যশোরের ‘ওল্ড কেয়ার হোম’কে অভিবাদন
Published: 5th, August 2025 GMT
বয়স বাড়লে সন্তানের অবহেলা আর সমাজে একাকিত্বের ভারে অনেক মা-বাবার জীবনই দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। যে সন্তানেরা একসময় তাঁদের হাত ধরে চলতে শিখেছে, সেই সন্তানেরাই একসময় তাঁদের হাত ছেড়ে দেয়। এমন হাজারো অবহেলিত মা–বাবার গল্প আমাদের সমাজে নতুন নয়। কিন্তু সেই আঁধারের মধ্যেও কিছু মানুষ আলোর দিশা দেখান। যশোরের সমসপুর গ্রামের জ্যোৎস্না মুখার্জি তেমনই এক ব্যতিক্রমী মানুষ, যিনি অসহায় মায়েদের জন্য গড়ে তুলেছেন এক নিরাপদ আশ্রয়, যার নাম ‘ওল্ড কেয়ার হোম’।
স্বামী হারানোর পর ট্রেন দুর্ঘটনায় একমাত্র ছেলের মৃত্যু রাবেয়া বেগমকে (৮০) প্রায় নিঃস্ব করে দিয়েছিল। সেই চরম হতাশার মুহূর্তে তিনি এই বৃদ্ধাশ্রমের খোঁজ পান, তখন যেন নতুন করে জীবনের ঠিকানা খুঁজে পান। ১২ বছর ধরে এই হোমের অন্য বাসিন্দাদের সঙ্গে তাঁর দিন কাটছে সুখে-শান্তিতে। এটি কেবল একটি বৃদ্ধাশ্রম নয়, এটি মায়েদের জন্য একটি পরিবার। ভৈরব নদের তীরে, প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশে গড়ে ওঠা এ জায়গা তাই কেবল একটি ভবন নয়, এটি ভালোবাসার এক আশ্রয়স্থল।
২০০৮ সালে একটি মাটির ঘরে শুরু হয়েছিল এ বৃদ্ধাশ্রমের পথচলা, আর এখন সেখানে পাকা ভবন, প্রার্থনাকক্ষ, বিনোদনের ব্যবস্থা এবং চিকিৎসার সুবিধা রয়েছে। থাকা-খাওয়ার সুবিধা ছাড়াও মায়েদের মানসিক শান্তি নিশ্চিত করার জন্য গল্পের আসর, গান, নাচ ও ভ্রমণেরও ব্যবস্থা আছে এখানে। এখানে আসা মায়েরা জ্যোৎস্না মুখার্জিকে ভালোবাসেন নিজের মেয়ের মতোই।
জ্যোৎস্না মুখার্জির কার্যক্রমে গর্বিত এলাকার বাসিন্দারাও। সমসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাশেম আলী বলেন, ‘অজপাড়াগাঁয়ে এমন ভালো বৃদ্ধাশ্রম বাংলাদেশে আছে কি না, আমার জানা নেই। এখানকার পরিবেশ খুব সুন্দর। এখানে থাকার পাশাপাশি পায়ের জুতা থেকে শুরু করে সবকিছু বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। ওষুধও দেওয়া হয়।’
প্রশংসনীয় বিষয়, কোনো অনুদান বা কারও সাহায্য–সহযোগিতা ছাড়াই জনসেবামূলক এমন মহতী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন জ্যোৎস্না মুখার্জি। তাঁর এই বৃদ্ধাশ্রম চলে নিজস্ব আয়ে। কৃষি, পশুপালন ও ব্যবসার আয় দিয়ে তিনি এই মহৎ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। এটি প্রমাণ করে, যদি সদিচ্ছা থাকে, তবে নিজের উদ্যোগে একটি বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব। সমাজসেবা অধিদপ্তরের স্বীকৃতি এবং স্থানীয় প্রশাসনের প্রশংসা এ প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বকেই তুলে ধরে।
ওল্ড কেয়ার হোমে শুধু মায়েরা নন, বাবারাও থাকবেন—এমন পরিকল্পনায় বৃদ্ধাশ্রমটির পরিসর আরও বাড়াতে চান জ্যোৎস্না মুখার্জি। তাঁর সেই স্বপ্নও পূরণ হোক। তাঁর এই নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টা সমাজের জন্য এক দৃষ্টান্ত। তাঁর অনুপ্রেরণায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আরও সামর্থ্যবান ও উদ্যোগী মানুষ এগিয়ে আসবেন এবং অবহেলিত মানুষের শেষজীবনে ভরসার হাত হয়ে দাঁড়াবেন, সেটিই কাম্য।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
