বিএনপি নেতা কামাল বেপরারীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ
Published: 20th, February 2025 GMT
ফতুল্লা থানার কাশীপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি কামাল বেপারীর বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। চাঁদা না দেয়ায় জমির মালিক মনির হোসেনকে অকথ্যভাষায় গালাগালসহ হত্যার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মনির বৃহস্পতিবার ফতুল্লা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগসূত্রে জানা যায়, মুসলিমনগর আদর্শপাড়া এলাকার মনির হোসেন দুই দশক আগে নরসিংপুর এলাকায়সাড়ে ৩ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সেই জমিতে বাড়ি করার উদ্দেশ্যে ইট-বালুনিয়ে যান।
কিন্তু ট্রাক থেকে ইট নামানোর সময় কামাল বেপারীর নেতৃত্বে তার ছেলে হৃদয়, রাসেল(২২) সহ ৫/৬ জন সন্ত্রাসী ট্রাক থেকে ইট নামাতে বাধা দেয়। এবং এক লাখ টাকা চাঁদা দাবিকরে। মনির হোসেন চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে কামাল বেপারীসহ অজ্ঞাত নামা লোকজন তাকেঅকথ্য গালিগালাজ করে।
তখন বাধা দিলে কামাল বেপারী তাকে হত্যার হুমকি দেয়।স্থানীয়রানাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ৫ আগস্টের পর থেকেই কামাল বেপারী ওরফে গোয়াইল্লাকামাল বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তার ছেলে, ভাগ্নে, ভাতিজাদের নিয়ে এলাকায় ব্যাপকচাঁদাবাজি করছেন।
শ্যামল নামে এক যুবলীগ নেতার ফার্নিচারের দোকানে লুটপাটও করেছিল। এমন কি কাশীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মঈনুল হোসেন রতনের মামার জমির ঝামেলা মীমাংসা করারকথা বলে জমির সামনে দেয়াল তুলে জমি দখলের চেষ্টা করে।
এছাড়া বাড়ির সামনে অফিসনির্মাণের জন্য স্থানীয় কয়েকজনের কাছ থেকে টাকাও নিয়েছে সে। বিএনপিনেতাকর্মীদের দাবি, বিগত সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে না থাকলেও শুধু মাত্র লবিং করে পদপাওয়া কামাল বেপারী এখন ‘ধরাকে স্বরা জ্ঞান’ করছেন।
দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাইনাসকরে নিজ স্বজনদের নিয়ে এলাকায় ব্যাপক হারে চাঁদাবাজি-দখলবাজিতে মেতে উঠেছে।
এমনকি স্থানীয়আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে তাদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। তার বিরুদ্ধেদলীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা না নিয়ে দলের বদনাম হবে।
এব্যাপারে ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু জানান, দলের নাম বা পদব্যবহার করে কেউ চাঁদাবাজি, দখলবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোরব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনাদিয়েছেন। যতো বড় নেতাই হোক না কেনো- অন্যায় করলে ছাড় দেয়া হবে না।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ব এনপ ন র য়ণগঞ জ ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
সরকার ও দল কেউ দায় এড়াতে পারে না
রাজনৈতিক দল—ডান–বাম ও মধ্যপন্থী যা–ই হোক না কেন, সেটা পরিচালিত হয় নির্দিষ্ট নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে। যাঁরা নিজেদের রাজনৈতিক দলের অনুসারী বলে দাবি করেন, তাঁদের সেই নীতি–আদর্শও ধারণ করতে হয়। কিন্তু সেই রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে যখন সরাসরি চাঁদাবাজি, দখলবাজির অভিযোগ আসে, তখন তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় ছাপিয়ে চাঁদাবাজ-দখলবাজ পরিচয়ই মুখ্য হয়ে ওঠে।
সম্প্রতি রাজশাহী মহানগরের চাঁদাবাজদের যে তালিকা তৈরি হয়েছে, তাতে রাজশাহী মহানগর বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের পরিচয়ধারী ১২৩ জন ‘চাঁদাবাজের’ নাম রয়েছে। এই তালিকায় বিএনপি, ছাত্রদল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, ক্যাডার, সমর্থক থেকে শুরু করে ৪৪ জনের নাম–পরিচয় আছে। একইভাবে পতিত আওয়ামী লীগের ২৫ জন এবং জামায়াতের ৬ জনের নাম আছে।
তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের থানাভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা ও রাজনৈতিক পরিচিতি উল্লেখ রয়েছে। কিছু ব্যক্তির মোবাইল নম্বরও আছে। এ ছাড়া কোন খাত থেকে চাঁদা তোলেন এবং বর্তমানে সক্রিয় কি না, সেই তথ্যও তুলে ধরা হয়েছে এতে। তালিকায় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) ১২টি থানার মধ্যে ১০ থানা এলাকার তথ্য রয়েছে। তালিকাটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে।
কেবল রাজশাহী নয়, দেশের প্রতিটি জেলায় চাঁদাবাজি, দখলবাজি মহামারি আকার নিয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের আগে এসব ঘটনায় পতিত সরকারি দলের নেতা–কর্মীদের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত। গণ–অভ্যুত্থানের পর সেই দলটির নেতা–কর্মীরা হয় আত্মগোপনে, নয় কারাগারে। তাহলে এসব চাঁদাবাজির ঘটনা কে বা কারা ঘটাচ্ছেন? একশ্রেণির পেশাদার চাঁদাবাজ আছে, যারা সব সরকারের আমলেই তাদের পেশাদারত্ব দেখিয়ে থাকে। রাজনৈতিক মামলার দোহাই দিয়ে আগের সরকারের আমলে কারাগারে আটক থাকা বেশ কিছু শীর্ষ সন্ত্রাসীও জামিনে বেরিয়ে এসে নতুন করে অপকর্ম শুরু করেছেন।
আগে ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে এসব রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায় থাকা চাঁদাবাজেরা রং বদল করে ক্ষমতাসীন দলে ভিড়ে যেতেন। তাঁরা নিজেদের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য ভাবতে পছন্দ করতেন। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলটি এতটাই বিধ্বস্ত যে তাঁদের নেতা–কর্মীদের পক্ষে পোশাক বদল করে মাঠে থাকা অসম্ভব। ফলে তাঁদের শূন্যস্থান পূরণ করেছেন ভবিষ্যতে ক্ষমতাপ্রত্যাশী দল কিংবা অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে প্রশ্রয় পাওয়া দলের নেতা–কর্মীরা।
যেসব রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীদের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাদের কেউ কেউ প্রতিবাদ জানিয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন দল থেকে স্থানীয় নেতা–কর্মীদের অপকর্মের কারণে বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটছে। এ ক্ষেত্রে ‘বড় দল’ এগিয়ে থাকলেও ছোটরাও খুব পিছিয়ে নেই। রাজশাহীর তালিকায় তিনটি দলের নেতা–কর্মীদের নাম ছাপা হয়েছে। যেসব দলের নেতা–কর্মীদের নাম ছাপা হয়নি, তাঁরাও যে চাঁদাবাজি, দখলবাজি থেকে মুক্ত নন, সেটা হলফ করে বলা যায়। অতি সম্প্রতি একটি ছাত্রসংগঠনের নেতারা গুলশানের একজন সাবেক সংসদ সদস্যের বাড়িতে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে বমাল ধরা পড়েন। এসব ঘটনা কোনোভাবে নতুন বন্দোবস্তের নমুনা নয়। জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করতে না পারুন, অন্তত চাঁদাবাজির মতো অপরাধ থেকে সংগঠনের নেতা–কর্মীদের বিরত রাখুন।
কেবল রাজশাহী নয়, দেশের অন্যান্য স্থানে চাঁদাবাজির তালিকায় যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে সরকার আইনি ব্যবস্থা নেবে আশা করি। আর রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত অঘটন ঘটলে বহিষ্কারের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে অঘটনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। বিলম্বে হলেও তাদের বোধোদয় হোক।