিই সবচেয়ে বড় নিয়োগ পরীক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কাছে এই পরীক্ষার চাহিদা ও আকর্ষণ গত দুই-আড়াই দশকে অনেকটা বেড়েছে। বিসিএস দিয়ে নিয়োগ পাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ আগেও ছিল; কিন্তু এখন রীতিমতো একাডেমিক পড়াশোনা বাদ দিয়ে বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়!
বর্তমান প্রক্রিয়ায় আবেদনকারী প্রার্থীকে প্রথমে ২০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এখান থেকে বিজ্ঞাপিত শূন্য পদের কয়েক গুণ প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষার জন্য বাছাই করা হয়। এরপর লিখিত পরীক্ষায় ন্যূনতম শতকরা ৫০ ভাগ নম্বরপ্রাপ্তদের ডাকা হয় মৌখিক পরীক্ষার জন্য। তিন ধাপের পরীক্ষা পার হওয়ার পর নির্ধারিত ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসি; কিন্তু এর বিপরীতে মৌখিক পরীক্ষা পর্যন্ত পার হয়েও অসংখ্য প্রার্থী চাকরি পান না। তাঁদের জন্য সুযোগ তৈরি করতে ২০১০ সালে নন-ক্যাডার বিশেষ বিধিমালা করা হয়।
এই বিধির ফলে এক বিসিএস দিয়েই প্রার্থীরা নবম গ্রেডের ক্যাডার এবং ৯ থেকে ১২তম গ্রেডের নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ পেতে থাকেন। সিদ্ধান্তটি চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছে খুবই ইতিবাচক ছিল। কারণ, এতে তাঁদের আবেদনের খরচ এবং বারবার পরীক্ষা দেওয়ার ঝামেলা কমে যায়; কিন্তু সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তর থেকে বেশিসংখ্যক চাহিদা না দেওয়ার কারণে ২৮তম থেকে ৩৩তম বিসিএসে উত্তীর্ণ প্রায় ১৯ হাজার প্রার্থী কোনো চাকরি পাননি। বিসিএস পরীক্ষার দীর্ঘ প্রক্রিয়া পার হয়েও পদের অভাবে চাকরি না পাওয়াটা প্রার্থীদের জন্য ছিল হতাশার। সমস্যা সমাধানের জন্য ২০১৪ সালে দ্বিতীয় শ্রেণির পদেও বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়।
প্রতিবছরই হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েট চাকরির বাজারে প্রবেশ করছে। বিসিএস পরীক্ষা নিয়মিত হলে এবং ফল প্রকাশের প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করা গেলে প্রার্থীদের অকারণ অপেক্ষা করতে হয় না৩৪তম বিসিএস থেকে প্রার্থীরা উল্লেখযোগ্য হারে নন-ক্যাডার পদ পেতে থাকেন। ৩৪তম থেকে ৪১তম বিসিএস পর্যন্ত দুই হাজারের কাছাকাছি থেকে চার হাজারের বেশি প্রার্থী নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ পান। যেমন ৪১তম বিসিএসে নন-ক্যাডার থেকে ৩ হাজার ১৬৪ জনকে বিভিন্ন পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। এর আগের ৪০তম বিসিএসে নন-ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থী ছিলেন ৪ হাজার ৩২২ জন। কিন্তু ৪৩তম বিসিএসে এই সংখ্যা নেমে হয় ৬৪২। মূলত এখান থেকেই সংকটের শুরু।
