Samakal:
2025-08-01@17:52:15 GMT

ওরস বন্ধ, তবু মেলেনি নিস্তার

Published: 24th, January 2025 GMT

ওরস বন্ধ, তবু মেলেনি নিস্তার

ঢাকার ধামরাইয়ে মাইকিং করে লোক জড়ো করার পর একটি মাজার ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে গাংগুটিয়া ইউনিয়নের অর্জুনালাই গ্রামে অবস্থিত প্রয়াত শুকুর আলী ফকিরের মাজারে ঘটে এ ঘটনা। এ বিষয়ে গতকাল শুক্রবার বিকেলে ওই ফকিরের ছেলে আক্কাস আলী বাদী হয়ে ধামরাই থানায় মামলা করেছেন। এতে ১২ জনের নাম উল্লেখসহ ৭০০-৮০০ ব্যক্তিকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে। 
ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার মাজারটিতে শুকুর আলী ফকিরের ৬৬তম ওরসের আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যায় মিলাদ মাহফিল ও তবারক বিতরণ শেষে রাতে বাউলগান হওয়ার কথা ছিল। তবে বিকেলের দিকেই ধামরাই ওলামা পরিষদ ও ইমাম পরিষদের ব্যানারে একদল মুসল্লি মাজারের কয়েক গজ দূরে অবস্থিত অর্জুনালাই জামে মসজিদে সমবেত হন।
মুসল্লিরা ওই মাজারে ওরস ও গানের আয়োজন বন্ধের দাবি তোলে স্লোগান দিতে থাকেন। কিছুক্ষণ পরই ধামরাই থানা থেকে পুলিশ সদস্যরা সেখানে আসেন। তারা রাত ৮টার দিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কা জানিয়ে সংশ্লিষ্টদের ওরসের আয়োজন বন্ধ করতে বলেন। মাজারের লোকজন তখন ওরস বন্ধ করে দেন। এর পরও মুসল্লিরা ওরস আয়োজনে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও মুচলেকা রাখার দাবি জানাতে থাকেন। এতে সায় দেননি পুলিশ সদস্যরা। এক পর্যায়ে তারা ঘটনাস্থল ছেড়ে যান। এ সময় মুসল্লিদের নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিরা মাজারটি চিরতরে বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করার কথা জানান। পরে তারা মসজিদ ছেড়ে যান। 
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মুসল্লিদের একটি অংশ চলে গেলেও রাত ১০টার দিকে অন্য একটি অংশের ৫০-৬০ জন দল বেঁধে মাজারটিতে ঢুকে পড়ে। তারা ভেঙে মাজারটি গুঁড়িয়ে দেয়। হামলাকারীরা সেখানে থাকা দুটি কবরসহ একটি টিনের ঘর পুরোপুরি ভেঙে দেয়। অপর একটি ঘরের বেড়ার টিনে ভাঙচুর চালানো হয়। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক দেখা দেয়। শুকুর আলী ফকিরের বাড়ির বাসিন্দারা প্রাণভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।
ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকেই মসজিদে সমবেত হতে থাকেন মুসল্লিরা। এদের মধ্যে শতাধিক ব্যক্তি বহিরাগত। তারাই মাজারে গান-বাজনা বন্ধের দাবিতে বেশি সোচ্চার ছিলেন। স্থানীয় কিছু লোকও ছিলেন সেখানে। তারা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিতে থাকেন, ‘ওই মাজারে সেজদা দেওয়া, মানত করা, পীরকে সেজদা করা চলবে না।’ রাত ১০টার দিকে ৫০-৬০ মুসল্লি মাজারে হামলা করেন। তাদের বেশির ভাগই স্থানীয় লোক। 
প্রয়াত শুকুর আলী ফকিরের স্ত্রী আমেনা বেগম এ বিষয়ে বলেন, বহু বছর ধরেই তারা ওরস পালন করেন। মাজারে মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালিয়ে আসছেন তারা। বৃহস্পতিবার বিকেলে মুসল্লিরা নিষেধ করার পর তারা ওরস বন্ধ করে দেন। তিনি বলেন, ‘এর পরও রাইতে ৫০-৬০ জন লোক আইসা মাজার, ঘরবাড়ি ভাইঙ্গা দিছে। ভয়ে পোলারা বউ-পোলাপান নিয়া চইলা গেছে। পুলিশ আইছিল। কইছে মামলা করতে।’
তাঁর ছেলে আক্কাস আলী জানান, পুলিশের সহায়তায় শুক্রবার বিকেলে তিনি ১২ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেছেন। এতে আরও ৭০০-৮০০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করেছেন। এ ঘটনার বিচার দাবি করেন তিনি।
ধামরাই উপজেলা ওলামা পরিষদের সভাপতি মুফতি সানাউল্লাহর দাবি, ওই মাজারে মাদকের কারবার ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এসেছে। এসবের সত্যতা নিশ্চিত হতে বৃহস্পতিবার উপজেলা ইমাম পরিষদ ও তাদের কয়েকজন নেতা মাজারের পাশের একটি মসজিদে যান।
মুফতি সানাউল্লাহর ভাষ্য, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল গান-বাজনা বন্ধ করা। ভাঙচুর কোনো সমাধান নয়। যখন পুলিশের কাছে তারা ওরস বন্ধের কথা জানান, তখন এশার নামাজ শেষে আমরা চলে আসি।’ এর পর তারা শুনেছেন, স্থানীয় কিছু ব্যক্তি তাদের ক্ষোভ থেকে মাজার ভেঙেছে। তাঁর ভাষ্য, তাদের লক্ষ্য ছিল শান্তিপূর্ণ সমাধান, ভাঙচুর নয়।
ধামরাই থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে মামলা করা হয়েছে। এতে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ক র আল র একট মসজ দ

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