খাগড়াছড়িতে নিম্নমানের আলুর বীজে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক
Published: 26th, January 2025 GMT
নিম্নমানের আলুর বীজ ক্ষেতে রোপণ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার কয়েকজন কৃষক। এ ঘটনায় এক কৃষক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও)। এরপর ইউএনও’র নির্দেশে গত ২২ জানুয়ারি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল।
তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তামিম আজিজ, মো.
কৃষকরা জানান, খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি বাজারের প্রকাশ বীজ ভান্ডার থেকে একটি কোম্পানির উন্নত জাতের আলুর বীজ কেনেন তারা। ওই বীজ ক্ষেতে রোপণ করার পর কিছু চারা গজালেও অধিকাংশ নষ্ট হয়ে যায়। বিষয়টি বীজের ডিলার দুলাল চন্দ্র মজুমদারকে জানালে বিষয়টি সুরাহা না করে উল্টো কৃষককে শাসান তিনি। নিরুপায় হয়ে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন মানিকছড়ি পূর্ব চেংগু ছড়ার কৃষক আব্দুল সোবহান।
আরো পড়ুন:
ক্ষেতেই পচে নষ্ট হচ্ছে মিষ্টি কুমড়া
পতিত জমিতে ওলকপি চাষে সফল কৃষক আউয়াল
কৃষক আব্দুল সোবহান জানান, প্রকাশ বীজ ভান্ডার থেকে ৬০০ কেজি আলুর বীজ কিনে জমিতে রোপণ করেন তিনি। কিছু বীজ থেকে চারা গজালেও অধিকাংশ নষ্ট হয়ে যায়। বীজ ডিলার দুলাল চন্দ্র মজুমদারকে অভিযোগ জানালে, তিনি উল্টো হুমকি দেন। বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ায় তিনি লিখিত অভিযোগ দিতে বাধ্য হয়েছেন ।
একই এলাকার অপর কৃষক মো. সুমন মিয়া জানান, তিনি এক কানি (৪০ শতক) জমিতে আলু চাষ করেছেন। তিনিও প্রকাশ বীজ ভান্ডার থেকে তিন মণ আলুর বীজ ক্রয় করেছিলেন। বীজ জমিতে রোপণের পর অনেক বীজ না গজানোয় এখন খরচের টাকা উঠানো নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন।
মানিকছড়ি উপজেলার এয়াতলং পাড়া এলাকার কৃষক আলী আহম্মদ জানান, তিনি দুলাল মজুমদার থেকে আলুর বীজ এনে রোপণ করেছেন ক্ষেতে। পাশাপাশি কুমিল্লা থেকেও কিছু বীজ এনে রোপণ করেছেন। দুলাল থেকে আনা বীজগুলো তেমন না গজালেও কুমিল্লা থেকে এনে লাগানো অন্য জাতের আলুর সব বীজ গজিয়েছে।
তিনি আরো জানানন, ক্ষেতে বীজ রোপণের পর দুই জায়গা থেকে কেনা বীজ সমানভাবে পরিচর্যা করলেও দুলালের কাছ থেকে আনা আলুর বীজগুলো গজায়নি।
প্রকাশ বীজ ভান্ডারের মালিক দুলাল মজুমদার জানান, তিনি নিজে ক্ষেতে গেছেন। কিছু কিছু জায়গায় আলু গজিয়েছে, কিছু জায়গায় হয়নি। মোটামুটি অনেক আলু উঠছে। এতে তার পদক্ষেপ নেওয়ার কিছু নেই, নিলে কোম্পানি নেবে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তামিম আজিজ জানান, কৃষক সোবহানের অভিযোগের ভিত্তিতে জমি পরিদর্শন করতে যান। আলুর বীজ শতভাগ না গজানোর কারণেই প্রতিটি সারিতেই কমবেশি ফাঁকা রয়েছে ।
তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান জানান, আলুর বীজ গজায়নি সে সত্যতা পাওয়া গেছে। তাদের মতে বীজগুলো নিন্মমানের। কৃষকেরা অনেক কষ্ট করে টাকা ধার নিয়ে চাষ করেন, যাতে কোনো কৃষক ক্ষতির শিকার না হয়।
মানিকছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জহির রায়হান জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর কৃষকের জমি পরিদর্শন করেছেন। প্রকাশ বীজ ভান্ডারের মালিক এবং সংশ্লিষ্ট কোম্পানির প্রতিনিধিকে তার কার্যালয়ে ডেকেছেন। তাদের কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে এবং তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
মানিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আফরোজ ভুঁইয়া জানান, নিন্মমানের আলুর বীজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষক এমন একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। অভিযোগ তদন্তে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগকে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তী
ব্যবস্থা নেবেন তিনি।
