ফরিদপুর পৌরসভার সেবা পেতে বাড়তি ভোগান্তি পোহাচ্ছেন নাগরিকরা। জন্ম-মৃত্যু, নাগরিক ও ওয়ারিশ সনদ পেতে দুই মাস পর্যন্ত লাগছে। সেবাপ্রার্থীদের অভিযোগ, মেয়রের দায়িত্বে প্রশাসক ও কাউন্সিলরের পরিবর্তে সরকারি দপ্তরের প্রধানরা আসায় ঠিকমতো মিলছে না সেবা। কয়েক মাস ধরেই নাগরিক সনদের সংশোধনী ছাড়ছে না জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ।
ফরিদপুর পৌরসভায় প্রশাসকের দায়িত্বে আছেন জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক চৌধুরী রওশন ইসলাম। সংশোধনী কাজে স্থানীয় সরকার বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন এডিএলজি মো.

হাবিবুল্লাহ।

পৌরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রিজাউল ইসলাম জানান, গত ২৭ জানুয়ারি তিনি অনলাইনে নাগরিক সনদের জন্য আবেদন করেন। পরদিন পৌরসভায় গেলে জানানো হয়, এটি ভেরিফিকেশনে কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করা ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শাহাদুজ্জামান ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, ৩ ফেব্রুয়ারি ভোটার হওয়ার শেষ দিন। নাগরিক সনদ ছাড়া ভোটার হওয়া যাবে না। ঢাকার খামারবাড়ি গিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে সই আনতে অথবা তাঁর ফরিদপুরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন কর্মকর্তারা।
পৌরসভার জন্মনিবন্ধন শাখার কম্পিউটার অপারেটর সৈকত আহমেদ তন্ময় জানান, নির্বাচিত কাউন্সিলরের অধীনে তারা নাগরিক সনদ দিতে সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা নিতেন। এখন তা ১০-১৫ দিন লাগছে। একইভাবে ওয়ারিশ সনদে দুই মাস ও জন্ম-মৃত্যু সনদে লাগছে ১৫ দিন থেকে এক মাস। যেগুলো আগে তিন দিনেই দেওয়া যেত। কয়েক মাস ধরে স্থানীয় সরকার শাখা থেকে সংশোধনী না ছাড়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রাজিউল হাসান বলেন, ওয়ারিশ সনদের জন্য গত ২১ নভেম্বর আবেদন করেছি। এখনও অনুমোদন হয়নি। আমার ওয়ার্ডের দায়িত্বরত কর্মকর্তা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুজ্জামান ফরিদপুরের চেয়ে ঢাকায় অফিস করেন বেশি।পৌরসভার ২৭ ওয়ার্ডে ২৭ কাউন্সিলর ও ৯ মহিলা কাউন্সিলর ছিলেন। পৌরসভায় প্রশাসক নিয়োগের পর তাদের জায়গায় কাজ করছেন বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের আটজন। তাদের সহায়তায় ২৭ ওয়ার্ডে ২৭ কর্মচারীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

পৌরসভার প্রেষণে অফিস সহকারী গোলাম মওলা মলি বলেন, সনদের কোনো আবেদন পৌরসভার দায়িত্বরত কর্মচারী গ্রহণ করে ভেরিফিকেশনের জন্য নেন কাউন্সিলরের কাছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলর আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্ব দেন অফিসের দু’জন কর্মকর্তাকে। তারা সম্মতি দিলেই অনুমোদন দেন কাউন্সিলর। আবার কাউন্সিলর বাইরে থাকলে তাঁর কর্মস্থলে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। ফলে এখন একটি আবেদন অনুমোদনে চারটি ভেরিফিকেশন লাগছে। অথচ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি একবার ভেরিফিকেশন সই দিলেই অনুমোদন হয়ে যেত।
পৌরসভার বাজার পরিদর্শক কাউছার খান বলেন, ‘আমরা নাগরিকের আবেদন ভেরিফাই করে দিলেও দায়িত্বরত অফিসপ্রধান যারা কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করছেন, তারা অনলাইনে অনুমোদন দিতে সময় নিচ্ছেন।’

পৌরসভার জন্মনিবন্ধন শাখার কম্পিউটার অপারেটর সৌরভ ঘোষ শুভ বলেন, ‘সার্ভারে সমস্যার কারণে মাঝেমধ্যে কিছু জটিলতা হয়। বাড়তি কোনো সময় লাগে না। কাউন্সিলরের কাছ থেকে ভেরিফাই হয়ে অনলাইনে আবেদন পেয়ে যাচ্ছি। এর পর রেজিস্ট্রারের কাজ শেষে নাগরিকের হাতে সনদ তুলে দিচ্ছি।’
ফরিদপুর পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা তানজিলুর রহমান সমকালকে বলেন, ‘বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আবেদনের তথ্য যাচাই করতে সরকার নির্দেশনা দিয়েছে। তাদের দপ্তরে বিলম্ব হলে পৌরসভার কিছু করার নেই। আমাদের কোনো গাফিলতি আছে বলে আমরা মনে করি না।’
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স থ ন য় সরক র প রসভ র সনদ র করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৫ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন ও দেড় শ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে সাবেক সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী ও অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আজ বুধবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থার উপপরিচালক মো. আজিজুল হক বাদী হয়ে মামলাটি করেন। দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান নূর ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ১ হাজার ১৯০ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন এবং তা নিজের দখলে রেখেছেন। এ ছাড়া আসাদুজ্জামান নূরের নামে থাকা বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১৯টি হিসাবে ১৫৮ কোটি ৭৮ লাখ ৪৭ হাজার ৮৯৮ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। এই লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও দুদক আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

দুদকের অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ২০০৩-০৪ করবর্ষ থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত আসাদুজ্জামান নূরের বৈধ আয় ছিল ৩২ কোটি ৯৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮৮ টাকা। এ সময়ে তাঁর পারিবারিক ব্যয় ছিল ৯ কোটি ৩২ লাখ ২৫ হাজার ৭৬১ টাকা। সে অনুযায়ী নিট সঞ্চয় দাঁড়ায় ২৩ কোটি ৬৪ লাখ ৫৭ হাজার ৯২৭ টাকা। অথচ তাঁর অর্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২৯ কোটি ১ লাখ ৫৯ হাজার ১১৭ টাকা। এতে ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার উৎস পাওয়া যায়নি বলে দুদক জানিয়েছে।

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান নূরের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ৮৫ কোটি ৭২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৩ টাকা জমা এবং ৭৩ কোটি ৫ লাখ ৮১ হাজার ৩০৫ টাকা উত্তোলন হয়েছে। এসব লেনদেনের উৎস অস্পষ্ট।

২০০১ সালে নীলফামারী-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আসাদুজ্জামান নূর। এরপর ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও সর্বশেষ ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনের পর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সাবেক মন্ত্রী ও এমপিদের বিরুদ্ধে একে একে মামলা ও গ্রেপ্তার শুরু করে দুদক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর বেইলী রোডে নিজ বাসা থেকে আসাদুজ্জামান নূরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফারইস্ট লাইফ ইনস্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যানসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
  • জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৫ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা