বিএনপির রাজনীতির মূললক্ষ্য জনগণ ও দেশ: তারেক রহমান
Published: 22nd, February 2025 GMT
সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, এখন অনেকেই সংস্কারের কথা বলছেন। কিন্তু একমাত্র বিএনপি স্বৈরাচারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আড়াই বছর আগে দেশ পুনর্গঠনের কথা বলেছে, ৩১ দফা ঘোষণা করেছে। বিএনপির রাজনীতির মূললক্ষ্য জনগণ ও দেশ। তাই ভেঙে পড়া রাষ্ট্রকে গঠন বিএনপির পক্ষেই সম্ভব। জনগণের ভোটে বিএনপি দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে সবার আগে পুনর্গঠন করা হবে।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) যশোর ঈদগাহ ময়দানে জেলা বিএনপির সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সকালে সম্মেলন উদ্বোধন করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান।
তারেক রহমান বলেন, জনগণের সমর্থন নেই এমন কোনো কাজ বিএনপি করে না। বিএনপিই একমাত্র দল যেটি নিজ দলের দোষী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।
তিনি বলেন, বিভ্রান্ত হয়ে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়া নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাই বিএনপির বিরুদ্ধে কারো অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। বিএনপি অন্যায়ের সঙ্গে আপস করে না।
বিএইচ
.উৎস: SunBD 24
কীওয়ার্ড: ব এনপ র
এছাড়াও পড়ুন:
বর্তমান সংকটের জন্য সরকার দায়ী, দলগুলোর চাপে সিদ্ধান্ত বদল
বর্তমান সংকটের জন্য সরকারকে দায়ী করে, সংকট উত্তরণে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের মন যুগিয়ে চলার নীতি বাদ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি দলের শীর্ষনেতারা। তারা বলেছেন, সরকার শুরু থেকে জনগণ বা গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার কথা না ভেবে, কখনও বিএনপি, কখনও জামায়াত, কখনও এনসিপির চাপে সিদ্ধান্ত বদল করেছে, বর্তমান সংকটের এটাও একটা বড় কারণ।
বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, এবি পার্টি ও আপ বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘স্বল্প আস্থার সমাজে সংস্কার ও নির্বাচনী ঐক্যের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় নেতারা এসব কথা বলেন।
প্রধান আলোচক অধ্যাপক মুশতাক হোসেন বলেন, ‘‘সমাজকে পরিবর্তন করতে যে জাতি জীবন দিতে পারে সেই জাতি অনেক শ্রদ্ধার। নতুন বন্দোবস্ত চুক্তি করে হয় না, কারণ কায়েমি স্বার্থবাদীরা নতুন বন্দোবস্ত মেনে নেয় না। তবে নতুন রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’’
ইংল্যান্ডের টরি পার্টির বিরুদ্ধে দুর্বল রাজনৈতিক দলগুলোর বিপ্লবের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সেখানেও সমঝোতা হয়নি, সংগ্রামের মধ্য দিয়েই জনগণের বিজয় অর্জিত হয়েছিল।’’ বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের অনুসন্ধান চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘যারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চায় তারা উচ্চকক্ষ নিম্নকক্ষ সব জায়গা দখলের পদ্ধতি জানে।’’
তিনি বলেন, ‘‘আস্থার অভাবে ঝগড়া করে এদেশে রাজনৈতিক দলগুলো সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় অথচ আস্থাশীল হলে সবাই লাভবান হতে পারত। এ দেশের মানুষের সহজে ক্ষমা করে দেয়ার প্রবণতার কারণে আওয়ামী লীগ বেচে গেছে। স্বার্থবাদী দলগুলো 'ভাইভাই রাজনীতি' করে বলেই স্বৈরাচার আর ফ্যাসিস্ট বারবার আসে।’’
অপরাধ করলে কোন না কোনভাবে শাস্তির ব্যবস্থা থাকতেই হবে জানিয়ে অধ্যাপক মুশতাক বলেন, ‘‘আস্থাহীনতা কমাতে হলে সামাজিক ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে যেন অপরাধ করলে সামাজিকভাবে বয়কট করা হয়। অনিয়ম করলে তাকে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয়ভাবে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘সকল শ্রেণী পেশার মানুষের আস্থা অর্জন কঠিন হলেও নিজেদের মধ্যে আস্থা বজায় রাখতে হবে এবং চোরদের সাথে কখনো আপোষ করা যাবে না। যারা আওয়ামী লীগের সহযোগী ছিল তাদের কোন না কোনভাবে বিচার বা ক্ষমা চাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’’
ঐক্যমত্য বা নতুন সংবিধান এখনি না হলেও লড়াই চালিয়ে গেলে জনতা পাশে থাকবে বলেও তিনি আশাবাদ জানান।
সভাপতির বক্তব্যে হাসনাত কাইউম বলেন, ‘‘অনেক মতদ্বৈততা থাকলেও দেশের প্রশ্নে এক হয়ে নতুন রাজনীতির জন্য কাজ করতে হবে। এখনি রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ শুরু করতে হবে। হাসিনা-ওবায়দুল কাদেররা সাংবিধানিক পদ্ধতি এমনভাবে সাজিয়েছে তার মধ্যেই ফ্যাসিস্ট হওয়ার উপাদান নিহিত আছে। অতীতে জনগণের দাবি প্রতিষ্ঠা করতে পারার কারণে সফলতা এসেছে। এবার আন্দোলনের নেতৃত্বকে কিছু বুড়ো মানুষ ভুল পথে পরিচালিত করেছে, এবং টাকাওয়ালাদের কাছে নিয়ে গেছে, ফলে রাষ্ট্রের সংস্কার আজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।’’
পুরোনো পথে নতুন বন্দোবস্ত বাস্তবায়ন হবে না। তিনটি দলের এই আয়োজন দল ও ব্যক্তি স্বার্থের জন্য নয় বলেও জানান তিনি।
মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘‘বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ কথায় কথায় সংবিধানের রেফারেন্স দেন, এটা ভালো। তবে তার কাছে প্রশ্ন- ফ্যসিস্ট হাসিনা সংবিধানের কোন আর্টিকেলের আলোকে আপনাকে গুম করে বিনা ভাড়ায় বিনা টিকিটে শিলংয়ে নিয়ে গিয়েছিল? আমাদের জানতে ইচ্ছে করে।’’
এবি পার্টি শক্তিশালী হলে তার লোকেরা পাবলিক টয়লেট ইজারা নেবে না এমন গ্যারান্টি নাই মন্তব্য করে মঞ্জু বলেন, এই সংস্কৃতি বদলানোর জন্যই নতুন রাজনীতি দরকার। নতুন রাজনীতি দাঁড়াতে না পারার কারণ খোঁজার আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূসের সরকার তিন দলের চাপে পড়ে বারবার সিদ্ধান্ত বদল করে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘‘জনগণের জন্য যা ভালো সেটা করতে হবে; কোনো দলের স্বার্থ হাসিলের জন্য নয়।’’ জনগণের কথা না শোনায় উপদেষ্টাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, 'আপনাদের কিছুদিন পর জনগণের কাতারে আসতে হবে।'
সরকারের উদ্দ্যেশ্যে তিনি বলেন, এক-দুইটা রাজনৈতিক দলের মন যুগিয়ে চললে জুলাই শহীদ এবং আহতদের কাছে আজীবন ভিলেন হিসেবে অভিশাপ পেতে হবে।
আলি আহসান জুনায়েদ বলেন, হাসিনার হাতে ভেঙ্গে পড়া রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক শক্তিগুলি ক্ষমতা ভোগের উৎসবে মেতেছে। ভোট কেন্দ্র দখলে অভ্যস্ত এবং বিপ্লব বিরোধীরা ক্ষমতায় আসলে জনগন আবারো হতাশ হবে বলে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।
জনগণকে অন্ধকারে রেখে চেয়ার নিয়ে কাড়াকাড়ি চলছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। জনগনের রাষ্ট্র গঠন করতে রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনীতি করা উচিৎ বলে মত দেন তিনি। গণভোটে দুইটা ব্যালট রাখার প্রস্তাব আবারো তুলে ধরেন তিনি। সংস্কার প্রশ্নে জনগণকে সাথে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাবার ঘোষণা দেন তিনি।
শহিদ উদ্দিন স্বপন বলেন, আইনের শাসন না থাকা এবং বৈষম্যের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারণে বাংলাদেশে সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে আস্থাহীনতা। জুলাই অভ্যুত্থানের পর সমাজ বিপ্লবের সম্ভাবনা তৈরি হলেও রাজনৈতিক নেতাদের পুরোনো চিন্তাচেতনার কারণে মানুষ আশাহত হয়েছে। যেটুকু অগ্রগতি গত ১৫ মাসে হয়েছে তাকে ভিত্তি ধরে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানান তিনি।
সৈয়দ হাসিব উদ্দিন বলেন, এই মুহুর্তে চরম দুর্বল অবস্থায় আছে বাংলাদেশ, এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এই অবস্থার মোকাবেলায় নির্বাচন জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলোকে গরম বক্তব্য না দিয়ে জনগনকে সাথে নিয়ে সংস্কার চালিয়ে যেতে হবে।
অধ্যাপক আব্দুল ওহাব মিনার বলেন, আমাদের দেশের সর্বস্তরে আস্থার প্রচণ্ড সংকট, এটি দূর করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের কাছে পরীক্ষা দিতে হবে। তিনি বলেন, আমরা জীবিত থাকতে আওয়ামী লীগ এদেশে রাজনীতি করবে সেটি হতে পারে না। অহমিকা ছেড়ে সব দলকে ঐক্যের পথে আসার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ডায়নোসর অনেক বড় ছিল কিন্তু আজ বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
আরেফিন মো. হিজবুল্লাহ বলেন, ফ্যাসিবাদকে নির্মূল করতে শেখ মুজিবের ছবি টানানো অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর কাঠামোগত ফ্যাসিবাদ সংকটকে তরান্বিত করছে। যেসব জায়গায় ফ্যাসিবাদ তৈরি হওয়ার আশংকা আছে সেগুলো বন্ধ করতে হবে।
দিদার ভুইয়া বলেন, ছেড়া 'স্যান্ডেল থেকে ফাইভস্টার হোটেল কোন বিপ্লবীর চরিত্র হতে পারে না।' রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের মধ্যে আস্থাহীনতা বর্তমান সংকটের অন্যতম কারণ। উচ্চকক্ষে পিআর না মেনে বিএনপি নিজেদের ক্ষতি করছে। এমনকি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রাণহানির আশংকা তৈরি হচ্ছে।
ব্যারিস্টার জোবায়ের বলেন, প্রশাসনে নিজস্ব লোক সেট করতে ব্যস্ত তিন দল অথচ টেকসই রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্য রাজনৈতিক ইকো সিস্টেম জরুরি।
সভায় তিন দলের ঐক্যবদ্ধ পথ চলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়।
রাইজিংবিডি/নঈমুদ্দীন নি