রাজা মোল্লা ও আমেনা খাতুন দম্পতি তাঁত শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। দুই ছেলে, এক মেয়ে নিয়ে পাঁচজনের সংসার তাদের। দিন কাটে অভাব-অনটনে। জীবনের এমন পর্যায়ে আনন্দের উপলক্ষ নিয়ে এসেছে একটি সুসংবাদ। তাদের ছেলে রাকিবুল ইসলাম এবার টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজে এমবিবিএসে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। সন্তানের এমন সাফল্যে তাদের পরিবারে আনন্দের বন্যা বয়ে গেলেও ছেলের পড়ালেখার খরচ জোগানোর চিন্তায় তাদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। 
রাজা মোল্লা-আমেনা খাতুন দম্পতির বসবাস পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ধোপাদহ ইউনিয়নের নাড়িয়াগদাই গ্রামে। জমিজমা না থাকায় রাকিবুলের নানার বাড়িতে থাকেন তারা। ধারদেনা ও এনজিও থেকে কিস্তিতে ঋণ নিয়ে এ পর্যন্ত ছেলের পড়ালেখা করিয়েছেন। রাকিবুল নিজেও তাঁতের  কাজ করে বাবা-মাকে সহায়তা করেছেন। টিউশনি করে নিজের পড়ালেখার খরচ জুগিয়েছেন। মেডিকেলে পড়ার খরচ অনেক বেশি। এখন ভর্তি থেকে শুরু করে লেখাপড়া শেষ করার মতো আর্থিক সংগতি এ পরিবারের নেই।  ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ভর্তি শুরু হয়ে চলবে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এখন পর্যন্ত ভর্তির টাকা জোগাড় হয়নি। রাকিবুলকে ভর্তি করাতে না পারলে ভেঙে যাবে তাদের স্বপ্ন।
কথা হলে রাকিবুল ইসলাম জানান, ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবো। অভাব-অনটনের কারণে অনেক দিন স্কুল, কলেজ বাদ দিয়ে তাঁত শ্রমিকের কাজ করেছি। নিয়মিত প্রাইভেট পড়তে পারিনি। টিউশনি করে নিজের পড়ালেখার খরচ চালাতে হয়েছে। শুনেছি, মেডিকেলে পড়ায় অনেক খরবচ। সেই খরচ কীভাবে জোগাব সে চিন্তায় বাবা-মায়ের ঘুম নেই। এখন আমার একটাই স্বপ্ন, ডাক্তার হয়ে বাবা-মায়ের কষ্ট দূর করা। জনগণের সেবা করা। এ জন্য সবার দোয়া ও সহযোগিতা চাই।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র খরচ

এছাড়াও পড়ুন:

আরপিওর বিধানের বৈধতার রায় রিভিউর জন্য হলফনামার অনুমতি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধানের বৈধতা দিয়ে ১৪ বছর আগে রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদনের জন্য হলফনামার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন দুজন আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আজ সোমবার হলফনামা করার অনুমতি দিয়েছেন।

আবেদনকারী সাত ব্যক্তি হলেন ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন, মেজর (অব.) এস এম হারুনুর রশীদ, কাজী জাহেদুল ইসলাম, আইনজীবী এস এম আজমল হোসেন, মেজর (অব.) নিয়াজ আহমেদ জাবের, মেজর (অব.) মো. জিয়াউল আহসান ও সালাহ উদ্দিন।

আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ মামলায় আবেদনকারীরা পক্ষ ছিলেন না। যে কারণে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন দায়েরের জন্য হলফনামা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তাঁরা। চেম্বার আদালত হলফনামা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে শিগগিরই রিভিউ আবেদন করা হবে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২(৩ক)(ক) বিধান অনুযায়ী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যুক্ত করে দিতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতিপূর্বে জাতীয় সংসদের কোনো নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকলে ওই তালিকা প্রদানের প্রয়োজন হবে না।

আইনজীবীর তথ্য অনুসারে, ঢাকার একটি আসন থেকে ২০০৭ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র নেন। পরে নির্বাচনের ওই তারিখ পিছিয়ে যায়। অন্যদিকে ২০০৮ সালে আরপিও দফা ১২(৩ক)–তে সংশোধনী আনা হয়। এই বিধান সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদ ও আরপিওর ১২(১) ধারার পরিপন্থী উল্লেখ করে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী ২০১০ সালে হাইকোর্ট রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট রুল ডিসচার্জ (খারিজ) করে রায় দেন। দফা (৩ক) সংবিধান পরিপন্থী নয় বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন রিট আবেদনকারী। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি লিভ টু আপিল খারিজ করে রায় দেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত আরপিওর ১২(৩ক)–তে বেআইনি কিছু পাননি বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে দুই আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি আবেদন করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে ভোটারের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। ভোটার কোন প্রার্থীকে ভোট দেবেন বা দেবেন না, এটি একান্তই তাঁর চিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার। সিক্রেট ব্যালটে হামলা হলে ভোট বাতিলও হয়। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে। রাজনৈতিক দল হলে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন লাগবে না, অথচ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে গেলে লাগবে অর্থাৎ একই মনোনয়নপত্র ঘিরে দ্বৈত বিধান। ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন থাকার ওই বিধানের মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা সংবিধান সমর্থন করে না এবং ভোটারের গোপনীয়তারও লঙ্ঘন—এসব যুক্তি তুলে ধরে আবেদনটি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