পদ্মার চরে দুজনকে হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের শিকার নিহতের বাবা-মাসহ স্বজনেরা হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে সেখানে অঝোরে কেঁদেছেন। এ সময় অন্যরাও চোখের পানি আটকে রাখতে পারেননি।

আজ শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়নের খানপুর বাজারে ‘হতাহতদের পরিবার ও এলাকাবাসী’র ব্যানারে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। আমান মণ্ডল ও নাজমুল মণ্ডলকে গুলি করে হত্যাসহ মুনতাজ মণ্ডল ও রাকিব হোসেনকে আহত করার প্রতিবাদ এবং দোষীদের বিচার দাবিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারী-পুরুষ মানববন্ধনে অংশ নেন।

মানববন্ধনের ব্যানারের এক পাশে নিহত-আহত ব্যক্তিদের ছবি, আরেক পাশে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাতজনের ছবি সাঁটিয়ে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি জানান তাঁরা। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার না করা হলে তাঁরা কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন।

আরও পড়ুনদুজনকে হত্যার ঘটনায় ‘কাকন বাহিনীর’ কাকনকে প্রধান আসামি করে মামলা২৯ অক্টোবর ২০২৫

বাঘা উপজেলার নিচ খানপুর গ্রামের নিহত আমান মণ্ডলের বাবা মিনাজ মণ্ডল জানান, দিনদুপুরে গুলি করে তাঁর ছেলেসহ দুজনকে গুলি করে হত্যা করার পরও আসামিরা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। তাদের স্বজনেরাও ঘুরে বেড়াচ্ছে বুক ফুলিয়ে। প্রশাসনকে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি করেছেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা বেলাল হোসেনের ভাষ্য, হত্যাকাণ্ডের ৫ দিন পার হলেও মূল আসামিদের ধরতে না পারা রহস্যজনক। খানপুর গ্রামের বাসিন্দা আশরাফ মণ্ডল বলেন, হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করলে তাদের ব্যবহৃত অস্ত্রও উদ্ধার করা যাবে।

হত্যাকাণ্ডের শিকার আরেক যুবক নাজমুলের বাবা শুকুর মণ্ডল মানববন্ধনে ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে আর কিছু বলতে পারেননি। তিনি হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন।
গত সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাজশাহীর বাঘা ও কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্তের ১৪ হাজার মাঠ নামে পরিচিত চাকলার চর এলাকায় কাশবনখেত নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন আমান মণ্ডল, নাজমুল মণ্ডল (২৬), মুনতাজ মণ্ডল (৩২) ও রাকিব হোসেন (১৮)। এর মধ্যে আমান ও নাজমুল মারা যান। অপর দুজন রামেক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

মুনতাজ মণ্ডলের পিতা চান মণ্ডল বলেন, নদীভাঙনের শিকার হয়ে তাঁরা বর্তমানে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার নিচ খানপুর গ্রামে বসবাস করছেন। চাকলার চর এলাকায় তাঁদের পৈতৃক জমি রয়েছে। সেই জমিতে তাঁরা কাশবনের খড় কাটছিলেন। কথিত ‘কাকন বাহিনী’র লোকজন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সেই জমি দখলে নিতে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে।

এ ঘটনায় বাহিনীর প্রধান দৌলতপুর থানার মাঝদিয়াড় বৈরাগী চরের হাসানুজ্জামান ওরফে কাকন ইঞ্জিনিয়ারকে প্রধান আসামি করে ২২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ২০–৩০ জনকে আসামি করে মিনাজ মণ্ডল দৌলতপুর থানায় হত্যা মামলা করেছেন। মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, পরবর্তী সময় পুলিশ শটগানের কার্তুজের ৫৫টি খালি খোসা ও ১৫টি গুলির খোসা উদ্ধার করেছে।

এদিকে ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুর অনুমান ১২টার সময় কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থানার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রায়টা এলাকার পদ্মা নদীতে ভাসমান অবস্থায় লিটন ঘোষ (৩০) নামের একজনের মরদেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। লিটন ঘোষ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থানার রায়টা ঘোষপাড়া গ্রামের জামরুল ঘোষের ছেলে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ঈশ্বরদী লক্ষ্মীকুণ্ডা নৌ পুলিশ ক্যাম্পের (ইনচার্জ) এসআই শফিউদ্দিন বলেন, তাঁর শরীরে অসংখ্য জখমের চিহ্ন ছিল। সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে লিটনও নিখোঁজ ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, দৌলতপুর-বাঘা সীমান্তে চর দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সময় তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলাইমান শেখ মুঠোফোনে বলেন, এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে।

আরও পড়ুনকথার আগে গুলি চালায় ‘কাকন বাহিনী’, দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পদ্মার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল১১ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হত য ক ণ ড র দ লতপ র ঘটন য় র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

মিম ছাপিয়ে হঠাৎ কেন রাজপথে নোয়াখালী বিভাগের দাবি

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, টিকটকে ‘নোয়াখালী বিভাগ চাই’ মিমের (হাস্যরসাত্মক ছবি, ভিডিও) ছড়াছড়ি। কানাডার টিকটকার বোরজাহ ইয়াংকিও এ নিয়ে টিকটকটি করতে ছাড়েননি। তবে এখন আর হাস্যরসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই নোয়াখালী বিভাগের দাবি। সম্প্রতি প্রশাসনিক বিভাগ ঘোষণার দাবিতে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা। মতভিন্নতা থাকলেও বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ জেলার সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলো এই দাবিতে সোচ্চার হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ রাজপথে এই আন্দোলন জোরালো হওয়ার পেছনের কারণ কী? কী বলছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা?