ঢাকা/রূপায়ন/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফসল র আল র ব জ আল র ব জ ক ম ন কছড় কর ছ ন তদন ত উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
আ.লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করে ইউএনওকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার হরিতলা মোড়ে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে ইউএনওর অপসারণের দাবি জানানো হয়।
এলাকার সচেতন নাগরিক, ব্যবসায়ী মহল, অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী, কর্মচারী-শিক্ষকমণ্ডলীর ব্যানারে এ মানববন্ধন করা হয়। এতে এলাকাবাসী ছাড়া তাহেরপুর কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন থেকে কলেজের সম্পত্তি অন্যত্র ইজারা দেওয়ার চেষ্টার প্রতিবাদ জানানো হয়।
তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে মানববন্ধন করা হয়। পৌরসভার নির্মিত দোকানঘর থেকে তাহেরপুর কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেওয়ায় এ কর্মসূচি পালন করা হয় বলে অভিযোগ। আওয়ামী লীগের নেতার দাবি, তিনি দলীয় পরিচয়ে নয়, কলেজশিক্ষক হিসেবে মানববন্ধনে যোগ দিয়েছেন। তবে ব্যানারে ফ্যাসিবাদ শব্দটি প্রথমে দেখেননি। পরে দেখেছেন।
মানববন্ধনে তাহেরপুর কলেজের শিক্ষক রইচ আহমেদ, সুরাইয়া আক্তার, তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ইসমাইল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন। বক্তারা বাগমারার ইউএনওকে ফ্যাসিবাদের দোসর ও চব্বিশের চেতনাবিরোধী অভিযোগ তুলে তাঁদের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেওয়ার নিন্দা জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাহেরপুর কলেজ–সংলগ্ন স্থানে পৌর কর্তৃপক্ষ দোকানঘর নির্মাণ করেছে। পৌরসভার পক্ষে নিয়মিত ভাড়া আদায় করা হয় ওই প্রতিষ্ঠান থেকে। ৫ আগস্টের পর থেকে কলেজের পক্ষ থেকে ৪১টি দোকানঘর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেগুলো থেকে ভাড়া আদায় করা হয়।
পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে বাগমারার ইউএনও দোকানঘর থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেন। দোকানঘরগুলো পৌরসভার হওয়ায় তারাই সেখান থেকে ভাড়া আদায় করবে বলে জানানো হয়। সেখান থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ আর ভাডা আদায় করবে না জানিয়ে ২২ এপ্রিল পৌরসভার প্রশাসককে লিখিতভাবে জানান কলেজের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম। এর পর থেকে কর্তৃপক্ষ ইউএনওর ওপর ক্ষুব্ধ হয়।
তাহেরপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক সুরাইয়া আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, কলেজের জায়গায় তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়ব ও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ দোকানঘর নির্মাণ করে মোটা অঙ্কের টাকায় ভাড়া দেন। ৫ আগস্টের পর তাঁরা (কলেজ কর্তৃপক্ষ) সেগুলো নিয়ন্ত্রণে নেন। তবে ২২ এপ্রিল ইউএনও সাদা কাগজে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছ থেকে ভাড়া আদায় বিষয়ে একটি লিখিত নিয়েছেন। এর প্রতিবাদে মূলত তাঁদের এই কর্মসূচি।
পৌরসভার দোকানঘর থেকে কেন পৌরসভা ভাড়া আদায় করবে না জানতে চাইলে সুরাইয়া আক্তার বলেন, ‘জায়গাগুলো কলেজের ছিল।’ ব্যানারে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখা হলেও কেন আওয়ামী লীগের নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কলেজের স্বার্থে আমরা এক।’
জানতে চাইলে ইউএনও মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, দোকানগুলো তাহেরপুর পৌরসভার। সেগুলো থেকে ভাড়া আদায় করে পৌরসভার কোষাগারে জমা করা হয়। তিনি প্রশাসক হিসেবে ভাড়া আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছেন। কলেজের অধ্যক্ষ নিজেই জানিয়েছেন, এখন থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভাড়া আদায় করবে না।