রাজধানীর বংশাল থানার ওসি রফিকুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একটি কল আসে। তিনি রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে একজন বলেন, ‘আমি হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে আমার স্ত্রীকে মেরে ফেলেছি।’ পরে জানা যায়, তার নাম ইব্রাহিম খান। তিনি একজন সফটওয়্যার প্রকৌশলী। দ্রুত বংশালের সিক্কাটুলি লেনে তার বাসায় পৌঁছে যায় পুলিশ। তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। সেইসঙ্গে তার স্ত্রী মাকসুদা খানমের (২৭) মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে। শুক্রবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।

বংশাল থানার ওসি শনিবার সমকালকে বলেন, ওই এলাকায় একটি খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে আগেই পুলিশের কাছে তথ্য আসে। সেই অনুযায়ী পুলিশের একটি দল রওনা হয়। এর মধ্যে শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে নিহতের স্বামী কল করে তার অপরাধের বিষয়ে জানান। ততক্ষণে পুলিশের দলটিও তার বাসার কাছাকাছি চলে যায়। পরে সিক্কাটুলি লেনের ২৪ নম্বর বাসার দোতলা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন।
 
ওসি জানান, ইব্রাহিম অনলাইনে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেন। তিনি পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। পরে শনিবার তাকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
 
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ইব্রাহিম দাবি করেন, স্ত্রীর সঙ্গে তার সম্পর্ক বেশ কিছুদিন ধরেই ভালো যাচ্ছিল না। তাদের মধ্যে প্রায়ই কলহ হত। শুক্রবার বিকেলেও তাদের মধ্যে তুমুল বাকবিতণ্ডা হয়। এর একপর্যায়ে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে স্ত্রীর মাথায় হাতুড়ি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করেন। তবে হত্যার পরিকল্পনা বা উদ্দেশ্য তার ছিল না। তিনি হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করবেন বলে ভয় দেখাতে চেয়েছিলেন। শেষ মুহুর্তে তিনি নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি স্ত্রীকে হত্যা করেন। এর আধা ঘণ্টার মধ্যেই তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানানোর সিদ্ধান্ত নেন।

নিহতের চাচা মাওলানা আব্দুল লতিফ জানান, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা আব্দুল বাতেন খানের মেয়ে মাকসুদা। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি বড় ছিলেন। দুই বছর আগে তার সঙ্গে ইব্রাহিমের বিয়ে হয়। তাদের এক বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে। দুজনের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হত। ইব্রাহিম ঠিকমতো বাজারসহ অন্যান্য খরচ দিতেন না। শুক্রবারও এসব নিয়ে ঝগড়ার একপর্যায়ে হত্যাকাণ্ড ঘটে।

অবশ্য পুলিশ বলছে, কলহের মূল কারণ স্ত্রীর অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্ক ছিল বলে সন্দেহ করতেন ইব্রাহিম। মাকসুদা এ নিয়ে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করলেও নিজের অবস্থান থেকে সরেননি তার স্বামী। ফলে কলহ লেগেই থাকত। এটি দুজনেরই দ্বিতীয় বিয়ে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন নিহত হয়েছেন। এতে একজন শিক্ষকসহ হোটেলের দুই কর্মচারী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহত তিনজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

গতকাল শনিবার রাতে উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের বড়িকান্দি গণি শাহ মাজার বাজারের একটি হোটেলে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে উভয় পক্ষের লোকজন এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন।

নিহত ব্যক্তির নাম শিপন মিয়া (৩০)। তিনি বড়িকান্দি ইউনিয়নের নুরজাহানপুর গ্রামের মোন্নাফ মিয়া ওরফে মনেক মিয়ার ছেলে। নবীনগর থানা সূত্রে জানা গেছে, ওই দুজনের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ২০টি মামলা আছে।

গুলিবিদ্ধ আহত ব্যক্তিরা হলেন বড়িকান্দি ইউনিয়নের থোল্লাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা এমরান হোসেন (৩৮) এবং হোটেলের দুই কর্মচারী—উপজেলার আলমনগর গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে ইয়াসিন মিয়া (২০) ও চরলাপাং গ্রামের রশিদ মিয়ার ছেলে নুর আলম (১৮)। এমরান উপজেলার শ্যামগ্রামের মোহিনী কিশোর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক। তাঁর ভাই ঢাকায় কর্মরত পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) বিল্লাল হোসেন।

বড়িকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মনেক ডাকাত এলাকাটা শেষ করে ফেলেছেন। তাঁর কারণেই এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়েছে। মনেক ডাকাতদের কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। গুলিতে মনেক ডাকাতের ছেলে নিহত হয়েছেন।

স্থানীয় লোকজন, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় মোন্নাফ মিয়া ও তাঁর ছেলে শিপনের দীর্ঘদিন ধরে একক প্রভাব ছিল। তাঁদের সঙ্গে একই এলাকার থোল্লাকান্দি গ্রামের মিস্টার মিয়ার ছেলে আরাফাত মিয়ার বিরোধ চলছিল। শনিবার রাত আনুমানিক নয়টার দিকে বড়িকান্দি গণি শাহ মাজার বাজারের একটি হোটেলে শিপন মিয়া আড্ডা দিচ্ছিলেন। এ সময় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধের জেরে আরাফাতের নেতৃত্বে সশস্ত্র একটি দল হোটেলে ঢুকে গুলি চালায়। এতে শিপনসহ হোটেলের দুই কর্মচারী ইয়াসিন ও নুর আলম গুলিবিদ্ধ হন। গুলির শব্দে বাজারজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হামলার পর আরাফাত ও তাঁর সহযোগীরা দ্রুত পালিয়ে যান।

শিপনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর নুরজাহানপুরে পৌঁছালে মোন্নাফ মিয়ার নেতৃত্বে একদল লোক গণি শাহ মাজারের অদূরে তালতলায় এমরান হোসেনের কার্যালয়ে হামলা চালান। সেখানে এমরান গুলিবিদ্ধ হন। এরপর তাঁরা থোল্লাকান্দি গ্রামে হামলা চালিয়ে একাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। রাতে ঘটনাস্থলে অভিযান চালালেও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। কারণ, উভয় পক্ষের লোকজন বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। সংঘর্ষ এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গুলিবিদ্ধ কাউকেই শনিবার রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়নি। তাঁদের হয়তো অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, শিপনের ওপর হামলাকারী আরাফাত থোল্লাকান্দি গ্রামের এমরান হোসেনের আত্মীয়। এ কারণেই এমরানের কার্যালয়ে গিয়ে হামলা এবং তাঁকে গুলি করা হয়েছে।

নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নিহত শিপন ডাকাত দলের সদস্য ছিলেন। শিপন ও তাঁর বাবার বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ২০টি মামলা আছে। ওই ঘটনায় একজন শিক্ষকসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ঘটনার পর থেকে সবাই পলাতক। তাই কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বগুড়ায় বাড়িতে হাতবোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ, আহত একজন গ্রেপ্তার
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • দুই শিশুর ঝগড়ায় জড়ালেন বড়রা, বড় ভাইয়ের হাতে খুন ছোট ভাই
  • রাজশাহীতে ‘প্রেমিকার’ সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে মারধরের শিকার কিশোরের মৃত্যু
  • প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে মারধরের শিকার কিশোরের মৃত্যু
  • মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল, হেনস্তাকারী গ্রেপ্তার