বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক, কথা সাহিত্যিক ও গবেষক সরোজ মেহেদী। সম্প্রতি নাম লিখিয়েছেন রাজনীতিতেও। সময়ের জনপ্রিয় রাজনৈতিক সংগঠন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য তিনি। জুলাই বিপ্লবের প্রেক্ষিতে একটি অন্তর্ভূক্তিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দেশ পুনর্গঠনের লড়াইয়েও থাকছেন তিনি।

সরোজ মেহেদীর প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘মায়াজাল’। প্রকাশিত হয়েছে চলতি বইমেলায়। জীবনের নানা ঘটনা, দুঃখ-গাঁথা। হাসি-কান্না, অনিয়ম-অনাচারের বিভিন্ন গল্পে। কখনো মানবিক বোধে, কখনো ব্যাঙ্গাত্মক উপায়ে গল্পে গল্পে তুলে আনা হয়েছে মানুষের এসব নৈমিত্তিক জীবন। গল্পে যেমন প্রচলিত শৃঙ্খল ভেঙে দ্রোহের ডাক রয়েছে; তেমনি রয়েছে নতুন দিনের আলোর রেখা। গল্পের শব্দ চয়ন আর বাক্য গঠনের সুকৌশল পাঠকের কাছে বইটি সুখপাঠ্য করে তুলেছে। গল্পে ব্যবহৃত শব্দ যেমন সহজবোধ্য বাক্য তেমন মেদহীন।

গল্পগুলোতে তুলে আনা হয়েছে আমাদের যাপিত জীবন। প্রেম-ভালোবাসা, স্নেহ-মমতা, অনাচার-অবিচার নানাভাবে উঠে এসেছে বইয়ের গল্পগুলোতে। লেখক নিজে যেভাবে তার চারপাশ দেখেছেন, অনুভব করেছেন তাই সহজবোধ্য করে তুলে এনেছেন গল্পোচ্ছলে।

বিনোদন যোগানোর পাশাপাশি পাঠককে মাঝে মাঝে টেনে নেওয়া হয়েছে ইতিহাসের কাছে। গল্পের মাদকতায় আটকে যাবেন যেকোনো পাঠক। বইটি একবার পড়া শুরু করলে শেষ না করে উঠে যাওয়া যেন দায়! এমনই এক নেশায় আটকে যাবেন পাঠক।

বইটিতে মোট ১০টি গল্প রয়েছে। মায়াজাল তার একটি। এই মায়াজালেই হয়েছে বইয়ের নাম। ‘মায়াজাল’ গল্পে যে বৃদ্ধ রহমান সাহেবের গল্প বলা হয়েছে সেই রহমান সাহেবকে আমরা সবাই চিনি। আমরা সবাই আসলে নিজের অজান্তে একদিন রহমান সাহেবে পরিণত হই। ষাটোর্দ্ধ রহমান সাহেব যেন মানতেই পারছেন না একদিন তাকে এই মায়াময় ধরাধাম ত্যাগ করতে হবে। দেখবেন না আর পাখির কলতান! উপভোগ করবেন না শীত কিংবা গ্রীষ্ম! ছোট্টবেলার দূরন্তপনা আর নানা স্মৃতি তাকে ব্যথিত-মথিত করে। পুরনো চশমাটা ঝাপসা হয়ে ওঠে একসময়।

এদিকে ‘অপ্সরী’ গল্পে ফুটে উঠেছে এক অফুটন্ত প্রেমময় রোমাঞ্চকর গল্প। অপ্সরী লাল কালির চিঠিতে লিখছে- ‘যে ভালোবাসা বোঝে না তাকে ভুলে গিয়ে বেঁচে যাক পৃথিবীর তাবৎ প্রেমিকারা।’ গল্পটি পড়ে মনে হয়েছে এখানে এসে লেখক তার সুনিপুণ লেখার বুননে প্রেমকে মহিমান্বিত করেছেন।

