কেরানীগঞ্জে তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণ না করার দাবিতে কৃষকদের মানববন্ধন
Published: 4th, August 2025 GMT
অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ঢাকার কেরানীগঞ্জে তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণ চেষ্টার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন কৃষক ও এলাকাবাসী। আজ সোমবার বিকেলে ঢাকা-নবাবগঞ্জ মহাসড়কের কেরানীগঞ্জের নতুন সোনাকান্দা পেট্রলপাম্প সড়ক এলাকায় এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে তিন ফসলি জমির কয়েক শ মালিক ও এলাকাবাসী অংশগ্রহণ করেন।
সোনাকান্দা গ্রামের কৃষক আমানউল্লাহ বলেন, ‘আমি ৩৫ বছর ধরে কৃষিকাজ করছি। সোনাকান্দা মৌজায় আমার আট বিঘা তিন ফসলি জমি রয়েছে। বছরজুড়েই সেখানে ফসল ও শাকসবজি চাষ করি। আমাদের ওই সব ফসলি জমি অধিগ্রহণের পাঁয়তারা চলছে। যদি এই জমি অধিগ্রহণ করা হয়, তাহলে পুরো কেরানীগঞ্জের ক্ষতি হবে। আমরা কেরানীগঞ্জবাসীর সবজির চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়ও বিক্রি করি। সেই আয় দিয়ে আমাদের ঘর–সংসার চলে। জমি চলে গেলে আমরা এই বয়সে কী করে খাব? এর আগেও বিসিক শিল্পনগরী ও কেমিক্যাল পার্কের নামে আমাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এভাবে কেরানীগঞ্জের ফসলি জমি হারিয়ে যাচ্ছে।’
আরেক কৃষক সোবহান আলী (৫৭) বলেন, ‘আমগো গ্রামের হগলতে চাষবাস কইরা খায়। ঢাকা থেইকা লুক আইসা আমগো জমির শাকসবজি কিনা লয়া যায়। জমি নিয়া (অধিগ্রহণ) গেলে আমরা সবাই না খাইয়া মরুম।’
সোনাকান্দা গ্রামের গৃহবধূ জুলেখা বেগম (৬৫) তাঁর দুই নাতিকে নিয়ে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই গ্রামে আমাদের চার বিঘা জমি রয়েছে। আমার বাবা কৃষিকাজ করতেন। বিয়ের পর দেখেছি আমার স্বামীও কৃষিকাজ করেছেন। এখন আমার ছেলেও কৃষিকাজ করে খায়। আমার পরিবারের তিন পুরুষ এই গ্রামে কৃষিকাজ করে সংসার চালিয়েছে। আমাদের এলাকায় ফসলি জমি নষ্ট করে কোনো শিল্পকারখানা চাই না। আমাদের গ্রামের মাটি খুবই শক্তিশালী। সারা বছরই এখানে ফসল ফলে। আমরা আমাদের ভিটামাটি হারাতে চাই না।’
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, অতীতে সরকার ঝিলমিল আবাসন প্রকল্প, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, বিসিক শিল্পনগরী, পানগাঁও পোর্ট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রকল্পের নামে কেরানীগঞ্জে বিশাল আকারের কৃষিজমি অধিগ্রহণ করেছে। এ অবস্থায় আবারও যদি জমি অধিগ্রহণ করা হয়, তাহলে অনেকেই ভিটামাটি হারা হবেন।
সোনাকান্দা গ্রামের বাসিন্দা কলেজশিক্ষক গোলাম হোসেন বলেন, ‘ঢাকার আশপাশে অনেক অনাবাদি জমি আছে। সেখানে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা উচিত। আমাদের অনুরোধ এই প্রকল্প কেরানীগঞ্জ ছাড়া অন্য কোথাও বাস্তবায়ন করা হোক।’
এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ রাজস্ব সার্কেল সহকারী কমিশনার (ভূমি) জান্নাতুল মাওয়া জানান, কর্মসংস্থান, দ্রুত দারিদ্র্য বিমোচন ও পরিকল্পিত শিল্পায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) অধীন কেরানীগঞ্জে অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের জন্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে প্রস্তাবনা এসেছে। এই বিষয়ে আজ বিকেলে প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে কেরানীগঞ্জের বিসিক শিল্পনগরীতে বৈঠক হয়। তিনি বলেন, জমি অধিগ্রহণ অনেক দূরের কথা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তই গ্রহণ করা হয়নি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এতে গ্রামবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ষ ক জ কর প রকল প ত ন ফসল আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে গণহত্যার প্রতিবাদে জাবি ও জবিতে মানববন্ধন
সুদানে চলমান গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (২ নভেম্বর) বিকাল ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ ছাত্রশক্তির জাবি শাখার উদ্যোগে এ প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
ইবিতে কুরআন ও হিজাববিরোধী মন্তব্যের প্রতিবাদ শিক্ষার্থীদের
জুলাইবিরোধী শক্তির শাস্তি দাবিতে ইবিতে বিক্ষোভ
মানববন্ধনে জাবি শাখার যুগ্ম আহবায়ক জিয়াউদ্দিন আয়ান বলেন, “আমরা মনে করছি, সুদানকে ফিলিস্তিনের গাজায় পরিণত করার চক্রান্ত চলছে। বিশ্ব মানবতা যেভাবে গাজাবাসীর পক্ষে কথা বলে, কিন্তু আফ্রিকার দেশ হওয়ায় আমরা সুদানের মানুষদের পক্ষে কথা বলছি না। আজ বিশ্ব মিডিয়া, জাতিসংঘ ও ওআইসি নিরব। ফলে আরব আমিরাতের ফান্ডিংয়ে সেখানে নির্বিচারে মানুষ মারা হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জুলাইয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করায় সেখানকার (আরব আমিরাতের) বাংলাদেশিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তারা এখনো কারাভোগ করছে। বাংলাদেশ সরকারকে বলব, আমাদের দেশের নাগরিকদের অবিলম্বে মুক্ত করতে হবে। একইসঙ্গে সুদানে চলমান গণহত্যার প্রতিবাদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিবৃতি দিতে হবে।”
শাখা ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল ছাড়াও মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন প্রমুখ।
অন্যদিকে, রবিবার (২ নভেম্বর) ভাষ্কর্য চত্বরে আয়োজিত মানববন্ধনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) হিউম্যান রাইটস সোসাইটির মানবাধিকার কর্মীরা গণহত্যা বন্ধ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
সংগঠনটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, “নানা কারণে বিভিন্ন দেশের সংঘাত থেকে শুরু করে গৃহযুদ্ধে বলি হয় নারী, শিশু ও সাধারণ মানুষ। সুদানে যে জাতিগত নিধন চলছে, তা নিয়ে বৈশ্বিক পর্যায়ে তেমন কোনো আলোচনা নেই। মানবতা কোনো ধর্ম, বর্ণ বা রাজনৈতিক মতাদর্শের ভেতর সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। সব মজলুমের পক্ষে অবস্থান নেওয়া একজন মানুষের নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হিউম্যান রাইটস সোসাইটি সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার অবস্থান বজায় রাখবে।”
এ সময় সাধারণ সম্পাদক জুনায়েদ মাসুদ, দপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান কায়েস, সদস্য নিং ম, ফয়সাল মাহমুদসহ সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/আহসান/লিমন/মেহেদী