ভারতে বসে শেখ হাসিনার বক্তব্য আগুনে ঘৃতাহুতি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
Published: 24th, February 2025 GMT
পররাষ্ট্র উপদেস্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশের অস্থিতিশীলতা বাংলাদেশকেই সামাল দিতে হবে। তবে ভারতের আতিথেয়তায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য যে আগুনে ঘৃতাহুতি, এটা স্বীকৃত। একইভাবে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু, বাংলাদেশেরই বিষয়। এটি ভারতের বিষয় হতে পারে না।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সাম্প্রতিক এক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আজ সোমবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই প্রতিক্রিয়া জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
এস জয়শঙ্করের বক্তব্য দুই দেশের সম্পর্কে কতটা প্রভাব ফেলবে, সে প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের খুব স্পষ্ট সিদ্ধান্ত এ ব্যাপারে আছে। আমরা ভারতের সঙ্গে গুড ওয়ার্কিং রিলেশন চাই। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে এই সম্পর্ক। এ ব্যাপারে আমাদের কোনো অস্পস্টতা নেই।’
ভারত কেমন সম্পর্ক চায়, সে সিদ্ধান্ত ভারত নেবে উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘তবে উনি (এস জয়শঙ্কর) কিছু বলেছেন। বাংলাদেশের বিভিন্নজন সরকারের ভেতর থেকে কথাবার্তা বলছেন। আমি এটার (জয়শঙ্করের বক্তব্য) ন্যায়–অন্যায়, উচিত–অনুচিত বিচার করতে চাই না। এ রকম কথা আমাদের এখান থেকে বলছে, ওনাদের ওখান (ভারত) থেকেও বলছে। ওনাদের মুখ্যমন্ত্রী তো পারলে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠিয়ে দেন। ওনাদের একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তো অহরহ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বলছেন। এগুলো চলতে থাকবে ধরে নিয়েই তো আমরা সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টা করছি। কাজেই আমাদের অবস্থান হলো আশপাশ থেকে দু–চারজন কী বলল না বলল, সেটাতে মনোযোগ না দিয়ে সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টা করি।’
দিল্লিতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘সম্পর্ক ভালো করতে গেলে তো.
একইভাবে ভিসার বিষয়টিও অবধারিতভাবে তাদের অধিকার বলে উল্লেখ করেন তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘(তারা) যে কাউকে ভিসা না দিলে আমাদের কিছু বলার নেই। ভিসা দেওয়া হচ্ছে না বা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে আমরা তো বিকল্প খুঁজে বের করবোই। এগুলো হচ্ছে স্বাভাবিকতা। আমরা ভালো সম্পর্ক চাই। কিন্তু কোনো ধরনের সমস্যা যদি থাকে আমাদের বিকল্প দেখতে হবে।’
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সংখ্যালঘু সম্পর্কে উনি (এস জয়শঙ্কর) আবার বলেছেন। সংখ্যালঘুদের বিষয়ে অভিযোগগুলো প্রধানত ভারতীয় গণমাধ্যমের যে বিকৃত একটা তথ্যপ্রবাহ, তারা সৃষ্টি করেছে, তার ভিত্তিতে বিভিন্নজন বিভিন্ন জায়গায় এগুলো বলে বেড়াচ্ছে। তার চেয়ে বড় কথা হলো বাংলাদেশের সংখ্যালঘু তো ভারতের বিষয় হতে পারে না। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু তো বাংলাদেশের বিষয়। যেমন ভারতের সংখ্যালঘু ভারতের বিষয়। এ ব্যাপারে অন্যের বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতিতে যেতে হবে।
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের বিষয়টি আমরা দেখছি। তারা বাংলাদেশের নাগরিক। আমার যতটা অধিকার, তাদের (সংখ্যালঘুদের) প্রত্যেকের ততটা অধিকার আছে এ দেশের ওপরে। সরকার সেটাই সব সময় বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করবে।’
আরও পড়ুনবাংলাদেশকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা ভারতের সঙ্গে কোন ধরনের সম্পর্ক চায়: জয়শঙ্কর১৭ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পরর ষ ট র উপদ ষ ট আম দ র মন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।