নাটোরের লালপুরে মেয়ে হালিমা খাতুনের (১৮) সঙ্গে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন বাবা আবদুল হান্নান (৪৩)। ফলাফলে মেয়েকে ছাড়িয়ে গেছেন বাবা। জিপিএ-৪.৩ নিয়ে পাশ করেছেন আবদুল হান্নান। অন্যদিকে তাঁর মেয়ে হালিমা পেয়েছেন ৩.৭১।

আবদুল হান্নান ও হালিমা লালপুর উপজেলার গোপালপুর পৌরসভার নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা। হান্নান রাজশাহীর বাঘা উপজেলার কাকড়ামারি কলেজ থেকে এবং তাঁর মেয়ে হালিমা লালপুর উপজেলার গোপালপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষা অংশ নেন। এর আগে ২০২৩ সালে একসঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেন তাঁরা।

হালিমা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার জন্মের আগেই আমার বাবা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু পাস করতে পারেননি। পরে ঘটনাটি জানার পর ধরেই নিয়েছিলাম, বাবা পড়ালেখায় ইতি টেনেছেন। কিন্তু ২০২৩ সালে বাবা কাউকে না জানিয়ে আবার এসএসসি পরীক্ষা দিতে বসলে ঘটনাটি আমাদের পরিবারে তো বটেই, দেশে আলোচিত হয়। এরপর বাবা পড়ালেখায় আরও সিরিয়াস (সচেতন) হন। সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি আমার সঙ্গেই পড়ালেখা করেছেন। পরীক্ষা দিয়ে আমার চেয়েও ভালো ফল করেছেন। আমি এতে মন খারাপ করিনি। বরং বাবার ফল আমাকে আরও ভালো করার উৎসাহ জুগিয়েছে।’

পড়ালেখার প্রতি নিজের আগ্রহের কথা প্রকাশ করে আবদুল হান্নান জানান, ছোটবেলা থেকে তিনি পড়ালেখায় ভালো ছিলেন। কিন্তু অভাবের সংসারে পড়ালেখার জন্য তেমন পরিবেশ পাননি। ১৯৯৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিশেষ কারণে অকৃতকার্য হন। পরিবারের প্রয়োজনে পড়ালেখা ছেড়ে গোপালপুর রেলগেটে চায়ের দোকান দিয়ে বসেন। এরপর বিয়ে করে সংসারী হন। কিন্তু মনের মধ্যে শিক্ষিত হওয়ার আগ্রহ দমে যায়নি। মেয়ের এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করার সময় হঠাৎ নিজেরও পরীক্ষায় বসার ভাবনা আসে। কাউকে না জানিয়ে তাই নিজেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। পরীক্ষার সময় হঠাৎ বিষয়টি জানাজানি হয়। তখন আবারও অকৃতকার্য হওয়ার দুঃস্বপ্ন ভর করে।

একটু থেমে আবদুল হান্নান বলেন, তবে সৃষ্টিকর্তা নিরাশ করেননি। এসএসসি পাস করেন। এরপর প্রকাশ্যে পড়ালেখা শুরু করেন। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার কাকড়ামারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেন। মেয়ের সঙ্গে বসে পড়ালেখা করতে থাকেন এবং শেষে কাঙ্ক্ষিত ফলও পান। ফলাফলে মেয়েকে টপকে যাওয়ার ঘটনা অপ্রত্যাশিত হলেও তিনি বিস্মিত হননি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পড়ালেখা যখন নতুন করে শুরু করেছি, তখন শেষ পর্যন্ত (মাস্টার্স) পড়বই। চাকরি করার বয়স হয়তো থাকবে না। তাতে কিছুই আসে–যায় না। আমি এই সমাজের একজন উচ্চশিক্ষিত নাগরিক হয়ে বেঁচে থাকতে চাই।’

আবদুল হান্নানের ভাবনা ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন নাটোরের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রোস্তম আলী হেলালী। তিনি বলেন, শিক্ষালাভের কোনো বয়স নেই। আবদুল হান্নান তাঁর মেয়ে হালিমা খাতুনের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে এ কথা প্রমাণ করেছেন। তিনি চাকরির জন্য নয়, জ্ঞান অর্জনের জন্য পড়ছেন। এটা সমাজের জন্য একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ। তাঁদের উভয়কেই অভিনন্দন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ ল হ ন ন ন পর ক ষ য় পর ক ষ র উপজ ল র প স কর কর ছ ন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

স্মার্টফোনে থাকা সব ছবি গোপনে দেখবে ফেসবুক, কেন

স্মার্টফোন এখন শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, ছবি তোলার ক্ষেত্রেও হয়ে উঠেছে অন্যতম প্রধান যন্ত্র। আধুনিক স্মার্টফোনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিসহ উন্নত সেন্সর ও ম্যানুয়াল নিয়ন্ত্রণ–সুবিধা যুক্ত থাকায় সহজেই ডিএসএলআর ক্যামেরার মতো ভালো মানের ছবি তোলা যায়। তাই স্মার্টফোনে দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন স্মৃতি সংরক্ষণ করেন অনেকে। কেউ আবার পছন্দের এক বা একাধিক ছবি ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন। আর তাই এবার ব্যবহারকারীদের আপলোড করা ছবির পাশাপাশি স্মার্টফোনে থাকা সব ছবি সংগ্রহ করতে ‘ক্লাউড প্রসেসিং’ নামের নতুন সুবিধা চালু করেছে ফেসবুক। এআইনির্ভর এই সুবিধা স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্মার্টফোনে থাকা সব ছবি সংগ্রহ করে মেটার সার্ভারে জমা করবে।

ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ব্যবহারকারীদের জন্য চালু হওয়া ক্লাউড প্রসেসিং সুবিধাটি ব্যবহারকারীদের অনুমতি নিয়ে ফোনের গ্যালারিতে থাকা অপ্রকাশিত ছবিগুলোও সার্ভারে জমা করবে। এরপর সার্ভারে থাকা ছবিগুলোর কোলাজ তৈরি করে নির্দিষ্ট সময়ে ব্যবহারকারীদের উপস্থাপন করা হবে। এসব ছবির মধ্যে বিভিন্ন স্ক্রিনশট ও রসিদও থাকতে পারে। এই সুবিধা চালুর উদ্দেশ্য হলো ব্যবহারকারীদের ছবি ও ভিডিওকে আরও ‘শেয়ারযোগ্য’ করে তোলা।

ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করায় আগেও নানা প্রশ্নের মুখে পড়েছে মেটা। নতুন সুবিধাটি চালুর পর আবারও ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ, মেটা চাইলে ব্যবহারকারীদের অনুমতি ছাড়াই গোপনে ফেসবুক অ্যাপের প্রাইভেসি সেটিংস পরিবর্তন করে স্মার্টফোনে থাকা সব ছবি সংগ্রহ করে নিজেদের এআই মডেলকে প্রশিক্ষণ দিতে পারে। তবে এ বিষয়ে মেটা জানিয়েছে, আমরা ব্যবহারকারীদের ক্যামেরা রোলের ছবি বা ভিডিও মেটার এআই উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করি না। তবে ব্যবহারকারীরা যদি আমাদের এআই টুল দিয়ে ছবি সম্পাদনা বা শেয়ার করেন, তবে তা ব্যবহার করা হয়।

আরও পড়ুনফেসবুক থেকে আয় করবেন কীভাবে১১ আগস্ট ২০২৫

প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট দ্য ভার্জের এক প্রশ্নের জবাবে মেটার মুখপাত্র মারি মেলগুইজো জানান, এই সুবিধার মাধ্যমে আপলোড করা ছবিগুলো ব্যবহারকারীদের প্রস্তাব পাঠানোর জন্য ব্যবহার করা হবে, এআই প্রযুক্তি উন্নয়নের জন্য নয়। তবে ব্যবহারকারীরা যদি সেই প্রস্তাবিত ছবি মেটা এআই টুল দিয়ে সম্পাদনা বা প্রকাশ করেন, তখন সেগুলো এআই প্রশিক্ষণে কাজে লাগানো হতে পারে। অর্থাৎ ব্যবহারকারী কিছু না করলেও ফেসবুকের সার্ভারে তাঁর ছবির কপি সংরক্ষণ করা হবে।

আরও পড়ুনআপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট কি অন্য কেউ লুকিয়ে ব্যবহার করছে১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে মেটা স্বীকার করেছিল, ২০০৭ সাল থেকে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা ছবি ও লেখা ব্যবহার করে তারা তাদের এআই মডেলকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এ ছাড়া ফেসবুক অ্যাপের প্রাইভেসি সেটিংস গোপনে পরিবর্তন করে ব্যবহারকারীদের স্মার্টফোনে থাকা ছবি গোপনে দেখার অভিযোগও রয়েছে মেটার বিরুদ্ধে।

সূত্র: দ্য ভার্জ

আরও পড়ুনদূর থেকে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট লগআউট করবেন যেভাবে০৭ মে ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রবাসী কর্মীর মেধাবী সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি, আবেদন শেষ ২৫ নভেম্বর
  • উপজেলায় এইচএসসিতে একমাত্র জিপিএ-৫ পেলেন অনুরাগ
  • আবার পেনশন বিমা চালু করল জীবন বীমা করপোরেশন, কী সুবিধা মিলবে
  • আইএইচটি ও ম্যাটসের ভর্তি পরীক্ষা ২৪ অক্টোবর, প্রবেশপত্রের তারিখ ঘোষণা
  • মা হলেন পরিণীতি চোপড়া
  • পরিবার, ফিটনেস আর উৎসব-একসঙ্গে ফ্যামিলি রানার্স ৭.৫ কিলোমিটার রান ২০২৫
  • স্মার্টফোনে থাকা সব ছবি গোপনে দেখবে ফেসবুক, কেন
  • রাকসুতে পরাজিতদের মিলনমেলা, সম্প্রিতির ক্যাম্পাস গড়ার প্রত্যয়
  • রাকসু নির্বাচনে বিজিত প্রার্থীদের ‘হারু পার্টি’