ছোট্ট ঘরের কোনায় বসে থাকা মারিয়ার (ছদ্মনাম) চোখে যেন লুকিয়ে থাকা এক সমুদ্রের বেদনা। আট ফুট বাই আট ফুটের সেই ঘরে মারিয়ার মতো আরও অনেকের দিনরাত কাটে। ঘর বলতে যা বোঝায়, তার চেয়ে অনেক বেশি জায়গার অভাব সেখানে। একটি ভাঙা খাট, কয়েকটি পুরোনো হাঁড়ি-পাতিল আর দেয়ালের কোণে জমে থাকা স্যাঁতসেঁতে মাটি– এটিই তাদের জীবনের প্রতিচ্ছবি।
মারিয়া আক্ষেপ নিয়ে জানান, একটি রুমে তাদের সবাইকে থাকতে হয়। মেয়েদের জন্য তো কোনো আলাদা জায়গা নেই। তাদের মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অভাবে অনেকে নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়। কেউই এ নিয়ে মাথা ঘামায় না।
অসহনীয় চাপ আর বঞ্চনার গল্প যেন প্রতিটি উর্দুভাষী নারীর জীবনের প্রতিধ্বনি।
বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ক্যাম্পের জীবন এমনই। চট্টগ্রাম, রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, নীলফামারীর সৈয়দপুর, রংপুর– সবখানেই একই চিত্র। ঘিঞ্জি পরিবেশ, প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাব আর সামাজিক বৈষম্যের বেড়াজালে বন্দি উর্দুভাষী জনগোষ্ঠী। ২০০৮ সালে উচ্চ আদালত তাদের বাংলাদেশি নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দিয়েছেন ঠিকই। তা যেন কেবল কাগজেই সীমাবদ্ধ! বাস্তব জীবনে নাগরিক মর্যাদা কিংবা অধিকার তাদের কল্পনাতেও নেই।
সৈয়দপুর ক্যাম্পের বাসিন্দা আকরাম হোসেন বলেন, ‘আমাদের ঘরগুলো এমন ভঙ্গুর যে সামান্য ঝড় এলে মনে হয় সব ভেঙে পড়বে। বিদ্যুৎ বা পানির ব্যবস্থা নেই। সরকার থেকে কোনো সাহায্য আসার আগেই আমাদের আবার উচ্ছেদের হুমকি আসে। এই ভয় নিয়েই দিন কেটে যায়।’
নারী ও শিশুর অবস্থা আরও শোচনীয়। চট্টগ্রামের ফাতেমা বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পে বাচ্চাদের খেলার কোনো জায়গা নেই। ফলে তারা মানসিক ও শারীরিকভাবে বিকশিত হতে পারে না। অনেক মা টিকার গুরুত্ব বোঝেন না। ফলে অসংখ্য শিশুর মৃত্যু ঘটে, অথচ এগুলো প্রতিরোধযোগ্য।’
শিক্ষার ক্ষেত্রেও বৈষম্যের শিকার এ জনগোষ্ঠী। মিরপুর ক্যাম্পের মেহের আফরিন বলেন, ‘এখানে মেয়েরা এসএসসি বা এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পারে। তারপরই তাদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। অনেকে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখলেও তা অধরা থেকে যায়।’
চট্টগ্রামের মোহাম্মদ শারাফাত আলীর মতে, ‘আমাদের পূর্বজদের সম্পত্তি ফেরত দিলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আমরা নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারব। এখনও আমাদের ঠিকানার সংকটে চাকরির আবেদন করতে গিয়েও হোঁচট খেতে হয়।’
২০০৮ সালে নাগরিকত্বের রায়ের পরও এ জনগোষ্ঠী কেন এতটা পিছিয়ে? রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) নির্বাহী পরিচালক ড.
ক্যাম্পের সংকীর্ণ জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে লুকিয়ে আছে বেদনা আর হতাশা। বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়ার হুমকি, সরকারি সেবায় বঞ্চনা, সামাজিক বৈষম্য আর স্বাস্থ্যসেবার অভাবে প্রতিদিন নতুন নতুন সমস্যা
সৃষ্টি হয়। তবুও এ জনগোষ্ঠী আশা ছাড়েনি। তাদের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারে একটি মাত্র সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন– তাদের নাগরিক মর্যাদা বাস্তবে রূপ দেওয়া।
ড. সিআর আবরার বলেন, ‘পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় নিশ্চিত করতে হবে– এই জনগোষ্ঠী যেন চাকরি ও অন্যান্য কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার না হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন ঋণ প্রকল্পে সহজ শর্তে তাদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। তাদের কারিগরি ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে তারা স্বনির্ভর হতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিশুদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা ও দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে এটি নিশ্চিত করতে হবে, তারা যেন ক্যাম্পের ঠিকানা ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরকারি নথিপত্র সংগ্রহ করতে পারে।’
উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের বঞ্চনা দূর করতে সরকারের কার্যকর নীতি গ্রহণ অপরিহার্য। ক্যাম্পবাসীর জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে হবে। এটি তাদের নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ শিক্ষাবৃত্তি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে। টিকা প্রদান, নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং চিকিৎসার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। উচ্ছেদ বন্ধে কার্যকর আইন তৈরি এবং তা বাস্তবায়ন জরুরি।
মারিয়ার চোখে এখনও প্রশ্ন। তাঁর ভাঙা কণ্ঠে উচ্চারিত হয়, ‘আমরা বাংলাদেশি, এটাই আমাদের পরিচয়। তাহলে আমাদের জীবন কেন এত দুর্বিষহ?’
