গ্রহ প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন করছে চীন। গ্রহাণুর আঘাত থেকে পৃথিবী রক্ষায় এ বাহিনী কাজ করবে। ২০৩২ সালে পৃথিবীতে একটি গ্রহাণু আঘাত হানার আশঙ্কার কথা বলেছেন বিজ্ঞানীরা। এ ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে চীনের পক্ষ থেকে বিশেষ এ প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ বাহিনীতে জনবল নিয়োগ দিতে অনলাইনে চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এ সপ্তাহে চীনের স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ফর ন্যাশনাল ডিফেন্স (এসএএসটিআইএনডি) এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মহাকাশ প্রকৌশল, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং গ্রহাণু শনাক্তকরণ বিষয়ে স্নাতক সম্পন্নকারীরা আবেদন করতে পারবেন।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও ইউরোপের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ২০২৪ ওয়াইআর ফোর নামের গ্রহাণুটিকে তাদের সর্বোচ্চ ঝুঁকির তালিকায় রেখেছে। এ গ্রহাণু পৃথিবীতে আঘাত হানার আশঙ্কা ১ দশমিক ৩ থেকে ২ দশমিক ২ শতাংশ। জাতিসংঘের মহাকাশ পরিকল্পনা উপদেষ্টা গ্রুপ চীনসহ মহাকাশ কর্মসূচিতে যুক্ত থাকা দেশগুলোকে নিয়ে এ গ্রহাণু প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে নিয়মিত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

চীনের উইচ্যাটে প্রকাশিত চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে ১৬টি পদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি প্ল্যানেটারি ডিফেন্স ফোর্স বা গ্রহ প্রতিরক্ষা বাহিনীতে নিয়োগ হবে। ৩৫ বছরের কম বয়সী স্নাতক পাস ব্যক্তিরা আবেদন করতে পারবেন। এর জন্য কারিগরি ও পেশাদারি দক্ষতা প্রয়োজন হবে। এর পাশাপাশি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থক হতে হবে। চীনের এ চাকরির বিজ্ঞপ্তি নিয়ে ইতিমধ্যে অনলাইনে তরুণদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।

চীনের মহাকাশ খাত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। গ্রহাণু পর্যবেক্ষণের দিকে আরও গুরুত্ব দিতে এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে এসএএসটিআইএনডি কোনো মন্তব্য করেনি।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