জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার চরপাকেরদহ ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলন ঘিরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। এ সময় সম্মেলনের মঞ্চ ও কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ওই ইউনিয়নের তেঘরিয়া সাদেহ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় ও বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ শুক্রবার ওই কলেজ মাঠে উপজেলার চরপাকেরদহ ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক শাহ মো.

মজনু (ফকির) ও যুগ্ম আহ্বায়ক বিপ্লব তরফদার সভাপতি প্রার্থী। সম্মেলন নিয়ে দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। এর মধ্যে ওই মাঠে সম্মেলনের মঞ্চ তৈরি করা হয়। ওই মঞ্চ দেখতে বিপ্লব তরফদারের নেতা-কর্মীরা ওই মাঠে যান। এ সময় শাহ মো. মজনুর ছেলে শাহ মোস্তাক আহাম্মেদের নেতৃত্বে তাঁদের (বিপ্লব তরফদারের নেতা–কর্মী) ওপর হামলা করা হয়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় সাতটি মোটরসাইকেল ও সম্মেলনের মঞ্চ ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় সাতজন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দল কর্মী শফিকুল ইসলাম, ছাত্রদল কর্মী আল আমিন ও শ্যামল মিয়াকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিপ্লব তরফদার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘শাহ মোস্তাক আহাম্মেদ ওরফে সৈকত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা। আর বাবার সুবাদে এলাকায় থেকে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতেছে। সম্মেলনের মঞ্চ দেখতে আমার ১০-১৫ জন নেতা-কর্মী ওই মাঠে গিয়েছিলেন। এ সময় মোস্তাক আহাম্মেদের নেতৃত্বে আমার নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করা হয়।’

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য শাহ মো. মজনুর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

মাদারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসান আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ওই ইউনিয়নে বিএনপির সম্মেলন হবে। একে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সম্মেলনের মঞ্চ ও চেয়ার ভাঙচুর করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়েছে। এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ঘর ষ এ সময়

এছাড়াও পড়ুন:

প্রার্থনার সুরে শেষ হলো ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব 

পাহাড়ের আঁকাবাঁকা প্রায় দুই কিলোমিটারেরও বেশি উঁচুনিচু ঢালু পথ পাড়ি দিয়ে আলোক শোভাযাত্রা করে করলেন হাজারো খৃষ্ট ভক্ত। মা মারিয়ার আশীর্বাদপ্রাপ্ত শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ‘বারোমারি সাধু লিওর খ্রিষ্টধর্মপল্লি’ তে ছিলো এ বছরের আয়োজন। 

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সকাল থেকে শুরু হয় ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব। দুই দিনব্যাপী এই তীর্থোৎসব শেষ হয়েছে গতকাল শুক্রবার জীবন্ত ক্রুশের পথ ও পবিত্র মহাখ্রিষ্টযাগের মধ্যে দিয়ে। 

এ উৎসবে শুধু ক্যাথলিক খ্রিষ্টানই নন, অন্য ধর্মাবলম্বীরাও প্রতিবছর অংশ নেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত কেভিন এস র‌্যান্ডেল। 

এসময় জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান ও পুলিশ সুপার (এসপি) আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আয়োজক কমিটি জানায়, প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবারে এই তীর্থযাত্রার আয়োজন করা হয়। প্রধান পৌরহিত্যকারী ন্যুনসিওকে বরণ, তীর্থের জুবিলী উদজাপন, পুর্নমিলন সংস্কার, পবিত্র খিষ্টযাগ, জপমালার প্রার্থন, আলোক শোভাযাত্রা, সাক্রান্তের আরাধনা, নিরাময় অনুষ্ঠান, ব্যক্তিগত প্রার্থনা ও নিশি জাগরণের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষ হয়। শুক্রবার সকাল আটটায় জীবন্ত ক্রুশের পথ অতিক্রম এবং সকাল ১০টায় মহাখ্রিষ্টযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের তীর্থোৎসব। 

১৯৪২ সালে ৪২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় বারোমারি সাধু লিওর ধর্মপল্লি। ১৯৯৮ সালে প্রয়াত বিশপ ফ্রান্সিস এ গোমেজ স্থানটিকে ‘ফাতেমা রানীর তীর্থস্থান’ হিসেবে ঘোষণা করেন। তখন থেকেই প্রতিবছর আয়োজিত হয়ে আসছে এই ধর্মীয় উৎসব। এ বছর প্রায় ৩০-৪০ হাজার দেশি-বিদেশি রোমান ক্যাথলিক তীর্থযাত্রী অংশ নিয়েছেন উৎসবে। সার্বিকভাবে উৎসব এলাকা ছিল আলো, প্রার্থনা ও শান্তির আবহে মোড়ানো।

রংপুর থেকে আসা তীর্থযাত্রী রিপন আরেং বলেন, “সবাই যখন মোমবাতি প্রজ্বলন করে প্রার্থনা করতে করতে পাহাড়ি আকাঁবাঁকা পথ অতিক্রম করছিলেন, তখন পাহাড় আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছিল। তীর্থে আমরা মা মারিয়ার কাছে প্রার্থনা করতে এসেছি।”

চট্টগ্রাম থেকে আসা রীতা নকরেক বলেন, “পুত্রবধূর সন্তান হচ্ছিল না। গতবার মানত করার পর এবার নাতী পেয়েছি। তাই এবার নাতীকে নিয়ে আবার এসেছি।”

গাজীপুর থেকে পরিবারের সঙ্গে আসা শিক্ষার্থী ঝর্ণা আরেং বলেন, “মারিয়ার কাছে এলে মনে একধরনের শান্তি পাই। আমরা প্রার্থনা করি যেন জীবনের দুঃখ-কষ্ট দূর হয়। প্রতিবছর এই সময়টার অপেক্ষায় থাকি।”

শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “আমরা এই তীর্থযাত্রাকে নিরাপদ ও ঝুঁকি মুক্ত রাখতে তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রেখেছি। পাঁচ শতাধিক পুলিশ পোশাকে এবং সাদা পোশাকে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও র‌্যাব, বিজিবি, এপিবিএন ও সেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। যে কোন ঝুঁকি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত আছি।”

শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, “উৎসবটি দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ব্যবস্থাপনায়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন দীর্ঘ ১৫ দিন ধরে সহযোগীতা করে আসছে। এবারের তীর্থযাত্রায় সারাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের উৎসব পালন করেছে।”

ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের বিশপ পনেন পল কুবি সিএসসি বলেন, “এ উৎসবের মাধ্যমে বিশ্ব মানবতার কল্যাণে প্রার্থনা করা হয়েছে। ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ তীর্থে দেশ-বিদেশের হাজারো মানুষ সমবেত হয়েছেন। তাঁরা দুই দিনব্যাপী তীর্থে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। মা ফাতেমা রানীর কাছে দেশ ও মানবজাতির কল্যাণে প্রার্থনা শেষে যার যার বাড়ি ফিরে যাবেন।”

ঢাকা/তারিকুল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রার্থনার সুরে শেষ হলো ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব