ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী শহীদ আবু বকর সিদ্দিক শাহবাগ থানার তৎকালীন ওসি রেজাউল করিমের নেতৃত্বে থাকা পুলিশের একটি দলের গুলিতে নিহত হলেও জালিয়াতি করে এর দায় এড়ানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি)) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানিয়েছে জুলাই বিপ্লবের পর গঠিত প্রথম ছাত্র সংগঠন বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ।

সংগঠনটি বলছে, চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আবু বকর হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাই ১৪ বছর আগের ঘটনা হলেও এখন হত্যা  মামলাটি দায়ের থেকে বিচার প্রক্রিয়ার সব কিছু রিওপেনিং বা পুনরায় শুরু করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আবু বকর হত্যার বিচার ও তার পরিবারের ক্ষতিপূরণ আদায়ে নয়দফা দাবি তুলে ধরেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ।

দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, শহীদ আবু বকর সিদ্দিক হত্যা মামলা পুনরায় শুরু করতে হবে: অভিযুক্ত আসামি ও সাক্ষী নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; মামলায় শাহবাগ থানার তৎকালীন ওসি রেজাউল করিমসহ হামলায় জড়িত সব পুলিশ সদস্যকে আসামি করতে হবে; এ হত্যার সুপ্রিম রেসপন্সিবল অথরিটি হিসেবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, আইজিপি নুর মোহাম্মদ, ডিএমপি কমিশনার একেএম শহিদুল হক ও রমনা জোনের ডিসিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকসহ ঢাবি প্রশাসনে যারা ছিল তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে; ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাতে সংঘর্ষে লিপ্ত নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদেরসহ বিগত ১৬ বছর নির্যাতন-নিপীড়নে জড়িতদের বিচারে কমিশন গঠন করতে হবে; শহীদ আবু বকর স্মরণে স্যার এএফ রহমান হলের সামনে স্মৃতি মিনার তৈরি করতে হবে; শহীদ আবু বকর সিদ্দিকের পরিবারকে ১০ কোটি টাকা ক্ষতি পূরণ দিতে হবে; পরিবারের সদস্যদের আজীবন ফ্রি চিকিৎসা ও গণপরিবহনে চলাচলের বন্দোবস্ত করতে হবে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার গোলাবাড়ী গ্রামের দিনমজুর রুস্তম আলী ও রাবেয়া খাতুনের ছয় সন্তানের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন আবু বকর সিদ্দিক। তিনি ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ভর্তি হন। ওই সময় তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথী প্রার্থী ছিলেন। পরে তিনি ওয়ান-ইলেভেনবিরোধী ছাত্র সংগঠন নির্যাতন প্রতিরোধ ছাত্র আন্দোলনের মিছিল-সমাবেশে অংশ নেন।

লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাতে সিট দখলকে কেন্দ্র করে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন স্যার এএফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুজ্জামান ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান মোল্লার গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এরপর পুলিশ হলের কক্ষগুলোকে টার্গেট করে গুলি বর্ষণ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে আত্মরক্ষা করতে শহীদ আবু বকর সিদ্দিকসহ ৪০৪ নম্বর কক্ষের ৮ বাসিন্দা বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। তখন ঠিক উপরে পাঁচতলার ৫০৩ নম্বর কক্ষের বারান্দা থেকে পুলিশের গুলিতে আবু বকর সিদ্দিক গুলিবিদ্ধ হন।

পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক শফিউল আলম মিডিয়াকে জানিয়েছিলেন, আবু বকর সিদ্দিক মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঘটনার দুইদিন পর ৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা ২০মিনিটে আবু বকর সিদ্দিক শাহাদাত বরণ করেন।

আরো বলা হয়, ওই সময় নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নিয়মিত হামলার মুখে থাকায় ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির আবু বকর হত্যাকাণ্ড নিয়ে সোচ্চার থাকতে পারেনি। এ সুযোগে শহীদ আবু বকর হত্যাকাণ্ডকে সরকার, পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ছাত্রলীগ ও সংবাদ মিডিয়া সুনিপুন স্ক্যামে পরিণত করে ফেলে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের রাজনৈতিক প্রধান আনিছুর রহমান, আহ্বায়ক খোমেনী ইহসান, সাংগঠনিক প্রধান মো.

