ছয় মাস পর এসে অন্তর্বর্তী সরকার একটি কঠিন সময়ে পড়েছে বলে মনে করছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। ‘এই সরকার পরাজিত হলে আমরাও পরাজিত হব,’ বলেও সবাইকে সতর্ক করেছেন তিনি।

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নির্বাচন সংস্কার বিশ্লেষণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মাহমুদুর রহমান মান্না এ কথা বলেন। রাষ্ট্র সংস্কার ফোরাম নামের একটি সংগঠন এর আয়োজন করে।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘এটা তো সত্যি যে উনি (অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস) দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো করতে পারেননি। জিনিসের দাম কমাতে পারেননি। ইনভেস্টমেন্ট বাড়েনি, ইনকাম রেট বাড়েনি। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দুর্বল।’

সংস্কার প্রসঙ্গে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ‘সংস্কারের ওপর রাগটাগ করে লাভ নেই। সংস্কার সর্বাংশে ভালো জিনিস। সংস্কার করার ব্যাপারে সমগ্র জাতি এখন ঐক্যবদ্ধ আছে। প্রশ্নটা হলো, সংস্কারটা কতখানি লাগবে। তবে ইউনূস সাহেব বলেছেন, সংস্কারের প্রশ্নে কোনো বিষয়ে ন্যূনতম যে ঐকমত্য হবে, সরকার ততটুকু সংস্কার করবে, কোনো সংস্কার তিনি চাপিয়ে দেবেন না।’

এ প্রসঙ্গে মাহমুদুর রহমান মান্না আরও বলেন, এ পর্যন্ত সংস্কার প্রসঙ্গে যত আলোচনা হয়েছে, তাতে একটা বিষয়ে ঐকমত্য দেখতে পেয়েছেন, সেটা হলো প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমাতে হবে। এর বাইরে অন্য কোনো বিষয়ে ঐকমত্য দেখা যায়নি।

নির্বাচন প্রসঙ্গে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, অনেকে দাবি করছেন আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে। তার আগে ভোট হবে না কিন্তু দেখা গেল, বিচার করতে করতে ছয় বছর লেগে গেল। তখন তো জনগণ মেনে নেবে না। তাই সবকিছু আবেগ দিয়ে, রাগ দিয়ে বিচার করলে হবে না।

এ বিষয়ে আলোচনায় ভার্চ্যুয়ালি শেখ হাসিনার বক্তব্য দেওয়া নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনা ও সহিংস পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘কেউ যদি উসকানি দেন আর আপনি উসকান, আর এটা যদি প্রতি তিন মাস পরপর ঘটতে থাকে, তো আগামী তিন বছরেও তো ভোট করতে পারবেন না।’

আলোচনা সভায় নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়েও কথা বলেন মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে মানুষ যদি রাস্তায় নামে, তবে এই সরকার কি তা থামাতে পারবে? কোনো একটি রাজনৈতিক দল যদি তা সমর্থন করে হরতাল ডাকে, তবে তা মোকাবিলা করার জন্য কি পুলিশ নামবে? সরকার তো ভালনারেবল। এ রকম সরকার দিয়ে তো দীর্ঘদিন ভালো শাসন চালাতে পারবেন না৷ যখন তখন সেটা ভেঙে যেতে পারে।’

সরকারের উদ্দেশে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আপনারা গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ রচনা করুন। তাহলে আওয়ামী লীগের মতো ফ্যাসিবাদী একটি দল আর কোনো দিন জনগণের কাছে আসতে পারবে না। এমন একটি নির্বাচন আয়োজন করুন, যার ওপর দাঁড়িয়ে আগামী দিনের গণতন্ত্রের ভিত রচিত হয়।’

আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির (রওশন) সাবেক নেতা গোলাম সারোয়ার মিলন, নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, রাজনৈতিক বিশ্লেষক আমিরুল করিমসহ আরও অনেকে বক্তব্য দেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রসঙ গ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

লন্ডন বৈঠকে বিচার ও সংস্কারের বিষয়টি নির্বাচনের মতো গুরুত্ব না পাওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক: এনসিপি

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ সংক্রান্ত আলোচনা যতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে, বিচার ও সংস্কার ততটুকু গুরুত্ব পায়নি বলে মনে করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বিষয়টিকে ‘অত্যন্ত হতাশাজনক’ বলেছে দলটি।

আজ শুক্রবার রাতে এনসিপির এক বিবৃতিতে এই প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহউদ্দিন সিফাত বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন।

এনসিপির বিবৃতিতে বলা হয়, রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের আলোচনাকে ইতিবাচকভাবে দেখছে এনসিপি। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে লন্ডনে অনুষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠকটি ‘সংসদ নির্বাচন’ বিষয়ে দলটিকে আস্থায় আনতে সফল হয়েছে সরকার। জাতীয় ঐক্য, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা জরুরি। কিন্তু বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ সংক্রান্ত আলোচনা যতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে নাগরিকদের প্রধান দাবি তথা বিচার ও সংস্কার ততটুকু গুরুত্ব পায়নি। এটা অত্যন্ত হতাশাজনক বলে মনে করে এনসিপি।

নির্বাচন প্রশ্নে সরকার কেবল একটি রাজনৈতিক দলের অবস্থান ও দাবিকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে বলে বারবার প্রতীয়মান হচ্ছে—এ কথা উল্লেখ করে এনসিপি আরও বলেছে, জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, জুলাই সনদ কার্যকর করা এবং বিচারের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন গণ-অভ্যুত্থানকে স্রেফ একটি ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে পরিণত করবে এবং রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন–আকাঙ্ক্ষাকে অবদমিত করবে।

জনগণের দাবি তথা জুলাই সনদ রচনা ও কার্যকর করার আগে নির্বাচনের কোনো তারিখ ঘোষিত হলে তা জনগণ মেনে নেবে না বলে উল্লেখ করেছে এনসিপি। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কাজেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংস্কারের বিষয়গুলোর ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা ও জুলাই সনদ রচনা এবং কার্যকর করেই আসন্ন জুলাইকে যথাযথ মর্যাদায় স্মরণ করার উদ্যোগ নিতে সরকারকে জোর দাবি জানাচ্ছে এনসিপি।’

জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়নে জুলাই সনদ কার্যকর করা ও বিচারের রোডম্যাপ ঘোষণার পরই নির্বাচন সংক্রান্ত আলোচনা চূড়ান্ত হওয়া উচিত বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে এনসিপি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা মঙ্গলবার আবার শুরু
  • বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, ভালো উদ্যোগ নিলেও বিরোধিতা আসে
  • লন্ডন বৈঠকে বিচার ও সংস্কারের বিষয়টি নির্বাচনের মতো গুরুত্ব না পাওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক: এনসিপি
  • ইউনূস-তারেকের বৈঠক দেশের মানুষের জন্য স্বস্তির বার্তা, আশার আলো
  • ড. ইউনূস ও তারেকের বৈঠক জাতির জন্য স্বস্তির বার্তা: ১২ দলীয় জোট
  • ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার ও জুলাই সনদ