Samakal:
2025-06-16@12:50:58 GMT

ছড়া কবিতা

Published: 17th, January 2025 GMT

ছড়া কবিতা

শেখ সালাহ্উদ্দীন 
শীত আসে না 
মায়ের কাছে

শীতের কামড় লাগলে গায়ে পৌষ-মাঘে
বাঘেরও হয় মেজাজ খারাপ, চেঁচায় রাগে।
শীতে কাঁপে হাড়-মাংস; দাঁতের মাড়ি     
রয় না বশে, ওপর-নিচে মারে বাড়ি। 
শিকার ধরে আহার করাও মাথায় ওঠে  
প্রাণ বুঝি যায় বেরিয়ে ওদের শীতের চোটে।

গরু ছাগল সকাল-রাতে কাঁপে শীতে
ওদের দিকেও হয় আলাদা নজর দিতে
গৃহস্থ তাই ওদের গায়ে পরায় ছালা    
মাঝে মাঝে গোয়ালে হয় আগুন জ্বালা! 

মা যতই বকুনি দেয়, উঠতে বলে
ঘাপটি মেরে আমরা থাকি লেপের তলে। 
লেপের তলে আয়েশি ওম বেশ তো লাগে 
ওমটা ভেঙে সাতসকালে কে-বা জাগে।    

দস্তানা শাল মাঙ্কি-টুপি পরা, তবু-
বুড়ো দাদু ঘরের মাঝে জবুথবু
মাটির তাওয়ায় নিভু নিভু আগুন সেঁকে
হচ্ছে না ওম, শিরদাঁড়া তার যাচ্ছে বেঁকে।
বলে হেঁকে- বউমা আবার কোথায় গেলে
নতুন আগুন দাও নেভা এই আগুন ফেলে।

ড্রয়িং-রুমে বসে চেঁচায় বড় চাচা- 
যাচ্ছি জমে, চা ছাড়া তো যায় না বাঁচা!   
এক পেয়ালা চা দিতে হয় এতো কি লেট? 
আনতে চা-টা ছোট বউ কি গেছে সিলেট?   

শীত আসে না কেবল আমার মায়ের কাছে
পাত্তা দেবে শীতকে এমন সুযোগ আছে? 
কাজের চাপে হয় না রাখা শীতের খবর 
হোক না সে শীত হাড়-কাঁপানো, তারচে’ জবর!
 

 

প্রজীৎ ঘোষ 
নতুন দিনে নতুন আশা

নতুন দিনে নতুন আশার স্বপ্ন করি চাষ;
নতুন আলোয় আলোকিত আমাদের চারপাশ।
পুব আকাশে নতুন সূর্য যখন দিলো উঁকি;
গরম লেপের আদর ঠেলে উঠে পড়লো খুকি।

কুয়াশারা লুকোয় কোথায়, কোথায় বা সে থাকে?
শীতের রাতে আকাশ কেন এমন ছবি আঁকে?
এমন হাজার প্রশ্ন ঘোরে খুকির ছোট্ট মাথায়;
হাজার স্বপন নিয়ে ঘুমায় দুইটি চোখের পাতায়। 

নতুন করে নতুন ভোরে নতুন লুকোচুরি;
শীতের চোটে কাঁপছে দ্যাখো থুত্থুড়ে এক বুড়ি। 
বুড়ি তো নয়, নয় সে বুড়ি হিম কুয়াশার চাঁদ;
নতুন দিনে নতুন আশা ভাঙলো খুশির বাঁধ।
 

 

সুমন বনিক 
শীতের পিঠে

ফাস্টফুডে আর জাঙ্কফুডে
মেজাজটা খিট-খিটে  
এসব খেয়ে দেশি পিঠার
স্বাদটা কি আর মিটে?

শিকড় খুঁড়ে তাই তো খুঁজি 
বাংলার পিঠে-পুলি 
গ্রামে-গঞ্জের হৃদয় জুড়ে 
রসনার সেই বুলি!

মায়ের হাতের মিষ্টি পায়েস
ভাপা চিতই পিঠে 
মুগেরকুলি পাটিসাপটা 
স্বাদটা যে কী মিঠে!

পৌষ-পাবনের রাতের স্মৃতি
যাইনি আজো ভুলে
সুঘ্রাণে তাই মনটা ভরি
স্মৃতির দুয়ার খুলে।

 

 

শাহরিয়ার শাহাদাত 
বাংলাদেশি ভ্যান

ঘড়ির কাঁটা হাঁটছে ঠিকই 
দৌড়ে লুকায় দিন 
শীতবিকেলের মিষ্টি সময়
জলদি লুফে নিন। 
বলছি কেন, আবাক হলেন
এমন অফার হয়?
দিন গিলে খায় মাঘের দত্যি
জানেন তো নিশ্চয়!