শফিউর রহমান, সদস্য সচিব হাসান মোহাম্মদ আরিফ, সহকারী সদস্য সচিব ডা. মাসুম বিল্লাহ, সদস্য মামুনুর রশিদ, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের সদস্য সচিব ফজলুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক গোলাম নূর শাফায়েতুল্লাহ, সদস্য সচিব মুহিব মুশফিক খান, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মো. আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।

এদের মধ্যে আনিছুর রহমান ২০১০ সালে ইসলামী ছাত্র শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এবং খোমেনী ইহসান নির্যাতন প্রতিরোধ ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ছিলেন। খোমেনী আবু বকর সিদ্দিককে শহীদ আখ্যা দিয়ে তার হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে নির্যাতন প্রতিরোধ ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে পোস্টার লাগিয়েছিলেন। এ কারণে তিনি নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ নেতাদের হত্যার হুমকির মুখে ক্যাম্পাস ছাড়েন এবং ঢাবিতে মাস্টার্স অধ্যয়ন থেকে বঞ্চিত হন।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বকর স দ দ ক তৎক ল ন র রহম ন ত র পর ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

বিকেএমইএতে ভোটের হাওয়া, প্রার্থী হতে লাগবে ২ লাখ টাকা

প্রায় এক যুগ পর নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে অবশেষে ভোট ফেরার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আগামী ১০ মে সংগঠনটির ৩৫টি পরিচালক পদে ভোট গ্রহণ হবে। এই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে একজন ব্যবসায়ীকে ২ লাখ টাকায় মনোনয়নপত্র কিনতে হবে।

চলতি মাসের শুরুতে বিকেএমইএর ২০২৫-২৭ মেয়াদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান সফিউল্লা চৌধুরী। তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৫ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। ৫ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন আগ্রহী ব্যবসায়ীরা। ১৯ এপ্রিল চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন বোর্ড।

বিকেএমইএর পরিচালক পদের মনোনয়ন ফি ২ লাখ টাকা হলেও সভাপতি, নির্বাহী সভাপতি ও সহসভাপতি পদে আরও বেশি অর্থ গুনতে হবে নির্বাচিতদের। সভাপতি পদে ৩ লাখ, নির্বাহী সভাপতি পদে ২ লাখ ৭৫ হাজার এবং সহসভাপতি পদের মনোনয়নপত্র কিনতে লাগবে আড়াই লাখ টাকা। সংগঠনটিতে একজন করে সভাপতি, নির্বাহী সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ছাড়া ছয়টি সহসভাপতি পদ রয়েছে।

আরও পড়ুনসমঝোতায় আবারও বিকেএমইএর সভাপতি সেলিম ওসমান২৬ জুলাই ২০২৩

২০১০ সালের পর বিকেএমইএতে সরাসরি ভোটে নেতা নির্বাচন হয়নি। সেবার নির্বাচনে জয়ী হয়ে সভাপতি পদে বসেন নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের এ কে এম সেলিম ওসমান। পরে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে সংসদ সদস্য হোন। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সমঝোতা করে ছয়বার বিকেএমইএর সভাপতির পদে ছিলেন। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিভিন্ন চাপে পদত্যাগ করেন সেলিম ওসমান। ২৫ আগস্ট সংগঠনটির সভাপতির পদে বসেন মোহাম্মদ হাতেম। তার আগে তিনি নির্বাহী সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। সব মিলিয়ে সেলিম ওসমান যে সাত মেয়াদে সভাপতি ছিলেন, তার মধ্যে পাঁচ মেয়াদে নির্বাহী সভাপতি ও সহসভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ হাতেম।

জানা যায়, সেলিম ওসমান সভাপতির পদ আঁকড়ে থাকতে প্রতিবারই বিভিন্ন কৌশলে সরাসরি ভোটকে পাশ কাটিয়ে সমঝোতার কমিটি করেন। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জে সংগঠনের প্রধান কার্যালয় নির্মাণের কারণ দেখিয়েও কমিটির মেয়াদ ছয় মাস বাড়িয়েছিলেন সেলিম ওসমান।

