প্রভাতফেরীর মিছিল যাবে, ছড়াও ফুলের বন্যা
Published: 20th, February 2025 GMT
‘ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ/ দুপুর বেলার অক্ত/ বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায়?/ বরকতের রক্ত।/ হাজার যুগের সূর্যতাপে/ জ্বলবে, এমন লাল যে,/ সেই লোহিতেই লাল হয়েছে/ কৃষ্ণচূড়ার ডাল যে!/ প্রভাতফেরীর মিছিল যাবে/ ছড়াও ফুলের বন্যা,/ বিষাদগীতি গাইছে পথে/ তিতুমীরের কন্যা।’
কবি আল মাহমুদের লেখা এ কবিতার চরণ অনুসরণ করে দেশের সব রাজপথ গিয়ে মিশে যাবে আজ শহীদ মিনারে।
পলাশ আর শিমুল ফোটা ফাগুনের মিষ্টিমাখা হালকা শীতে কোকিলডাকা সূর্যোদয়ে দেশের মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে বীর সন্তানদের। বুকের তাজা খুন ঢেলে মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার নিশ্চিত করে গেছেন সেই শহীদরা। নগ্ন পায়ে শহীদ মিনারমুখী লাখো মানুষের কণ্ঠে থাকবে বিষাদমাখা চিরচেনা সেই গান, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি।’ কি শিশু, কি বুড়ো– দল-মত নির্বিশেষে সবাই হাজির হবেন ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। শ্রদ্ধা-ভালোবাসা আর মমতার ফুলে ভরে উঠবে বাঙালির শোক আর অহংকারের প্রতীক শহীদ মিনার।
চির প্রেরণার অমর একুশের ৭৩ বছর পূর্তি হচ্ছে আজ। ভাই হারানোর বেদনা বুকে ধারণ ধরে বিশ্বজুড়ে বাঙালির আজ যুগপৎ শোক ও গর্বের দিন।
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ফাল্গুনের সোনাঝরা রোদ্দুরে নিজ ভাষায় কথা বলার দাবিতে, মায়ের মুখের ভাষার সম্মান প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে প্রকাশ্য রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন বাংলা মায়ের বীর সন্তানেরা। রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের সেই স্মৃতিবহ মহান শহীদ দিবস আজ। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসও। জাতির জীবনে শোকাবহ, গৌরবোজ্জ্বল, অহংকারে মহিমান্বিত চিরভাস্বর দিন।
পৃথিবীর বুকে ভাষার জন্য রক্ত দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে একমাত্র বাঙালি জাতি। একুশে ফেব্রুয়ারি তাই বাঙালির চেতনার প্রতীক। এই শহীদদের ঠাঁই প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ের মর্মমূলে। পরম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় উচ্চারিত হয় ভাষাশহীদদের একেকটি নাম। তাদের স্মরণে সারাদেশে, অগণিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং বিদেশে যেখানে রয়েছে বাঙালি, সেখানে গড়ে ওঠে শহীদ মিনার। অমর একুশে তাই আত্মত্যাগের অহংকারে ভাস্বর মহান একটি দিন; জেগে ওঠার প্রেরণা। দেশমাতৃকার প্রয়োজনে আত্মোৎসর্গ করার শপথ গ্রহণের দিন।
এ বছর মাতৃভাষা দিবস সারাদেশে এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে পালিত হচ্ছে। গত বছর জুলাই-আগস্টে সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয় তরুণ-যুবারা। তাদের সম্মিলিত আন্দোলনে অভ্যুত্থান এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এই আন্দোলনে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৫৮১ জন নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাণের বিনিময়ে মুক্তবাক, মুক্তচিন্তা ও গণতন্ত্রের পথে দেশকে উত্তরণে অবদান রেখে গেছেন জুলাই শহীদরা। তাদের এই আত্মত্যাগ বায়ান্নর অবিস্মরণীয় ভাষা আন্দোলনের প্রতিবাদী চেতনাকেই ধারণ করে।
এবার দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড.
আয়োজন, কর্মসূচি
রাষ্ট্রীয় আয়োজনে একুশের অনুষ্ঠানমালার সূচনা হবে রাত ১২টা ১ মিনিটে, ঢাকা মেডিকেল কলেজসংলগ্ন একুশের রক্তাক্ত স্মৃতিবিজড়িত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে।
প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর কথা রয়েছে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার। এ ছাড়া উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হবে শ্রদ্ধা।
সারাদেশে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। বাদ আসর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে ভাষাশহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হবে।
শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সকাল সাড়ে ৬টায় উপাচার্য ভবনের সামনে ‘স্মৃতি চিরন্তন’ চত্বর থেকে মৌন মিছিল ও প্রভাতফেরি বের করা হবে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান এতে নেতৃত্ব দেবেন। মৌন মিছিল ও প্রভাতফেরিটি উদয়ন স্কুল হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাবে। পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অংশ নেবেন।
দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে– শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। সকাল সাড়ে ৬টার মধ্যে কালো ব্যাজসহ প্রভাতফেরিতে অংশ নেওয়ার জন্য বলাকা সিনেমা হলের সামনে দলীয় নেতাকর্মীকে জমায়েত হতে বলা হয়েছে। তারা আজিমপুর কবরস্থানে ভাষাশহীদদের মাজার জিয়ারত এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করবেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ২১ ফ ব র য় র র এক শ
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে ঢাকাগামী টিকিটে বাড়তি ভাড়া আদায়, ৩ কাউন্টারকে জরিমানা
রাজশাহীতে ঈদফেরত যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে তিন বাস কাউন্টারকে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় উপস্থিত যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দেওয়া হয়।
শুক্রবার দুপুরে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় রাজশাহী বিআরটিএর পক্ষ থেকে এই অভিযান চালানো হয়। বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আলপনা ইয়াসমিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
অভিযানে দেশ ট্রাভেলস, গ্রামীণ ট্রাভেলস ও ন্যাশনাল ট্রাভেলসের প্রত্যেক কাউন্টারকে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।
জানা গেছে, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি কয়েকজন যাত্রী গোপনে সেনাবাহিনীকে অভিযোগ করেন। পরে কাউন্টার থেকে আদায় করা অতিরিক্ত টাকা তাদের ফেরত দেওয়া হয়েছে।
বিআরটিএর ম্যাজিস্ট্রেট আলপনা ইয়াসমিন বলেন, কথা ছিল ঈদ উপলক্ষে পরিবহন মালিক সমিতি নতুন করে ভাড়া নির্ধারণ করবে। ভাড়া ঈদের আগে ও পরে একইরকম হওয়ার কথা। কিন্তু এই তিনটি গাড়ির কাউন্টারের এসি গাড়ির ভাড়া অতিরিক্ত আদায় করা হয়েছে। ঈদের আগে তাদের এসি গাড়ির ভাড়া ছিল ১ হাজার ১০০ টাকা। কিন্তু ঈদের পরে তা বাড়িয়ে ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা নেওয়া হচ্ছিল। এ অপরাধের জন্য আইনে সর্বোচ্চ জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে ১০ হাজার টাকা। কাউন্টারগুলোকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
এর আগে গত বুধবার হিমাচল ট্রাভেলস ও হানিফ ট্রাভেলস নন এসি ভাড়া বেশি আদায় করেছিল। হানিফ ট্রাভেলসের চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকার ভাড়া ছিল ৮৩০ টাকা। কিন্তু তারা রাজশাহী থেকেই ওই পরিমাণ ভাড়া আদায় করছিল। হিমাচল ট্রাভেলসের কোনো কাউন্টার ছিল না। তারা অন্য বাসের সঙ্গে মিলে যাত্রী পরিবহন করছিল। এই দুটি বাসকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।
শুক্রবার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় সম্পর্কে জানতে চাইলে দেশ ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা বলেন, সারা বছর ডিসকাউন্ট দিয়ে ১ হাজার ১০০ টাকায় যাত্রী পরিবহন করেন। ঈদ উপলক্ষে তারা সেই ডিসকাউন্ট উঠিয়ে দিয়েছেন। সেই কারণেই ভাড়া ১ হাজার ৭০০ টাকা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ম্যাজিস্ট্রেট আলপনা ইয়াসমিন বলেন, তারা মিটিংয়ের সময় এই কথাটা বলেননি। তাই তাদের জরিমানা করা হয়েছে।