নারায়ণগঞ্জে অনেক কুলাঙ্গার আছে : মির্জা আব্বাস
Published: 25th, February 2025 GMT
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির মির্জা আব্বাস বলেছেন, কোনভাবেই জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন নয়। যারা আগে স্থানীয় নির্বাচনের কথা বলছেন, তাদের উদ্দেশ্য দুরভিসন্ধিমূলক, ষড়যন্ত্রমূলক। আমরা লড়াই সংগ্রাম করেছি জাতীয় নির্বাচনের জন্য। আগে কেনো স্থানীয় নির্বাচন এটি হলো যাদের গ্রামগঞ্জে পায়ের তলায় মাটি নেই, তাদের প্রতিষ্ঠিত করার পায়তারা।
মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর মেট্রো হল সড়কে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, দ্রুত সময় জাতীয় সংসদ নির্বাচন, দেশের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমানোর দাবিতে নারায়ণগঞ্জ নবগঠিত জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা আব্বাস আরো বলেন, বিডিআর হত্যাযজ্ঞ প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস বলেন, এই হত্যার বিচারের নামে প্রহসন করা হয়েছে। বিনা অপরাধে প্রায় দেড়দশক সাধারণ সিপাহিদের আটক রাখা হয়েছে। সেদিন প্রশিক্ষিত একটি প্রাতিষ্ঠানিক গ্রুপ তাদের হত্যা করেছে। যাদের বিচার হয়েছে তারা নির্দোষ। জেলের ভিতর তাদের কান্না দেখে নিজের চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি। যারা শাহাদাত বরণ করেছে তাদের ফেরত আনতে পারব না। সত্যিকারের দোষীদের আড়াল করতেই নির্দোষদের ফাঁসানো হয়েছে। যারা বিনাদোষে আটক রয়েছে তাদের কেনো ছাড়া হচ্ছে না।
মির্জা আব্বাস বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ। ছিনতাই খুন রাহাজানিতে অতিষ্ট দেশবাসী। কিন্তু কারা এগুলো করছে? কারা বলেছিল দিনের বেলায় চলতে না পারলে আমরা রাতে কাউকে চলতে দিব না। ভারতে বসে এদেশকে অস্থির করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু এগুলো করে দেশের মানুষের ঐক্য ভাঙা যাবে না। দেশের মানুষকে শান্তিতে ঘুমাতে দিবেন না। এই সরকার যখন ক্ষমতায় আসে আমরা সমর্থন করেছিলাম। বলেছিলাম এই সরকার ব্যর্থ হলে দেশ ব্যর্থ হবে। তাই বলে আজীবন ক্ষমতায় থাকার ম্যান্ডেট কেউ আপনাদের দেয়নি।
মির্জা আব্বাস বলেন, কয়েকজন ভদ্রলোক আছেন, তারা বলেন- যারা নির্বাচন চান তারা দেশের ভালো চান না। কোথায় ছিলেন আপনারা। ১৭টি বছর আমরা জনগণকে সাথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। হাজার হাজার মানুষ শহীদ হয়েছে, গুম হয়েছে। আমরা নির্বাচন চাই ক্ষমতায় আসার জন্য নয়, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, দ্রব্যমূল্য অসহনীয় হয়ে পড়েছে। সরকার সংস্কারের কথা বলছেন। হাতের কাছে যে সংস্কার আছে তা করছেন না কেনো? হাসিনার পতনের দুদিন আগে ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটরা কে কি বলেছে। একজন বলেছে আপনার নির্দেশের বাইরে আমরা যাব না, আরেকজন বলেছে মৃত্যুর পরও আমরা আপনার সাথে আছি। সে সিন্ডিকেট কী ভেঙেছেন? যতদিন পর্যন্ত সে সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারবেন ততদিন দ্রব্যমূল্যসহ কিছুই নিয়ন্ত্রণে আসবে না।
বরং বর্তমান সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট অনেকে তাদের অফিসে গিয়েছেন। সেসব সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা আছে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। কেউ কেউ বলছেন, নির্বাচনের কথা যারা বলে তারা জাতির শত্রু। তাহলে বলে দেন বাংলাদেশে আর নির্বাচনের দরকার নেই। হাসিনা যেভাবে দেশ চালিয়েছে সেভাবেই চালান। দেখি পারেন কিনা।
নারায়ণগঞ্জের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এই নারায়ণগঞ্জে অনেক কুলাঙ্গার আছে। যারা আজকে ঘরে বসে আছে। যারা ঘরে বসে ভারতে সঙ্গে কথা বলে এই নারায়ণগঞ্জকে অস্থির করতে চায়। তাদেরকেও গ্রেপ্তার করেছে না। এই সমস্ত দিকে নজর দেয়া উচিৎ।
জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদের সভাপতিত্বে এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন, কমিটির বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ঢাকা বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, বিএনপির সহ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, সাবেক মন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিম, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান, জেলা বিএনপির ১ম যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু, যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজিব, শরীফ আহমেদ টুটুল, সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড.
