নিম্নমানের আলুর বীজ ক্ষেতে রোপণ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার কয়েকজন কৃষক। এ ঘটনায় এক কৃষক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও)। এরপর ইউএনও’র নির্দেশে গত ২২ জানুয়ারি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল। 

তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তামিম আজিজ, মো.

জিয়াউর রহমান ও আব্দুল আজিজ।

কৃষকরা জানান, খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি বাজারের প্রকাশ বীজ ভান্ডার থেকে একটি কোম্পানির উন্নত জাতের আলুর বীজ কেনেন তারা। ওই বীজ ক্ষেতে রোপণ করার পর কিছু চারা গজালেও অধিকাংশ নষ্ট হয়ে যায়। বিষয়টি বীজের ডিলার দুলাল চন্দ্র মজুমদারকে জানালে বিষয়টি সুরাহা না করে উল্টো কৃষককে শাসান তিনি। নিরুপায় হয়ে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন মানিকছড়ি পূর্ব চেংগু ছড়ার কৃষক আব্দুল সোবহান। 

আরো পড়ুন:

ক্ষেতেই পচে নষ্ট হচ্ছে মিষ্টি কুমড়া

পতিত জমিতে ওলকপি চাষে সফল কৃষক আউয়াল

কৃষক আব্দুল সোবহান জানান, ‍প্রকাশ বীজ ভান্ডার থেকে ৬০০ কেজি আলুর বীজ কিনে জমিতে রোপণ করেন তিনি। কিছু বীজ থেকে চারা গজালেও অধিকাংশ নষ্ট হয়ে যায়। বীজ ডিলার দুলাল চন্দ্র মজুমদারকে অভিযোগ জানালে, তিনি উল্টো হুমকি দেন। বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ায় তিনি লিখিত অভিযোগ দিতে বাধ্য হয়েছেন ।

একই এলাকার অপর কৃষক মো. সুমন মিয়া জানান, তিনি এক কানি (৪০ শতক) জমিতে আলু চাষ করেছেন। তিনিও প্রকাশ বীজ ভান্ডার থেকে তিন মণ আলুর বীজ ক্রয় করেছিলেন। বীজ জমিতে রোপণের পর অনেক বীজ না গজানোয় এখন খরচের টাকা উঠানো নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন।

মানিকছড়ি উপজেলার এয়াতলং পাড়া এলাকার কৃষক আলী আহম্মদ জানান, তিনি দুলাল মজুমদার থেকে আলুর বীজ এনে রোপণ করেছেন ক্ষেতে। পাশাপাশি কুমিল্লা থেকেও কিছু বীজ এনে রোপণ করেছেন। দুলাল থেকে আনা বীজগুলো তেমন না গজালেও কুমিল্লা থেকে এনে লাগানো অন্য জাতের আলুর সব বীজ গজিয়েছে। 

তিনি আরো জানানন, ক্ষেতে বীজ রোপণের পর দুই জায়গা থেকে কেনা বীজ সমানভাবে পরিচর্যা করলেও দুলালের কাছ থেকে আনা আলুর বীজগুলো গজায়নি।

প্রকাশ বীজ ভান্ডারের মালিক দুলাল মজুমদার জানান, তিনি নিজে ক্ষেতে গেছেন। কিছু কিছু জায়গায় আলু গজিয়েছে, কিছু জায়গায় হয়নি। মোটামুটি অনেক আলু উঠছে। এতে তার পদক্ষেপ নেওয়ার কিছু নেই, নিলে কোম্পানি নেবে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তামিম আজিজ জানান, কৃষক সোবহানের অভিযোগের ভিত্তিতে জমি পরিদর্শন করতে যান। আলুর বীজ শতভাগ না গজানোর কারণেই প্রতিটি সারিতেই কমবেশি ফাঁকা রয়েছে ।

তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান জানান, আলুর বীজ গজায়নি সে সত্যতা পাওয়া গেছে। তাদের মতে বীজগুলো নিন্মমানের। কৃষকেরা অনেক কষ্ট করে টাকা ধার নিয়ে চাষ করেন, যাতে কোনো কৃষক ক্ষতির শিকার না হয়। 

মানিকছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জহির রায়হান জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর কৃষকের জমি পরিদর্শন করেছেন। প্রকাশ বীজ ভান্ডারের মালিক এবং সংশ্লিষ্ট কোম্পানির প্রতিনিধিকে তার কার্যালয়ে ডেকেছেন। তাদের কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে এবং তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

মানিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আফরোজ ভুঁইয়া জানান, নিন্মমানের আলুর বীজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষক এমন একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। অভিযোগ তদন্তে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগকে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তী
ব্যবস্থা নেবেন তিনি।

ঢাকা/রূপায়ন/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফসল র আল র ব জ আল র ব জ ক ম ন কছড় কর ছ ন তদন ত উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ফেস্টুন অপসারণ করায় ইউএনওকে শাসালেন বিএনপি নেতা 

ফেস্টুন অপসারণ করায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফয়সাল আহমেদকে শাসিয়েছেন এক বিএনপি নেতা। তিনি ইউএনওকে আগের স্থানেই ফেস্টুন লাগিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, “তা না হলে যেটা করা দরকার, সেটাই করব।”

এই বিএনপি নেতার নাম কে এম জুয়েল। তিনি রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক। গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুলে তার বাড়ি। 

গত মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) গোদাগাড়ী উপজেলা সদরের সড়ক বিভাজকে থাকা বিভিন্ন দলের ফেস্টুন অপসারণ করেন ইউএনও ফয়সাল আহমেদ। বিষয়টি জানতে পেরে ইউএনওকে ফোন করে ধমকান জুয়েল।

কে এম জুয়েলের ফোনকল রেকর্ড পাওয়া গেছে। এতে শোনা গেছে, কে এম জুয়েল বলেছেন- “আজকে একটা ঘটনা ঘটেছে, আমি শুনেছি। আমি ইঞ্জিনিয়ার কে এম জুয়েল বলছি, সম্ভাব্য ক্যান্ডিডেট। আপনার গোদাগাড়ী থানার প্রোপারে যে পোস্টার সরিয়েছেন, এই বিষয়ে কিছুক্ষণ আগে আমাকে ইনফর্ম করা হয়েছে। সেখানে আমার পোস্টার ছিল। জামায়াত-বিএনপির পোস্টার ছিল। আপনি যে হটাইছেন, এর কারণ কী? কোনো পরিপত্র আছে, না ইচ্ছে করেই?”

ইউএনও তখন বলেন, “জনগণ অভিযোগ দিয়েছে।” জুয়েল বলেন, “জনগণ তো অনেক অভিযোগ দিয়েছে। সমগ্র গোদাগাড়ী থানাতে ভর্তি হয়ে আছে পোস্টার। তোলেন, সব তোলেন।”

এ সময় ইউএনও কিছু বলতে চাইলে তাকে থামিয়ে দিয়ে জুয়েল বলেন, “শোনেন, আমি যেটা বলছি লিগ্যাল রাইট নিয়ে বলছি, সেটার সঠিক অ্যানসার করবেন। আপনি কেন ওই জায়গার পোস্টার তুলেছেন, আর অন্য জায়গার তুলছেন না কেন? আমি ঢাকাতে আছি, আমি আসতেছি।”

ইউএনও বলেন, “আচ্ছা ঠিক আছে।” জুয়েল বলেন, “না, আপনি যেখান থেকে পোস্টার তুলেছেন, সেখানে আপনি সাবমিট করবেন পোস্টার।” কথা না বাড়িয়ে ইউএনও বলেন, “ঠিক আছে।”

এ সময় আরো ক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপি নেতা জুয়েল বলেন, “কালকে যেন আমরা ওখানে দেখতে পাই, পোস্টার যেখানে ছিল। ঠিক আছে মানে কী? অবশ্যই করবেন। না হলে যেটা করা দরকার সেটাই করব। আপনার এগেইনেস্টে যেরকম স্টেপ নেওয়া দরকার, সেটাই আমি করব। বিশেষ করে আমরা করব। আমার নেতার ছবি তুলেছেন আপনি ওখান থেকে। জাস্ট রিমেম্বার ইট।”

