মেডিকেল কলেজে ভর্তির অনিশ্চয়তায় কাঁদলেন
Published: 25th, January 2025 GMT
চলতি শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ফরিদপুরের ভাঙ্গার শিক্ষার্থী ইমা আক্তার। কিন্তু ভর্তির টাকা জোগাড় নিয়ে পড়েছেন অনিশ্চয়তায়। অভাবের সংসারে মেয়ে সুখের উপলক্ষ এনে দিলেও মা-বাবার কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ।
ভাঙ্গা পৌরসভার পূর্ব হাসামদিয়া গ্রামের বাসিন্দা ইমা কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, তিনি এক বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে এক দিন তাঁর
মায়ের চোখে সমস্যা ধরা পড়ে। ওষুধ লাগবে; কিন্তু কেনার টাকা নেই। শুনে ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলেন। বাড়িতে রান্নার চাল ঠিকমতো থাকত না, ছোট বোনগুলো না খেয়ে থাকত। ওদের লেখাপড়ার খরচ ঠিকমতো চালাতে পারছিলেন না বাবা। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বেলার খাবার এক বেলায় খেতেন। কষ্টের দিনগুলোতে ভাবতেন, তাঁকে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতেই হবে। পড়াশোনা করেছেন আর আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়েছেন। ইমা জানান, আগামী ২-৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ফরিদপুর
মেডিকেলে ভর্তি হতে হবে। ভর্তির টাকা এখনও জোগাড় হয়নি তাঁর।
ইমার বাবা বিল্লাল শেখ মুদি দোকানি। মা দোলেনা বেগম গৃহিণী। পরিবারের বড় সন্তান ইমা। তাঁর ছোট দুই বোনের একজন নুসরাত জামিলা ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী এবং অন্যজন তাইবা আক্তার মাদ্রাসাছাত্রী।
বিল্লাল শেখ জানান, তিনি আগে বাসচালক ছিলেন। এখন ছোট্ট একটি মুদি দোকান চালান। এ থেকে যে আয় হয়, তা দিয়েই মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছেন। অনেক কষ্টে ইমাকে এ পর্যন্ত এনেছেন। মেয়েটা তাঁর ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। তাঁর নানা বলতেন, ইমা এক দিন বড় ডাক্তার হবে। তাঁরও আশা বড় মেয়েকে ডাক্তার বানাবেন। তাঁর মেয়ে অসহায়-দুখী মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসা করবে।
ইমার মা প্যারালাইসিস রোগী। তিনি জানান, পরিবারে খোরপোশের চাহিদা মেটাতেই হিমশিম খেতে হয়। মেয়ের পড়াশোনার খরচ কীভাবে জোগাড় করবেন, তা নিয়ে হতাশা তৈরি হয়েছে।
ভাঙ্গা সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন ইমা। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক হায়দার হোসেন জানান, ইমা খুবই ভদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থী। সে যেন একজন বড় ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে পারে, সেই প্রত্যাশা এ শিক্ষকের।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতি মেয়ে
ফরিদপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহ্মুদা বেগমের মেয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা।গত মঙ্গলবার এনসিপির সদস্যসচিব আক্তার হোসেন ও মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ওই চিঠিতে ফরিদপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক করা হয়েছে মো. আব্দিুর রহমানকে এবং সংগঠক করা হয়েছে মো. রাকিব হোসেনকে।
এছাড়া ফরিদপুর অঞ্চলের পাঁচটি জেলা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী জেলার দু’জন করে ব্যক্তিকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফরিদপুর জেলার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে যে দু’জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের একজন হলেন সৈয়দা নীলিমা দোলা। তিনি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহ্মুদা বেগমের মেয়ে এবং জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোহাম্মদ নাসিরের ভাগনি। দোলার বাবা সৈয়দ গোলাম দস্তগীর পেশায় ব্যবসায়ী।
সৈয়দা নীলিমা ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগীত বিভাগে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি কিছুদিন একটি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে চাকরি করেন। বর্তমানে ‘সিনে কার্টেল’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী।
এ বিষয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা বলেন, ‘আমার পরিবারের সদস্যদের আওয়ামী রাজনীতি করা সংক্রান্ত কিছু পোস্ট আপনাদের সামনে আসতে পারে। আমি নিজে এর একটা ব্যাখ্যা রাজপথের সহযোদ্ধাদের দিয়ে রাখতে চাই। আমি ১০ বছর ধরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন করছি। নো মেট্রো অন ডিইউ মুভমেন্ট, রামপাল বিরোধী আন্দোলন, ডিএসএ বাতিলের আন্দোলন, সুফিয়া কামাল হলকে ছাত্রলীগ মুক্ত করাসহ অন্যান্য সকল আন্দোলনে আমি পরিচিত মুখ। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমার লেখালেখিও পুরনো। ২০১২ সালে পরিবার ছাড়ার পর রাজপথই আমার আসল পরিবার। জুলাইয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অন্যতম মামলা তাহির জামান প্রিয় হত্যা মামলার একজন প্রত্যক্ষদর্শী আমি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরাসরি ছাত্রলীগ করে অনেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। আমি কখনও ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না, তাই আমার নাগরিক কমিটির সদস্য হতে বাধা কোথায়? এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা জেনে-বুঝে এবং আমি ‘লিটমাস’ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই আমাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ নেত্রীর মেয়ে দায়িত্ব পেয়েছেন জেলার এনসিপি কমিটি গঠনে-এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব সোহেল রানা বলেন, ‘তার (সৈয়দা নীলিমা) পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড আওয়ামী লীগ। আমরা দেখেছি, গত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে তার মামা গোলাম নাসির কিভাবে আমাদের ওপর নির্বিচার গুলি ছুড়েছিল। তার মায়ের কর্মকাণ্ডও আমাদের অজানা নয়।’
সৈয়দা নীলিমা দোলার সঙ্গে আমাদের পরিচয় পর্যন্ত নেই মন্তব্য করে সোহেল রানা বলেন, ‘আসলে দায়িত্ব দেওয়ার আগে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে নেওয়া হলে ভাল হতো। যাচাই-বাছাই করা হলে এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।’