৪৩তম বিসিএসের আগের পরীক্ষাগুলোতে প্রথমে ক্যাডার পদের ফল প্রকাশ করা হতো। পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুযায়ী নন-ক্যাডারের ফল দেওয়া হতো। এর দরুন বেশি সংখ্যক প্রার্থী চাকরির সুযোগ পেতেন। কিন্তু ২০২৩ সালের নন-ক্যাডার বিধিতে ক্যাডার ও নন-ক্যাডারের চূড়ান্ত ফল একসঙ্গে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তা ছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে নন-ক্যাডার শূন্য পদ উল্লেখের নিয়মও যুক্ত হয়েছে। এর বিরোধিতা করে একদল প্রার্থী দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, এভাবে পদ উল্লেখের কারণে নির্ধারিত পদের বাইরে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। অথচ আগের নিয়মে তালিকায় থাকা বিসিএস উত্তীর্ণ প্রার্থীরা পরবর্তী বিসিএসের আগপর্যন্ত চাহিদামতো নিয়োগের সুযোগ পেতেন।
আন্দোলনকারীদের দাবি অনুযায়ী, ২০২৩-এর নন-ক্যাডার বিধি বাতিল করে আগের বিধি পুনর্বহাল করা যেতে পারে। তা ছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার শূন্য পদ উল্লেখ না করে পদ তৈরির সুযোগ উন্মুক্ত রাখাই ভালো। স্বচ্ছতা বজায় রাখার স্বার্থে ক্যাডারের ফলের সঙ্গে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ কিন্তু পদস্বল্পতার কারণে ক্যাডার হিসেবে সুপারিশ না পাওয়া প্রার্থীদের মেধাভিত্তিক তালিকা আলাদা করে প্রকাশ করা যায়। তাহলে এখান থেকেই নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ দেওয়া যাবে।
একেকটি বিসিএসে লাখ লাখ আবেদনকারীর মধ্য থেকে খুব সীমিতসংখ্যকই চূড়ান্ত নিয়োগের সুপারিশ পান। সর্বশেষ চূড়ান্ত ফল ঘোষিত ৪৩তম বিসিএসে আবেদন করেছিলেন ৪ লাখ ৩৫ হাজার ১৯০ জন। এর মধ্য থেকে লিখিত পরীক্ষার জন্য বাছাই করা হয় ১৫ হাজার ২২৯ প্রার্থীকে। লিখিত পরীক্ষায় পাস করেন ৯ হাজার ৮৪১ জন। শেষ পর্যন্ত চাকরির জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হন মাত্র ২ হাজার ৮০৫ জন। এভাবে প্রতিটি বিসিএসেই দেখা যায়, আবেদনকারী মোট প্রার্থীর বিপরীতে মাত্র শূন্য দশমিক ৪৫ থেকে শূন্য দশমিক ৬৫ শতাংশ প্রার্থী চাকরির সুযোগ পান।
পিএসসি ১২তম গ্রেড পর্যন্ত নিয়োগ দিয়ে থাকে। ১৩তম থেকে ২০তম গ্রেডের নিয়োগ দেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। পিএসসির সাবেক কোনো কোনো সদস্য মনে করেন, সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সরাসরি নিয়োগ কমিয়ে নন-ক্যাডার নিয়োগ বাড়ানো যেতে পারে। এর ফলে বিসিএস উত্তীর্ণ প্রার্থীদের একটি অংশ ক্যাডার হতে না পারলেও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরে চাকরির সুযোগ পাবেন। বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগের ফলে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও নিয়োগ-বাণিজ্য কমে আসবে। এই প্রক্রিয়ায় যোগ্য ও মেধাবী প্রার্থীরা বেশি হারে সুযোগ পাবেন এবং তাঁদের সময়, অর্থ ও পরিশ্রম কমবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান বলছে, সরকারি বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও করপোরেশনে ৪ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি পদ শূন্য আছে। তবে একসঙ্গে এত পদ পূরণ করা সম্ভব নয়, এমনকি তা উচিতও হবে না। কারণ, প্রতিবছরই হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েট চাকরির বাজারে প্রবেশ করছেন। বিসিএস পরীক্ষা নিয়মিত হলে এবং ফল প্রকাশের প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করা গেলে প্রার্থীদের অকারণ অপেক্ষা করতে হয় না।
তারিক মনজুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক