Samakal:
2025-05-01@09:56:07 GMT

ডিজিটাল বিপর্যয়

Published: 17th, February 2025 GMT

ডিজিটাল বিপর্যয়

প্রযুক্তির উৎকর্ষে জীবন যেমন সহজ হয়েছে, তেমনি বেড়েছে এর অপব্যবহারজনিত বিপর্যয়। বিশেষত শিশু-কিশোরদের মধ্যে সামাজিক মাধ্যম, অনলাইন গেমিং এবং ভুয়া তথ্য-গুজবের প্রভাব ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক বেশ কিছু ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, কীভাবে অনিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে তারা বিপদে পড়ছে।

সম্প্রতি ১১ বছরের সুবার করুণ গল্প সমাজকে নাড়া দিয়েছে। মায়ের ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসে সে টিকটকের মাধ্যমে এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং নওগাঁয় পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করলেও, এ ঘটনা আমাদের সামনে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে ধরেছে– শিশুদের হাতে স্মার্টফোন তুলে দেওয়ার আগে অভিভাবকরা কি ডিজিটাল বিপদের ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন?
গাজীপুরের ১৪ বছরের এক কিশোরী ফেসবুকে এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচিত হয়ে গোপনে পালিয়ে যায়। পরে জানা যায়, সে মেসেঞ্জারে দীর্ঘদিন তার সঙ্গে কথা বলেছে এবং ভুল ধারণায় পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পুলিশ উদ্ধার করলেও, এর ফলে তার পরিবার ও মানসিক স্বাস্থ্যের চরম ক্ষতি হয়েছে।

পাবজি, ফ্রি ফায়ারের মতো গেমের প্রতি আসক্তি শিশুদের জীবন কেড়ে নিচ্ছে। সম্প্রতি কক্সবাজারের এক কিশোর গেমের জন্য টাকা না পেয়ে আত্মহত্যা করেছে। এটি আমাদের জন্য এক বড় সতর্কবার্তা– ডিজিটাল মাধ্যমের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরশীলতা শিশুদের বাস্তব জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে। অনেক কিশোর-কিশোরী ভাইরাল হওয়ার আশায় বিপজ্জনক ভিডিও বানাচ্ছে। একসময় ব্লু হোয়েল গেমের কারণে প্রাণহানি ঘটেছিল; এখন টিকটকের বিভিন্ন ‘চ্যালেঞ্জ’ বা ‘স্টান্ট’ সেই একই ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।
অনেক অভিভাবক জানেনই না, তাদের সন্তান অনলাইনে কী করছে। ব্যস্ততার অজুহাতে শিশুদের হাতে মোবাইল ফোন তুলে দিয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া সমস্যার মূল কারণগুলোর একটি। স্কুল-কলেজে ডিজিটাল নিরাপত্তা নিয়ে কার্যকর শিক্ষা নেই। শিক্ষার্থীরা যখন ভুল পথে যায়, অনেক শিক্ষক তা এড়িয়ে যান বা নজর দিতে পারেন না। এর মূল কারণ, অনেক শিক্ষক শিক্ষার্থীদের তুলনায় প্রযুক্তিগতভাবে পিছিয়ে এবং অনেকে এখনও আধুনিক ডিভাইস ব্যবহারে অভ্যস্ত নন।

টিভি, ইউটিউব, টিকটক বা ফেসবুকে যে কোনো ধরনের অশ্লীল, সহিংস ও বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট অবাধে ছড়িয়ে পড়ছে, যা শিশুদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা থাকলেও তা কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয় না। ফলে অপরাধীরা সহজেই পার পেয়ে যায়। তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের ফলে সংবাদ সহজলভ্য হলেও ভুয়া খবর ও গুজব ছড়ানোর ঘটনা বেড়ে গেছে।
শিশুদের ‘সঠিক তথ্য যাচাই করা’ শেখাতে হবে। তারা যেন বুঝতে পারে, কোনো তথ্য শেয়ার করার আগে সেটির সত্যতা নিশ্চিত করা জরুরি। শিশুদের জন্য বই পড়া, আবৃত্তি, সংগীত, বিতর্ক, নাটক ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ তৈরি করতে হবে।

শিক্ষকদের ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারে দক্ষ করে তুলতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করুন, যাতে তারা প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতন হন এবং শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা দিতে পারেন। পাশাপাশি অনলাইন নিরাপত্তা ও সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে তাদের ক্ষমতায়ন করা জরুরি, যাতে প্রয়োজন হলে তারা কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারেন।
সুবার ঘটনা এবং সাম্প্রতিক অন্যান্য বিষয়ের আলোকে এটি স্পষ্ট– প্রযুক্তির অপব্যবহার, ভুয়া তথ্য এবং সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের উচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা, মিডিয়া শিক্ষার অন্তর্ভুক্তি, প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহার নিশ্চিত এবং সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন করা। পাশাপাশি পরিবার ও সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে, যাতে শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশে প্রযুক্তি বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।
রাষ্ট্র, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যমের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব। অন্যথায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা এক গভীর সংকটের বীজ বপন করে যাব।

রহমান মৃধা: সুইডেনপ্রবাসী
Rahman.

Mridha@gmail.com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবহ র র জন য আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।  

প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।  কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।

মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।

নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