নতুন কবি-সাহিত্যিকদের বই প্রকাশে অগ্রগণ্য প্রকাশনী ‘চৈতন্য’। চৈতন্যর যাত্রা শুরু হয় ২০১৪ সালে। এখন পর্যন্ত চৈতন্য ৫ শতাধিক বই প্রকাশ করেছে এই প্রকাশনী। চৈতন্যের প্রকাশক রাজীব চৌধুরী সম্প্রতি রাইজিংবিডির সঙ্গে প্রকাশনা বিষয়ক নানা কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার গ্রহণে স্বরলিপি।

রাইজিংবিডি: ২০২৫ বইমেলায় ‘চৈতন্য’ -এর আয়োজন সম্পর্কে জানতে চাই।
রাজীব চৌধুরী: ২০২৫ মেলায় চৈতন্য সব মিলিয়ে ২০টা বই প্রকাশ করেছে। আমাদের আয়োজন সারা বছর থাকে। মেলাকেন্দ্রিক না। কিন্তু মেলা যেহেতু একটা ঐতিহ্যবাহী ‘ইভেন্ট’। সেটাকে সামনে রেখে প্রতিবছর কিছু বই প্রকাশ করি।

রাইজিংবিডি: ‘চৈতন্য’ অনেক তরুণ লেখকদের বই প্রকাশ করে—সেক্ষেত্রে পাণ্ডুলিপি নির্বাচন, সম্পাদনা, মার্কেট বিবেচনা এবং প্রকাশ প্রক্রিয়াটা কেমন হয়?
রাজীব চৌধুরী:
একসময় আমরা অনেক তরুণের প্রথম বই এর প্রকাশক ছিলাম। সেই ৭/৮ বছর আগে প্রচুর কবিতার বই করেছি।। এখনও তরুণদের প্লাটফর্ম রাখছি। তবে একটু কম। সময়ের সাথে সাথে আমরা বিষয় বৈচিত্র্যের দিকে নজর দিয়েছি। সেই অধিকাংশ কাজ আমরা তরুণদের দিয়ে করাচ্ছি। পাণ্ডুলিপি প্রুফ এডিটিং সেই কাজটা চৈতন্য শুরু থেকেই করে আসছে।। সেটা যেকোন প্রকাশনীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যাচাই বাছাই এর জন্য আমাদের উপদেষ্টা পর্ষদ আছেন। যারা অবশ্য ‘পেইড’ না। আর বই প্রচারের প্রধান মাধ্যম এখন অনলাইন। যা সারাবছর করা যায়।

আরো পড়ুন:

বইমেলায় শফিক রিয়ানের উপন্যাস ‘বিসর্জন’

বইমেলায় রিয়াজুল হকের ‘দ্য সিক্রেট অব সাকসেস’

রাইজিংবিডি: বলা হয়ে থাকে কবিতার পাঠক কম, আপনি অনেক কবিতার বইয়ের প্রকাশক, বাস্তব চিত্র সম্পর্কে বলুন।
রাজীব চৌধুরী:
কবিতার পাঠক অনেক কমে গেছে সেটা সত্য। কিন্তু বই আগের চেয়ে বেশি প্রকাশ করা হয়। আমরা এক সময় অনেক বই প্রকাশ করেছি। এখন ভাল পাণ্ডুলিপির অভাববোধ করছি। একটা অস্থিরতা সব জায়গায়। আমরা আগের মত ভাল পাণ্ডুলিপি না পাওয়ায় বই কম করছি। কিন্তু আমরা বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ কবিদের বেশ কিছু সমগ্র প্রকাশ করেছি। 

রাইজিংবিডি: অনুবাদের অনেক বইও প্রকাশ করে ‘চৈতন্য’—সেক্ষেত্রে মূল লেখক বা প্রকাশকদের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হয় কিনা, সব সময় অনুবাদক নিজের পছন্দ অনুযায়ী বই অনুবাদ করে দেন, নাকি আপনারাও পছন্দসই বই কোনো অনুবাদককে দিয়ে অনুবাদ করিয়ে নেন?
রাজীব চৌধুরী:
গত কয়েক বছর ধরে আমরা অনুবাদ বই প্রকাশ করছি। যেগুলো ‘ননফিকশন’ বেশি। মূল প্রকাশনীর সাথে আমাদের একটা চুক্তি হয়। তারপর আমরা সেটা ওই বিষয়ে পারদর্শী, পড়াশোনা আছে এমন অনুবাদককে দিয়ে অনুবাদ করিয়ে নিই। মূল প্রকাশনী ও অনুবাদকের জন্য আমরা রয়্যালিটি প্রদান করি। তাছাড়া অনুবাদক কোনো অনুবাদ নিয়ে আসলে আমরা সেটা ভাল হলে প্রকাশ করি।

রাইজিংবিডি: বইয়ের প্রচারণায় একজন লেখকের ভূমিকা কেমন হতে পারে বলে মনে করেন?
রাজীব চৌধুরী:
পৃথিবীতে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ মনে হয় লেখকরা নিজেদের বই এর প্রচার ও মার্কেটিং করেন। প্রকাশনী সংস্থা বই এর প্রাপ্তিস্থান নিশ্চিত করেন আর অনলাইনে যতটুকু সরব থাকা যায়, সেটা করেন। আমাদের প্রেক্ষাপটে লেখক প্রকাশক দুজনই ভূমিকা রাখতে হয়।

