২২তম ইন্টার কলেজ সায়েন্স ফেস্টিভ্যাল: বিজ্ঞানচর্চার এক অনন্য আয়োজন
Published: 17th, February 2025 GMT
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ ছড়িয়ে দিতে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ ঘটাতে রাজধানীর হলি ক্রস কলেজের বিজ্ঞান ক্লাবের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো ‘২২তম ইন্টার কলেজ সায়েন্স ফেস্টিভ্যাল–২০২৫’। এই বিশাল বিজ্ঞান উৎসব ১৩ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দেশের মোট ৭৫টি কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।
উদ্বোধনী ও সমাপনী আয়োজন
উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বি এম মুহাম্মাদ হোসেন (অধ্যাপক, ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), রুবায়েত মোরশেদ (অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ও সেবাস্টিয়ান গ্রো (সহযোগী অধ্যাপক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়)। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহ–উপাচার্য আবুল কাশেম মিয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও কিশোর আলো সম্পাদক আনিসুল হক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুনির হাসান, লেখক, কো-ফাউন্ডার, বিডিএমও, বিডিওএসএন, এসপিএসবি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাফর উদ্দীন সিদ্দিকী, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর, মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস, সিটি গ্রুপ।
বিজ্ঞান প্রতিযোগিতা ও আয়োজন
চার দিনব্যাপী এই বিজ্ঞান উৎসবে ছিল বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও ইভেন্ট। ১৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছিল সাই-ফাই গল্প লেখা, বিজ্ঞান বনাম বিজ্ঞানী বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও জেওপার্ডি কুইজের প্রথম রাউন্ড।
১৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় মানসিক দক্ষতা ও বিজ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে মানসিক অলিম্পিয়াড, জীববিজ্ঞান, ভূগোল, গণিত, প্রকল্প প্রদর্শনী, পদার্থবিদ্যা, তথ্যপ্রযুক্তি ও রসায়ন অলিম্পিয়াড।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ ছড়িয়ে দিতে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ ঘটাতেই হলি ক্রস কলেজের বিজ্ঞান ক্লাব আয়োজন করেছিল ‘২২তম ইন্টার কলেজ সায়েন্স ফেস্টিভ্যাল-২০২৫’.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপস থ ত ছ ল ন অন ষ ঠ ইন ট র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রার্থনার সুরে শেষ হলো ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব
পাহাড়ের আঁকাবাঁকা প্রায় দুই কিলোমিটারেরও বেশি উঁচুনিচু ঢালু পথ পাড়ি দিয়ে আলোক শোভাযাত্রা করে করলেন হাজারো খৃষ্ট ভক্ত। মা মারিয়ার আশীর্বাদপ্রাপ্ত শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ‘বারোমারি সাধু লিওর খ্রিষ্টধর্মপল্লি’ তে ছিলো এ বছরের আয়োজন।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সকাল থেকে শুরু হয় ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব। দুই দিনব্যাপী এই তীর্থোৎসব শেষ হয়েছে গতকাল শুক্রবার জীবন্ত ক্রুশের পথ ও পবিত্র মহাখ্রিষ্টযাগের মধ্যে দিয়ে।
এ উৎসবে শুধু ক্যাথলিক খ্রিষ্টানই নন, অন্য ধর্মাবলম্বীরাও প্রতিবছর অংশ নেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত কেভিন এস র্যান্ডেল।
এসময় জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান ও পুলিশ সুপার (এসপি) আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজক কমিটি জানায়, প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবারে এই তীর্থযাত্রার আয়োজন করা হয়। প্রধান পৌরহিত্যকারী ন্যুনসিওকে বরণ, তীর্থের জুবিলী উদজাপন, পুর্নমিলন সংস্কার, পবিত্র খিষ্টযাগ, জপমালার প্রার্থন, আলোক শোভাযাত্রা, সাক্রান্তের আরাধনা, নিরাময় অনুষ্ঠান, ব্যক্তিগত প্রার্থনা ও নিশি জাগরণের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষ হয়। শুক্রবার সকাল আটটায় জীবন্ত ক্রুশের পথ অতিক্রম এবং সকাল ১০টায় মহাখ্রিষ্টযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের তীর্থোৎসব।
১৯৪২ সালে ৪২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় বারোমারি সাধু লিওর ধর্মপল্লি। ১৯৯৮ সালে প্রয়াত বিশপ ফ্রান্সিস এ গোমেজ স্থানটিকে ‘ফাতেমা রানীর তীর্থস্থান’ হিসেবে ঘোষণা করেন। তখন থেকেই প্রতিবছর আয়োজিত হয়ে আসছে এই ধর্মীয় উৎসব। এ বছর প্রায় ৩০-৪০ হাজার দেশি-বিদেশি রোমান ক্যাথলিক তীর্থযাত্রী অংশ নিয়েছেন উৎসবে। সার্বিকভাবে উৎসব এলাকা ছিল আলো, প্রার্থনা ও শান্তির আবহে মোড়ানো।
রংপুর থেকে আসা তীর্থযাত্রী রিপন আরেং বলেন, “সবাই যখন মোমবাতি প্রজ্বলন করে প্রার্থনা করতে করতে পাহাড়ি আকাঁবাঁকা পথ অতিক্রম করছিলেন, তখন পাহাড় আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছিল। তীর্থে আমরা মা মারিয়ার কাছে প্রার্থনা করতে এসেছি।”
চট্টগ্রাম থেকে আসা রীতা নকরেক বলেন, “পুত্রবধূর সন্তান হচ্ছিল না। গতবার মানত করার পর এবার নাতী পেয়েছি। তাই এবার নাতীকে নিয়ে আবার এসেছি।”
গাজীপুর থেকে পরিবারের সঙ্গে আসা শিক্ষার্থী ঝর্ণা আরেং বলেন, “মারিয়ার কাছে এলে মনে একধরনের শান্তি পাই। আমরা প্রার্থনা করি যেন জীবনের দুঃখ-কষ্ট দূর হয়। প্রতিবছর এই সময়টার অপেক্ষায় থাকি।”
শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “আমরা এই তীর্থযাত্রাকে নিরাপদ ও ঝুঁকি মুক্ত রাখতে তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রেখেছি। পাঁচ শতাধিক পুলিশ পোশাকে এবং সাদা পোশাকে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও র্যাব, বিজিবি, এপিবিএন ও সেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। যে কোন ঝুঁকি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত আছি।”
শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, “উৎসবটি দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ব্যবস্থাপনায়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন দীর্ঘ ১৫ দিন ধরে সহযোগীতা করে আসছে। এবারের তীর্থযাত্রায় সারাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের উৎসব পালন করেছে।”
ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের বিশপ পনেন পল কুবি সিএসসি বলেন, “এ উৎসবের মাধ্যমে বিশ্ব মানবতার কল্যাণে প্রার্থনা করা হয়েছে। ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ তীর্থে দেশ-বিদেশের হাজারো মানুষ সমবেত হয়েছেন। তাঁরা দুই দিনব্যাপী তীর্থে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। মা ফাতেমা রানীর কাছে দেশ ও মানবজাতির কল্যাণে প্রার্থনা শেষে যার যার বাড়ি ফিরে যাবেন।”
ঢাকা/তারিকুল/এস