বয়স বাড়লে সন্তানের অবহেলা আর সমাজে একাকিত্বের ভারে অনেক মা-বাবার জীবনই দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। যে সন্তানেরা একসময় তাঁদের হাত ধরে চলতে শিখেছে, সেই সন্তানেরাই একসময় তাঁদের হাত ছেড়ে দেয়। এমন হাজারো অবহেলিত মা–বাবার গল্প আমাদের সমাজে নতুন নয়। কিন্তু সেই আঁধারের মধ্যেও কিছু মানুষ আলোর দিশা দেখান। যশোরের সমসপুর গ্রামের জ্যোৎস্না মুখার্জি তেমনই এক ব্যতিক্রমী মানুষ, যিনি অসহায় মায়েদের জন্য গড়ে তুলেছেন এক নিরাপদ আশ্রয়, যার নাম ‘ওল্ড কেয়ার হোম’।

স্বামী হারানোর পর ট্রেন দুর্ঘটনায় একমাত্র ছেলের মৃত্যু রাবেয়া বেগমকে (৮০) প্রায় নিঃস্ব করে দিয়েছিল। সেই চরম হতাশার মুহূর্তে তিনি এই বৃদ্ধাশ্রমের খোঁজ পান, তখন যেন নতুন করে জীবনের ঠিকানা খুঁজে পান। ১২ বছর ধরে এই হোমের অন্য বাসিন্দাদের সঙ্গে তাঁর দিন কাটছে সুখে-শান্তিতে। এটি কেবল একটি বৃদ্ধাশ্রম নয়, এটি মায়েদের জন্য একটি পরিবার। ভৈরব নদের তীরে, প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশে গড়ে ওঠা এ জায়গা তাই কেবল একটি ভবন নয়, এটি ভালোবাসার এক আশ্রয়স্থল।

২০০৮ সালে একটি মাটির ঘরে শুরু হয়েছিল এ বৃদ্ধাশ্রমের পথচলা, আর এখন সেখানে পাকা ভবন, প্রার্থনাকক্ষ, বিনোদনের ব্যবস্থা এবং চিকিৎসার সুবিধা রয়েছে। থাকা-খাওয়ার সুবিধা ছাড়াও মায়েদের মানসিক শান্তি নিশ্চিত করার জন্য গল্পের আসর, গান, নাচ ও ভ্রমণেরও ব্যবস্থা আছে এখানে। এখানে আসা মায়েরা জ্যোৎস্না মুখার্জিকে ভালোবাসেন নিজের মেয়ের মতোই।

জ্যোৎস্না মুখার্জির কার্যক্রমে গর্বিত এলাকার বাসিন্দারাও। সমসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাশেম আলী বলেন, ‘অজপাড়াগাঁয়ে এমন ভালো বৃদ্ধাশ্রম বাংলাদেশে আছে কি না, আমার জানা নেই। এখানকার পরিবেশ খুব সুন্দর। এখানে থাকার পাশাপাশি পায়ের জুতা থেকে শুরু করে সবকিছু বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। ওষুধও দেওয়া হয়।’

প্রশংসনীয় বিষয়, কোনো অনুদান বা কারও সাহায্য–সহযোগিতা ছাড়াই জনসেবামূলক এমন মহতী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন জ্যোৎস্না মুখার্জি। তাঁর এই বৃদ্ধাশ্রম চলে নিজস্ব আয়ে। কৃষি, পশুপালন ও ব্যবসার আয় দিয়ে তিনি এই মহৎ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। এটি প্রমাণ করে, যদি সদিচ্ছা থাকে, তবে নিজের উদ্যোগে একটি বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব। সমাজসেবা অধিদপ্তরের স্বীকৃতি এবং স্থানীয় প্রশাসনের প্রশংসা এ প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বকেই তুলে ধরে।

ওল্ড কেয়ার হোমে শুধু মায়েরা নন, বাবারাও থাকবেন—এমন পরিকল্পনায় বৃদ্ধাশ্রমটির পরিসর আরও বাড়াতে চান জ্যোৎস্না মুখার্জি। তাঁর সেই স্বপ্নও পূরণ হোক। তাঁর এই নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টা সমাজের জন্য এক দৃষ্টান্ত। তাঁর অনুপ্রেরণায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আরও সামর্থ্যবান ও উদ্যোগী মানুষ এগিয়ে আসবেন এবং অবহেলিত মানুষের শেষজীবনে ভরসার হাত হয়ে দাঁড়াবেন, সেটিই কাম্য।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন না হলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা হবে: আপ বাংলাদেশ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচন ২৭ নভেম্বরেই অনুষ্ঠিত না হলে তা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রশাসনের প্রতারণা বলে মন্তব্য করেছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। এ সময় পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরে সংগঠনটি।

সোমবার (৩ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

২৭ নভেম্বরই জকসু নির্বাচন চায় ছাত্রশিবির

জকসু নির্বাচন নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ ছাত্র সংগঠনগুলোর

দাবিগুলো হলো— আসন্ন জকসু নির্বাচন ২৭ নভেম্বরেই অনুষ্ঠিত করতে হবে; নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে; নির্বাচন কমিশনের পূর্ণ নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা রক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে; সব সংগঠনকে সমান সুযোগ দিয়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে; অরাজনৈতিক, নিরাপদ ও শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য ও জবির প্রধান সংগঠক মাসুদ রানা বলেন, “আমরা যখন জকসুর দাবিতে অনশন করছিলাম, তখন প্রশাসন ২৭ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাদের অনশন ভাঙিয়েছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, একটি মহল নির্বাচন পেছানোর পাঁয়তারা করছে।”

তিনি বলেন, “ডিসেম্বর মাসে ভর্তি পরীক্ষা ও বিভিন্ন বিভাগের ফাইনাল পরীক্ষা থাকায় ওই মাসে নির্বাচন অসম্ভব। তাই ২৭ নভেম্বরই জকসু নির্বাচনের উপযুক্ত সময়।”

তিনি আরো বলেন, “আমরা জানতে চাই, নির্বাচন পেছানোর মধ্য দিয়ে জকসু নির্বাচন ভণ্ডুল করার কোনো প্রক্রিয়া চলছে কিনা। পুরান ঢাকাকে অস্থিতিশীল করে একটি মহল নির্বাচন পণ্ড করতে চায়। শিক্ষার্থীদের জীবনের প্রথম ভোট হবে জকসু নির্বাচন—তা থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না।”

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