শ্বশুরবাড়িতে গায়ে আগুন দিয়ে ‘আত্মহত্যার চেষ্টা’ প্রবাসীর, পরে মৃত্যু
Published: 13th, February 2025 GMT
ঢাকার দোহারে স্ত্রীর সঙ্গে বিরোধের জেরে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান শামীম হোসেন (২৫) নামের এক প্রবাসী। ঘটনার চার দিন পর বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে রোববার রাতে দোহারের নারিশা এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা চালান বলে জানিয়েছেন স্বজনেরা। দগ্ধ অবস্থায় চার দিন হাসপাতালে থাকার পর তিনি মারা যান। শামীম হোসেন উপজেলার নারিশা খালপাড় এলাকার ইয়ানুছ ব্যাপারীর ছেলে।
পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে ফারজানা আক্তার (২০) নামের তরুণীকে পরিবারের অমতে পালিয়ে বিয়ে করেন শামীম হোসেন। বিয়ের পর তাঁদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। মেয়ের পরিবারও এই বিয়ে মেনে নিতে চায়নি। এর মধ্যে সৌদি আরবে চলে যান শামীম। প্রবাসে থাকা অবস্থায় স্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতেন। দুই মাস আগে হঠাৎ ফারজানা তাঁকে তালাকের নোটিশ দেন। ঘটনা জানতে পেরে শামীম ৫ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরে আসেন। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি শ্বশুরবাড়িতে যান। কিন্তু স্ত্রী তাঁর সঙ্গে কথা বলায় তিনি ক্ষুব্ধ হন। একপর্যায়ে স্ত্রী তাঁকে চলে যেতে বলেন। কিন্তু শামীম সেখানেই থেকে যান। হঠাৎ ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে শামীম শ্বশুরবাড়িতে নিজের শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন।
খবর পেয়ে শামীমের স্বজনেরা এসে তাঁকে উদ্ধার দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ ভোরে তিনি মারা যান। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ বিকেলে গ্রামের বাড়িতে আনা হয়।
শামীমের বড় ভাই শাহাদাত হোসেন অভিযোগ করেন, তাঁর ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ফারজানা তাঁর চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক করে শামীমকে ছাড়াছাড়ির ভান ধরে। মৃত্যুর আগে শামীম একটি ভিডিও বার্তায় তাঁর মৃত্যুর কারণ জানিয়ে গেছে। ভিডিওসহ মুঠোফোনটি দোহার থানা-পুলিশ জব্দ করেছে বলে জানান তিনি।
শামীমের মারা যাওয়ার খবর পেয়ে ফারজানা ও তাঁর পরিবারের লোকজন গা ঢাকা দিয়েছেন। অভিযোগের বিষয়ে ফারজানাদের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। ঘর তালাবদ্ধ দেখা যায়। প্রতিবেশীরা জানান, শামীমের মৃত্যুর পর তাঁরা সপরিবার বাড়ি ছেড়েছেন।
জানতে চাইলে দোহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, শামীমের পরিবারের লোকজন থানায় এলে মামলা নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি