মায়াজাল: হাসি-কান্না, অনিয়ম-অনাচারের গল্প
Published: 18th, February 2025 GMT
বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক, কথা সাহিত্যিক ও গবেষক সরোজ মেহেদী। সম্প্রতি নাম লিখিয়েছেন রাজনীতিতেও। সময়ের জনপ্রিয় রাজনৈতিক সংগঠন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য তিনি। জুলাই বিপ্লবের প্রেক্ষিতে একটি অন্তর্ভূক্তিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দেশ পুনর্গঠনের লড়াইয়েও থাকছেন তিনি।
সরোজ মেহেদীর প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘মায়াজাল’। প্রকাশিত হয়েছে চলতি বইমেলায়। জীবনের নানা ঘটনা, দুঃখ-গাঁথা। হাসি-কান্না, অনিয়ম-অনাচারের বিভিন্ন গল্পে। কখনো মানবিক বোধে, কখনো ব্যাঙ্গাত্মক উপায়ে গল্পে গল্পে তুলে আনা হয়েছে মানুষের এসব নৈমিত্তিক জীবন। গল্পে যেমন প্রচলিত শৃঙ্খল ভেঙে দ্রোহের ডাক রয়েছে; তেমনি রয়েছে নতুন দিনের আলোর রেখা। গল্পের শব্দ চয়ন আর বাক্য গঠনের সুকৌশল পাঠকের কাছে বইটি সুখপাঠ্য করে তুলেছে। গল্পে ব্যবহৃত শব্দ যেমন সহজবোধ্য বাক্য তেমন মেদহীন।
গল্পগুলোতে তুলে আনা হয়েছে আমাদের যাপিত জীবন। প্রেম-ভালোবাসা, স্নেহ-মমতা, অনাচার-অবিচার নানাভাবে উঠে এসেছে বইয়ের গল্পগুলোতে। লেখক নিজে যেভাবে তার চারপাশ দেখেছেন, অনুভব করেছেন তাই সহজবোধ্য করে তুলে এনেছেন গল্পোচ্ছলে।
বিনোদন যোগানোর পাশাপাশি পাঠককে মাঝে মাঝে টেনে নেওয়া হয়েছে ইতিহাসের কাছে। গল্পের মাদকতায় আটকে যাবেন যেকোনো পাঠক। বইটি একবার পড়া শুরু করলে শেষ না করে উঠে যাওয়া যেন দায়! এমনই এক নেশায় আটকে যাবেন পাঠক।
বইটিতে মোট ১০টি গল্প রয়েছে। মায়াজাল তার একটি। এই মায়াজালেই হয়েছে বইয়ের নাম। ‘মায়াজাল’ গল্পে যে বৃদ্ধ রহমান সাহেবের গল্প বলা হয়েছে সেই রহমান সাহেবকে আমরা সবাই চিনি। আমরা সবাই আসলে নিজের অজান্তে একদিন রহমান সাহেবে পরিণত হই। ষাটোর্দ্ধ রহমান সাহেব যেন মানতেই পারছেন না একদিন তাকে এই মায়াময় ধরাধাম ত্যাগ করতে হবে। দেখবেন না আর পাখির কলতান! উপভোগ করবেন না শীত কিংবা গ্রীষ্ম! ছোট্টবেলার দূরন্তপনা আর নানা স্মৃতি তাকে ব্যথিত-মথিত করে। পুরনো চশমাটা ঝাপসা হয়ে ওঠে একসময়।
এদিকে ‘অপ্সরী’ গল্পে ফুটে উঠেছে এক অফুটন্ত প্রেমময় রোমাঞ্চকর গল্প। অপ্সরী লাল কালির চিঠিতে লিখছে- ‘যে ভালোবাসা বোঝে না তাকে ভুলে গিয়ে বেঁচে যাক পৃথিবীর তাবৎ প্রেমিকারা।’ গল্পটি পড়ে মনে হয়েছে এখানে এসে লেখক তার সুনিপুণ লেখার বুননে প্রেমকে মহিমান্বিত করেছেন।
‘স্পর্শ’ গল্পটিতে ফুটে উঠেছে লিটনের পরিবারের অভাব-অনটন আর মা-মাটির টান। পেটের টানে বাড়তি আয়ের জন্য গ্রাম ছেড়ে যেতে চায় লিটন। পারে না। পরিবার পিছু টানে। দেখানো হয়েছে নদী ভাঙ্গন কবলিত মানুষের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র। সুজাতলি গ্রামের সেই মাশুকের নদীতে মৃত্যুর ঘটনায় স্তব্ধ হয় পুরো গ্রাম।
এমনই দুর্দান্ত সব গল্পে সমৃদ্ধ মায়াজাল বইটি। গ্রন্থের প্রতিটি গল্প যাপিত জীবনের খুব চেনা এক জীবনের সাথে জুড়ে দেয় আমাদের।
সৃজন থেকে প্রকাশিত বইটি বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের ২৮৫নং স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। বইটি কেনা যাবে ১৬৯ টাকায়।
এছাড়া রকমারিসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বইটি পাওয়া যাচ্ছে। চমৎকার সামাজিক ও রাজনৈতিক গল্প নির্ভর গ্রন্থটি বইপড়ুয়ারা তাদের বইয়ের তালিকায় রাখতে পারেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বই বইম ল রহম ন স হ ব
এছাড়াও পড়ুন:
বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস
রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।
‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।
এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।
সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।
বর্ষার ফুলের উৎসব
বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!
রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।
এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।