চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘উত্তরণ’ এর ২০২৫-২৬ সেশনের জন্য কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

এতে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী সবুজ আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সজিব মাহমুদ।

সোমবার (৩ মার্চ) বিকেল ৩টায় উত্তরণের প্রধান উপদেষ্টা এবং যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নতুন কমিটির ঘোষণা দেওয়া হয়।

কমিটিতে অন্যদের মধ্যে রয়েছেন, সহ-সভাপতি ওবায়দুর রহমান তারিফ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রিফাত খান শিশির, মাহি মোস্তফা নাহিন, সাংগঠনিক সম্পাদক সবুজ বেপারি, তানিয়া আক্তার মাহি, এমএইচ মহসিন, অর্থ সম্পাদক এমএন উল্লাস, সহ-অর্থ সম্পাদক সুমাইয়া আক্তার, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক গোলাম রাব্বি, সহ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সালাউদ্দিন সাকিব ও হাবিবুর রহমান সুমন।

কমিটিতে আরো আছেন, প্রোগ্রাম বিষয়ক সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ রোহান, ইফতার ও সাহরি বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ মন্ডল, ব্লাড ব্যাংক সমন্বয়ক হোসাইন মাহমুদ, শিক্ষাবৃত্তি সম্পাদক গিয়াসউদ্দিন রক্সি, মানসিক স্বাস্থ্যসেবক বিষয়ক সম্পাদক মাহিন সরকার, টিউশন সেবা সম্পাদক মুজাহিদুজ্জামান রাকিব ও  আইসিটি সম্পাদক ফরহাদ বিন হাশেম। 

হল প্রতিনিধির মধ্যে রয়েছেন- আলিমুল শামীম (আলাওল হল), গোলাম মুক্তাদির (শহিদ আব্দুর রব হল), সুমাইয়া মাহি (দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হল) এবং অজিফা আক্তার মীম (প্রীতিলতা হল)।

কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে আছেন- নাজমুস সাকিব হৃদয়, পুষ্পিতা নুর, উম্মে হাবিবা, এম.

মিজানুর রহমান, মোস্তাফিজুর রহমান সুমন, নিয়াজ মাখদুম, ফুয়াদ হাসান, জয় প্রকাশ মন্ডল, শারমিন আক্তার এবং মাহমুদা আক্তার।

নবনির্বাচিত সভাপতি সবুজ আহমেদ বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষার্থী যেন আর্থিক সঙ্কটে শিক্ষাজীবন থেকে পিছিয়ে না পড়ে। এ লক্ষ্যে খাদ্য সহায়তা, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা, বৃত্তি ও দক্ষতা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম আরো সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছি। আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক, প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতা কামনা করছি, যাতে আমরা উত্তরণের কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারি।”

চবিতে অধ্যয়নরত আর্থিক সঙ্কটে থাকা শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে খাবার সরবরাহ করার মাধ্যমে উত্তরণের যাত্রা। এরপর রক্তদাতা জোগাড়, টিউশন সেবা, বিনামূল্যে আইটি ট্রেনিং, শিক্ষাবৃত্তিসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজ করছে সংগঠনটি। এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার অসচ্ছল শিক্ষার্থীকে সেবার আওতায় এনেছে উত্তরণ।

ঢাকা/মিজান/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের

এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।

চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।

টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর। 

গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।

দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।

সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত। 

শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।

মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।  

সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