তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ড আবরারের ঘটনাকেও হার মানায়
Published: 24th, January 2025 GMT
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী সন্দেহে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এর দায়ে বুয়েটের ২০ শিক্ষার্থীকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বুয়েটের কয়েকশ’ গজ দূরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। একই ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটেছে সেখানে। মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক তোফাজ্জল হোসেনকে চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তোফাজ্জলকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা উঠে এসেছে পুলিশের তদন্তে।
পুলিশ জানিয়েছে, তোফাজ্জল হোসেনকে পিটিয়ে হত্যা যেন আবরার হত্যাকাণ্ডকেও হার মানায়। তোফাজ্জলকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলেন ঢাবির কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাদেরকেও ফাঁসাতে চেয়েছিলেন অভিযুক্তরা।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৮টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জল হোসেনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরদিন ১৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের সুপারভাইজার মোহাম্মদ আমানুল্লাহ। মামলাটি তদন্ত করে গত ৩০ ডিসেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার পরিদর্শক মো.
আরো পড়ুন:
সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নিহত
ফরিদপুরে চোখ তুলে নিয়ে যুবদল নেতাকে পিটিয়ে হত্যা
চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন—ঢাবির ফজলুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জালাল মিয়া; মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সুমন মিয়া; পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মো. মোত্তাকিন সাকিন; ভূগোল বিভাগের আল হোসেন সাজ্জাদ; ওই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আহসান উল্লাহ, ওয়াজিবুল আলম, ফিরোজ কবির, আব্দুস সামাদ, শাকিব রায়হান, ইয়াসিন আলী, ইয়ামুজ্জামান ইয়াম, ফজলে রাব্বি, শাহরিয়ার কবির শোভন, মেহেদী হাসান ইমরান, রাতুল হাসান, সুলতান মিয়া, নাসির উদ্দিন, মোবাশ্বের বিল্লাহ, শিশির আহমেদ, মহসিন উদ্দিন এবং আব্দুল্লাহহিল ক্বাফি। তাদের মধ্যে প্রথম ছয় জন আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে।
চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান উল্লেখ করেছেন, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের মাঠে ক্রিকেট খেলা হয়। এ সময় ফজলুল হক মুসলিম হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের ছয়টি মোবাইল ফোন চুরি হয়। এরপর সন্ধ্যায় ওই মাঠে ফুটবল খেলা শুরু হয়। খেলা পরিচালনা করছিলেন সুলতান মিয়া। ওই দিন রাত পৌনে ৮টার দিকে সুলতান মিয়ার পাশে বসেন তোফাজ্জল হোসেন। সুলতান মিয়া তাকে চোর হিসেবে সন্দেহ করেন।
একপর্যায়ে সুলতান মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে তোফাজ্জলকে ঘুষি ও লাথি মারেন। খেলার মাঠে থাকা ওয়াজিবুল, মেহেদী হাসান ইমরান, ইয়ামুজ্জামান ওরফে ইয়াম সেখানে জড়ো হন। তারা তোফাজ্জলকে ধরে ফজলুল হক মুসলিম হলের মূল ভবনের অতিথি কক্ষে নিয়ে যান।
ওই কক্ষে তোফাজ্জলকে এলোপাথারি চড়-থাপ্পড় মারেন সুলতান মিয়া, ইয়ামুজ্জামান ও মেহেদী হাসান ইমরান। কিছুক্ষণ পর সুমন মিয়া অতিথি কক্ষে এসে তোফাজ্জলকে এলোপাথারি চড়-থাপ্পড় মারেন। ভিকটিম খুবই ক্ষুধার্ত থাকায় কিল-ঘুষি খাওয়ার পরও আসামিদের কাছে ভাত খেতে চান। ওয়াজিবুল আলম, সুমন মিয়া ও ইয়ামুজ্জামান তাকে ফজলুল হক মুসলিম হলের ক্যান্টিনে নিয়ে ভাত খাওয়ান।