রাইজিংবিডি: বই প্রচারে ‘চৈতন্য’ কি কি পদক্ষেপ নেয়?
রাজীব চৌধুরী:
আমাদের প্রচারের মূল মাধ্যম ফেসবুক পেইজ। বিভিন্ন অনলাইন বুক শপ এর মাধ্যমেও বই প্রচার করা হয়। আর বইগুলোর রিভিউ করানো, ছাপানো, পাঠচক্র এসবকিছুর মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রচারের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।

রাইজিংবিডি: চৈতন্যের যাত্রা শুরু কত সালে, চৈতন্যের মোট প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা কত, কোথায়, কোথায় চৈতন্যের বই পাওয়া যায়?
রাজীব চৌধুরী:
চৈতন্যর যাত্রা ২০১৪ সালে। আপনারা সবাই জানেন এটি রাজধানীর বাইরে এর কার্যক্রম। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। এ পর্যন্ত প্রকাশিত বই ৫ শতাধিক। আমাদের নিজস্ব আউটলেট নেই। দেশের সৃজনশীল বই বিপনিগুলোতে চৈতন্যর বই পাওয়া যায়। আর অনলাইন বুক শপ ও নিজেদের প্রকাশনির পেইজ এ।

রাইজিংবিডি: চৈতন্য কবি, লেখকদের রয়্যালিটি পাওয়ার বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত করে?
রাজীব চৌধুরী:
 চৈতন্য লেখকের রয়্যালিটি প্রদানে সবসময় সচেষ্ট।

রাইজিংবিডি: বইমেলা ছাড়া অন্য সময়ে বই প্রকাশ করেন কিনা?
রাজীব চৌধুরী: এটা শুরুতে বলেছি। চৈতন্য মেলাকেন্দ্রিক প্রকাশনী নয়। চৈতন্য সারাবছর বই প্রকাশ করে।

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ট ব য ক চ কর র স য গ র বই প বইম ল

এছাড়াও পড়ুন:

শুধু ঘোষণা নয়, বাস্তবে প্রতিফলিত হোক

রাজধানী শহরসহ দেশের বড় শহরগুলোয় শব্দদূষণের অসহনীয় মাত্রার বিষয়টি কারও অজানা নয়। এটি এখন শুধু শব্দদূষণ নয়, শব্দসন্ত্রাস বলেও অভিহিত হচ্ছে। অতীতে ও বর্তমানে সরকারগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও কার্যকর হচ্ছে না। অতীতের ধারাবাহিকতায় রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনকে ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। এখন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ।

শহরের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে নীরব এলাকা ঘোষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি অবশ্যই সরকারের সদিচ্ছার প্রকাশ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ঘোষণা বাস্তবে কার্যকর হবে, নাকি এটিও অতীতের মতো কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে? এর আগে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং এর আশপাশের এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু তার ফল তেমন একটা ভালো পাওয়া
যায়নি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘোষণার পর কিছু এলাকায় শব্দ কিছুটা কমলেও সার্বিকভাবে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এই অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, শুধু ঘোষণা যথেষ্ট নয়, বরং এর কঠোর বাস্তবায়ন অপরিহার্য।

শব্দদূষণের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলতেই হয়। যার কারণে সাউন্ডবক্স বা মাইক বাজানোর বিষয়গুলো তুলনামূলকভাবে কমে এসেছে। তবে গাড়ির হর্ন এতটা বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করছে, যা অকল্পনীয়। এটিই এখন রাজধানীসহ বড় শহরগুলোর শব্দদূষণের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অতিরিক্ত শব্দ হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। চিকিৎসকেরা বলছেন, এটিতে শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়, মেজাজ খিটখিটে হয়, মানুষ অনিদ্রায় ভোগে এবং শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটায়। তাই শুধু অভিজাত এলাকা নয়, পুরো শহরে ধাপে ধাপে কীভাবে নীরব এলাকা ঘোষণা করা যায়, সেই লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে।

তবে এ উদ্যোগ সফল করতে হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কঠোর হতে হবে। হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে আইন আছে। তা যদি আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে প্রয়োগ না করা হয়, এ ঘোষণা কখনোই সফল হবে না। কেবল প্রশাসনের ওপর নির্ভর না করে নীরব এলাকা–ঘোষিত এলাকাগুলোর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, যেমন মসজিদ, মন্দির এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও এখানে গণসচেতনতার কাজে যুক্ত করতে হবে।

গাড়ির হর্ন বাজানো সীমিত করতে পরিবহনের বিভিন্ন ধরনের সমিতি–সংগঠনগুলোর যুক্ততাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। গাড়ির চালকদের অভ্যাসগত পরিবর্তনের জন্য শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিকটি নিয়মিতভাবে তাঁদের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। হাইড্রোলিক হর্নসহ উচ্চমাত্রার যেকোনো হর্ন উৎপাদন, আমদানি ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। এ ব্যাপারে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