রাজবাড়ীতে বালুমহালের দরপত্র নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের বাগ্‌বিতণ্ডার ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে এক সাংবাদিক হামলার শিকার হয়েছেন। আজ সোমবার বেলা একটার দিকে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনের আম্রকানন চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।

আহত সাংবাদিক ইমরান হোসেন (৪১) মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি। তিনি রাজবাড়ী সদর উপজেলার পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের ব্রাহ্মণদিয়া গ্রামের বাসিন্দা। হামলায় মাথায় আঘাত পেলে তাঁকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, জেলার কালুখালী উপজেলার চরপাতুরিয়া বালুমহালের দরপত্র জমা দেওয়া নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয়। এ সময় পেশাগত কাজে ভিডিও ধারণ করতে গেলে ক্ষিপ্ত হয়ে ১৫ থেকে ২০ জনের দল সাংবাদিক ইমরান হোসেনের ওপর হামলা করে।

সাংবাদিক ইমরান হোসেন বলেন, দরপত্র বাক্সে বিএনপির দুই পক্ষ দরপত্র ফেলা নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার এক পর্যায়ে হাতাহাতি ও কিল–ঘুষি মারতে থাকে। এই দৃশ্য তিনি ধারণ করতে থাকেন। একপর্যায়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্য ১৫ থেকে ২০ জনের একটি দল অতর্কিতভাবে ইমরানকে কিল-ঘুষি মারা শুরু করেন। ‘ছবি তুললি কেন?’ বলেই এলোপাতাড়ি মারধরে রক্তাক্ত জখম করে পরনের পোশাক ছিঁড়ে ফেলেন। এ সময় কোনো একজন হাতে থাকা মোটরসাইকেলের চাবি–জাতীয় কিছু একটা দিয়ে মাথায় আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করেন। পরে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল করিমসহ কয়েকজন তাঁকে উদ্ধার করেন। পরে সহকর্মীদের সহযোগিতায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল করিম বলেন, ‘কালুখালী উপজেলার গড়াই নদের চরপাতুরিয়া বালুমহাল ইজারা–সংক্রান্ত দরপত্র থাকায় বিএনপির দুই পক্ষের লোকজন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সাবেক রেলপথমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমের আশ্রয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাত, এমন কিছু ছেলে এখন রাজবাড়ী-২ আসনের বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরুল হকের আশ্রয়ে আছে। সাংবাদিক ইমরান দুটি পক্ষের মধ্যে গ্যাঞ্জামের ছবি তোলায় ওই ছেলেরা মারধর করে। আমাদের রাজবাড়ী শহরের কোনো ছেলেপেলে ছিল না। দূর থেকে দেখে দৌড়ে এসে আমরা সাংবাদিক ইমরানকে রক্ষা করি।’

রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান জানান, খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে সাংবাদিক ইমরান হোসেনকে দেখে এসেছেন। তাঁরা লিখিত অভিযোগের অপেক্ষা করছেন। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গুরুত্বসহকারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব দ ক ইমর ন হ স ন দরপত র

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ঘেঁষে একের পর এক অঘোষিত ভাগাড়, বর্জ্য ফেলে পরিবেশদূষণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের হাড়াতলী এলাকা। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার এই এলাকায় গেলে দূর থেকেই নাকে ভেসে আসে উৎকট দুর্গন্ধ। মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনের পাশে চোখে পড়ে সারি সারি ময়লার স্তূপ। মহাসড়কের পাশ যেন হয়ে উঠেছে ময়লা-আবর্জনা ফেলার ভাগাড়ে।

শুধু হাড়াতলী এলাকাই নয়; ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের বেশ কয়েকটি স্থানে এমন অঘোষিত ভাগাড় গড়ে উঠেছে। মহাসড়কের প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে কুমিল্লা জেলার অংশ। এর মধ্যে অন্তত ২০টি স্থানে একইভাবে ময়লা ফেলা হচ্ছে। কোথাও কোথাও সিটি করপোরেশন, পৌরসভার মতো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান মহাসড়কের পাশে তাদের সংগ্রহ করা ময়লা ফেলছে। এতে মহাসড়কের পাশে বিভিন্ন স্থানে আবর্জনার স্তূপ দিন দিন বাড়তে, মহাসড়ক পরিণত হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা ফেলার ভাগাড়ে। এভাবে পরিবেশদূষণ বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদীরা।

বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লার সভাপতি মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এভাবে বর্জ্য ফেলার কারণে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যদি সঠিকভাবে করতে না পারে, তাহলে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের কাজটা কী? মানুষ তো ট্যাক্স দেয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য। এভাবে ময়লা-আবর্জনা ফেলা একধরনের অপরাধও। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে এসব বিষয়ে কঠোর হওয়া দরকার।

হাড়াতলী এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, প্রায় দুই বছর আগে স্থানটিতে ময়লা ফেলা শুরু করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন। এরপর সেটি ধীরে ধীরে পরিণত হয় ভাগাড়ে। দিন যত গেছে, ময়লা ফেলার জায়গাটির আকার ততই দীর্ঘ হয়েছে। এ কারণে ওই স্থান দিয়ে হেঁটে চলাচল করা বেশ দুষ্কর হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন আশপাশের বসবাসকারীরা। ভাগাড়ের আশপাশে অন্তত তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেগুলোর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও ময়লার দুর্গন্ধে নাকাল।

এভাবে পরিবেশদূষণ বন্ধে আমরা দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করছি। তবে এ বিষয়ে মূল দায়িত্বটা পালন করতে হবে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদকে।মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজীব, উপপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লা

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ময়লা ফেলতে আমরা বারবার বাধা দিয়েছি, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। সিটি করপোরেশন সবুজে ঘেরা এলাকাটির বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। এখনো প্রতিদিন ময়লা বাড়ছে। সিটি করপোরেশন বলে, তারা নাকি এখন ময়লা ফেলে না। তাহলে আমাদের প্রশ্ন, ময়লা কারা ফেলছে?’

স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী তাহমিনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, শ্রেণিকক্ষে বসা যায় না দুর্গন্ধের জন্য। একটু বাতাসেই নাকে ভেসে আসে ময়লার দুর্গন্ধ। কলেজে প্রবেশের সময় নাক চেপে ধরে আসতে হয়। এ ছাড়া পরিবেশও মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।

জানতে চাইলে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, হাড়াতলীতে তিন মাস ধরে তাঁরা আবর্জনা ফেলছেন না। সিটি করপোরেশনের ফেলা ময়লাগুলো ভেকু দিয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এখন রাতের আঁধারে আশপাশের লোকজন এবং বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মহাসড়কের পাশে ময়লা ফেলছে। যারা ময়লা ফেলছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার প্রবেশমুখ বালুজুড়ি এলাকায় ময়লার ভাগাড়

সম্পর্কিত নিবন্ধ