শিশুসংবেদন বইমেলা হোক, হবে তো?
Published: 11th, February 2025 GMT
প্রথম সপ্তাহেই বইমেলায় গিয়েছি। হাঁটছিলাম লিটল ম্যাগ চত্বরের কোল ঘেঁষে। সেখান থেকেই চোখ পড়ে আজিজুলের দিকে। আজিজুল এই দোকান থেকে সেই দোকান ঘুরছে, কেউই তেমন একটা পাত্তা দিচ্ছে না। কেরানীগঞ্জের রুহিতপুর থেকে অনেক পথ পেরিয়ে বইমেলায় এসেছিল আজিজুল। ক্লাস সেভেনের ছাত্র সে। কেরানীগঞ্জের হিজলায় তার নানিবাড়ি। সেখানে যাওয়ার কথা বলে চলে এসেছে বাংলা একাডেমির বইমেলায়। ট্র্যাপডোর, হোয়াট ইজ টাইম.
আজিজুলের দুরবস্থা দেখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ফটিক’ গল্পে ফটিকের মামার কথা মনে পড়ল। গল্পে যেমন আছে, ‘...বালককে জিজ্ঞাসা করিলেন, “চক্রবর্তীদের বাড়ি কোথায়।”
‘বালক ডাঁটা চিবাইতে চিবাইতে কহিল, “ওই হোথা।” কিন্তু কোন্ দিকে যে নির্দেশ করিল, কাহারও বুঝিবার সাধ্য রহিল না।
‘ভদ্রলোকটি আবার জিজ্ঞাসা করিলেন, “কোথা।”
‘সে বলিল, “জানি নে?”’
ফটিকের মন খারাপ ছিল, তাই শহর থেকে আসা আগন্তুককে সে সাহায্য করেনি। কিন্তু আজিজুলদের প্রতি আমাদের বইমেলার বিক্রেতাদের কেন এত অসহযোগিতা! আজিজুল সজ্জিত পোশাকে আসেনি বলে? ‘মফস্সলের’ মানুষ বলে? নাকি সে শিশু বলে? শিশুদের সঙ্গে বইমেলা–সংশ্লিষ্টদের ব্যবহার মানুষের মতো হতে হবে। প্রশিক্ষণ, বিশেষ করে শিশুবান্ধব আচরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ ছাড়া কাউকে মেলার চেয়ারে বা দোকানি–স্বেচ্ছাসেবী হতে দেওয়া ঠিক হবে না।
মেলায় শিশুকর্নার হয়েছে। শিশুদের জন্য আলাদা দিন ও সময়ের ঘোষণা এসেছে। কিন্তু মনে হয়, এসবই মন থেকে নেওয়া কোনো উদ্যোগ নয়। একবার ঝড়বৃষ্টির পর যখন বালু–ইট ফেলার প্রয়োজন হয়েছিল, তখন শিশুদের কর্নারের কথা সবাই বেমালুম ভুলে বসেছিল। আসলে দুটি উদ্দেশ্য মাথায় রেখে মেলার আয়োজন হয়। প্রথমটি নিশ্চয়ই বাণিজ্যিক। দ্বিতীয়টি হয়তো সাধারণ মানুষের বিনোদন।
আমাদের বইমেলার দিকে গভীরভাবে তাকালে মনে হবে, এটা ক্রমে যেন আয়োজকদের বোঝা হয়ে উঠছে। সম্ভাবনা সত্ত্বেও বইমেলায় না হচ্ছে ব্যবসা, না হচ্ছে বিনোদন কিংবা একুশ স্মরণ। মেলাটি শিশুদের টানতে পারছে না। এখনকার পাঠক আগামীর ক্রেতা শিশুদের টানতে না পারলে মূল ভিতটাই যে দুর্বল হয়ে যাবে। বইমেলায় শিশুদের একরকম অঘোষিত বার্তায় বলে দেওয়া হয়, ‘সব দিন বড়দের, তোমাদের কয়েক ঘণ্টা।’
কয়েক বছর আগে এ নিয়ে মেলায় আসা শিশুদের সঙ্গে কয়েক দিন ধরে কথা বলেছিলাম। অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেছিল, ‘বইমেলায় ছুটির দিনে শিশুপ্রহর থাকলেও সেটা খুব কম সময়ের জন্য। মেলায় শিশুদের আকর্ষণীয় আরও কিছু যদি থাকত! এই যেমন আনন্দ করার জন্য শিশুচত্বরের মধ্যেই স্থায়ী শিশুকর্নার। শিশুদের নিয়ে লেখা গল্প, ছড়া স্বয়ং লেখকদের মুখে শোনার ব্যবস্থা থাকলে কত্ত মজা হতো!’
