‘একজন মানুষ কয়জনকে সামাল দিতে পারি’
Published: 17th, January 2025 GMT
গাইবান্ধায় শীতের প্রকোপ বেড়েছে। ঠান্ডার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত এক সপ্তাহে (৯ থেকে ১৫ জানুয়ারি) গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে মাত্র ২০ শয্যার বিপরীতে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি হয়েছে ২৬৩ জন। শিশু ওয়ার্ডে ৬ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি হয়েছে ৮৮ জন। সাতদিনে মোট রোগী ভর্তি হয়েছে ৩৫১ জন।
প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালের বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছে প্রায় দুই শতাধিকেরও বেশি রোগী। গত এক মাসে তাসলিমা খাতুন (২২) নামে এক নারী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
এদিকে, শয্যা সংকট ছাড়াও পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও সেবিকা (নার্স) সংকট ও দুর্গন্ধযুক্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে চিকিৎসা নিতে এসে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে দূর থেকে আসা রোগী ও স্বজনদের।
আরো পড়ুন:
কিশোরগঞ্জে নার্সের ভুলে ২ রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ, তদন্ত কমিটি
‘খালেদা জিয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে বিদেশ গেছেন, আর হাসিনা পালিয়ে’
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের অন্যান্য ওয়ার্ডের মতো ডায়রিয়া ওয়ার্ডেরও বেহাল দশা। ময়লা ও দুর্গন্ধে টেকা মুশকিল। অসুস্থ শিশুকে এক হাতে ধরে অন্য হাতে নাক চেপে ধরে আছেন শিশুর স্বজনরা। দুর্গন্ধ এড়াতে নার্সরাও মাস্ক দিয়ে নাক ঢেকে রেখেছেন। পর্যাপ্ত নার্স না থাকায় ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনের ভোগান্তির পাশাপাশি যথাযথ চিকিৎসার সংকট দেখা দিয়েছে। শয্যা সংকটের কারণে অনেক রোগীকে মেঝেতে ও বারান্দায় রাখা হয়েছে।
ফুলছড়ি উপজেলার বালাশীঘাট গ্রামের শিশু মিম বাবুকে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি করিয়েছেন তার মা আমেনা বেগম। তিনি বলেন, “আমার ছেলের বয়স ৮ মাস। তিনদিন হল ডায়রিয়াজনিত সমস্যায় ওকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। রোগীর এতো চাপ যে, এখানে থাকতেই সমস্যা হচ্ছে। নার্স কম। দুর্গন্ধে থাকা যাচ্ছে না। ছেলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাধ্য হয়ে থাকতে হচ্ছে।”
গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়ন থেকে ছেলে ছোয়াইবকে (১৩ মাস) নিয়ে এসেছেন সাথি বেগম। দুই দিন ধরে ছেলের পাতলা পায়খানা। তিনি বলেন, “স্থানীয় চিকিৎসায় ভালো না হওয়ায় দূর থেকে এখানে এসেছি। সন্তানকে ভর্তি করার ২৪ ঘণ্টা পার হলেও, এখনো ডাক্তার আসেনি। নার্স শুধু এসে স্যালাইন দিয়ে গেছে। বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করলে অনেক টাকা লাগে। ছেলেকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি।”
গাইবান্ধা পৌর এলাকার নাজমা খাতুন নাম আরেক শিশুর মা বলেন, “পরশু সকালে মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। হাসপাতাল থেকে খাওয়ার স্যালাইনসহ যাবতীয় ওষুধ দিলেও স্যালাইন সেট ও ক্যানোলা বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। একটা বাথরুম, তাও আবার ভাঙ্গা। ময়লা আর গন্ধের কারণে বাথরুমেও যাওয়া যায় না।”
ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স তাহমিনা আক্তার বলেন, “তিনজন রোগীর জন্য একজন নার্স থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে ৪০ জন রোগীর বিপরীতে একজন নার্স দায়িত্ব পালন করছি। একজন মানুষ কয়জনকে সামাল দিতে পারি। কতজন নার্স আছে?”
দুর্গন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “গোটা হাসপাতালে দুই তিনজন ক্লিনার আছে। তারা ঠিকমতো কাজ করতে চায় না। আমাদের এখানে পর্যাপ্ত নার্স নেই।”
গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা.
হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে তিনি বলেন, “পৌরসভা থেকে দায়িত্বরত পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা কাজে আসছে না। তাই, ময়লা ও দুর্গন্ধের বিষয়টি সমাধান করা যাচ্ছে না।”
গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু) ডা. আবুল আজাদ মন্ডল বলেন, “শীতজনিত কারণে শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের হার বেশি।”
শিশুদের ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, “এসময় শিশুদের প্রতি বেশি যত্ন নিতে হবে। বাসি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। মোটা কাপড় পরিধান করাতে হবে। এই ঠান্ডায় মানুষের সচেতনতা না বাড়লে ডায়রিয়া মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যাবে।”
গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাহবুব হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ঢাকা/মাসুদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।
জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।
কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।
সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।