বাংলাদেশে ক্যানসারের যে ওষুধ রয়েছে, সবই বিশ্বমানের
Published: 10th, February 2025 GMT
‘সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে এ দিবসটা পালিত হয়। এ দিবসে র্যালি, সেমিনার, বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সচেতনতামূলক বার্তা, বিশেষজ্ঞদের লেখা বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়, যা সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম করা হয়।’ বলছিলেন বিআরবি হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিকেল অনকোলজি বিভাগের চিফ কনসালটেন্ট অধ্যাপক ডা.
গত ৪ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) ছিল বিশ্ব ক্যানসার দিবস। এ উপলক্ষে এসকেএফ অনকোলজি আয়োজন করে ‘বিশ্বমানের ক্যানসার–চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনা। এতে অতিথি হিসেবে ছিলেন ডা. মো. মোফাজ্জেল হোসেন। আলোচনার বিষয় ছিল ‘বিশ্ব ক্যানসার দিবস ২০২৫, প্রেক্ষিত: বিদেশ নয়, দেশেই হোক ক্যানসার চিকিৎসা’। ডা. জান্নাতুন নাঈমের সঞ্চালনায় বাংলাদেশে ক্যানসারের বর্তমান অবস্থা, ডায়াগনসিস, রোগ নির্ণয় ও প্রতিরোধব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ে পরামর্শ দেন ডা. মো. মোফাজ্জেল হোসেন। পর্বটি সরাসরি প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম এবং প্রথম আলো, এসকেএফ অনকোলজি ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।
শুরুতেই বর্তমান বিশ্বে ক্যানসারের ভয়াবহতা সম্পর্কে মোফাজ্জেল হোসেনের কাছে জানতে চান সঞ্চালক। উত্তরে অতিথি বলেন, ‘প্রতিবছর সারা বিশ্বে দুই কোটি মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হন, যার মধ্যে প্রায় ১ কোটি মানুষ ক্যানসারে মৃত্যুবরণ করেন। তবে এর মধ্যে প্রায় ৭০ ভাগই আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মারা যান। আর বাংলাদেশে প্রায় ১ লাখ ৬৭ হাজার মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হন, যার মধ্যে প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজারই মারা যান। আরেকটি সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের ক্যানসার হয়। আর প্রতি ৯ জনের মধ্যে ১ জন পুরুষ এবং প্রতি ১২ জনের মধ্যে ১ জন নারী মৃত্যুবরণ করেন। সুতরাং এ জরিপগুলো থেকেই আমরা ক্যানসারের ভয়াবহতা সম্পর্কে অনুমান করতে পারি।’
বিশ্ব ক্যানসার দিবস প্রসঙ্গে মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘২০০০ সালে প্যারিসে বিশ্বখ্যাত ছয়জন ক্যানসার-বিশেষজ্ঞ সম্মিলিতভাবে একটি সিদ্ধান্ত নেন। সারা বিশ্বে যেভাবে ক্যানসারের প্রকোপ চলছে, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন করতে এটিকে দিবস হিসেবে পালন করবে। এটাকে “প্যারিস সনদ” বলা হয়। সেটাতে স্বাক্ষর করেন তৎকালীন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাক। তার পর থেকে ইউনিয়ন ইন্টারন্যাশনাল ক্যানসার কন্ট্রোল (ইউআইসিসি) বিশ্বে ক্যানসার-চিকিৎসায় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিবছর ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ক্যানসার দিবস হিসেবে পালন করে। উদ্দেশ্য হলো, ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার আগেই প্রতিরোধ, প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ এবং এর চিকিৎসাব্যবস্থাকে সহজলভ্য করা।’
সঞ্চালক জান্নাতুন নাঈম এবারের বিশ্ব ক্যানসার দিবসের প্রতিপাদ্য সম্পর্কে জানতে চান। উত্তরে মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘এবারের প্রতিপাদ্য “ইউনাইটেড বাই ইউনিক” বা অনন্যতায় ঐকতান। এটি ঠিক করা হয়েছে আগামী তিন বছরের জন্য, যা তিনটি ধাপে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যেমন ২০২৫ সালের জন্য “ওয়ার্ল্ড উইল হিয়ার ইউ” অর্থাৎ বিশ্ব আপনাকে শুনবে। ২০২৬ সালের জন্য “ইউর স্টোরি উইল চেঞ্জ দ্য মাইন্ড” মানে আপনার কথা শুনে তাঁদের মনোবৃত্তিটা পরিবর্তন হবে। ২০২৭ সালের জন্য “ইউর স্টোরি উইল ড্রাইভ দ্য অ্যাকশন” অর্থ আপনার স্টোরি সবাইকে বাস্তবিক পক্ষে কাজ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করবে।’
