প্রযুক্তির উৎকর্ষে জীবন যেমন সহজ হয়েছে, তেমনি বেড়েছে এর অপব্যবহারজনিত বিপর্যয়। বিশেষত শিশু-কিশোরদের মধ্যে সামাজিক মাধ্যম, অনলাইন গেমিং এবং ভুয়া তথ্য-গুজবের প্রভাব ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক বেশ কিছু ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, কীভাবে অনিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে তারা বিপদে পড়ছে।
সম্প্রতি ১১ বছরের সুবার করুণ গল্প সমাজকে নাড়া দিয়েছে। মায়ের ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসে সে টিকটকের মাধ্যমে এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং নওগাঁয় পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করলেও, এ ঘটনা আমাদের সামনে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে ধরেছে– শিশুদের হাতে স্মার্টফোন তুলে দেওয়ার আগে অভিভাবকরা কি ডিজিটাল বিপদের ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন?
গাজীপুরের ১৪ বছরের এক কিশোরী ফেসবুকে এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচিত হয়ে গোপনে পালিয়ে যায়। পরে জানা যায়, সে মেসেঞ্জারে দীর্ঘদিন তার সঙ্গে কথা বলেছে এবং ভুল ধারণায় পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পুলিশ উদ্ধার করলেও, এর ফলে তার পরিবার ও মানসিক স্বাস্থ্যের চরম ক্ষতি হয়েছে।
পাবজি, ফ্রি ফায়ারের মতো গেমের প্রতি আসক্তি শিশুদের জীবন কেড়ে নিচ্ছে। সম্প্রতি কক্সবাজারের এক কিশোর গেমের জন্য টাকা না পেয়ে আত্মহত্যা করেছে। এটি আমাদের জন্য এক বড় সতর্কবার্তা– ডিজিটাল মাধ্যমের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরশীলতা শিশুদের বাস্তব জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে। অনেক কিশোর-কিশোরী ভাইরাল হওয়ার আশায় বিপজ্জনক ভিডিও বানাচ্ছে। একসময় ব্লু হোয়েল গেমের কারণে প্রাণহানি ঘটেছিল; এখন টিকটকের বিভিন্ন ‘চ্যালেঞ্জ’ বা ‘স্টান্ট’ সেই একই ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।
অনেক অভিভাবক জানেনই না, তাদের সন্তান অনলাইনে কী করছে। ব্যস্ততার অজুহাতে শিশুদের হাতে মোবাইল ফোন তুলে দিয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া সমস্যার মূল কারণগুলোর একটি। স্কুল-কলেজে ডিজিটাল নিরাপত্তা নিয়ে কার্যকর শিক্ষা নেই। শিক্ষার্থীরা যখন ভুল পথে যায়, অনেক শিক্ষক তা এড়িয়ে যান বা নজর দিতে পারেন না। এর মূল কারণ, অনেক শিক্ষক শিক্ষার্থীদের তুলনায় প্রযুক্তিগতভাবে পিছিয়ে এবং অনেকে এখনও আধুনিক ডিভাইস ব্যবহারে অভ্যস্ত নন।
টিভি, ইউটিউব, টিকটক বা ফেসবুকে যে কোনো ধরনের অশ্লীল, সহিংস ও বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট অবাধে ছড়িয়ে পড়ছে, যা শিশুদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা থাকলেও তা কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয় না। ফলে অপরাধীরা সহজেই পার পেয়ে যায়। তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের ফলে সংবাদ সহজলভ্য হলেও ভুয়া খবর ও গুজব ছড়ানোর ঘটনা বেড়ে গেছে।
শিশুদের ‘সঠিক তথ্য যাচাই করা’ শেখাতে হবে। তারা যেন বুঝতে পারে, কোনো তথ্য শেয়ার করার আগে সেটির সত্যতা নিশ্চিত করা জরুরি। শিশুদের জন্য বই পড়া, আবৃত্তি, সংগীত, বিতর্ক, নাটক ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ তৈরি করতে হবে।
শিক্ষকদের ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারে দক্ষ করে তুলতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করুন, যাতে তারা প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতন হন এবং শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা দিতে পারেন। পাশাপাশি অনলাইন নিরাপত্তা ও সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে তাদের ক্ষমতায়ন করা জরুরি, যাতে প্রয়োজন হলে তারা কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারেন।
সুবার ঘটনা এবং সাম্প্রতিক অন্যান্য বিষয়ের আলোকে এটি স্পষ্ট– প্রযুক্তির অপব্যবহার, ভুয়া তথ্য এবং সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের উচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা, মিডিয়া শিক্ষার অন্তর্ভুক্তি, প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহার নিশ্চিত এবং সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন করা। পাশাপাশি পরিবার ও সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে, যাতে শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশে প্রযুক্তি বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।
রাষ্ট্র, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যমের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব। অন্যথায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা এক গভীর সংকটের বীজ বপন করে যাব।
রহমান মৃধা: সুইডেনপ্রবাসী
Rahman.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবহ র র জন য আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে ৪টি আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন যারা
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের মধ্যে চারটি আসনে বিএনপির দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করেছে বিএনপির হাইকমান্ড। শুধু নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি।
সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসময় বিএনপির জাতীয় স্থানীয় কমিটির একাধিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী তালিকায়, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভূঁইয়া, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে নজরুল ইসলাম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ-৩ আজহরুল ইসলাম মান্নান এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ মাসুদুজ্জামান মাসুদ ধানের শীষ প্রতীকের সম্ভাব্য প্রার্থী।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে (সদর-বন্দর) মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন তিনবারের সংসদ সদস্য আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, সাবেক সহসভাপতি আতাউর রহমান মুকুল, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আব্দুস সবুর খান সেন্টু, বর্তমান সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু এবং বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ী আবু জাফর আহমেদ বাবুল।
নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনটি এখনো ফাঁকা রেখেছে দলটি। ধারণা করা হচ্ছে এ আসনটিতে গতবারের মতো জোটের প্রার্থী ছাড় পাবেন। তবে এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও ব্যবসায়ী শাহ্ আলম, জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজিব, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী ভূঁইয়া, সদ্য সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীও রয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ-৩ (সিদ্ধিরগঞ্জ-সোনারগাঁ) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম ও যুব উন্নয়নের সাবেক মহাপরিচালক এসএম ওলিউর রহমান আপেল।
নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খাঁন আঙ্গুর ও তার ভাতিজা বিএনপির সহঅর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন।
নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জে) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান মনির, মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন।
এদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, “দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২৩৮ আসনে আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করছি। আমাদের সঙ্গে যারা আন্দোলন করেছেন, তারা যে সমস্ত আসনে আগ্রহী সে সমস্ত আসনে প্রার্থী দেই। আমরা আলোচনার মাধ্যমে প্রার্থী ঘোষণা করবো। এটা আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা, এর মধ্যেই পরিবর্তন হতে পারে।
বিশেষ করে, আমাদের শরিক দলগুলোর সাথে আলোচনা এবং স্থায়ী কমিটি যদি মনে করে কোনো আসনে পরিবর্তন আনবে, সেক্ষেত্রে নিয়ম মেনে পরিবর্তন আনবেন।”