যে কারণে বিভাগ আন্দোলন

সরকারি দপ্তরে পাওয়া নথি অনুযায়ী, নোয়াখালীর সাবেক নাম ছিল ভুলুয়া। ১৮২১ সালে নোয়াখালী অঞ্চল নিয়ে ভুলুয়া নামে একটি স্বতন্ত্র জেলা গঠন করা হয়। পরে ১৮৬৮ সালে ভুলুয়ার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় নোয়াখালী।

২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস-সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) বৈঠকে বৃহত্তর ফরিদপুরের কয়েকটি জেলা নিয়ে ‘পদ্মা বিভাগ’ এবং কুমিল্লা ও আশপাশের জেলাগুলো নিয়ে ‘মেঘনা বিভাগ’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়। তবে তখন চূড়ান্ত অনুমোদন মেলেনি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এ নিয়ে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। তবে গত ৮ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিব আব্দুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় প্রি-নিকার বৈঠকে। ওই বৈঠকে ফরিদপুর ও কুমিল্লা জেলার নামেই নতুন দুটি প্রশাসনিক বিভাগ এবং নতুন দুটি উপজেলা গঠনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। এরপরই নোয়াখালী বিভাগ আন্দোলনের দাবিটি আবারও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে।

কুমিল্লা বিভাগের সঙ্গে নোয়াখালীর অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা তৈরি হওয়ায় ক্ষুব্ধ হন জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষজন। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়ন পরিষদের উদ্যোগে জেলার বিভিন্ন উপজেলার পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রামেও এ নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। পাশাপাশি বিভাগ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোও। আন্দোলনে শামিল জেলার সুশীল সমাজ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ নানা পেশার মানুষও।

নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি সাইফুর রহমান জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের দুজন উপদেষ্টা কুমিল্লার নামে বিভাগ করার বিষয়ে প্রকাশ্যে বক্তব্য দেওয়ার পর থেকেই মূলত বৃহত্তর নোয়াখালীর মানুষের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম হয়; যার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা প্রথমে নোয়াখালীতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন। এরপর ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে, শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর, নোয়াখালীতে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন চত্বর, সোনাইমুড়ী বাইপাস, লক্ষ্মীপুরের রামগতি, নোয়াখালীর চাটখিল, সোনাইমুড়ী, সেনবাগ, কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্ণচর, বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনীতে, চৌমুহনী চৌরাস্তাসহ বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক মানববন্ধন ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করা হয়। কেবল দেশেই নয়, দেশের বাইরেও এ নিয়ে আন্দোলন হয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসেও নোয়াখালী বিভাগের দাবিতে আন্দোলন করেছেন প্রবাসীরা।

বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু বিভাগের দাবি নিয়ে একাধিক কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। ওই সব কর্মসূচিতে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে, তাহলে নোয়াখালীকে স্বতন্ত্র বিভাগ ঘোষণা করা হবে।

বিভাগের দাবি নতুন নয়

নোয়াখালীকে স্বতন্ত্র প্রশাসনিক বিভাগ ঘোষণার দাবি এখনকার নয়। গত শতকের নব্বইয়ের দশক থেকে নানা পরিসরে এই দাবি উঠতে থাকে। নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি সাইফুর রহমানের মতে, ১৯৯৪ সালে আইনজীবী আবুল কালামের নেতৃত্বে নোয়াখালী বিভাগ আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৯৪ সালের ১ নভেম্বর মাইজদী কোর্ট বিল্ডিংয়ের সামনে ১০ দফা দাবিতে গণ-অনশনসহ একটি বড় কর্মসূচি পালিত হয়। এরপর ২০১২ সালে ‘নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটি’ গঠিত হয়। তবে এবারের মতো এমন জোরালো ছিল তখনকার কর্মসূচি।

বিভাগের দাবিতে জেলার মাইজদীর মোহাম্মদীয় সড়ক অবরোধ। ৫ অক্টোবর তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুনামগঞ্জে জমি থেকে ৫ কোটি টাকার বালু চুরির অভিযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা
  • আন্দোলনকারী ছাত্রীদের পোশাক নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে বরখাস্তের দাবি
  • জুলাই সনদের বিপক্ষে কথা বলে বাংলাদেশে রাজনীতি করা যাবে না: সামান্তা শারমিন
  • ‎সাখাওয়াত- টিপুর বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদে আইনজীবী ফোরামের মানববন্ধন
  • সুনামগঞ্জের ধোপাজান নদীর বালু লুট বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে এনসিপির মানববন্ধন
  • জাবিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
  • জামালপুরে মহাসড়কে অটোরিকশা বন্ধসহ ১২ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
  • তিন পাহাড়ি যুবক হত্যার বিচারের দাবিতে রাঙামাটিতে পিসিসিপির বিক্ষোভ
  • মিম ছাপিয়ে হঠাৎ কেন রাজপথে নোয়াখালী বিভাগের দাবি