ইসলামে বয়স্কদের জন্য দুটি বিশেষ উপহার
Published: 20th, October 2025 GMT
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মানুষ যেন এক অদ্ভুত অনুভূতির মধ্য দিয়ে যায়। বয়স্করা প্রায়ই তাদের যৌবনের দিনগুলোর কথা মনে করে, যেন একজন প্রবাসী নিজের জন্মভূমির জন্য হাহাকার করে। তারা অতীতের গল্প বলতে ভালোবাসে। কেউ তার পছন্দের সেরা কবিতা আবৃত্তি করে।
তাদের মন পড়ে থাকে অতীতের স্মৃতিতে, কারণ বর্তমান তাদের কাছে উদাসীন, আর ভবিষ্যৎ মনে হয় কুয়াশায় ঢাকা, মৃত্যুর ছায়ায় ম্লান। শরীর দুর্বল হয়, রোগ-ব্যাধি এসে ভর করে, আর জীবনের বাকি দিনগুলো যেন গুটিয়ে আসে। এই সময়ে তারা শান্তি খোঁজে, মানুষের সঙ্গ আর উষ্ণ সম্পর্কের আশ্রয় চায়। এটাই বৃদ্ধ বয়স।
শেষ বয়সে মানুষ একটু শান্তি ও জীবনের অর্থ খোঁজে। ইসলাম তাদের উভয় জগতে শান্তির প্রতিশ্রুতি দেয় এবং সম্মান ও যত্নের ব্যবস্থা করতে বলে।বিশ্বে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর বৃদ্ধিআমাদের পৃথিবী এখন এক অভূতপূর্ব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জনসংখ্যার একটি বড় অংশ বয়স্ক হয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা এখন ৭০০ মিলিয়নেরও বেশি। ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা প্রায় ২০০০ মিলিয়নে পৌঁছাবে, যা বিশ্বের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ। এমনকি ৮০ বছরের বেশি বয়সীদের সংখ্যা তিন গুণ বেড়ে ৪২৬ মিলিয়নে পৌঁছাবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মানুষ এখন আগের চেয়ে বেশি দিন বাঁচছে। উন্নত দেশগুলোতে ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের হার ১৬ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এই পরিবর্তন শুধু সংখ্যার নয়, এটি স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও সমাজ জীবনে বড় প্রভাব ফেলছে। বয়স্কদের চিকিৎসা, বৃদ্ধাশ্রম, অবসরপ্রাপ্তদের সংখ্যা বাড়ছে। এমনকি তাদের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক চিন্তাধারাও বদলে যাচ্ছে।
আরও পড়ুনইসলামে প্রবীণদের প্রতি কর্তব্য১৬ আগস্ট ২০২৩বয়জ্যেষ্ঠদের ধর্মভীতি নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা হয়েছে। কিন্তু সেগুলোর একটি সীমাবদ্ধতা হলো, এগুলো প্রায়শই শুধু শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেয়। এগুলো বয়স্কদের জীবনের গভীর প্রশ্ন—যেমন জীবনের উদ্দেশ্য বা পরকালের চিন্তা—নিয়ে কথা বলে না। বয়স্করা যখন মৃত্যুর কাছাকাছি আসেন, তখন তাদের এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দরকার, যা শুধু শারীরিক সুস্থতা দিয়ে পূরণ হয় না।
ইসলামে বয়স্কদের প্রতি যত্নইসলাম বয়স্কদের জন্য দুটি বিশেষ উপহার ঘোষণা করেছে: শান্তির আশ্বাস এবং সম্মানের নিশ্চয়তা।
১.
