হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে স্ত্রীকে মেরে ফেলেছি, ওসিকে ফোন করে প্রকৌশলী
Published: 25th, January 2025 GMT
রাজধানীর বংশাল থানার ওসি রফিকুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একটি কল আসে। তিনি রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে একজন বলেন, ‘আমি হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে আমার স্ত্রীকে মেরে ফেলেছি।’ পরে জানা যায়, তার নাম ইব্রাহিম খান। তিনি একজন সফটওয়্যার প্রকৌশলী। দ্রুত বংশালের সিক্কাটুলি লেনে তার বাসায় পৌঁছে যায় পুলিশ। তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। সেইসঙ্গে তার স্ত্রী মাকসুদা খানমের (২৭) মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে। শুক্রবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
বংশাল থানার ওসি শনিবার সমকালকে বলেন, ওই এলাকায় একটি খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে আগেই পুলিশের কাছে তথ্য আসে। সেই অনুযায়ী পুলিশের একটি দল রওনা হয়। এর মধ্যে শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে নিহতের স্বামী কল করে তার অপরাধের বিষয়ে জানান। ততক্ষণে পুলিশের দলটিও তার বাসার কাছাকাছি চলে যায়। পরে সিক্কাটুলি লেনের ২৪ নম্বর বাসার দোতলা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন।
ওসি জানান, ইব্রাহিম অনলাইনে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেন। তিনি পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। পরে শনিবার তাকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ইব্রাহিম দাবি করেন, স্ত্রীর সঙ্গে তার সম্পর্ক বেশ কিছুদিন ধরেই ভালো যাচ্ছিল না। তাদের মধ্যে প্রায়ই কলহ হত। শুক্রবার বিকেলেও তাদের মধ্যে তুমুল বাকবিতণ্ডা হয়। এর একপর্যায়ে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে স্ত্রীর মাথায় হাতুড়ি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করেন। তবে হত্যার পরিকল্পনা বা উদ্দেশ্য তার ছিল না। তিনি হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করবেন বলে ভয় দেখাতে চেয়েছিলেন। শেষ মুহুর্তে তিনি নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি স্ত্রীকে হত্যা করেন। এর আধা ঘণ্টার মধ্যেই তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানানোর সিদ্ধান্ত নেন।
নিহতের চাচা মাওলানা আব্দুল লতিফ জানান, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা আব্দুল বাতেন খানের মেয়ে মাকসুদা। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি বড় ছিলেন। দুই বছর আগে তার সঙ্গে ইব্রাহিমের বিয়ে হয়। তাদের এক বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে। দুজনের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হত। ইব্রাহিম ঠিকমতো বাজারসহ অন্যান্য খরচ দিতেন না। শুক্রবারও এসব নিয়ে ঝগড়ার একপর্যায়ে হত্যাকাণ্ড ঘটে।
অবশ্য পুলিশ বলছে, কলহের মূল কারণ স্ত্রীর অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্ক ছিল বলে সন্দেহ করতেন ইব্রাহিম। মাকসুদা এ নিয়ে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করলেও নিজের অবস্থান থেকে সরেননি তার স্বামী। ফলে কলহ লেগেই থাকত। এটি দুজনেরই দ্বিতীয় বিয়ে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতির মেয়ে
ফরিদপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহ্মুদা বেগমের মেয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা।গত মঙ্গলবার এনসিপির সদস্যসচিব আক্তার হোসেন ও মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ওই চিঠিতে ফরিদপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক করা হয়েছে মো. আব্দিুর রহমানকে এবং সংগঠক করা হয়েছে মো. রাকিব হোসেনকে।
এছাড়া ফরিদপুর অঞ্চলের পাঁচটি জেলা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী জেলার দু’জন করে ব্যক্তিকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফরিদপুর জেলার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে যে দু’জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের একজন হলেন সৈয়দা নীলিমা দোলা। তিনি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহ্মুদা বেগমের মেয়ে এবং জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোহাম্মদ নাসিরের ভাগনি। দোলার বাবা সৈয়দ গোলাম দস্তগীর পেশায় ব্যবসায়ী।
সৈয়দা নীলিমা ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগীত বিভাগে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি কিছুদিন একটি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে চাকরি করেন। বর্তমানে ‘সিনে কার্টেল’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী।
এ বিষয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা বলেন, ‘আমার পরিবারের সদস্যদের আওয়ামী রাজনীতি করা সংক্রান্ত কিছু পোস্ট আপনাদের সামনে আসতে পারে। আমি নিজে এর একটা ব্যাখ্যা রাজপথের সহযোদ্ধাদের দিয়ে রাখতে চাই। আমি ১০ বছর ধরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন করছি। নো মেট্রো অন ডিইউ মুভমেন্ট, রামপাল বিরোধী আন্দোলন, ডিএসএ বাতিলের আন্দোলন, সুফিয়া কামাল হলকে ছাত্রলীগ মুক্ত করাসহ অন্যান্য সকল আন্দোলনে আমি পরিচিত মুখ। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমার লেখালেখিও পুরনো। ২০১২ সালে পরিবার ছাড়ার পর রাজপথই আমার আসল পরিবার। জুলাইয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অন্যতম মামলা তাহির জামান প্রিয় হত্যা মামলার একজন প্রত্যক্ষদর্শী আমি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরাসরি ছাত্রলীগ করে অনেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। আমি কখনও ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না, তাই আমার নাগরিক কমিটির সদস্য হতে বাধা কোথায়? এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা জেনে-বুঝে এবং আমি ‘লিটমাস’ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই আমাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ নেত্রীর মেয়ে দায়িত্ব পেয়েছেন জেলার এনসিপি কমিটি গঠনে-এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব সোহেল রানা বলেন, ‘তার (সৈয়দা নীলিমা) পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড আওয়ামী লীগ। আমরা দেখেছি, গত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে তার মামা গোলাম নাসির কিভাবে আমাদের ওপর নির্বিচার গুলি ছুড়েছিল। তার মায়ের কর্মকাণ্ডও আমাদের অজানা নয়।’
সৈয়দা নীলিমা দোলার সঙ্গে আমাদের পরিচয় পর্যন্ত নেই মন্তব্য করে সোহেল রানা বলেন, ‘আসলে দায়িত্ব দেওয়ার আগে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে নেওয়া হলে ভাল হতো। যাচাই-বাছাই করা হলে এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।’