ঋণের ভারে রুগ্ন তিন–চতুর্থাংশ হিমাগার
Published: 8th, February 2025 GMT
সব খরচ হিসাবে করে চলতি বছর যৌক্তিকভাবে হিমাগারের ভাড়া আট টাকা করা হয়েছে। বর্তমান উচ্চ ঋণের সুদহার, বিদ্যুৎবিল, মজুরিসহ অন্যান্য খরচ যেভাবে বেড়েছে তাতে ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই। তবে সরকার ঋণের সুদহার ও বিদ্যুত বিল কমানোসহ কিছু সহায়তা দিলে ভাড়া কমানো সম্ভব।
শনিবার রাজধানীর পুরানো পল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ)। সংগঠনটির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন বিসিএসএর সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী। এ সময় সংগঠনটির জেষ্ঠ্য সহসভাপতি, সহসভাপতি ও পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে মোস্তফা আজাদ চৌধুরী জানান, সারাদেশে বর্তমানে প্রায় ৪০০ হিমাগার রয়েছে। ব্যাংক ঋণ ও অন্যান্য পরিচালনা ব্যয় বহন করতে না পেরে এর মধ্যে তিন–চতুর্থাংশ অর্থাৎ ৩০০ এর মতো হিমাগার রুগ্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এদের মধ্যে কিছু হিমাগার ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।
গত এক বছরে সুদ হার ১৫ শতাংশ ও অস্বাভাবিক হারে বিদ্যুৎ বিল বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ছাড়া হিমাগারে আলু আনা–নেওয়া (লোডিং-আনলোডিং), কর্মীদের বেতনভাতাসহ আনুষঙ্গিক সব খরচই বেড়েছে। এসব ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে এ বছর আলু সংরক্ষণে কেজিপ্রতি ভাড়া দাঁড়ায় ৯ টাকা ৬২ পয়সা। তবে আলু চাষী ও আলু সংরক্ষণকারী ব্যবসায়ীদের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় ভাড়া ৮ টাকা নির্ধারণ করেছে সমিতি। এই ভাড়া যৌক্তিক কি না তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যাচাই করতে পারে।
মোস্তফা আজাদ বলেন, গত বছর হিমাগার ভাড়া প্রতি কেজিতে ৭ টাকা ছিল। কিন্তু এই তথ্য গোপন রেখে এবং হিমাগার পরিচালন ব্যয় বিবেচনায় না নিয়ে কিছু মধ্যস্বত্তভোগী মনগড়া বক্তব্য ও কর্মসূচি দিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে একটি ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি জানান, হিমাগারে ৫০ কেজির বস্তায় আলু সংরক্ষণের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। গত বছর কেজিপ্রতি সাত টাকা করে ৫০ কেজির বস্তার ভাড়া নেওয়া হয় ৩৫০ টাকা। তবে দেখা গেছে, অতীতে অনেক ব্যবসায়ী এ নিয়ম না মেনে ৭০ থেকে ৭২ কেজি আলু বস্তায় ভরে হিমাগারে রেখেছেন। তারাও ভাড়া দিয়েছেন ৩৫০ টাকা করে। সেই হিসেবে তাদের কেজিতে ব্যয় হয়েছে পাঁচ টাকার মতো। এবার এ ধরনের অনিয়ম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ কারণেই একটি মহল অপপ্রচার ও ভাড়া কমানোর আন্দোলন করছে।
সংবাদ সম্মেলনে হিমাগার মালিকেরা জানান, বস্তায় ১৫ থেকে ২২ কেজি আলু বেশি রাখায় তারা এতদিন এসবের ভাড়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আবার এ কারণে হিমাগারের আলুর ধারণক্ষমতাও ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কমে যায়। এতে ১০ হাজার টনের একটি হিমাগারে বছরে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হয় তাদের। এসব কারণে চারশ হিমাগারের মধ্যে প্রায় তিনশ হিমাগারই রুগ্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। আরও বেশ কিছু হিমাগার ঋণ খেলাপীতে পরিণত হয়েছে।
হিমাগার মালিকের আরও জানান, দেশে আলুর চাহিদা প্রায় ৯০ লাখ টন। এর মধ্যে হিমাগারের ধারণক্ষমতা ৪৫ টনের মতো। চলতি বছর আলু উৎপাদন হতে পারে ১ কোটি ২০ লাখ টনের মতো। সেই হিসেবে বিপুল পরিমাণে আলু হিমাগারের বাইরে থাকবে এবং পণ্যটির দাম সেভাবে বাড়বে না। এতে কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন। এমন বাস্তবতায় উদ্বৃত্ত আলুর রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
হিমাগার ভাড়া কৃষকদের সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পাঁচটি দাবি জানান ব্যবসায়ীরা। এগুলো হচ্ছে— ঋণের সুদহার ১৭ শতাংশ (দন্ডসুদসহ) থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশ করা; বিদ্যুৎ বিলের ইউনিট প্রতি খরচ কমিয়ে ৫ টাকা করা; হিমগারের বিভিন্ন ব্যয়ের ওপরে ভ্যাট ও উৎসে কর প্রত্যাহার করা এবং ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় তিন মাসের পরিবর্তে বাৎসরিক করা। একই সঙ্গে হিমাগার খাতকে কৃষিশিল্প ঘোষণা করা।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘নির্বাচন কমিশন সার্ভিস’ গঠনে কার্যকর পদক্ষেপসহ ৫ সুপারিশ
‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫’ দ্রুত জারি করে ‘নির্বাচন কমিশন সার্ভিস’ গঠনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণসহ ৫ দফা সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। একই সঙ্গে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব প্রদানের আহ্বান জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব সুপারিশ তুলে ধরেন সংগঠনটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ মনির হোসেন।
আরো পড়ুন:
ফেব্রুয়ারিতেই মহোৎসবে জাতীয় নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা
বেড়ায় রবিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল, সড়ক ও নৌপথ অবরোধের ঘোষণা
অ্যাসোসিয়েশনের সুপারিশগুলো হলো
১. নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী দ্রুততম সময়ে ‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫’ জারি করে ‘নির্বাচন কমিশন সার্ভিস’ গঠন এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনা।
২. প্রস্তাবিত অর্গানোগ্রাম অনুমোদন, নতুন পদসৃজন, আপগ্রেডেশন এবং প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সরবরাহ নিশ্চিতকরণ।
৩. জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০২৩ বাতিল করে জাতীয় পরিচয়পত্র কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের কাছে হস্তান্তর।
৪. আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর নির্বাচন ভবনে সব কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে ‘নির্বাচন কর্মকর্তা সম্মেলন-২০২৫’ আয়োজন।
৫. নির্বাচন কর্মকর্তা সম্মেলন-২০২৫ আয়োজনে প্রস্তুতিমূলক বিভিন্ন কমিটি গঠন।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ করতে নির্বাচন কমিশন আরো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।
ঢাকা/আসাদ/সাইফ