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ব এনপ ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ র রহম ন ব এনপ র সদস য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ
ডাইং কারখানার বর্জ্যে মরছে ব্রহ্মপুত্র নদ। প্রকাশ্যে এ দূষণ ঘটলেও দেখার কেউ নেই। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ ভুক্তভোগীদের। পরিবেশ কর্মকর্তা চাইছেন সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও নরসিংদী সদর উপজেলায় অন্তত ৬০টি ডাইং কারখানা ব্রহ্মপুত্র দূষণের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। নদের তীরে অবস্থিত এসব কারখানায় এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) থাকলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই প্রতিদিন নদে ফেলছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এ নদের সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষজন।
অভিযোগ রয়েছে, নদের তীরে অবস্থিত কারখানাগুলো ইটিপি রাখলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ফেলছে। অনেক কারখানায় ইটিপি থাকলেও খরচ কমাতে বেশির ভাগ সময় তা বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া বেশকিছু কারখানার ইটিপি প্রয়োজনের তুলনায় ছোট হওয়ায় সঠিকভাবে বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হয় না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, নরসিংদী সদর উপজেলায় রয়েছে ছোট-বড় ৫০টি ডাইং কারখানা। আড়াইহাজারে স্পিনিং মিলসহ ডাইং কারখানা রয়েছে অন্তত ১০টি। নরসিংদীর ডাইং কারখানাগুলোর মধ্যে পাঁচদোনা এলাকার আবদুল্লাহ ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ, বাঘহাটা এলাকার ফাইভ অ্যান্ড ফাইভ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, সাজেদা ডাইং, আনোয়ার ডাইং, শতরূপা ডাইং, রুকু ডাইং, মেসার্স একতা ডাইং, কুড়েরপাড় এলাকার ব্রাদার্স টেক্সটাইল, ইভা ডাইং, ভগীরথপুর এলাকার এম এমকে ডাইং, নীলা ডাইং, এইচ এম ডাইং, মা সখিনা টেক্সটাইল, মুক্তাদিন ডাইং, পাঁচদোনা এলাকার তানিয়া ডাইং, সান ফ্লাওয়ার টেক্সটাইল প্রভৃতি।
আড়াইহাজারের কয়েকটি কারখানা হলো– ভাই ভাই স্পিনিং মিলস, ছাবেদ আলী স্পিনিং মিল, রফিকুল ডাইং, দিপু ডাইং ও হাজী হাবিবুর ডাইং।
আড়াইহাজার পৌরসভার চামুরকান্দি এলাকার বাসিন্দা মিয়াজউদ্দিন মিয়া বলেন, দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদটি। দেশীয় জাতের মাছের অভয়াশ্রম এ নদ থেকে মাছ হারিয়ে গেছে।
আড়াইহাজারের বালিয়াপাড়া এলাকার ইসমাইল হোসেন জানান, রফিকুল ডাইংয়ের বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে পানির রং কালচে হয়ে গেছে। একই অবস্থা অন্য কারখানাগুলোর। বর্জ্য নদে ফেলার বিষয়ে স্থানীয়রা কথা বলতে গিয়ে উল্টো কারখানা কর্তৃপক্ষের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
রফিকুল ডাইংয়ের মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, তাদের ইটিপি নেই। ডাইংয়ের পানি তারা নির্দিষ্ট পানির ট্যাংকে রাখেন, সরাসরি নদে ফেলেন না। ট্যাংকে জমানো পানি কোথায় ফেলেন জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের গনেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব হাসান শুভর ভাষ্য, কুড়েরপাড় এলাকার ডাইং কারখানাগুলোর রং মেশানো বর্জ্য পরিশোধন না করে ব্রহ্মপুত্রে ফেলায় নদটি এখন মৃতপ্রায়। দূষণের কারণে দুর্গন্ধে এর পারে দাঁড়ানো যায় না। স্থানীয়রা অনেকবার প্রতিবাদ করেও প্রতিকার পাননি বলে জানান তিনি।
গত ১৫ এপ্রিল শিলমান্দী ইউনিয়নের কুড়েরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইভা ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড নামে একটি কারখানা থেকে বর্জ্য এসে পড়ছে নদের পানিতে। ভিডিও করতে দেখে কারখানা কর্তৃপক্ষ বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে দেয়।
ইভা ডাইংয়ের ইটিপি ইনচার্জ রেজাউল করিম জানান, বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে তারা প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন। অনেক কারখানা সরাসরি নদে বর্জ্য ফেললেও তারা নদ দূষণ করেন না।
একই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফাতেমা ডাইংসহ ব্রহ্মপুত্রের তীরে গড়ে ওঠা কারখানাগুলো থেকেও নদে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে এসব কারখানার কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান জানান, নদে বর্জ্য ফেলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারেক বাবু জানান, ব্রহ্মপুত্রে নদে সরাসরি বর্জ্য ফেলছে ডাইংসহ যেসব কারখানা সেসবের অধিকাংশই নরসিংদী জেলার অন্তর্গত। তাই নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে নদ দূষণমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
আড়াইহাজারের ইউএনও সাজ্জাত হোসেন বলেন, কখনও কখনও কিছু কারখানা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ছেড়ে দেয়। কোন কারখানা নদ দূষণ করছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠন তা জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।