বিকেএমইএর সভাপতি পদ ধরে রাখতে ২০১৯ সালে ভিন্ন কৌশল নিয়েছিলেন সেলিম ওসমান। সেবার তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়েছিলেন, নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তবে তাঁর অনুসারীরা নিশ্চিত করেন, কোনো শিল্পমালিক যাতে মনোনয়নপত্র না কেনেন। ফলে দুই দিন একটি মনোনয়নপত্রও বিক্রি হয়নি। পরে সেলিম ওসমানের অনুসারী ব্যবসায়ীরা তাঁকে মনোনয়নপত্র কিনতে অনুরোধ করেন। তারপর যে কয়টা পদ আছে, সে কয়টা মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়। শেষ পর্যন্ত সেলিম ওসমান সভাপতি হোন।

এ ছাড়া ২০২১ সালে ৩৫টি পরিচালক পদের বিপরীতে সেলিম ওসমানের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত নিট ফোরামের সমানসংখ্যক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। এভাবে সমঝোতার ভিত্তিতে আবার সভাপতি হন তিনি

সর্বশেষ ২০২৩ সালে সমঝোতার কমিটি করার জন্য ২০২১-২৩ মেয়াদের পর্ষদের সব সদস্যকে ঢাকায় নিজের বাসভবনে ডাকেন সেলিম ওসমান। সবাইকে তিনি বার্তা পাঠান, সভায় না এলে মনোনয়নবঞ্চিত থাকতে হবে। শেষ পর্যন্ত চারজন অনুপস্থিত থাকেন। তাঁদের পরিবর্তে নতুন চারজনসহ ৩৪ প্রার্থীকে নিয়ে ২০ জুলাই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন সেলিম ওসমান। ওই দিন এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করে নির্বাচিত ৩৪ পরিচালকের তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন বোর্ড। পরে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে নির্বাচিত পরিচালকেরা সভাপতি, নির্বাহী সভাপতি এবং সাতজন সহসভাপতি নির্বাচিত করেন। এভাবেই অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে পুরো নির্বাচনের প্রক্রিয়া মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়। সভাপতি হন সেলিম ওসমান।

ভোটের হাওয়া কোন দিকে
তফসিল ঘোষণা হলেও বিকেএমইএতে ভোটের হাওয়া শুরু হয়নি। তবে সম্মিলিত নিট ফোরামের প্যানেল লিডার হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন মোহাম্মদ হাতেম। আর কোনো প্যানেল হবে কি না, সেটি জানা যায়নি।

নির্বাচন নিয়ে মোহাম্মদ হাতেম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিকেএমইর সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চা করার সুযোগ পাচ্ছেন না। সদস্যদের সেই সুযোগ করে দিতে আমরা আগাম নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তিনি জানান, তাঁর নেতৃত্বাধীন পর্ষদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী সেপ্টেম্বরে।

আরও পড়ুনসেলিম ওসমানমুক্ত বিকেএমইএ, নতুন সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম২৫ আগস্ট ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মুক্তি দিতে যাওয়া তিন জিম্মির নাম ঘোষণা হামাসের
  • বিকেএমইএতে ভোটের হাওয়া, প্রার্থী হতে লাগবে ২ লাখ টাকা
  • ভালোবাসা দিবস না পালনের আহ্বান ছাত্রশিবিরের
  • ভালোবাসা দিবস পালনে নিষেধাজ্ঞার আহ্বান ছাত্রশিবিরের
  • চুক্তি মেনে জিম্মি মুক্তিতে রাজি হামাস
  • চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা
  • সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে রক্তাক্ত বছর ২০২৪, বিশ্বে ১২৪ জন নিহত: সিপিজে
  • ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ স্থবিরের ঘটনায় বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের উদ্বেগ
  • বেসামাল শিক্ষা—পথে ফেরার উপায় কী