‘ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ/ দুপুর বেলার অক্ত/ বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায়?/ বরকতের রক্ত।/ হাজার যুগের সূর্যতাপে/ জ্বলবে, এমন লাল যে,/ সেই লোহিতেই লাল হয়েছে/ কৃষ্ণচূড়ার ডাল যে!/ প্রভাতফেরীর মিছিল যাবে/ ছড়াও ফুলের বন্যা,/ বিষাদগীতি গাইছে পথে/ তিতুমীরের কন্যা।’ 

কবি আল মাহমুদের লেখা এ কবিতার চরণ অনুসরণ করে দেশের সব রাজপথ গিয়ে মিশে যাবে আজ শহীদ মিনারে।
পলাশ আর শিমুল ফোটা ফাগুনের মিষ্টিমাখা হালকা শীতে কোকিলডাকা সূর্যোদয়ে দেশের মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে বীর সন্তানদের। বুকের তাজা খুন ঢেলে মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার নিশ্চিত করে গেছেন সেই শহীদরা। নগ্ন পায়ে শহীদ মিনারমুখী লাখো মানুষের কণ্ঠে থাকবে বিষাদমাখা চিরচেনা সেই গান, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি।’ কি শিশু, কি বুড়ো– দল-মত নির্বিশেষে সবাই হাজির হবেন ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। শ্রদ্ধা-ভালোবাসা আর মমতার ফুলে ভরে উঠবে বাঙালির শোক আর অহংকারের প্রতীক শহীদ মিনার।
চির প্রেরণার অমর একুশের ৭৩ বছর পূর্তি হচ্ছে আজ। ভাই হারানোর বেদনা বুকে ধারণ ধরে বিশ্বজুড়ে বাঙালির আজ যুগপৎ শোক ও গর্বের দিন।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ফাল্গুনের সোনাঝরা রোদ্দুরে নিজ ভাষায় কথা বলার দাবিতে, মায়ের মুখের ভাষার সম্মান প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে প্রকাশ্য রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন বাংলা মায়ের বীর সন্তানেরা। রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের সেই স্মৃতিবহ মহান শহীদ দিবস আজ। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসও। জাতির জীবনে শোকাবহ, গৌরবোজ্জ্বল, অহংকারে মহিমান্বিত চিরভাস্বর দিন।
পৃথিবীর বুকে ভাষার জন্য রক্ত দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে একমাত্র বাঙালি জাতি। একুশে ফেব্রুয়ারি তাই বাঙালির চেতনার প্রতীক। এই শহীদদের ঠাঁই প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ের মর্মমূলে। পরম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় উচ্চারিত হয় ভাষাশহীদদের একেকটি নাম। তাদের স্মরণে সারাদেশে, অগণিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং বিদেশে যেখানে রয়েছে বাঙালি, সেখানে গড়ে ওঠে শহীদ মিনার। অমর একুশে তাই আত্মত্যাগের অহংকারে ভাস্বর মহান একটি দিন; জেগে ওঠার প্রেরণা। দেশমাতৃকার প্রয়োজনে আত্মোৎসর্গ করার শপথ গ্রহণের দিন।

এ বছর মাতৃভাষা দিবস সারাদেশে এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে পালিত হচ্ছে। গত বছর জুলাই-আগস্টে সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয় তরুণ-যুবারা। তাদের সম্মিলিত আন্দোলনে অভ্যুত্থান এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এই আন্দোলনে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৫৮১ জন নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাণের বিনিময়ে মুক্তবাক, মুক্তচিন্তা ও গণতন্ত্রের পথে দেশকে উত্তরণে অবদান রেখে গেছেন জুলাই শহীদরা। তাদের এই আত্মত্যাগ বায়ান্নর অবিস্মরণীয় ভাষা আন্দোলনের প্রতিবাদী চেতনাকেই ধারণ করে।
এবার দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন প্রধান  উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূস। এতে তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দেশ ও দেশের ভাষাগুলোর মর্যাদা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে।

আয়োজন, কর্মসূচি
রাষ্ট্রীয় আয়োজনে একুশের অনুষ্ঠানমালার সূচনা হবে রাত ১২টা ১ মিনিটে, ঢাকা মেডিকেল কলেজসংলগ্ন একুশের রক্তাক্ত স্মৃতিবিজড়িত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে।
প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর কথা রয়েছে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার। এ ছাড়া উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হবে শ্রদ্ধা।
সারাদেশে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। বাদ আসর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে ভাষাশহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হবে।

শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সকাল সাড়ে ৬টায় উপাচার্য ভবনের সামনে ‘স্মৃতি চিরন্তন’ চত্বর থেকে মৌন মিছিল ও প্রভাতফেরি বের করা হবে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান এতে নেতৃত্ব দেবেন। মৌন মিছিল ও প্রভাতফেরিটি উদয়ন স্কুল হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাবে। পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অংশ নেবেন।

দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে– শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। সকাল সাড়ে ৬টার মধ্যে কালো ব্যাজসহ প্রভাতফেরিতে অংশ নেওয়ার জন্য বলাকা সিনেমা হলের সামনে দলীয় নেতাকর্মীকে জমায়েত হতে বলা হয়েছে। তারা আজিমপুর কবরস্থানে ভাষাশহীদদের মাজার জিয়ারত এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করবেন।

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ২১ ফ ব র য় র র এক শ

এছাড়াও পড়ুন:

শ্রম আইনের সংশোধন কবে হবে, তা বলছে না শ্রম মন্ত্রণালয়

শ্রম আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ কবে হবে, সে বিষয়ে আর সময়সীমার কথা বলছে না শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। গত নভেম্বর মাসে এই মন্ত্রণালয় বলেছিল, ২০২৫ সালের মার্চ মাসের মধ্যে এ অধ্যাদেশ হবে। মার্চ শেষে এপ্রিলও শেষ হচ্ছে আজ বুধবার।

সচিবালয়ে আজ ‘মহান মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আইন সংশোধনীর ক্ষেত্রে সময়সীমা থাকার পক্ষে নন তিনি। শ্রমিক–মালিকদের স্বার্থ রক্ষাসহ শিগগিরই তা করা হবে। বিষয়টি এখন কোন প্রক্রিয়ায় আছে, তা বলতে রাজি হননি শ্রম উপদেষ্টা।

শ্রম উপদেষ্টা বলেন, এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’। তিনি আরও বলেন, ‘একসময় স্লোগান ছিল দুনিয়ার মজদুর, এক হও।’ এখন তা বদলে গেছে। এখন হবে ‘দুনিয়ার মালিক-শ্রমিক, এক হও’। এখন ভালো মালিকেরা শ্রমিকদের সন্তানের মতো মনে করেন।

প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে ১০১টি ধারা ও উপধারা সংশোধন হবে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ১০ থেকে ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডির বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

আইএলওর বৈঠকে যোগ দিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে যে দলটি জেনেভা সফর করে, সেখানে শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হুমায়ুন কবীর, যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ হোসেন সরকার ও শ্রম উপদেষ্টার একান্ত সচিব মো. জাহিদুল ইসলাম ছিলেন।

এর আগে গত বছরের ১০ নভেম্বর তৎকালীন শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আইএলওর গভর্নিং বডির বৈঠক থেকে দেশে ফিরে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মার্চের মধ্যে শ্রম আইন সংশোধন হবে। উপদেষ্টা তখন এ–ও বলেছিলেন, আগের সরকারের আইনমন্ত্রীর (আনিসুল হক) নেতৃত্বাধীন দলকে আইএলও পর্ষদে অপদস্থ করা হয়েছিল। অথচ এবারের চিত্র ছিল ভিন্ন। বাংলাদেশের পদক্ষেপগুলো নিয়ে বরং প্রশংসা করা হয়েছে। কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো তুলে নেওয়ার কথাও বলেছিল।

জানা গেছে, শ্রম অধিকার বাস্তবায়নে ঘাটতির অভিযোগ এনে জাপানসহ ছয়টি দেশের পক্ষ থেকে আইএলওতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। মামলাগুলো চলমান।

আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাত মিলিয়ে দেশে ৭ কোটি ৬৫ লাখ শ্রমিক রয়েছে। এদিকে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদকে (টিসিসি) শ্রমিকপক্ষ জানিয়েছে, আইন সংশোধনের সময় সব শ্রমিকের কথা মাথায় না রেখে প্রধানত পোশাক খাতের শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মে দিবস আর জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস উপলক্ষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীতে শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ–স্কুল পর্যায়ে রচনা ও প্রবন্ধ লেখার ওপরে বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হবে।

এ ছাড়া শ্রম অধিকার বিষয়ে প্রকাশিত বা প্রচারিত মানসম্মত সংবাদ বা স্থিরচিত্র যাচাই করে সাংবাদিক ও চিত্রগ্রাহকদের দেওয়া হবে পুরস্কার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের মহান মে দিবস আজ
  • কর্মক্ষেত্রে অধিকার আদায়ের রক্তাক্ত গৌরবময় দিন
  • শ্রম আইনের সংশোধন কবে হবে, তা বলছে না শ্রম মন্ত্রণালয়
  • শিগগিরই শ্রম আইন সংশোধন করা হবে: শ্রম উপদেষ্টা 
  • আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসে শিল্পকলা একাডেমির  দুই দিনের আয়োজন
  • মেরাদিয়ায় পশুর হাট বসানো যাবে না, নির্দেশ হাইকোর্টের
  • আইনগত সহায়তা দিবসে আলোচনা সভা-শোভাযাত্রা
  • আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন