Samakal:
2025-06-16@04:09:32 GMT

ওরস বন্ধ, তবু মেলেনি নিস্তার

Published: 24th, January 2025 GMT

ওরস বন্ধ, তবু মেলেনি নিস্তার

ঢাকার ধামরাইয়ে মাইকিং করে লোক জড়ো করার পর একটি মাজার ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে গাংগুটিয়া ইউনিয়নের অর্জুনালাই গ্রামে অবস্থিত প্রয়াত শুকুর আলী ফকিরের মাজারে ঘটে এ ঘটনা। এ বিষয়ে গতকাল শুক্রবার বিকেলে ওই ফকিরের ছেলে আক্কাস আলী বাদী হয়ে ধামরাই থানায় মামলা করেছেন। এতে ১২ জনের নাম উল্লেখসহ ৭০০-৮০০ ব্যক্তিকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে। 
ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার মাজারটিতে শুকুর আলী ফকিরের ৬৬তম ওরসের আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যায় মিলাদ মাহফিল ও তবারক বিতরণ শেষে রাতে বাউলগান হওয়ার কথা ছিল। তবে বিকেলের দিকেই ধামরাই ওলামা পরিষদ ও ইমাম পরিষদের ব্যানারে একদল মুসল্লি মাজারের কয়েক গজ দূরে অবস্থিত অর্জুনালাই জামে মসজিদে সমবেত হন।
মুসল্লিরা ওই মাজারে ওরস ও গানের আয়োজন বন্ধের দাবি তোলে স্লোগান দিতে থাকেন। কিছুক্ষণ পরই ধামরাই থানা থেকে পুলিশ সদস্যরা সেখানে আসেন। তারা রাত ৮টার দিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কা জানিয়ে সংশ্লিষ্টদের ওরসের আয়োজন বন্ধ করতে বলেন। মাজারের লোকজন তখন ওরস বন্ধ করে দেন। এর পরও মুসল্লিরা ওরস আয়োজনে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও মুচলেকা রাখার দাবি জানাতে থাকেন। এতে সায় দেননি পুলিশ সদস্যরা। এক পর্যায়ে তারা ঘটনাস্থল ছেড়ে যান। এ সময় মুসল্লিদের নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিরা মাজারটি চিরতরে বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করার কথা জানান। পরে তারা মসজিদ ছেড়ে যান। 
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মুসল্লিদের একটি অংশ চলে গেলেও রাত ১০টার দিকে অন্য একটি অংশের ৫০-৬০ জন দল বেঁধে মাজারটিতে ঢুকে পড়ে। তারা ভেঙে মাজারটি গুঁড়িয়ে দেয়। হামলাকারীরা সেখানে থাকা দুটি কবরসহ একটি টিনের ঘর পুরোপুরি ভেঙে দেয়। অপর একটি ঘরের বেড়ার টিনে ভাঙচুর চালানো হয়। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক দেখা দেয়। শুকুর আলী ফকিরের বাড়ির বাসিন্দারা প্রাণভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।
ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকেই মসজিদে সমবেত হতে থাকেন মুসল্লিরা। এদের মধ্যে শতাধিক ব্যক্তি বহিরাগত। তারাই মাজারে গান-বাজনা বন্ধের দাবিতে বেশি সোচ্চার ছিলেন। স্থানীয় কিছু লোকও ছিলেন সেখানে। তারা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিতে থাকেন, ‘ওই মাজারে সেজদা দেওয়া, মানত করা, পীরকে সেজদা করা চলবে না।’ রাত ১০টার দিকে ৫০-৬০ মুসল্লি মাজারে হামলা করেন। তাদের বেশির ভাগই স্থানীয় লোক। 
প্রয়াত শুকুর আলী ফকিরের স্ত্রী আমেনা বেগম এ বিষয়ে বলেন, বহু বছর ধরেই তারা ওরস পালন করেন। মাজারে মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালিয়ে আসছেন তারা। বৃহস্পতিবার বিকেলে মুসল্লিরা নিষেধ করার পর তারা ওরস বন্ধ করে দেন। তিনি বলেন, ‘এর পরও রাইতে ৫০-৬০ জন লোক আইসা মাজার, ঘরবাড়ি ভাইঙ্গা দিছে। ভয়ে পোলারা বউ-পোলাপান নিয়া চইলা গেছে। পুলিশ আইছিল। কইছে মামলা করতে।’
তাঁর ছেলে আক্কাস আলী জানান, পুলিশের সহায়তায় শুক্রবার বিকেলে তিনি ১২ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেছেন। এতে আরও ৭০০-৮০০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করেছেন। এ ঘটনার বিচার দাবি করেন তিনি।
ধামরাই উপজেলা ওলামা পরিষদের সভাপতি মুফতি সানাউল্লাহর দাবি, ওই মাজারে মাদকের কারবার ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এসেছে। এসবের সত্যতা নিশ্চিত হতে বৃহস্পতিবার উপজেলা ইমাম পরিষদ ও তাদের কয়েকজন নেতা মাজারের পাশের একটি মসজিদে যান।
মুফতি সানাউল্লাহর ভাষ্য, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল গান-বাজনা বন্ধ করা। ভাঙচুর কোনো সমাধান নয়। যখন পুলিশের কাছে তারা ওরস বন্ধের কথা জানান, তখন এশার নামাজ শেষে আমরা চলে আসি।’ এর পর তারা শুনেছেন, স্থানীয় কিছু ব্যক্তি তাদের ক্ষোভ থেকে মাজার ভেঙেছে। তাঁর ভাষ্য, তাদের লক্ষ্য ছিল শান্তিপূর্ণ সমাধান, ভাঙচুর নয়।
ধামরাই থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে মামলা করা হয়েছে। এতে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ক র আল র একট মসজ দ

এছাড়াও পড়ুন:

প্রযুক্তি কি ডিমেনশিয়া বাড়িয়ে দিচ্ছে? ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে বিস্ময়কর তথ্য

প্রযুক্তির কল্যাণে হুটহাট বড় পরিবর্তন আসা নতুন কিছু নয়। করোনা মহামারির আগে বাসা থেকেও যে অফিস করা সম্ভব, সেটা মানতে চাইতেন না অনেকে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হোম অফিস হয়েছে স্বাভাবিক। একই ঘটনা ঘটেছে ডিজিটাল দুনিয়ায়। একসময় যেকোনো তথ্য খুঁজে বের করার জন্য শরণাপন্ন হতে হতো সার্চ ইঞ্জিনের; এআই সেই উত্তর সবিস্তারে দিয়ে দিচ্ছে মুহূর্তেই। ফলে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন শুধু জীবনকে সহজতর করছে না, বাঁচিয়ে দিচ্ছে সময় ও পরিশ্রমও। কিন্তু এই বেঁচে যাওয়া সময় ও পরিশ্রম মস্তিষ্কের ওপর ঠিক কীভাবে প্রভাব ফেলছে?

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস ও বেলোর ইউনিভার্সিটির এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, এত দিন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মানব মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমার যে গুঞ্জন ভেসে বেড়িয়েছে, তার কোনো সত্যতা নেই। ‘নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ার’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ নামে যে হাইপোথিসিস আছে, তার কোনো প্রমাণ নেই গবেষকদের কাছে। বরং পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষদের স্মার্টফোন, কম্পিউটার কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার তাঁদের স্বাভাবিক স্মৃতিভ্রম অনেকটা স্তিমিত করে।

ডিজিটাল ডিমেনশিয়া কী

২০১২ সালে প্রথম ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ তত্ত্ব নিয়ে হাজির হন জার্মান স্নায়ুবিজ্ঞানী ও মনোবিদ ম্যানফ্রেড স্পিৎজার। মূলত যে হারে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে এবং মানুষ যান্ত্রিক পর্দার সামনে প্রতিদিনের বেশির ভাগ সময় কাটাচ্ছে, তাতে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে অনেকটাই। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় তথ্যগুলোও মনে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে অনেকে। যেমন ফোন নম্বর। একসময় প্রিয়জনের ফোন নম্বর আমাদের মুখস্থ থাকত। এখন ফোন নম্বর ঠাঁই পায় মুঠোফোনের কনটাক্ট লিস্টে। ফোন নম্বর মনে রাখার চেষ্টাই করে না কেউ। আবার অনেকক্ষণ যান্ত্রিক পর্দার সামনে থাকলেও সেখান থেকে শেখার ইচ্ছা থাকে না অনেকের। চোখের সামনে যা আসছে, স্ক্রল করে চলে যাচ্ছে পরের কোনো কনটেন্টে। এতে মনোযোগ হারিয়ে যায় দ্রুত। আর প্রযুক্তির এমন অতিব্যবহার যে স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দিচ্ছে, একেই ধরা হয় ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ হিসেবে।

আরও পড়ুনডিজিটাল স্ক্রিন ব্যবহারের সময় ২০-২০-২০ নিয়ম মানাটা কেন জরুরি২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩গবেষণা যা বলছে

প্রায় ৪ লাখ ১১ হাজার পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষের ওপর চালানো ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যে স্মৃতিভ্রম দেখা দেয়, তার অনেকটাই হ্রাস করে প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের ফলে স্মৃতিশক্তি কমে আসার আশঙ্কা প্রায় ৫৮ শতাংশে নেমে আসে।

স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া বরং আরও কিছু সূচকের (যেমন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিক অবস্থা) ওপর নির্ভর করে। মজার ব্যাপার হলো, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার থেকেও বেশি কার্যকর প্রযুক্তির ব্যবহার।

তবে এর সবকিছুই নির্ভর করছে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের ওপর। পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিরা বেশির ভাগ সময়ই অনলাইনে কাটান ইউটিউব ভিডিও অথবা ফেসবুক স্ক্রল করে। এতে তাঁদের মস্তিষ্কের ব্যবহার হয় না বললেই চলে। মস্তিষ্ক সচল রাখতে পারে এমন কনটেন্টে তাঁদের মনোযোগ সরিয়ে নিতে পারলে আনন্দ যেমন পাবেন, তেমনই ডিজিটাল দুনিয়া সম্পর্কে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিও পালটে যাবে। এ ছাড়া অনলাইনের হাজারো গুজব ও উসকানি থেকে মুক্ত থাকবেন তাঁরা।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

আরও পড়ুনমাত্রাতিরিক্ত স্ক্রিনটাইম যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