৬ মাস পর এসে সরকার কঠিন সময়ে: মাহমুদুর রহমান মান্না
Published: 8th, February 2025 GMT
ছয় মাস পর এসে অন্তর্বর্তী সরকার একটি কঠিন সময়ে পড়েছে বলে মনে করছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। ‘এই সরকার পরাজিত হলে আমরাও পরাজিত হব,’ বলেও সবাইকে সতর্ক করেছেন তিনি।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নির্বাচন সংস্কার বিশ্লেষণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মাহমুদুর রহমান মান্না এ কথা বলেন। রাষ্ট্র সংস্কার ফোরাম নামের একটি সংগঠন এর আয়োজন করে।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘এটা তো সত্যি যে উনি (অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস) দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো করতে পারেননি। জিনিসের দাম কমাতে পারেননি। ইনভেস্টমেন্ট বাড়েনি, ইনকাম রেট বাড়েনি। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দুর্বল।’
সংস্কার প্রসঙ্গে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ‘সংস্কারের ওপর রাগটাগ করে লাভ নেই। সংস্কার সর্বাংশে ভালো জিনিস। সংস্কার করার ব্যাপারে সমগ্র জাতি এখন ঐক্যবদ্ধ আছে। প্রশ্নটা হলো, সংস্কারটা কতখানি লাগবে। তবে ইউনূস সাহেব বলেছেন, সংস্কারের প্রশ্নে কোনো বিষয়ে ন্যূনতম যে ঐকমত্য হবে, সরকার ততটুকু সংস্কার করবে, কোনো সংস্কার তিনি চাপিয়ে দেবেন না।’
এ প্রসঙ্গে মাহমুদুর রহমান মান্না আরও বলেন, এ পর্যন্ত সংস্কার প্রসঙ্গে যত আলোচনা হয়েছে, তাতে একটা বিষয়ে ঐকমত্য দেখতে পেয়েছেন, সেটা হলো প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমাতে হবে। এর বাইরে অন্য কোনো বিষয়ে ঐকমত্য দেখা যায়নি।
নির্বাচন প্রসঙ্গে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, অনেকে দাবি করছেন আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে। তার আগে ভোট হবে না কিন্তু দেখা গেল, বিচার করতে করতে ছয় বছর লেগে গেল। তখন তো জনগণ মেনে নেবে না। তাই সবকিছু আবেগ দিয়ে, রাগ দিয়ে বিচার করলে হবে না।
এ বিষয়ে আলোচনায় ভার্চ্যুয়ালি শেখ হাসিনার বক্তব্য দেওয়া নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনা ও সহিংস পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘কেউ যদি উসকানি দেন আর আপনি উসকান, আর এটা যদি প্রতি তিন মাস পরপর ঘটতে থাকে, তো আগামী তিন বছরেও তো ভোট করতে পারবেন না।’
আলোচনা সভায় নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়েও কথা বলেন মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে মানুষ যদি রাস্তায় নামে, তবে এই সরকার কি তা থামাতে পারবে? কোনো একটি রাজনৈতিক দল যদি তা সমর্থন করে হরতাল ডাকে, তবে তা মোকাবিলা করার জন্য কি পুলিশ নামবে? সরকার তো ভালনারেবল। এ রকম সরকার দিয়ে তো দীর্ঘদিন ভালো শাসন চালাতে পারবেন না৷ যখন তখন সেটা ভেঙে যেতে পারে।’
সরকারের উদ্দেশে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আপনারা গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ রচনা করুন। তাহলে আওয়ামী লীগের মতো ফ্যাসিবাদী একটি দল আর কোনো দিন জনগণের কাছে আসতে পারবে না। এমন একটি নির্বাচন আয়োজন করুন, যার ওপর দাঁড়িয়ে আগামী দিনের গণতন্ত্রের ভিত রচিত হয়।’
আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির (রওশন) সাবেক নেতা গোলাম সারোয়ার মিলন, নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, রাজনৈতিক বিশ্লেষক আমিরুল করিমসহ আরও অনেকে বক্তব্য দেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে একমত হলেও বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় এনসিপি
সংসদের উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির (পিআর) বিষয়ে একমত পোষণ করলেও এটি বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ঐকমত্যের বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন, যার পদ্ধতি এখনো সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। ফলে একটি অস্পষ্টতা থেকেই গেছে।’
আজ বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ২৩তম দিনের বিরতিতে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন আখতার হোসেন।
উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি কীভাবে বাস্তবায়িত হবে সেই রূপরেখা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনকে কার্যকর আলোচনা জন্য আহ্বান জানান আখতার হোসেন। তিনি বলেন, এনসিপির পক্ষ থেকে উচ্চকক্ষে সংবিধান সংশোধনের জন্য ‘টু-থার্ডস মেজরিটি’ বাধ্যতামূলক করার দাবি জানানো হয়। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচিতরা নির্বাচিত প্রতিনিধি নন—এমন কথা বলা হলেও, বিশ্বজুড়ে এফপিটিপি (যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পান) ও পিআর উভয় পদ্ধতিতেই বৈধতা রয়েছে। পিআর পদ্ধতিতেও জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়।
কমিশনের প্রস্তাবিত বাস্তবায়ন সময়সীমাকে এনসিপি প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জানান দলটির সদস্যসচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, সিদ্ধান্তগুলো তৎক্ষণাৎ কার্যকর হোক।’ তিনি বলেন, ‘১ শতাংশ ভোট পেলেও যেন একটি দল একজন করে প্রতিনিধি উচ্চকক্ষে পাঠাতে পারে—এটি বহু মতের ও বহু দলের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে। আইন পাসের আগে যদি উচ্চকক্ষে আলোচনা হয়, তাহলে ভুলত্রুটি ধরার সুযোগ তৈরি হবে এবং সংসদের বাইরে জনপরিসরেও আইন নিয়ে আলোচনা গড়ে উঠবে।’
‘বর্তমানে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে যেভাবে দলগুলো সংবিধান সংশোধন করে, সেটা যেন না হয়’ উল্লেখ করে আখতার হোসেন বলেন, ‘পিআর পদ্ধতিতে বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিত্ব থাকলে, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রেও জনগণের বৃহত্তর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে।’
উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে আখতার হোসেন বলেন, ‘অনেকে বলছেন, পিআর পদ্ধতিতে হলে তাঁরা উচ্চকক্ষ চান না। তাহলে প্রশ্ন ওঠে—তাঁরা আদৌ উচ্চকক্ষ চান কি না। আমরা বিশ্বাস করি, ১০০ আসনের এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে দেশ একদল বা দুই দলের কর্তৃত্ব থেকে বেরিয়ে বহু দলের অংশগ্রহণে পরিচালিত হবে। এতে গণতন্ত্রচর্চার নতুন সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।’
আলোচনার সময় সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং মহাহিসাব নিরীক্ষক নিয়োগ নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান আখতার হোসেন। যদিও কিছু দল ভিন্নমত পোষণ করেছে, তবে সার্বিকভাবে একটি ঐকমত্যের জায়গায় কমিশন পৌঁছেছে বলেও তিনি দাবি করেন।
আলোচনার শেষভাগে উচ্চকক্ষ গঠন নিয়ে কমিশনের প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, ১০০ আসনের একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে, যেখানে প্রতিনিধিরা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচিত হবেন। এ কক্ষে নিম্নকক্ষ থেকে পাঠানো বিল সর্বোচ্চ দুই মাস আটকে রাখা যাবে এবং সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে ‘সিম্পল মেজরিটি’র কথা বলা হয়েছে।