এই প্রশ্নের উত্তর দিতে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। তাদের জীবনে একটি নতুন দিনের সূচনা করতে হবে। নাগরিক মর্যাদা যেন শুধু কাগজে নয়, বাস্তবজীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে দৃশ্যমান হয়। সেদিনই হয়তো মারিয়া, ফাতেমা, আকরামদের চোখে ফুটবে আশার আলো– একটি সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন।
মিরপুর ক্যাম্পের বাসিন্দা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইয়াসিন বলেন, ‘সংবিধানের ২৮(ক) অনুচ্ছেদে গোষ্ঠী ও বর্ণের বৈষম্য নিষিদ্ধ করা হলেও ভাষার ভিন্নতা নিয়ে কিছু উল্লেখ নেই।’ তিনি উর্দুভাষীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনটি দাবি তুলে ধরেন– ১. সংবিধানে ভিন্ন ভাষাভাষীর অধিকার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা।
২. সরকারি উদ্যোগে উর্দুভাষীকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। ৩. পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উর্দুভাষী শিক্ষার্থীদের জন্য কোটা নিশ্চিত করা। ইয়াসিন মনে করেন, এসব পদক্ষেপ একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে সহায়ক হবে।
উর্দুভাষী জনগোষ্ঠী, যাদের পূর্বজরা দেশভাগের পর বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন, আজও নানা প্রতিকূলতার মধ্যে জীবনযাপন করছেন। স্বাধীনতার পর থেকে এ দেশের ১৩টি জেলায় ৭০টি ক্যাম্পে বসবাসরত এই জনগোষ্ঠী মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
বিগত দশকগুলোয় সরকার তাদের পুনর্বাসনের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করলেও, সেগুলো বাস্তবায়ন করা হয়নি। ক্যাম্পের বাসিন্দারা প্রায়ই উচ্ছেদের হুমকির মুখে পড়েন, যা তাদের জীবনে স্থায়ী নিরাপত্তার অভাব সৃষ্টি করে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহের মতো মৌলিক সেবার অভাব তাদের দৈনন্দিন জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে।
উদাহরণস্বরূপ, মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দারা পুনর্বাসন না হওয়া পর্যন্ত বিনামূল্যে বিদ্যুৎ-পানি সরবরাহের দাবি জানিয়ে আসছেন। তাদের অভিযোগ, পুনর্বাসন না করেই একসময় এসব সুবিধা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা তাদের জীবনে আরও কষ্টের সৃষ্টি করেছে।
এমনকি কিছু ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়, যা তাদের জীবনযাত্রাকে বিপন্ন করে তুলেছে। এমন পরিস্থিতিতে উর্দুভাষী জনগোষ্ঠী তাদের অধিকার ও মর্যাদা ফিরে পাওয়ার আশায় দিন গুনছে। এই আশার পেছনে অজস্র দুঃখ আর বঞ্চনার গল্প লুকিয়ে আছে। এ মানুষগুলো বাংলাদেশের মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছে, বাংলাদেশি পরিচয় নিয়ে বাঁচতে চায়। সরকার, নাগরিক সমাজ ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগই পারে তাদের জীবনে আশার আলো জ্বালাতে। ‘আমরা বাংলাদেশি, এটাই আমাদের পরিচয়’– বলে ওঠেন বৃদ্ধ মতিউর (ছদ্মনাম)। তাঁর কণ্ঠে ছিল আশার সুর, কিন্তু চোখে বঞ্চনার অশ্রু। আজ সময় এসেছে তাদের জীবনকে নতুন রূপ দেওয়ার। তাদের কান্না থামাতে ও নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের সবার এগিয়ে আসা উচিত। একটি সমন্বিত উদ্যোগই পারে এই জনগোষ্ঠীর মর্যাদাপূর্ণ জীবনে ফিরিয়ে আনতে এবং তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে।
লেখক: অ্যাডভোকেসি ও নলেজ ম্যানেজমেন্ট অফিসার, রামরু
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ বন ন শ চ ত করত ন শ চ ত কর ত দ র জ বন জনগ ষ ঠ র এ জনগ ষ ঠ দ র জন য ব যবস থ আম দ র গ রহণ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।
সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।
জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।
জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।
জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।