ভাসানী বললেন ‘লা-কুম দ্বীনুকুম অলইয়াদ্বীন’
Published: 9th, March 2025 GMT
একাত্তরের মার্চ মানেই অগ্নিঝরা সময় আর বাংলাদেশ স্বপ্নের আবাহন। এ মাসেই মুক্তির সংগ্রাম জোরালো হতে থাকে। সেই সঙ্গে আসন্ন সহিংসতার ধ্বনিও শোনা যাচ্ছিল। একাত্তরের ৭ মার্চ জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষণ দেন। সেখানে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানানো ছাড়াও ছিল পূর্ব বাংলার মানুষের মনের আকাঙ্ক্ষা। ৮ মার্চ থেকে শুরু হয় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়। ব্রিটেনপ্রবাসী প্রায় ১০ হাজার বাঙালি এদিন লন্ডনে পাকিস্তান হাইকমিশনের সামনে স্বাধীন বাংলার দাবিতে বিক্ষোভ করেন।
সরকারি এক প্রেস নোটে সেদিন দাবি করা হয়, আন্দোলনে ১৭২ জন নিহত হয়েছেন; আহত ৩৫৮ জন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ আরেকটি বিবৃতিতে সামরিক কর্তৃপক্ষের ওই প্রেস নোটের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, সেখানে হতাহতের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমিয়ে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ক্ষেত্রেই গুলিবর্ষণ করা হয়েছে’ বলে কথিত বক্তব্য সত্যের অপলাপ। নিজেদের অধিকারের সপক্ষে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভরত নিরস্ত্র বেসামরিক অধিবাসীদের ওপরই নিশ্চিতভাবে গুলি চালানো হয়েছে। পুলিশ ও ইপিআর গুলিবর্ষণ করেছে বলে যে প্রচারণা করা হয়েছে, তা বাঙালির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে।’
পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে লে.
পল্টনের জনসভায় ভাষণ দিতে মওলানা ভাসানী ৯ মার্চ সকালে সন্তোষ থেকে ঢাকা এসে পৌঁছান। তিনি যখন মঞ্চে উপস্থিত হন, তখন জনসভা প্রকম্পিত হচ্ছিল– ‘বাংলায় একই কথা; স্বাধীনতা, স্বাধীনতা।’ সমাবেশে তিনি ব্রিটিশ বাহিনীর জালিয়ানওয়ালাবাগ গণহত্যার নজির টেনে বলেন, “একদিন ভারতের বুকে নির্বিচার গণহত্যা করিয়া জালিয়ানওয়ালাবাগের মর্মান্তিক ইতিহাস রচনা করিয়া অত্যাচার অবিচারের বন্যা বহাইয়া দিয়াও প্রবল পরাক্রমশালী ব্রিটিশ সরকার শেষ রক্ষায় সক্ষম হয় নাই। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকেও তাই বলি, অনেক হইয়াছে, আর নয়। তিক্ততা বাড়াইয়া আর লাভ নাই। ‘লা-কুম দ্বীনুকুম অলইয়াদ্বীন’-এর নিয়মে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা স্বীকার করিয়া লও।”
পাকিস্তানের সামরিক শাসকের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ভাসানী বলেন, ‘ইয়াহিয়া খান, তোমার যদি পশ্চিম পাকিস্তানের পাঁচ কোটি মানুষের জন্য দরদ থাকে, তাহলে তুমি পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা স্বীকার করো। এতে করে দুই পাকিস্তানে ভালোবাসা থাকবে, বন্ধুত্ব থাকবে। কিন্তু এক পাকিস্তান আর থাকবে না, থাকবে না, থাকবে না!’
মওলানা ভাসানীর ওই সমাবেশ সম্পর্কে জাহানারা ইমাম লিখেছেন, “ছেলে-ছোকরারা স্বাধীনতা-স্বাধিকারের তর্কে একমতে আসতে পারছে না, ওদিকে আশি বছরের বৃদ্ধ ভাসানী গতকালকার পল্টন ময়দান মিটিংয়ে স্বাধীনতার দাবি ঘোষণা করে বসে আছেন। গতকাল বিকেল তিনটেয় পল্টন ময়দানে ‘স্বাধীন বাংলা আন্দোলন সমন্বয় কমিটি’র উদ্যোগে যে জনসভা হয়, তাতে সভাপতি ছিলেন মওলানা ভাসানী। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার যদি ২৫শে মার্চের মধ্যে আপসে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা না দেয়, তা হলে ’৫২ সালের মতো মুজিবের সঙ্গে একযোগে বাংলার মুক্তিসংগ্রাম শুরু করব।’
তথ্যসূত্র: ১৯৭১ সালের ৯ ও ১০ মার্চের দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদ, দৈনিক পাকিস্তান, আজাদ, রয়টার্স, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আর্কাইভ এবং স্বাধীনতাযুদ্ধ, দলিলপত্র, দ্বিতীয় খণ্ড
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: মওল ন ভ স ন মওল ন
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি
জুলাই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আওয়ামী লীগের দলগতভাবে বিচার, দলটির নিবন্ধন বাতিল ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মশাল মিছিল করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সমাবেশ থেকে জাতীয় নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন এনসিপির নেতারা।
সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর খিলগাঁও, সবুজবাগ, মুগদা ও শাহজাহানপুরে এলাকায় এ মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মশাল মিছিলটি খিলগাঁও জোড়পুকুর পাড় হতে শুরু হয়ে এলাকার বিভিন্ন সড়কে প্রদক্ষিণ করে শাজাহানপুর গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।
এ সময় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করুণ। দলগতভাবে আওয়ামী লীগের বিচার করুন। দলটির নিবন্ধন বাতিল করুণ। এ গণহত্যাকারী দলকে আমরা আর সহ্য করব না।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে দিল্লির কুসুম কুসুম প্রেম আর চলবে না। দিল্লির দাসত্ব আর মেনে নেওয়া হবে না।’
‘আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে আসবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত তাদের আগে নিতে দিন’— সম্প্রতি একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টার এমন মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করে এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন শিশির বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ করার কোনো অধিকার নেই। তারা পতিত গণহত্যাকারী দল, পলাতক দল। আপনি আপনার বক্তব্য প্রত্যাহার করুন।’
এনসিপির এই নেতা আরও বলেন, ‘প্রথমে নির্বাহী আদেশ, তারপর আদালতের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করুন। সর্বশেষ রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগকে সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ করুন। এই তিনভাবে না পারলে গণভোটের আয়োজন করুন। দেশের জনগণ গণভোটের মাধ্যমে রায় দেবে। এরপরও আওয়ামী লীগকে ছাড় দেওয়া হবে না।’