রমজানের পরিবেশে, যখন একদিকে বাজারে কেনাকাটা, পারিবারিক মিলনমেলা, বিশেষ দাওয়াত এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান প্রস্তুতির তাগিদ থাকে, তখন অনেকেই নেতিবাচক অনুভূতির দিকে ধাবিত হন। রমজান ঘিরে চারদিকে আধ্যাত্মিকতার আবেশ ছড়িয়ে পড়লেও তারা ক্রমশ বিষণ্নতায় যুবে যান।
তবে এই হতাশা বা বিষণ্নতার অনুভূতি নতুন নয়; অনেকেই এ ধরনের অনুভূতির কথা প্রকাশ করতে চান না, কারণ তারা ভয় পায় সমাজে ভুল ধারণা জন্মাবে বা বিব্রত হতে হবে। আসলে, এর কারণগুলো গভীর এবং সচেতনতার মাধ্যমে এ সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়।
ছুটির দিন বা উৎসবের সময় সাধারণত সবাই খুশি হয়, আনন্দে মেতে ওঠে। কিন্তু অনেকের জন্য তা হয়ে ওঠে বেদনার। যদিও বিষণ্নতা যে-কোনো সময় হতে পারে, তবে রমজানে মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও হতাশার মাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে এবং একাকিত্বের অনুভূতিকে আরও তীব্র করে তুলতে পারে। এই সমস্যার কয়েকটি কারণ হলো:
আরও পড়ুনরোজার কাজা কী০১ মার্চ ২০২৫সামাজিক একাকিত্বের তীব্রতা
‘সামাজিক একাকিত্ব’ হলো বিষণ্নতার অন্যতম প্রধান কারণ, বিশেষত ঈদ ও উৎসবের সময় এমন অনুভূতি হতে পারে। অনেকের বন্ধু বা পরিবারের পরিসর থাকে ছোট, অথবা বিভিন্ন কারণে তারা সামাজিক সম্পর্কের সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকেন—যেমন ভ্রমণ, অসুস্থতা অথবা কাজ ও পড়াশোনার চাপের তারা অন্যদের থেকে দূরে সরে পড়েন, যা তাদের একাকিত্ব ও বিষণ্নতা অনুভূতি তীব্র করে তোলে।
এ ছাড়া, অন্যদের আনন্দময় সময় কাটাতে দেখা, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া বা গণমাধ্যমে প্রচারিত ‘সুখী মুহূর্তগুলো’ তাদের আরও একা ও বিষণ্ন অনুভব করায়। তারা আরও বেশি যোগাযোগে নিরুৎসাহী হয়ে পড়েন।
তবে, মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, একাকিত্বের অনুভূতি মোকাবিলা করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো সচেতনভাবে এবং পরিকল্পিতভাবে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা। বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে সহায়তা চাওয়া এবং তাদের সঙ্গে কিছু সময় কাটানো। সরাসরি একসঙ্গে না থেকেও এভাবে এই অনুভূতিগুলোর মোকাবিলা করা যেতে পারে।
আরও পড়ুনরোজার নিয়ত: বাংলা উচ্চারণ ও কখন করবেন২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫অতীতে ভেসে যাওয়া
অতীতের সময়গুলোও অনেক সময় এক ধরনের হীনমন্যতা বা দুঃখবোধের জন্ম দেয়। প্রিয় মানুষদের এবং ভালো সময়গুলো মনে করে অনুভব হতে পারে যে, সেই পুরোনো দিনগুলি চিরতরে চলে গেছে। অতীত ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। আমরা যত সুখী হতে চাই না কেন, আনন্দের সেই ক্ষণগুলো আর ফিরে আসবে না।
তাই সবচেয়ে ভালো হলো, বর্তমান মুহূর্তে মনোনিবেশ করা এবং তাতে কৃতজ্ঞ থাকা। আপনি যদি জীবনকে পরিপূর্ণ অনুভব করতে চান, তবে মাইন্ডফুলনেস বা সচেতনতা অনুশীলন করতে পারেন, যা আপনাকে প্রতিটি পর্যায়ের মূল্য বুঝতে সহায়তা করবে এবং জীবনের প্রতিটি সুযোগকে মূল্যায়ন করতে শেখাবে।
উচ্চাশা ও হতাশা
উৎসব ও আনন্দের মুহূর্ত প্রত্যাশা অনুযায়ী না হলেও হতাশ বা বিষণ্ন লাগতে পারে। অধিক প্রত্যাশা কখনো কখনো অযৌক্তিক চিত্র তৈরি করে, যা বাস্তবে পূরণ হওয়া প্রায় অসম্ভব। তখন আপনার মন শুধু খুঁজে বেড়াবে যা আপনি হারিয়েছেন বা যা ছিল না সেই সব, অথচ যা আপনার কাছে আছে, তা মোটেও কম কিছু নয়।
অনেক মুসলিমকে দেখা যায়, রমজান মাসে নিজেকে চূড়ান্ত ধার্মিকরূপে উপস্থাপন করার প্রত্যাশা রাখেন। কিন্তু নিত্য দিনের দায়িত্ব বা অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি তাদের তেমন হতে দেয় না। এ-কারণে নিজেকে বারংবার দোষারোপ করেন।
এমন পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে ‘ইনভার্স টু-ডু লিস্ট’ তৈরি করা যেতে পারে। আপনার উচ্চাশার সঙ্গে সক্ষমতা ও সুযোগের মিল রেখে তালিকাটি তৈরি করলে মানসিকভাবে ভারসাম্যপূর্ণ থাকা সহজ হবে।