‘স্পর্শ’ গল্পটিতে ফুটে উঠেছে লিটনের পরিবারের অভাব-অনটন আর মা-মাটির টান। পেটের টানে বাড়তি আয়ের জন্য গ্রাম ছেড়ে যেতে চায় লিটন। পারে না। পরিবার পিছু টানে। দেখানো হয়েছে নদী ভাঙ্গন কবলিত মানুষের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র। সুজাতলি গ্রামের সেই মাশুকের নদীতে মৃত্যুর ঘটনায় স্তব্ধ হয় পুরো গ্রাম।
 
এমনই দুর্দান্ত সব গল্পে সমৃদ্ধ মায়াজাল বইটি। গ্রন্থের প্রতিটি গল্প যাপিত জীবনের খুব চেনা এক জীবনের সাথে জুড়ে দেয় আমাদের।
সৃজন থেকে প্রকাশিত বইটি বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের ২৮৫নং স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। বইটি কেনা যাবে ১৬৯ টাকায়। 

এছাড়া রকমারিসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বইটি পাওয়া যাচ্ছে। চমৎকার সামাজিক ও রাজনৈতিক গল্প নির্ভর গ্রন্থটি বইপড়ুয়ারা তাদের বইয়ের তালিকায় রাখতে পারেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বই বইম ল রহম ন স হ ব

এছাড়াও পড়ুন:

মাঠে ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে সুনামগঞ্জে ২, নেত্রকোনায় ১ কৃষকের মৃত্যু

সুনামগঞ্জের হাওরে ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে দিরাই উপজেলায় আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রিংকু দাস এবং দুপুরে জামালগঞ্জ উপজেলায় মানিক মিয়া নামের আরেক কৃষক মারা যান। নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে বাড়ির পাশের খেতে ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে গোলাপ মিয়া (৩০) নামের আরও এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দিরাই উপজেলায় থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল। বিকেলে গ্রামের পাশের উদগল হাওরে ধান কাটছিলেন কৃষকেরা। ধান কাটায় অন্যদের সঙ্গে রিংকু দাসও (২৪) ছিলেন। তখন বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলে বজ্রপাতে আহত হন রিংকু দাস। স্থানীয় কৃষকেরা তাঁকে উদ্ধার করে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। রিংকু দাস উপজেলার গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা।

দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রাজ্জাক বজ্রপাতে রিংকু দাসের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।

জামালগঞ্জ উপজেলায় হাওরে ধান কাটতে গিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে বজ্রপাতে মানিক মিয়া (৩৫) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়। মানিক মিয়া জামালগঞ্জ উপজলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা।

আরও পড়ুনবজ্রপাতে ২৪ ঘণ্টায় ১৩ জনের মৃত্যু ২৮ এপ্রিল ২০২৫

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানান, উপজেলার পাকনার হাওরে সকালে ধান কাটতে যান মানিক মিয়া। দুপুরে বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হচ্ছিল। বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। পরে হাওরে থাকা অন্য কৃষকেরা তাঁর লাশ বাড়িতে নিয়ে আসেন। জামালগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে খেতে ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যাওয়া গোলাপ মিয়া ওই গ্রামের পাইক মিয়ার ছেলে।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা ও থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে বাড়ির সামনের খেতে বোরো ধান কাটছিলেন গোলাপ মিয়া। এ সময় সঙ্গে তাঁর বাবা, ভাইসহ পরিবারের অন্য লোকজনও ছিলেন। দুপুর দুইটার দিকে হঠাৎ করে বৃষ্টি শুরু হয়। একপর্যায়ে গোলাপ মিয়ার পাশেই বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে চিৎকার দিয়ে দৌড়ে গিয়ে জমির একপাশে গিয়ে পড়েন গোলাপ। সঙ্গে থাকা পরিবারের লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে দ্রুত মোহনগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। তবে পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর চিকিৎসক গোলাপকে মৃত ঘোষণা করেন।

মোহনগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শফিকুজ্জামান বলেন, বজ্রপাতের ঘটনায় মৃত্যু হওয়ায় এ বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ নেই। তাই তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।

আরও পড়ুনবজ্রপাত কমলেও বছরে মৃত্যু দেড় শ মানুষের০৫ জুন ২০২১

সম্পর্কিত নিবন্ধ