ক্যানসার প্রতিরোধে করণীয় প্রসঙ্গে মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘প্রতিরোধের আগে জানতে হবে এটি কেন হয়? এর কারণগুলো হলো, লাইফস্টাইল, খাদ্যাভ্যাস, দূষিত পরিবেশ, তামাক–অ্যালকোহল গ্রহণ, বসে বসে কাজ করা, রেডিয়েশন, স্থূলকায় হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। সুতরাং এ কারণগুলো থেকে যদি বিরত থাকতে পারি তবেই প্রতিরোধ হবে। সুতরাং বসে বসে কাজ না করে যতটা সম্ভব কায়িক শ্রম, অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করলেই ক্যানসার প্রতিরোধ করা যাবে।’
বিশ্ব ক্যানসার দিবস, বাংলাদেশে ক্যানসারের বর্তমান অবস্থা ও পরিসংখ্যান এবং রোগ নির্ণয়ব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ে পরামর্শ দেন ডা. মো. মোফাজ্জেল হোসেনউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সাজেকে নিহত খুবি শিক্ষার্থী রিংকীর মরদেহ নেওয়া হবে গাইবান্ধা
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের সেশনাল ট্যুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী মোছা. রুবিনা আফসানা রিংকীর মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তার বাড়ি গাইবান্ধায় নেওয়া হবে।
এছাড়া শিক্ষার্থী নিহত ও আহতের ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক ঘোষণা করা হয়েছে। একই সাথে এদিন সকল ক্লাস-পরীক্ষাও বন্ধ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. নাজমুস সাদাত এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীদের সেশনাল ট্যুরের সময় রাঙামাটির সাজেক যাওয়ার পথে গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী মোছা. রুবিনা আফসানা রিংকী নিহত হন। দুর্ঘটনায় নিহত রুবিনা আফসানা রিংকির মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তাদের বাড়ি গাইবান্ধায় নেওয়া হবে। এই দুর্ঘটনায় আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আহত হয়েছেন। আহতদেরকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনজনকে চট্টগ্রামে স্থানান্তর করা হচ্ছে ।”
তিনি বলেন, “এই শোকাবহ ঘটনায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গভীরভাবে মর্মাহত। আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক ঘোষণা করা হয়েছে, সকল ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবানের সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ছাত্রদের সঙ্গে শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত আছেন। তিনি নিজে এবং সহকারী পরিচালকসহ কর্মকর্তারা খাগড়াছড়ি রওনা হয়েছেন।”
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদসহ সকল উপাসনালয়ে নিহত শিক্ষার্থীর আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের সুস্থতার জন্য বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।
এদিকে, সাজেকে শিক্ষার্থী নিহত ও আহতের ঘটনায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সব ধরনের সেশনাল ট্যুর অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার কাকলি রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষ ৪র্থ বর্ষ টার্ম-২ এর সেশনাল ট্যুরে অংশগ্রহণরত অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনায় একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। শিক্ষার্থীর এই অকাল মৃত্যুতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গভীরভাবে শোকাহত এবং আহতদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সকল দূরপাল্লার সেশনাল ট্যুর স্থগিত করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করেছে কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, রাঙামাটির বাঘাইছড়ির সাজেক পর্যটনকেন্দ্রে যাওয়ার পথে চান্দের গাড়ি পাহাড়ের খাদে পড়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হন। এসময় আহত হয়েছেন আরো ১১ জন। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে সাজেকের হাউসপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত রুবিনা আফসানা রিংকী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। আহতরা সবাই একই বিভাগের শিক্ষার্থী।
ঢাকা/নুরুজ্জামান/এস