ভাত খাওয়ার সময় ক্যান্টিনে সামাদ হোসেন, মোত্তাকিন সাকিন শাহ, সাকিব রায়হান, রাতুল হাসান, ফিরোজ কবির, ফজলে রাব্বি ও নাছির উদ্দিন আসেন। তারা ক্যান্টিনে নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করেন। তোফাজ্জলকে ভাত খাওয়ানোর পর ওয়াজিবুল, সুমন, সামাদ হোসেন, মোত্তাকিন, সাকিব রায়হান, ফজলে রাব্বি, ফিরোজ কবির, রাতুল হাসান, নাছির উদ্দিন তাকে ক্যান্টিন থেকে ফজলুল হক মুসলিম হলের দক্ষিণ ভবনের (এক্সটেনশন ভবন) অতিথি কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে নেওয়ার পর দক্ষিণ এক্সটেনশন ভবন থেকে রাতুল হাসান স্ট্যাম্প নিয়ে দৌড়ে অতিথি কক্ষে আসেন। ইয়াম ও সাকিব রায়হান হলের সামনের মাঠ থেকে বাঁশের লাঠি নিয়ে সেখানে আসেন। মোত্তাকিন তোফাজ্জলের কাছ থেকে তার আত্মীয়-স্বজনের মোবাইল নম্বর চান। তোফাজ্জল তার ভাবি ও মামার নম্বর দেন।
মোত্তাকিন তোফাজ্জলের মামা আব্দুর রব মিয়ার সঙ্গে কথা বলেন। রব মিয়া জানান, তোফাজ্জল মানসিক ভারসাম্যহীন ও ভবঘুরে প্রকৃতির, তবে চোর নন।
মোত্তাকিন তার মোবাইল চুরি বাবদ ৩৫ হাজার টাকা দাবি করেন। আব্দুর রব মিয়া তা দিতে অস্বীকার করেন। এতে আসামিরা তোফাজ্জলের ওপর ক্ষিপ্ত হন এবং নিজেদের মধ্যে শলা-পরামর্শ করেন। মোত্তাকিন স্ট্যাম্প দিয়ে তোফাজ্জলের কাঁধে ও পিঠে বেধড়কভাবে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেন। ইয়ামুজ্জামান বাঁশের লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। সাকিব রায়হান বাঁশের লাঠি দিয়ে তোফাজ্জলের পায়ে ও উরুতে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করেন। সামাদ হোসেন ইয়ামুজ্জামানের কাছ থেকে বাঁশের লাঠি নিয়ে তোফাজ্জলের পায়ে ও উরুতে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করেন। ফিরোজ কবির, ফজলে রাব্বি, রাতুল হাসান ও মেহেদী হাসান ইমরান স্ট্যাম্প দিয়ে হাতে, পায়ে ও পিঠে আঘাত করেন। নাসির উদ্দিনের মোবাইল ফোন চুরি হওয়ায় তিনিও তোফাজ্জলকে কাঠের লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। খবর পেয়ে ইয়াছিন গাইন, মোবাচ্ছির বিল্লাহ, মহসিন উদ্দিন সাফি, শিশির আহমেদ ও মোবাশ্বের বিল্লাহ অতিথি কক্ষে আসেন। ইয়াছিন, মোবাচ্ছির, মহসিন, শিশির আহমেদ ও মোবাশ্বের বিল্লাহ স্ট্যাম্প দিয়ে তোফাজ্জলকে মারপিট করেন। সুমন মিয়া চড়-থাপ্পড় মারেন।
গণপিটুনির সংবাদ পেয়ে ওই হলের হাউজ টিউটর ড. জহির রায়হান, ড. মাহবুব আলম, ড. শফিউল আলম ও ড. আলমগীর হোসেন অতিথি কক্ষে এসে শিক্ষার্থীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। তবে, তারা হাউজ টিউটরের নিষেধ শোনেননি।
তদন্ত কর্মকর্তা জানান, তোফাজ্জল মার-পিটে নিস্তেজ হয়ে পড়েন। আসামিরা তাকে আবার ফজলুল হক মুসলিম হলের মূল ভবনের অতিথি কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে নতুন করে তাদের সঙ্গে যোগ দেন জালাল মিয়া, আহসান উল্লাহ, সাজ্জাদ হোসেন, মেহেদী হাসান ইমরান, শাহরিয়া কবির শোভন ও আব্দুল্লাহিল কাফি। আসামিরা নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করেন। জালালকে পেয়ে সবাই তোফাজ্জলকে মারার জন্য আরো উৎসাহ পান। জালাল মিয়া স্ট্যাম্প দিয়ে তোফাজ্জলের পায়ে, উরুতে, কোমরে ও পিঠে এলোপাথারি মারেন। তোফাজ্জলের ডান হাতের ওপর পা দিয়ে চাপ দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন জালাল। তার এক হাতে রশি বেঁধে জানালার সঙ্গে লাগিয়ে স্ট্যাম্প দিয়ে বেদম পেটানো হয়। আহসান উল্লাহ স্ট্যাম্প দিয়ে মারপিট করে হাঁটুসহ সারা শরীর রক্তাক্ত করেন। সাজ্জাদ হোসেন বাইরে থেকে গাছের ডাল ভেঙে নিয়ে আসেন। ডাল দিয়ে সারা শরীরে পেটানো হয়। জালাল ও সাজ্জাদ স্ট্যাম্প ভিকটিমের হাতের ওপর রেখে পা দিয়ে চাপ দেন। তোফাজ্জলের পায়ে রক্ত বের হলে আসামিরা কাপড় দিয়ে পা বাঁধেন। মুত্তাকিন ও সাকিন বিল্লাহ স্ট্যাম্প দিয়ে কাঁধে ও পিঠে বেধড়ক পেটান। ওয়াজিবুল আলম, শাহরিয়ার কবির শোভন ও আব্দুল্লাহিল কাফি চড়-থাপ্পড় ও লাখি মারেন। সুমন মিয়া কাচি দিয়ে তোফাজ্জলের মাথার চুল কেটে দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের গাড়ি ফজলুল হক মুসলিম হলে আসলে হাউজ টিউটর ড. জহির রায়হান ও ড. মাহবুব আলম, ড. শফিউল আলম ও ড. আলমগীর হোসেন তোফাজ্জলকে চিকিৎসার জন্য গাড়িতে তুলে দিতে বলেন। তবে আসামিরা তাকে গাড়িতে না দিয়ে সময়ক্ষেপণ করেন। তোফাজ্জল অচেতন হয়ে পড়লে মোত্তাকিন, সাজ্জাদ হোসেন, ওয়াজিবুল আলম ও সুমন মিয়াসহ হাউজ টিউটর ড. জহির রায়হান ও ড. মাহবুব আলম ও ড. আলমগীর হোসেন তাকে প্রক্টরিয়াল টিমের গাড়িতে করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যান। থানা পুলিশ ভিকটিমের অবস্থা খুবই খারাপ দেখে চিকিৎসার পরামর্শ দেয়। আসামিরা তোফাজ্জলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আসামিরা পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে তোফাজ্জল হোসেনকে বেধরকভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছেন বলে চার্জশিটে উল্লেখ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
এদিকে, ওয়াজিবুল আলম, মোত্তাকিন সাকিন, সাজ্জাদ হোসেন ও সুমন মিয়া আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে রকি, সাকলাইন, রাশেদ কামাল অনিক, রোবটিক সোহাগ, পারভেজ, আশরাফ মুন্সি, আবু রায়হান ও রিয়াদের নাম বলেন। তবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
এ বিষয়ে চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, ঘটনার দিন রাশেদ কামাল অনিক তোফাজ্জলকে উত্তেজিত ছাত্রদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য হলের অতিথি কক্ষে নিয়ে যান। তোফাজ্জল ক্ষুধার্ত থাকায় রকি তাকে ভাত খাওয়ানোর জন্য ক্যান্টিনে নিয়ে যান। ঘটনার পরের দিন ১৯ সেপ্টেম্বর থানায় মামলা হলে দুপুর ২টার সময় আবু রায়হান, রোবটিক সোহাগ, পারভেজ ফজলুল হক মুসলিম হলের বাইরের দুটি গেট বন্ধ করে দেন যেন কোনো অপরাধী পালাতে না পারেন এবং রকি, সাকলাইন, আশরাফ, রিয়াদ বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত টিমের কাছে ওয়াজিবুল আলম, মোত্তাকিন সাকিন, সাজ্জাদ হোসেন ও সুমন মিয়ার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন। এতে আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে রাশেদ কামাল অনিক, রকি, সাকলাইন, রোবটিক সোহাগ, পারভেজ, আশরাফ মুন্সি, আবু রায়হান ও রিয়াদের নামে অভিযোগ করেন বলে তদন্তে জানা গেছে। এজন্য রাশেদ কামাল অনিক, রকি, সাকলাইন, রোবটিক সোহাগ, পারভেজ, আশরাফ মুন্সি, আবু রায়হান ও রিয়াদকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ১৮ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৮টায় এক যুবক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের গেটে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র তাকে আটক করে প্রথমে ফজলুল হক মুসলিম হলের মূল ভবনের অতিথি কক্ষে নিয়ে যান। মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগ করে তারা ওই যুবককে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় মারেন। জিজ্ঞাসাবাদে ওই যুবক তার নাম তোফাজ্জল বলে জানান। তোফাজ্জল মানসিক রোগী বুঝতে পেরে তাকে হলের ক্যান্টিনে নিয়ে খাবার খাওয়ানো হয়। এরপর তাকে হলের দক্ষিণ ভবনের গেস্ট রুমে নিয়ে জানালার সঙ্গে হাত বেঁধে স্ট্যাম্প, হকিস্টিক ও লাঠি দিয়ে উচ্ছৃঙ্খল কিছু ছাত্র বেধড়ক মারধর করলে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। তোফাজ্জলের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলী ইউনিয়নে।
এর কয়েকদিন পর ২৫ সেপ্টেম্বর ফজলুল হক মুসলিম হলে প্রভোস্ট অধ্যাপক শাহ মুহাম্মদ মাসুমসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে নিহতের ফুফাতো বোন মোসা. আসমা আক্তার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আক্তারুজ্জামানের আদালতে মামলার আবেদন করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যায় কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলার সঙ্গে এ মামলা একইসঙ্গে তদন্তের নির্দেশ দেন।
এ মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জালাল মিয়া, সুমন মিয়া, ফিরোজ কবির, আবদুস সামাদ, মোত্তাকিন সাকিন শাহ, আল হোসাইন সাজ্জাদ, ওয়াজিবুল আলম, আহসান উল্লাহ, ফজলে রাব্বি, ইয়ামুস জামান, রাশেদ কামাল অনিক, শাহরিয়ার কবির শোভন, মেহেদী হাসান ইমরান ও মো. সুলতানকে আসামি করা হয়।
ঢাকা/মামুন/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হ স ন ইমর ন ত ফ জ জলক স মন ম য় কর ছ ন র জন য ত কর ন র শ কর ভবন র আলম ও আশর ফ
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ঘেঁষে একের পর এক অঘোষিত ভাগাড়, বর্জ্য ফেলে পরিবেশদূষণ
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের হাড়াতলী এলাকা। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার এই এলাকায় গেলে দূর থেকেই নাকে ভেসে আসে উৎকট দুর্গন্ধ। মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনের পাশে চোখে পড়ে সারি সারি ময়লার স্তূপ। মহাসড়কের পাশ যেন হয়ে উঠেছে ময়লা-আবর্জনা ফেলার ভাগাড়ে।
শুধু হাড়াতলী এলাকাই নয়; ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের বেশ কয়েকটি স্থানে এমন অঘোষিত ভাগাড় গড়ে উঠেছে। মহাসড়কের প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে কুমিল্লা জেলার অংশ। এর মধ্যে অন্তত ২০টি স্থানে একইভাবে ময়লা ফেলা হচ্ছে। কোথাও কোথাও সিটি করপোরেশন, পৌরসভার মতো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান মহাসড়কের পাশে তাদের সংগ্রহ করা ময়লা ফেলছে। এতে মহাসড়কের পাশে বিভিন্ন স্থানে আবর্জনার স্তূপ দিন দিন বাড়তে, মহাসড়ক পরিণত হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা ফেলার ভাগাড়ে। এভাবে পরিবেশদূষণ বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদীরা।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লার সভাপতি মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এভাবে বর্জ্য ফেলার কারণে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যদি সঠিকভাবে করতে না পারে, তাহলে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের কাজটা কী? মানুষ তো ট্যাক্স দেয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য। এভাবে ময়লা-আবর্জনা ফেলা একধরনের অপরাধও। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে এসব বিষয়ে কঠোর হওয়া দরকার।
হাড়াতলী এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, প্রায় দুই বছর আগে স্থানটিতে ময়লা ফেলা শুরু করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন। এরপর সেটি ধীরে ধীরে পরিণত হয় ভাগাড়ে। দিন যত গেছে, ময়লা ফেলার জায়গাটির আকার ততই দীর্ঘ হয়েছে। এ কারণে ওই স্থান দিয়ে হেঁটে চলাচল করা বেশ দুষ্কর হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন আশপাশের বসবাসকারীরা। ভাগাড়ের আশপাশে অন্তত তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেগুলোর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও ময়লার দুর্গন্ধে নাকাল।
এভাবে পরিবেশদূষণ বন্ধে আমরা দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করছি। তবে এ বিষয়ে মূল দায়িত্বটা পালন করতে হবে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদকে।মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজীব, উপপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লাস্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ময়লা ফেলতে আমরা বারবার বাধা দিয়েছি, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। সিটি করপোরেশন সবুজে ঘেরা এলাকাটির বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। এখনো প্রতিদিন ময়লা বাড়ছে। সিটি করপোরেশন বলে, তারা নাকি এখন ময়লা ফেলে না। তাহলে আমাদের প্রশ্ন, ময়লা কারা ফেলছে?’
স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী তাহমিনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, শ্রেণিকক্ষে বসা যায় না দুর্গন্ধের জন্য। একটু বাতাসেই নাকে ভেসে আসে ময়লার দুর্গন্ধ। কলেজে প্রবেশের সময় নাক চেপে ধরে আসতে হয়। এ ছাড়া পরিবেশও মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।
জানতে চাইলে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, হাড়াতলীতে তিন মাস ধরে তাঁরা আবর্জনা ফেলছেন না। সিটি করপোরেশনের ফেলা ময়লাগুলো ভেকু দিয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এখন রাতের আঁধারে আশপাশের লোকজন এবং বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মহাসড়কের পাশে ময়লা ফেলছে। যারা ময়লা ফেলছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার প্রবেশমুখ বালুজুড়ি এলাকায় ময়লার ভাগাড়