কচুয়া ও চিতলমারীতে বিএনপির সম্মেলন ঘিরে সংঘর্ষ, আহত ২৪
Published: 11th, February 2025 GMT
বাগেরহাটের কচুয়া ও চিতলমারী উপজেলায় বিএনপির সম্মেলন ঘিরে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২৪ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে কচুয়া উপজেলার ধোপাখালী ইউনিয়ন ও চিতলমারী উপজেলার কলাতলা ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কচুয়া উপজেলার ধোপাখালী ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে আজ দুপুরে দেপাড়া বাজার এলাকায় দুই সভাপতি প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ধোপাখালী ইউনিয়ন বিএনপির এক সভাপতি প্রার্থীসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সভাপতি প্রার্থী মো.
চিকিৎসাধীন লিয়াকত হোসেন বলেন, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আফজাল হাওলাদারের নেতৃত্বে কাদের, আলমগীর, শিমুল, শ্রমিক লীগ নেতা সুমন, আফজাল হাওলাদার, হেদায়েত, ইস্কান্দারসহ ২৫-৩০ জন তাঁদের ওপর হামলা করেন। এতে তাঁদের ১৫ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সভাপতি প্রার্থী আফজাল হোসেন। তিনি বলেন, ওই ঘটনার সঙ্গে তিনি বা তাঁর কোনো নেতা-কর্মী জড়িত নন। জানতে চাইলে কচুয়া উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব এস এম তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘হামলার খবর শুনেছি। দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ঊর্ধ্বতন নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ওই ঘটনায় কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে চিতলমারী উপজেলায় কলাতলা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে চরচিংগুড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকায় কিবরিয়া মাস্টার ও মোস্তাফিজুর রহমান কচির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৯ জন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আহত ব্যক্তিরা হলেন কিবরিয়া মাস্টার পক্ষের আরিফুজ্জামান (৪৫), দবির শেখ (৪০), ভুলু মোল্লা (৫০) ও আব্দুল আলী (৩০) এবং মোস্তাফিজুর রহমান পক্ষের খাদিজা বেগম (২৯), ইউনুছ শেখ (৫৫), ওসমান শেখ (৪০), কদম আলী (৪৫) ও শাহিদা বেগম (৩৫)। আহতদের উদ্ধার করে চিতলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পাশের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। কিবরিয়া মাস্টারের অভিযোগ, মোস্তাফিজুর রহমানের লোকজন পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে। এতে তাঁদের ছয় থেকে সাতজন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে মোস্তাফিজুর রহমানের ভাষ্য, নির্বাচনে তাঁর পক্ষের লোকজন জয়লাভ করেছে। এটা শুনতে পেয়ে কিবরিয়া মাস্টারের লোকজন তাঁদের ওপর হামলা করে সাত থেকে আটজনকে গুরুতর জখম করেছে।
চিতলমারী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোমিনুল হক বিশ্বাস বলেন, ‘সম্মেলন কেন্দ্রের ৫০০ গজের মধ্যে কোনো ঘটনা ঘটেনি। কলাতলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী কিবরিয়া মাস্টারের ছেলে ও তাঁর লোকজনের ওপর দুর্বৃত্তরা হামলা করেছে। এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের লোকজন জড়িত। যদি বিএনপির কেউ জড়িত থাকে, তাঁদের বিরুদ্ধে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’
চিতলমারী থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ওয়ার্ড বিএনপির সম্মেলন ঘিরে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখনো কোনো পক্ষ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম স ত ফ জ র রহম ন র ল কজন ব যবস থ স ঘর ষ ক বর য় উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।