বন্দরে সোনাকান্দা ময়লার ভাগারে পরিবেশ দূষন
Published: 15th, February 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২১ নং ওয়ার্ডের সোনাকান্দা কেল্লা জামে মসজিদ সংলগ্ন একশ ফুট রাস্তার পাশের জায়গাটি এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এতে করে পরিবেশ দূষিতসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারন জনগন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাজারও লোকের যাতায়াত। গুরুত্বপূর্ন এ রাস্তার পাশে রয়েছে আবাসিক এলাকা, সোনাকান্দা ডকইয়ার্ড স্কুল, ব্যাংক, মেরিন টেকনোলজি ও বন্দর থানাসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
সাধারন জনগনের চলাচলের একমাত্র রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে যাতায়েত করে । অথচ এই রাস্তার পাশে অবস্থিত আবাসিক এলাকার কিছু লোকজন এই স্থানটিতে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ করে রেখে পরিবেশ দূষন করে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে স্থানীয়রা জানান, ময়লার স্তূপের কারণে দুর্গন্ধ ছড়ায়। এতে করে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। মসজিদে যেতে কষ্ট হয়। নামাজে দাঁড়ালে দুর্গন্ধে মনোনিবেশ করাতে কষ্ট হয়। রাস্তায় রাস্তার পাশে ময়লা ফেলার কারণে সাধারণ পথচারীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে সমস্যার সৃষ্টি হয়। এলাকাবাসীর দাবি, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন যেন দ্রুত ময়লার স্তূপ সরিয়ে পথচারীদের চলাচলের উপযোগী করে তোলে।
এ ব্যাপারে ২১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা খোরশেদ গণমাধ্যমকে আরো জানান, ৫ আগস্টের পর থেকে সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম ভাটা পরেছে। এ ছাড়াও কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও পরিচ্ছন্ন কর্মীদের চরম উদাসিনতার কারনে ২১ নং ওয়ার্ডবাসীর কাঙ্খিত নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
ময়লার স্তূপের কারনে এখানকার পরিবেশ মারত্মক ভাবে দূষন হচ্ছে। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধা পর্যন্ত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পরেছে। এ অবস্থা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সিটি কর্পোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
.উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ পর ব শ ময়ল র
এছাড়াও পড়ুন:
পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার বিলীন
পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ পদ্মায় বিলীন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার বাঁধটির ওই অংশ নদীতে বিলীন হয়। এ সময় নদীগর্ভে চলে গেছে বাঁধের পাশে থাকা ২০টি বসতবাড়ি। আর ভাঙন আতঙ্কে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ৫০টি বাড়ির বসতঘর ও বিভিন্ন স্থাপনা। এ নিয়ে ৬ দফায় বাঁধটির ৮০০ মিটার পদ্মায় বিলীন হয়ে গেল।
ভাঙন রোধে গত তিন মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। ভাঙনের কারণে তা–ও নদীতে তলিয়ে গেছে। বাঁধের ওই ৮০০ মিটার অংশের পাশে থাকা ৩৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ৫০টি বসতবাড়ি গত দুই মাসে বিলীন হয়েছে। ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনটি গ্রামের ৬০০ পরিবার এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজারের ২৪০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ঝুঁকিতে পড়েছে।
শরীয়তপুর পাউবো ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, শরীয়তপুরের পদ্মা নদীর অংশ জাজিরার নাওডোবা এলাকা থেকে শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু নাওডোবার ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে পদ্মা নদীর ৫০০ মিটারের মধ্যে সার্ভিস এরিয়া ২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এসব অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যখন জমি অধিগ্রহণ করা হয়, তখন ২০১২ সালের দিকে নাওডোবা এলাকায় পদ্মার ভাঙন শুরু হয়। পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা নদীভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য তখন সেতু থেকে ভাটির দিকে (পূর্ব দিকে) দুই কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ওই বাঁধের পাশে (দক্ষিণ দিকে) আলাম খাঁরকান্দি, ওছিম উদ্দিন মাদবরকান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সিকান্দি এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজার অবস্থিত।
পাউবো সূত্র বলছে, গত বছর নভেম্বর মাসে জাজিরার নাওডোবা জিরো পয়েন্ট এলাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের ১০০ মিটার অংশে ভাঙন দেখা দেয়। এরপর এ বছর ৭ জুন আবার বাঁধের ১০০ মিটার, ৭ জুলাই ২০০ মিটার, ৯ জুলাই ১০০ মিটার, ২৩ জুলাই ১০০ মিটার অংশ ভেঙে নদীতে ধসে পড়ে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ওই বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে অস্থায়ী ভিত্তিতে ৬০০ মিটার অংশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পাউবো। এ পর্যন্ত ওই এলাকায় ১ লাখ ৫৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। তাতে ব্যয় হয়েছে ৭ কোটি টাকা। তাও কোনো কাজে লাগেনি। ভাঙনের কারণে ওই জিও ব্যাগগুলো নদীতে তলিয়ে গেছে। ওই এলাকা দিয়ে নদী অন্তত ১০০ মিটার হতে ১৫০ মিটার ভেতরে (দক্ষিণ দিকে) প্রবেশ করেছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পদ্মার ভাঙনে আলম খাঁরকান্দি এলাকার আবুল বাশার মাদবরের দুটি ঘরসহ বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ঘরের অবশিষ্ট জিনিসপত্র তিনি সড়কের পাশে স্তূপ করে রেখেছেন। আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা তীরে বাড়ি হওয়ায় তিন দফা ভাঙনের কবলে পড়েছি। পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় বাড়ির সঙ্গে বাঁধটি হওয়ায় ভেবেছিলাম আর কখনো ভাঙনে নিঃস্ব হতে হবে না। কিন্তু তা আর হলো না, আমার সব শেষ। এখন বেঁচে থাকার জন্য আর কিছুই রইল না। উদ্বাস্তু হয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি।’
ভাঙন আতঙ্কে গতকাল শুক্র ও আজ শনিবার তিনটি গ্রামের ৫০টি বসতবাড়ির বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আলী হোসেন মাদবর নামের একজন শনিবার সকাল থেকে দুটি বসতঘর ভেঙে মালামাল সরাচ্ছিলেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ভাঙনের কারণে একটু দুশ্চিন্তায় ছিলাম। রাতে আতঙ্কে ঘুমাতে পারতাম না। এখন আর পদ্মা পারে থাকতেই পারলাম না। বাপ-দাদার ভিটেমাটি ফেলে ঘর নিয়ে চলে যাচ্ছি। জানি না কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেব।’
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান প্রথম আলোকে জানান, নদীতে অনেক স্রোত। ভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে, তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ভাঙনের কারণে বালুভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। জাজিরার ওই স্থানে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীভাঙনের শিকার হয়ে মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে, এটা কষ্টদায়ক। আমরা ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর নির্মাণের জন্য টিন, নগদ টাকা ও খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। যাঁরা ভিটেমাটি হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়েছেন, তাঁদের পুনর্বাসন করার জন্য খাসজমি খোঁজা হচ্ছে। সেই জমিতে তাঁদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে।’