শীতের এমন দই কুয়াশায় 
ডিগবাজি দেয় রোদ
সীমিত এই রোদ প্যাকেজের
করছি অভাববোধ! 
রাতের বদল দিনটা শীতে
বড়ত কিছু, ইস! 
স্কুলের মাঠে ঝিমায় বিকেল
আলসে-নিরামিষ। 

কখন ক্লাসের শুরু ও শেষ
ভীষণ অবাক হই
ব্যাগের ভেতর কাঁপছে যেন
ঠান্ডা টিফিন, বই! 
তাই বলি কী– ও শীত বুড়ো
সাইবেরিয়ান ম্যান
ফ্রি টিকিটে যাবেন? রেডি
বাংলাদেশি ভ্যান!
 

 

চন্দনকৃষ্ণ পাল 
রঙ

বিকেলগুলো সোনালি রঙ
মাখিয়ে যায় গাছের ডালে 
সবুজ এবং সোনালিতে 
কী আনন্দ পাহাড় ঢালে।

পুব পাশের ঐ কালচে সবুজ 
ওখান থেকেই চোখটা মেলে 
দূর আকাশের সোনালি রঙ 
ছোঁয়াছুয়ির খেলা খেলে।

বিকেলগুলো কী আনন্দে ভরা 
আকাশকনের রঙটা দিয়ে গড়া। 
 

 

সনজিত দে 
একমুঠো রোদ

হাড়কাঁপানো শীতে
মিলেছি সঙ্গীতে
যাচ্ছি হাটে সকাল সকাল ভাবছি যেতে যেতে
আস্তে-ধীরে উষ্ণতায় এক রোদ উঠেছে তেতে।
রোদ নিয়ে তাই ফিরবো বাড়ি
চল না গাড়ি তাড়াতাড়ি
ব্যাগ ভরে আজ রোদকে নিয়ে ফিরবো যখন বাড়ি
সব ছায়ারা পড়বে ঢাকা শুকাবে মা’র শাড়ি।

ফর্সা হবে উঠোন যখন
ফিক করে মা হাসবে তখন
এমন হাসি দেখিনি মার অনেক বছর ধরে
সেই যে বাবা হারিয়ে গেছে হঠাৎ ফুড়ুৎ করে।

রোদ দিয়ে তাই হাসি কিনি পেয়ে রোদের ছটা
গাছগাছালি পশু-পাখি হাসছে করে ঘটা।
সব পেয়েছি রোদকে দিয়ে যেন মনে হয়
শীতের সকাল একমুঠো রোদ বুঝেছ নিশ্চয়।
 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

যাত্রী মিলছে না, রোজগারে ভাটা রাইড শেয়ারের মোটরসাইকেলচালকদের

পবিত্র কোরবানির ঈদের ১০ দিনের সরকারি ছুটি শেষ হয়েছে। কিন্তু রাজধানীর সড়কে এখনো সেই ব্যস্ততা ফেরেনি। এদিকে দীর্ঘ ছুটিতে ভাড়ায় চালিত বাইকচালকদের আয় নেমেছে প্রায় অর্ধেকে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে চালকেরা বাইক নিয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় বসে থাকলেও সেভাবে ভাড়া মিলছে না। রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকা, ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজার মোড় ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে আরও সপ্তাহ দুয়েক সময় লাগতে পারে, বলে জানান চালকেরা। বিভিন্ন রাইড শেয়ার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও একই কথা বলা হয়েছে। তারা জানাচ্ছে, ঈদের ছুটিতে যাত্রীসেবা কমেছে ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত।

ছুটিতে আয় কমার বিষয়ে বাইকচালকেরা জানান, স্বাভাবিক সময়ে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা আয় হলেও ঈদের ছুটিতে তা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় নেমে এসেছে। আবার প্রধান সড়কগুলোয় অটোরিকশা চলাচল করছে, যা বাইকের যাত্রী হ্রাসে ভূমিকা রাখছে।

খরচের হিসাব দিয়ে বাইকচালক মাকসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দিনে গড়ে ৩০০ টাকার তেল লাগে। খাওয়া খরচ আছে ২০০ টাকা। সব মিলিয়ে ৫০০ টাকার বেশি খরচ আছে। ২ দিন ধরে খরচ বাদে ৫০০ টাকার মতো থাকছে। অন্য সময়ে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা থাকে। কারওয়ান বাজারের মেট্রো স্টেশনের নিচে এই চালকের সঙ্গে কথা হয়।

প্রধান সড়কে অটোরিকশা দেখিয়ে পুরান ঢাকার এই বাসিন্দা বলেন, ‘রিকশা প্রধান সড়কে উঠছে। এতে আমরা মাইর খেয়ে যাই। সিএনজি এবং প্যাডেল রিকশাও যাত্রী পায় না।’ ফার্মগেট, খামারবাড়ি ও আড়ং মোড়ে বাইকচালকদের সঙ্গে কথা বলে একই চিত্র দেখা যায়।

দুই বছর ধরে রাজধানীতে রাইড শেয়ার করছেন কুড়িগ্রামের মিজানুল করিম। গতকাল রোববার সকালে বের হয়ে কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট ঘুরে বেলা দুইটা নাগাদ খামারবাড়ি মোড়ে বসে ছিলেন। দেড় ঘণ্টা অপেক্ষার পর বনানী পর্যন্ত যাওয়ার একজন যাত্রী পান ১০০ টাকা ভাড়ায়। মিরপুরের এই বাসিন্দা প্রথম আলোকে জানান, এ মাসটা হয়তো এভাবেই কেটে যাবে। যাঁরা বাড়ি গেছেন, তাঁরা ধীরে ধীরে ফিরবেন। আবার মাস শেষে বেতন না পেলে যাত্রীরা বাইকে উঠতে চাইবেন না।

ফার্মগেট মোড়ে কথা হয় আরেক চালক আরাফাত টিপুর সঙ্গে। গত বৃহস্পতিবার তিনি সকাল ও বিকেল মিলিয়ে মাত্র ৩০০ টাকা ভাড়া পেয়েছেন। একই স্থানে যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন আবদুস সাত্তার। সকাল ১০টায় বের হয়ে বেলা ৩টা নাগাদ তিনি মাত্র ২০০ টাকার ভাড়া পেয়েছেন। এক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষায় আছেন জানিয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখন রাস্তায় অনেক বাইক। ১০০ টাকা পেলেই যাত্রী নিয়ে চলে যাচ্ছে। এক বছর আগেও দিনে দুই হাজার টাকা আয় করা যেত। কিন্তু এখন সেটা কমে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় নেমে এসেছে।’ তবে স্বাধীন মতো চালানো যায়, তাই ছাত্রসহ অনেকে বাইক চালাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

এদিকে টানা ১০ দিন ছুটির পর গতকাল সরকারি অফিস ও ব্যাকগুলো খুলেছে। তবে ব্যাংকগুলোয় তেমন ভিড় দেখা যায়নি। দেশে এখন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন প্রায় ১৫ লাখ। ছুটি শেষ হলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যাত্রী নিয়ে রাজধানীর টার্মিনালগুলোয় ঢুকছে বাস। ব্যক্তিগত গাড়িও বেশি প্রবেশ করছে ঢাকায়। রাজধানীমুখী ট্রেন ও লঞ্চে যাত্রীদের চাপ ছিল।

রাজশাহীর সাবিদুল ইসলাম গতকাল ৩০০ টাকা ভাড়া পেয়েছেন বাইক চালিয়ে। গতকালও সকাল থেকে দুপুর নাগাদ একই পরিমাণ ভাড়া পেয়েছেন বলে জানান। কারওয়ান বাজার মোড়ে কথা হয় মগবাজারে ভাড়া বাসায় থাকা এই চালকের সঙ্গে। তিনি জানান, তাঁর স্ত্রী একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন। তাই তাঁকে ঢাকায় থাকতে হয়। কিন্তু বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছেন। আগে একটি কোচিং সেন্টারে দুই মাস কাজ করলেও বেতন নিয়ে সমস্যা হওয়ায় তা ছেড়েছেন। পরে মোবাইলের যন্ত্রাংশ বিক্রির একটি কোম্পানিতে কাজ করেন। কিন্তু মাসে চার লাখ টাকার বিক্রির টার্গেট পূরণ করতে না পেরে এখন বাইক চালাচ্ছেন। তবে সরকার পতনের পর থেকে ইনকাম ভালো হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

বাইকের মতো রাস্তায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রীও কম। রাইড শেয়ার প্রতিষ্ঠান ‘ওভাই’ কোম্পানির তথ্যমতে, ঈদের ছুটিতে তাদের যাত্রীসেবা কমেছে ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ। একই সময়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক কমেছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। তবে যাত্রী পরিবহন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে আরও দুই সপ্তাহ লাগতে পারে বলে মনে করছে কোম্পানিটি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