ঢাকার এক ইংলিশ মিডিয়ামের স্কুলছাত্রী বলেছিল, ‘বইমেলায় যারা অনেক দূর থেকে আসে, তাদের জন্য একটু বিশ্রামের ব্যবস্থা থাকলে ভালো হতো। আর মেলার সময়টা বেলা তিনটা থেকে না করে সকাল থেকে শুরু করলে সময় পাওয়া যেত।’
একাডেমি কি কখনো শিশুদের সঙ্গে আলোচনা করেছে, তাদের মতামত জানতে চেয়েছে? বছর দুয়েক আগে শিশুদের নিয়ে ভাবেন—এমন নাগরিকদের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে বইমেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি প্রকাশক, লেখক, প্রচ্ছদশিল্পী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের জন্য আলাদাভাবে সুপারিশগুলো তৈরি করে একাডেমিকে দিয়েছিল।
একাডেমির নতুন নেতৃত্ব একাডেমির জন্য প্রযোজ্য সুপারিশগুলো ভেবে দেখতে পারেন। বইমেলাকে শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় করতে বাংলা একাডেমির কিছু করণীয় চিহ্নিত করা যায়। সেগুলো এ রকম:
এক. শিশুচত্বরে প্রবেশের সময় একটা আকর্ষণীয় দরজা বা ফটক রাখা যেতে পারে, যার মাধ্যমে শিশুরা একটা আলাদা জগতে প্রবেশের আনন্দ পাবে। শিশুদের বয়সের কথা বিবেচনা করে রং, ছবি, ফন্ট ইত্যাদি ব্যবহার করে শিশুচত্বরকে সাজাতে হবে।
দুই. মেলার যেকোনো দরজা দিয়ে ঢোকার পরই শিশুচত্বরে যাওয়ার পথনির্দেশ স্থাপন করা যেতে পারে। তিন. স্টলগুলোয় বই প্রদর্শনের স্থান যাতে শিশুর উচ্চতায় থাকে, তা খেয়াল রাখতে হবে।
চার. যেসব প্রকাশক শিশুতোষ বইও প্রকাশ করেন, তাঁরা স্টলের একটি অংশ শিশুদের উপযোগী করে তৈরি করতে পারেন।
পাঁচ. শিশুপ্রাঙ্গণে এমন এক বা একাধিক জায়গা নির্ধারিত থাকতে পারে, যেখানে শিশুরা গল্প পাঠ, গল্প লেখা, আবৃত্তি ও চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে সৃজনশীল সময় কাটাতে পারবে।
ছয়. বড় শিশুর সঙ্গে মা যে কোলের সন্তানকে নিয়ে আসেন, তার জন্য ব্রেস্টফিডিং কর্নার থাকতে হবে।
সাত. শিশুদের উচ্চতা উপযোগী পানি পানের জায়গা, শৌচাগার ও বেসিনের ব্যবস্থা থাকা দরকার।
আট. শিশুতোষ বইয়ের লেখকদের জন্য আলাদা লেখকচত্বরের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
নয়. শিশুতোষ বই সম্পর্কে শিশুদের মতামত ও অনুভূতি জানতে আলোচনা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা যায়। তাহলে লেখক ও প্রকাশকেরাও ধারণা পাবেন শিশুদের আগ্রহের বিষয় সম্পর্কে।
দশ. শিশুদের জন্য নাটক, পুতুলনাচ, মূকাভিনয় কিংবা অন্য পারফরম্যান্সের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
এগারো. শুধু শিশু-কিশোরদের উপযোগী প্রকাশনা নিয়ে আলাদা একটি মেলা আয়োজন করা যেতে পারে।
বারো. মেলা প্রাঙ্গণে বইয়ের ব্যাংক তৈরি করে সেখানে বইদানের ব্যাপারে মেলায় আগত ক্রেতাদের উৎসাহিত করা যেতে পারে।
তেরো. দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের যেসব পাঠাগারে বইয়ের সংখ্যা কম, সেখানে বই পাঠানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
● গওহার নঈম ওয়ারা লেখক গবেষক
[email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র ব যবস থ দ র জন য এক ড ম র বইম ল য় আজ জ ল কর ন র বইয় র
এছাড়াও পড়ুন:
তেহরানের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক বিস্ফোরণের শব্দ
ইরানের রাজধানী তেহরানের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইরানের সংবাদ সংস্থা ফার্সের বরাতে আল-জাজিরা জানিয়েছে, তেহরানের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত একটি সামরিক ঘাঁটিতে ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে। এ ছাড়া তেহরানের পূর্বাঞ্চলেও বিস্ফোরণের খবর প্রকাশ করেছে ইরানি গণমাধ্যম।
এর আগে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তেহরানের কিছু অংশে হামলার হুমকি দিয়েছিল। এরপরই এসব বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) তেহরানের একটি বিস্তৃত এলাকার মানুষকে ‘অবিলম্বে এলাকা ছেড়ে যেতে’ সতর্ক করে।
বিবিসি জানায়, আইডিএফের মুখপাত্র আভিচাই আদরায়ি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স–এ দেওয়া পোস্টে বলেন, ‘আগামী ঘণ্টাগুলোতে আমরা তেহরানের এই এলাকায় অভিযান চালাব—যেমন আগের দিনগুলোতেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালানো হয়েছে।’
তিনি জানান, ইরানের সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে এই অভিযান চালানো হবে।
পোস্টের সঙ্গে একটি মানচিত্র যুক্ত করে ইসরায়েল জানায়, তেহরানের তৃতীয় জেলায় বসবাসকারীদের এলাকা ছাড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সতর্কবার্তায় আরও বলা হয়, ‘আপনার এই এলাকায় অবস্থান আপনার জীবনের জন্য হুমকি।’