লিবিয়া থেকে উদ্ধারের জন্য ২৭ বাংলাদেশির আকুতি
Published: 7th, February 2025 GMT
কাজের জন্য ভিসা নিয়ে লিবিয়ায় গিয়ে সেখানকার একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানির নির্যাতনের শিকার ২৭ বাংলাদেশি শ্রমিক দেশে ফেরার জন্য সরকারের কাছে আকুতি জানিয়েছেন। এক ভিডিও বার্তায় তারা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে তাদের বেতন-বোনাস দিচ্ছে না কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। এমনকি তাদের নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) লিবিয়া থেকে পাঠানো ভিডিও বার্তায় শ্রমিকরা তাদের করুন অবস্থার কথা তুলে ধরেন। ভিডিওটি তারা হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার এক গণমাধ্যমকর্মীর কাছে পাঠান।
ভিডিওতে শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, বাংলাদেশে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয় না তাদের। বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে তাদের বেতন-বোনাস দিচ্ছে না কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। চার দেয়ালের ভেতরে আটক শ্রমিকদের খাওয়া ও চিকিৎসা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
আরো পড়ুন:
খুলনায় ট্যাংকলরি শ্রমিকদের ধর্মঘট
শ্রমিকলীগ নেতা নাছিরের গ্রেপ্তার দাবিতে সমন্বয়কদের আল্টিমেটাম
শ্রমিকরা জানান, রিক্রুটিং এজেন্সি ও নিয়োগকর্তা তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। বাংলাদেশের সরকার প্রধান যাতে তাদের উদ্ধার করেন সে আকুতি জানান শ্রমিকরা।
জানা যায়, লিবিয়ায় আটক ও নির্যাতনের শিকার ২৭ জন হবিগঞ্জ, দিনাজপুর, গাজীপুর টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, নওগাঁ, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। তাদের মধ্যে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার গোপায়া গ্রামের মো.
লিবিয়ায় থাকা হবিগঞ্জের গোপায়া গ্রামের মো. আব্দুল কাদেরের ছোট ভাই আবুল কাশেম মোবাইল ফোনে শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বলেন, “চুনারুঘাট উপজেলার নালমুখ গ্রামের জালাল মিয়ার মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা দিয়ে লিবিয়া যান আব্দুল কাদের। সেখানে যাওয়ার একমাস পরই আব্দুল কাদেরকে নির্যাতনের বিষয়টি জানতে পারে পরিবার।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা নির্যাতনের বিষয়টি জানতে পেরে জালাল মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করি। ভাইকে দেশে ফিরিয়ে আনতে তাকে অনুরোধ করি। এই মূহুর্তে ভাইকে দেশে ফিরিয়ে আনা যাবে না বলেও জানিয়ে দেন জালাল মিয়া। আমি আমার ভাইসহ অন্যদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।”
অপর একটি ভিডিওতে আল আমিন নামে এক যুবক বলেন, “হাশেম মেম্বার আমাকে লিবিয়ায় পাঠিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে। তিনি আমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছেন।”
ঢাকা/আজহারুল/মাসুদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’
ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।
হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।
আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’
গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’
আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই।