যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়ায় ছয়জন আরোহী নিয়ে একটি ছোট বিমান জনবহুল এলাকায় বিধ্বস্ত হয়েছে। এই দুর্ঘটনায় বিমানটির সব আরোহী নিহত হয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া বাড়িঘর ও যানবাহনে আগুন ধরে যাওয়ায় অনেকে আহত হয়েছেন।

শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের উত্তর-পূর্ব ফিলাডেলফিয়ার একটি আবাসিক এলাকায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বা রোগী বহনকারী বিমান বিধ্বস্ত হয়ে বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায়।

আরো পড়ুন:

কুখ্যাত গুয়ানতানামো বন্দিশালা সম্প্রসারণে ট্রাম্পের নির্দেশ, টার্গেট অভিবাসী

যুক্তরাষ্ট্রে বিমান-হেলিকপ্টার সংঘর্ষ, ১৯ মরদেহ উদ্ধার

মেডিকেল বিমান সংস্থা জেট রেসকিউ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রয়টার্স ও অন্যান্য মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, বিমানটিতে চারজন ক্রু সদস্য, একজন শিশু রোগী ও রোগীর সহকারী ছিলেন। 

সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, এই মুহূর্তে কেউ বেঁচে আছে কি না আমরা নিশ্চিত করতে পারছি না।

পেনসিলভানিয়ার গভর্নর জোশ শাপিরো দুর্ঘটনাস্থলে এক সংবাদ সম্মেলনে এটিকে ‘ভয়াবহ বিমান বিপর্যয়’ বলে অভিহিত করেছেন।

পেনসিলভানিয়া শহরের ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে অবস্থিত তিনতলা শপিং সেন্টার রুজভেল্ট মল থেকে মাত্র কয়েক ব্লক দূরে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। যে এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সেখানে বাড়িঘর ও দোকানপাট রয়েছে।

ফিলাডেলফিয়ার মেয়র চেরেল পার্কার বলেছেন, বিমানটি শহরের জনবহুল অংশে আছড়ে পড়ার পর মাটিতে কতজন মারা গেছে তা এখনো কর্মকর্তারা নিশ্চিত করতে পারেনি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এই দুর্ঘটনায় একট ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। রাস্তায় বিমানের জ্বলন্ত ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়ায় বেশ কিছু গাড়ি পুড়ে গেছে।

মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্যানুসারে, মেড জেটস কোম্পানির পরিচালিত লিয়ারজেট৫৫ বিমানটি স্থানীয় সময় প্রায় সাড়ে ৫টার দিকে উত্তর-পূর্ব ফিলাডেলফিয়া বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে এবং চার মাইলেরও কম দূরে বিধ্বস্ত হয়।

এ ঘটনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, “ফিলাডেলফিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার খবর অত্যন্ত দুঃখজনক। আরও নিরীহ প্রাণ হারাল। আমাদের উদ্ধারকর্মীরা সর্বাত্মকভাবে কাজ করছে।”

ওয়াশিংটন ডিসিতে যাত্রীবাহী বিমান ও সামরিক হেলিকপ্টারের মধ্যে সংঘর্ষের মাত্র দুই দিন পর পেনসিলভানিয়ায় বিমান দুর্ঘটনা ঘটল। ওয়াশিংটনে গত বুধবার ওই দুর্ঘটনায় উভয় বিমানের ৬৭ জন আরোহীর সবাই নিহত হয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৪০টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। 

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ র ঘটন ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