শিক্ষক আন্দোলনে সংহতি, বিএনপি বলল ৫ শতাংশ এনাফ নয়
Published: 20th, October 2025 GMT
মূল বেতনের ২০ শতাংশ (নূন্যতম ৩ হাজার টাকা) বাড়িভাড়া বাড়ানোসহ তিন দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে বিএনপি।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি দলের পক্ষ থেকে এই দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করব, ৫ পারসেন্ট এনাফ (পর্যাপ্ত) নয়। বিশেষ বিবেচনা আপনাদের করতে হবে।’
আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষক–কর্মচারীদের সঙ্গে সংহতি জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যান শহীদ উদ্দীন চৌধুরী। এ সময় তিনি এ কথা বলেন।
আরও পড়ুনউপদেষ্টাদের হুঁশিয়ার করলেন ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম১৮ ঘণ্টা আগেবিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যেভাবে গত নয় দিন প্রখর রোদে আপনারা আন্দোলন করছেন, এটা তো করার কথা ছিল না। আমরা অনেক সময় অনেকভাবে দেখেছি, শিক্ষকদের বারবার রাস্তায় আসতে হয়। আন্দোলন করতে হয়। আবেদন করতে হয়। সেই কেন-এর উত্তরটা দিতে যেয়ে আমরা আপনাদের বলছি, আগামী দিনে আর যাতে আন্দোলন না করতে হয়, সে জন্য ওই পূর্ণ জাতীয়করণের কথাটাই আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম।’
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষাকে জাতীয়করণ করার ঘোষণা দিয়ে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী বলেন, এই প্রতিশ্রুতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। এ সময় তিনি শিক্ষক–কর্মচারীদের আন্দোলনে বিএনপির পক্ষ থেকে সংহতির কথাও জানান।
শিক্ষক-কর্মচারীদের উদ্দেশে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী আরও বলেন, ‘আপনাদের দাবি অন্তর্বর্তী সরকার এর মধ্যে মেনে নিয়েছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত দাবি কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌঁছানোর জন্য, ২০ পারসেন্টের যে দাবি, সেটা এখনো হয়তো আপনারা পান নাই। তাই আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করব, ৫ পারসেন্ট এনাফ (পর্যাপ্ত) নয়। বিশেষ বিবেচনা আপনাদের করতে হবে।’
আরও পড়ুনদাবি আদায় না হলে দুপুরে ‘মার্চ টু যমুনা’ করবেন শিক্ষক-কর্মচারীরা১৬ অক্টোবর ২০২৫এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব দেলোয়ার হোসেন আজিজী বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি। কোনো বিশৃঙ্খলা আমাদের উদ্দেশ্য নয়।’
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাবেন না বলে হুঁশিয়ারি দেন দেলোয়ার হোসেন আজিজী। তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে উপদেষ্টা পরিবর্তন হবে, কিন্তু শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ফিরে যাব না। যদি বিকেলের মধ্যে আমাদের দাবি মানা হয়, তাহলে রাতের মধ্যে আমরা শহীদ মিনার ছেড়ে চলে যাব।’
মূল বেতনের ২০ শতাংশ (ন্যূনতম তিন হাজার টাকা) বাড়িভাড়া, দেড় হাজার টাকা চিকিৎসাভাতা ও কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ করার দাবিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা ১২ অক্টোবর থেকে টানা আন্দোলন করে আসছেন। শিক্ষক-কর্মচারীরা সব ধরনের শ্রেণি কার্যক্রম থেকে বিরত রয়েছেন।
আরও পড়ুন‘লংমার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি দিয়ে শাহবাগ ছাড়লেন আন্দোলনরত শিক্ষকেরা১৫ অক্টোবর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আপন দ র ব এনপ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনের প্রতি সমর্থন ও সংহতি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। একই সঙ্গে ১২ অক্টোবর আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীদের ওপর পুলিশি হামলার নিন্দা জানিয়েছে সংগঠনটি।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলেছে, ইউনেসকোর সুপারিশ অনুযায়ী বাংলাদেশ কখনোই ৫ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষা বরাদ্দ দেয়নি। চব্বিশের গণ–আন্দোলনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার শিক্ষায় বরাদ্দ আগের চেয়েও কমিয়েছে। সরকার ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করলেও সেখানে শিক্ষা সংস্কারে কোনো কমিশন নেই।
শিক্ষকদের দাবির প্রতি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো (শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়) ইতিবাচক মনোভাব পোষণ না করলে তা নতুন রাজনৈতিক সংকট তৈরি করবে বলে সতর্ক করেছে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। বিবৃতিতে বলা হয়, শিক্ষক নেটওয়ার্ক মনে করে, শিক্ষক–কর্মচারীদের উত্থাপিত তিনটি দাবি ন্যায্য। অবিলম্বে দাবিগুলো মেনে নেওয়ার জন্য সরকারকে আহ্বান জানায় শিক্ষকদের সংগঠনটি।
শিক্ষকদের তিনটি দাবি হলো মূল বেতনের ২০ শতাংশ (ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা) বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা দেড় হাজার টাকা করা এবং কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ বাড়ানো।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদের দাবিদাওয়া বর্তমান সময়ের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট ও মূল্যস্ফীতিতে জীবনযাপনের জন্য অতি সামান্য বলে মনে করে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। আন্দোলনরত শিক্ষক–কর্মচারীদের প্রতি বৈষম্য চলছে উল্লেখ করে তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা যেখানে মূল বেতনের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ বাড়িভাড়া পান, সেখানে বেসরকারি শিক্ষকেরা হাজার টাকা বরাদ্দ পান।
এই ব্যবস্থাকে বেসরকারি শিক্ষকদের প্রতি অবমাননা বলে মনে করে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। বিবৃতিতে তারা বলেছে, এই ব্যবস্থা পুরো জাতির জন্য লজ্জাজনক। যার কারণে শিক্ষকেরা শিক্ষকতায় পূর্ণ মনোযোগী থাকতে পারেন না। প্রাইভেট পড়ানো-কোচিং থেকে শুরু করে দলীয় রাজনীতিসহ অন্যান্য অশিক্ষকসুলভ কাজে জড়াচ্ছেন।
বিবৃতিতে শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি দাবি তুলে ধরা হয়েছে। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে চলতি অর্থবছরে শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ১০ শতাংশ বৃদ্ধি এবং আগামী অর্থবছরে আরও ১০ শতাংশ বাড়ানোর নিশ্চয়তা প্রদান, চিকিৎসা ভাতা ন্যূনতম দেড় হাজার টাকা নির্ধারণ এবং উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশে উন্নীত করা।
এ ছাড়া আগামী অর্থবছর থেকে শিক্ষা খাতে জিডিপির ৩ শতাংশ বরাদ্দ নিশ্চিত করা এবং তা পর্যায়ক্রমে ৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। একই সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।