শান্তি: ইসলাম বয়স্কদের আশ্বাস দেয় যে পরকাল তাদের জন্য আরও ভালো হবে। আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস আর তওবার মাধ্যমে তারা মৃত্যুর ভয় থেকে মুক্তি পেতে পারে। নবীজি (সা.) বলেছেন, “আল্লাহ তায়ালা শীর্ণ বয়স্ককে শাস্তি দিতে লজ্জা পান।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৬৩৫৮)
আরেকটি হাদিসে এসেছে, এক বয়স্ক ব্যক্তি নবীজির (সা.) কাছে এসে বললেন, “আমার অনেক পাপ আছে, আমি কি ক্ষমা পাব?” নবীজি (সা.) বললেন, “তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই?” তিনি বললেন, “হ্যাঁ, এবং আপনি আল্লাহর রাসুল।” নবীজি (সা.) বললেন, “তোমার পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে।” (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২৫৩০)
আরও পড়ুনমহানবী (সা.) যেভাবে বয়োজ্যেষ্ঠদের যত্ন নিতেন২৯ জুলাই ২০২৫খালিদ বিন ওয়ালিদের একটি চুক্তিতে বলা হয়েছিল, যে বয়স্ক বা দুর্বল অমুসলিমরা জিজিয়া (কর) থেকে মুক্ত থাকবে এবং তাদের জন্য মুসলিমদের তহবিল থেকে ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা হবে।ইবনে হিশাম, সিরাতুন নবী২. সম্মান: ইসলাম বয়স্কদের প্রতি অসাধারণ সম্মান দেখাতে শেখায়। নবীজি (সা.) বলেছেন, “সে আমার উম্মতের মধ্যে নয়, যে আমাদের বয়স্কদের সম্মান করে না এবং আমাদের ছোটদের প্রতি দয়া করে না।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৪৩)
ইসলামি সভ্যতার ইতিহাসে দেখা যায়, বয়স্ক অমুসলিমদেরও বিশেষ সুবিধা দেওয়া হতো। খালিদ বিন ওয়ালিদের একটি চুক্তিতে বলা হয়েছিল, যে বয়স্ক বা দুর্বল অমুসলিমরা জিজিয়া (কর) থেকে মুক্ত থাকবে এবং তাদের জন্য মুসলিমদের তহবিল থেকে ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা হবে (ইবনে হিশাম, সিরাতুন নবী, ২/৬৩৫, দারুল কুতুব, কায়রো, ১৯৫৫)
শেষ বয়সে মানুষ একটু শান্তি ও জীবনের অর্থ খোঁজে। ইসলাম তাদের উভয় জগতে শান্তির প্রতিশ্রুতি দেয় এবং সম্মান ও যত্নের ব্যবস্থা করতে বলে। যখন বিশ্ব বয়স্ক জনগোষ্ঠীর বৃদ্ধির মুখোমুখি হচ্ছে, তখন বয়স্কদের প্রতি ইসলামের যত্নের কথা তুলে ধরা অনেক বেশি দরকার।
আরও পড়ুনকারও ঘরে প্রবেশ করার আগে অনুমতি নিতে হবে০৯ আগস্ট ২০২৪উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ব যবস থ দ র জন য আল ল হ জ বন র ইসল ম র একট বলল ন
এছাড়াও পড়ুন:
ইসলামে বয়স্কদের জন্য দুটি বিশেষ উপহার
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মানুষ যেন এক অদ্ভুত অনুভূতির মধ্য দিয়ে যায়। বয়স্করা প্রায়ই তাদের যৌবনের দিনগুলোর কথা মনে করে, যেন একজন প্রবাসী নিজের জন্মভূমির জন্য হাহাকার করে। তারা অতীতের গল্প বলতে ভালোবাসে। কেউ তার পছন্দের সেরা কবিতা আবৃত্তি করে।
তাদের মন পড়ে থাকে অতীতের স্মৃতিতে, কারণ বর্তমান তাদের কাছে উদাসীন, আর ভবিষ্যৎ মনে হয় কুয়াশায় ঢাকা, মৃত্যুর ছায়ায় ম্লান। শরীর দুর্বল হয়, রোগ-ব্যাধি এসে ভর করে, আর জীবনের বাকি দিনগুলো যেন গুটিয়ে আসে। এই সময়ে তারা শান্তি খোঁজে, মানুষের সঙ্গ আর উষ্ণ সম্পর্কের আশ্রয় চায়। এটাই বৃদ্ধ বয়স।
শেষ বয়সে মানুষ একটু শান্তি ও জীবনের অর্থ খোঁজে। ইসলাম তাদের উভয় জগতে শান্তির প্রতিশ্রুতি দেয় এবং সম্মান ও যত্নের ব্যবস্থা করতে বলে।বিশ্বে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর বৃদ্ধিআমাদের পৃথিবী এখন এক অভূতপূর্ব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জনসংখ্যার একটি বড় অংশ বয়স্ক হয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা এখন ৭০০ মিলিয়নেরও বেশি। ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা প্রায় ২০০০ মিলিয়নে পৌঁছাবে, যা বিশ্বের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ। এমনকি ৮০ বছরের বেশি বয়সীদের সংখ্যা তিন গুণ বেড়ে ৪২৬ মিলিয়নে পৌঁছাবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মানুষ এখন আগের চেয়ে বেশি দিন বাঁচছে। উন্নত দেশগুলোতে ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের হার ১৬ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এই পরিবর্তন শুধু সংখ্যার নয়, এটি স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও সমাজ জীবনে বড় প্রভাব ফেলছে। বয়স্কদের চিকিৎসা, বৃদ্ধাশ্রম, অবসরপ্রাপ্তদের সংখ্যা বাড়ছে। এমনকি তাদের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক চিন্তাধারাও বদলে যাচ্ছে।
আরও পড়ুনইসলামে প্রবীণদের প্রতি কর্তব্য১৬ আগস্ট ২০২৩বয়জ্যেষ্ঠদের ধর্মভীতি নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা হয়েছে। কিন্তু সেগুলোর একটি সীমাবদ্ধতা হলো, এগুলো প্রায়শই শুধু শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেয়। এগুলো বয়স্কদের জীবনের গভীর প্রশ্ন—যেমন জীবনের উদ্দেশ্য বা পরকালের চিন্তা—নিয়ে কথা বলে না। বয়স্করা যখন মৃত্যুর কাছাকাছি আসেন, তখন তাদের এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দরকার, যা শুধু শারীরিক সুস্থতা দিয়ে পূরণ হয় না।
ইসলামে বয়স্কদের প্রতি যত্নইসলাম বয়স্কদের জন্য দুটি বিশেষ উপহার ঘোষণা করেছে: শান্তির আশ্বাস এবং সম্মানের নিশ্চয়তা।
১. শান্তি: ইসলাম বয়স্কদের আশ্বাস দেয় যে পরকাল তাদের জন্য আরও ভালো হবে। আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস আর তওবার মাধ্যমে তারা মৃত্যুর ভয় থেকে মুক্তি পেতে পারে। নবীজি (সা.) বলেছেন, “আল্লাহ তায়ালা শীর্ণ বয়স্ককে শাস্তি দিতে লজ্জা পান।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৬৩৫৮)
আরেকটি হাদিসে এসেছে, এক বয়স্ক ব্যক্তি নবীজির (সা.) কাছে এসে বললেন, “আমার অনেক পাপ আছে, আমি কি ক্ষমা পাব?” নবীজি (সা.) বললেন, “তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই?” তিনি বললেন, “হ্যাঁ, এবং আপনি আল্লাহর রাসুল।” নবীজি (সা.) বললেন, “তোমার পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে।” (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২৫৩০)
আরও পড়ুনমহানবী (সা.) যেভাবে বয়োজ্যেষ্ঠদের যত্ন নিতেন২৯ জুলাই ২০২৫খালিদ বিন ওয়ালিদের একটি চুক্তিতে বলা হয়েছিল, যে বয়স্ক বা দুর্বল অমুসলিমরা জিজিয়া (কর) থেকে মুক্ত থাকবে এবং তাদের জন্য মুসলিমদের তহবিল থেকে ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা হবে।ইবনে হিশাম, সিরাতুন নবী২. সম্মান: ইসলাম বয়স্কদের প্রতি অসাধারণ সম্মান দেখাতে শেখায়। নবীজি (সা.) বলেছেন, “সে আমার উম্মতের মধ্যে নয়, যে আমাদের বয়স্কদের সম্মান করে না এবং আমাদের ছোটদের প্রতি দয়া করে না।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৪৩)
ইসলামি সভ্যতার ইতিহাসে দেখা যায়, বয়স্ক অমুসলিমদেরও বিশেষ সুবিধা দেওয়া হতো। খালিদ বিন ওয়ালিদের একটি চুক্তিতে বলা হয়েছিল, যে বয়স্ক বা দুর্বল অমুসলিমরা জিজিয়া (কর) থেকে মুক্ত থাকবে এবং তাদের জন্য মুসলিমদের তহবিল থেকে ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা হবে (ইবনে হিশাম, সিরাতুন নবী, ২/৬৩৫, দারুল কুতুব, কায়রো, ১৯৫৫)
শেষ বয়সে মানুষ একটু শান্তি ও জীবনের অর্থ খোঁজে। ইসলাম তাদের উভয় জগতে শান্তির প্রতিশ্রুতি দেয় এবং সম্মান ও যত্নের ব্যবস্থা করতে বলে। যখন বিশ্ব বয়স্ক জনগোষ্ঠীর বৃদ্ধির মুখোমুখি হচ্ছে, তখন বয়স্কদের প্রতি ইসলামের যত্নের কথা তুলে ধরা অনেক বেশি দরকার।
আরও পড়ুনকারও ঘরে প্রবেশ করার আগে অনুমতি নিতে হবে০৯ আগস্ট ২০২৪