জুয়েল বলতে থাকেন, “নরসিংদী বাড়ি দেখান আপনি, না? কোন দল থেকে আসছেন আপনি? কোন দল থেকে এসেছেন? কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেছেন আপনি? কালকে পোস্টার ভদ্রলোকের মতো লাগাবেন। ফাইজলামি! এহ, বিশাল ব্যাপার। উনি টিএনও হয়ে গোদাগাড়ীতে আসছেন।”

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ইউএনও ফয়সাল আহমেদ বলেন, “ডাইংপাড়া মোড়ে ব্যানার-ফেস্টুন এরকম পর্যায়ে ছিল যে, যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছিল। পাশাপাশি পৌরসভার সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছিল বলে অভিযোগ ছিল। স্থানীয় জনগণ এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পৌরসভা থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে সরানোর জন্য। দুই-তিনবার মৌখিকভাবে ও লিখিত আকারে জানানো হয়েছিল। না সরানোর কারণে ব্যানার-ফেস্টুন সরিয়ে পৌরসভায় রাখা হয়েছে।”

তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একাধিক সভাতেও আলোচনা হয়েছিল। সেখান থেকে সকল রাজনৈতিক দলের পোস্টারই পৌরসভার পক্ষ থেকে সরানো হয়েছে। তবে, বিএনপি নেতা কে এম জুয়েলের ফোনে শাসানোর বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা কে এম জুয়েল বলেন, “ইউএনওর কাছে জনগণ অভিযোগ করেছে, আর আমরা কি মানুষ না? আমরা জানোয়ার? আমার ছবি তুলে ফেলুক আপত্তি নাই। আমার নেতার ছবিতে হাত দিয়েছে কেন? তার কাছে কি নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পোস্টার তুলে ফেলতে? তিন মাসের মধ্যে কি নির্বাচন? উনি জাস্টিস করতেন, আমার কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু গরু-ছাগলের মতো আচরণ করবেন, তা তো হয় না।”

বিষয়টি নিয়ে কোথাও আলোচনা হয়নি, ইউএনও কোনো চিঠিও দেননি, দাবি করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “গতকাল আমার এক লোককে ডেকে ইউএনও বলেছেন, যেখানে পোস্টার ছিল, দয়া করে আপনারা লাগিয়ে নেন। কিন্তু, আমরা তো লাগাব না। ইউএনওকেই লাগাতে হবে।”

উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একজন সদস্য জানান, প্রায় দুই মাস আগে উপজেলা সদরের এসব ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টারের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উত্থাপন করেন এক ব্যক্তি। এক মাসেও সেগুলো অপসারণ না হওয়ায় পরবর্তী মাসের সভাতেও বিষয়টি আলোচনায় ওঠে। ওই সভায় ট্রাফিক পুলিশ আপত্তি করেছিল যে, ফেস্টুনের কারণে রাস্তার একপাশ থেকে অন্যপাশ দেখা যায় না। এতে দুর্ঘটনা ঘটছে। এ দুটি সভার মধ্যে প্রথম সভায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল ছিলেন না। দুই সভার মাঝে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি পুনর্গঠন করা হলে তিনি পরবর্তী সভায় উপস্থিত ছিলেন।

তবে, কোনো আলোচনা হয়নি দাবি করে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল বলেন, “আমি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য। পোস্টার নিয়ে কোনো আলোচনা সভায় হয়নি। ইউএনও আমাদের না জানিয়ে এভাবে ফেস্টুন অপসারণ করে ঠিক করেননি। সেখানে আমাদের নেতার ছবি ছিল।”

ঢাকা/কেয়া/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইউএনওর স্বাক্ষর জাল করে শিক্ষক নিয়োগের চেষ্টা, জামায়াতের পদ থেকে অব্যাহতি
  • বিএনপির সাবেক নেতার হুমকি, সরিয়ে ফেলা পোস্টার ইউএনওকেই লাগাতে হবে
  • ফেস্টুন অপসারণ করায় ইউএনওকে শাসালেন বিএনপি নেতা 
  • মেঘনায় নদীতে অবৈধ বালু তোলায় ব্যবহৃত ৭টি খননযন্ত্র ও ১টি বাল্কহেড জব্দ