পিসিবির বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ আইসিসির, পাঠিয়েছে মেইল
পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের সঙ্গে ভারতীয়দের হাত না মেলানো বিতর্কে এবার নতুন মোড়! ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) কর্মকাণ্ডে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে আইসিসি। ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি পিসিবির বিরুদ্ধে ‘অশোভন আচরণ’ এবং খেলোয়াড় ও ম্যাচ কর্মকর্তাদের নির্ধারিত এলাকার (পিএমওএ) একাধিক নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে।
বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের খবরে বলা হয়েছে, এশিয়া কাপের নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ জানিয়ে পিসিবিকে ই–মেইল পাঠিয়েছে আইসিসি।
এশিয়া কাপ–সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র পিটিআইকে বলেছেন, ‘আইসিসির সিইও সঞ্জোগ গুপ্তা পিসিবিকে চিঠি দিয়ে বলেছেন, ম্যাচের দিনে তাঁরা বারবার বিএমওএয়ের নিয়ম ভেঙেছে। পিসিবি এই ই-মেইল পেয়েছে।’
১৪ সেপ্টেম্বর দুবাইয়ে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের শুরু ও শেষে সূর্যকুমার যাদবের দল সালমান আগাদের সঙ্গে হাত মেলায়নি। এ ঘটনায় পিসিবি ম্যাচ রেফারি পাইক্রফটকে দোষারোপ করে তাঁর অপসারণের দাবি জানায় আইসিসির কাছে। আইসিসি তা আমলে না নেওয়ার পর ১৭ সেপ্টেম্বর আরব আমিরাতের বিপক্ষে ম্যাচ বয়কটের হুমকি দেয় পিসিবি। এমনকি ম্যাচ শুরুর সময় এক ঘণ্টা পিছিয়েও দেওয়া হয়।
পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, পিসিবির সঙ্গে একমত হয়ে আইসিসি রাজি হয় যে ভারত ম্যাচ-সংক্রান্ত বিষয় মেটাতে পাইক্রফট টসের আগে অধিনায়ক ও ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করবেন।
সূত্র বলে, ‘উদ্দেশ্য ছিল ভারত ম্যাচের টসের সময় যেকোনো ভুল–বোঝাবুঝি বা ভুল যোগাযোগ হয়েছিল, তা দূর করা।’ সূত্র আরও জানায়, পিসিবির পক্ষ থেকে বৈঠকে তাদের মিডিয়া ম্যানেজার নাঈম গিলানিকে সঙ্গে নিয়ে আসা হয় এবং তাঁর উপস্থিতি নিয়ে জোরাজুরি করা হয়।
আরও পড়ুনএশিয়া কাপের সুপার ফোরে বাংলাদেশের ম্যাচ কবে কখন৪ ঘণ্টা আগেআইসিসির দুর্নীতিবিরোধী ম্যানেজার পিসিবির মিডিয়া ম্যানেজারকে ঢুকতে দেননি। কারণ, তিনি মুঠোফোনসহ পিএমওএ এলাকায় ঢুকতে চাইছিলেন। সূত্রের বর্ণনায়, তখন পিসিবি হুমকি দেয় যে মিডিয়া ম্যানেজারকে প্রবেশ করতে না দিলে তারা ম্যাচ থেকে সরে দাঁড়াবে। শেষ পর্যন্ত তারা জোর করে বৈঠকের ভিডিও (শব্দ ছাড়া) ধারণ করে, যা ছিল পিএমওএ নিয়মের একটি লঙ্ঘন।
ভারত–পাকিস্তান ম্যাচে টসের সময় দুই অধিনায়ককে হাত মেলাতে বারণ করেন ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফট (বাঁয়ে)