আরও পড়ুনদাউদ (আ.)-এর মতো রোজা রাখা১৯ এপ্রিল ২০২৪
আর্থিক চাপ ও অতিরিক্ত কেনাকাটা
রমজান মাসে বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়, যা পরিবারের ওপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি করে। ব্যয় বেড়ে যাওয়ার ফলে মধ্যবিত্তদের মাঝে প্রবল মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়, অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে না পারায় তারা হতাশ হয়ে পড়েন।
এ কারণে শুরুতেই মাসব্যাপী বাজেট নির্ধারণ করা এবং সংরক্ষণ করা যায় এমন পণ্য বড় অফার ও ছাড়ের সময়গুলিতে কিনে রাখা যেতে পারে। এছাড়া, অনেকে রমজানের আগেই বাজার সেরে ফেলেন বা ইফতারের পরে বাজার করতে যান, যাতে ক্ষুধার সময় অতিরিক্ত কেনাকাটা থেকে বিরত থাকতে পারেন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ঠিক থাকে।
ক্লান্তি ও অবসাদ
রমজান মাসে রোজার সঙ্গ সম্পর্কিত একটি সাধারণ অনুভূতি হলো ক্লান্তি ও অবসাদ, যা অনেকের মধ্যে বিষণ্নতার সৃষ্টি করতে পারে। ইফতার বা সাহরিতে অতিরিক্ত তেল এবং কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার শরীর নিঃশেষিত করে।
এছাড়া, সঠিক সময় ব্যবস্থাপনা না থাকা এবং ঘুমের অভাবও ক্লান্তি ও অবসাদের অন্যতম কারণ। রমজানে দৈনন্দিন অফিস কাজ এবং দীর্ঘ আমল-ইবাদত সম্পন্ন করতে হয় যেহেতু, তাই শরীর ও মনকে যথেষ্ট বিশ্রাম না দিলে রোজাদাররা শারীরিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়েন।
এই বিষয়ে, মিসরের মানসুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিদ, ডক্টর আইমান শাহাতার পরামর্শ হলো, রমজানে শক্তি পুনরুদ্ধার এবং ক্লান্তি কাটিয়ে উঠতে সুষম খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং ভালোভাবে বিশ্রাম নিতে হবে, তাহলে শারীরিকভাবে সুস্থ ও মানসিকভাবে প্রশান্ত থাকা সম্ভব হবে।
সূত্র: আলজাজিরা ডট নেট
আরও পড়ুনরোজা কি ভেঙে গেল?২৭ মার্চ ২০২৩উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এক ক ত ব র অন ভ ত রমজ ন ন করত আনন দ র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
সিরাজ–কৃষ্ণাতে ম্যাচে ফিরল ভারত
অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফিতে মোহাম্মদ সিরাজের মতো আর কোনো পেসার নেই, এভাবে বলাই যায়। কারণ, সিরাজ ও ক্রিস ওকসই এই সিরিজের সব কটি ম্যাচ খেলেছেন। সেই ওকসও ওভাল টেস্টের প্রথম দিনে চোট পেয়ে টেস্ট থেকে ছিটকে গেছেন, টিকে আছেন সিরাজ।
টিকে থাকা সিরাজ কী করেছেন? গতকাল ওভাল টেস্টের দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনে ৮ ওভারের এক স্পেলে ফিরিয়েছেন ওলি পোপ, জো রুট, জ্যাকব বেথেলকে। এরপর আরও এক উইকেট। সিরাজকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন প্রসিধ কৃষ্ণা। দ্বিতীয় সেশনের শেষ ওভারে দুই উইকেটসহ তিনিও নিয়েছেন ৪ উইকেট। ভারতের ২২৪ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ড অলআউট হয়েছে ২৪৭ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ভারত কাল দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে ২ উইকেটে ৭৫ রান নিয়ে। দুই ‘জীবন’ পাওয়া যশস্বী জয়সোয়াল ৫১ ও আকাশ দীপ ৪ রান নিয়ে উইকেটে আছেন।
অথচ কাল প্রথম সেশন শেষে ম্যাচের চিত্র ছিল আলাদা। ইংল্যান্ড প্রথম ১৬ ওভারেই তোলে ১ উইকেটে ১০৯ রান। দুই ওপেনার জ্যাক ক্রলি ও বেন ডাকেট ৭৭ বলে গড়েন ৯২ রানের জুটি। এমন বাজবলীয় শুরুর পর চিত্র পুরোপুরি বদলে যায় দ্বিতীয় সেশনে। শুরুটা করেন কৃষ্ণা। তাঁর শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দেন ক্রলি। পরের গল্পটা সিরাজের। প্রথম স্পেলে ৪ ওভারে ৩১ রান দেওয়া সিরাজকে অধিনায়ক গিল যখন বোলিংয়ে আনেন, তখন ইংল্যান্ডের রান ২৪ ওভারে ২ উইকেটে ১৪২। তিনি একে একে ফেরান দুই সেট ব্যাটসম্যান পোপ (২২), রুটকে (২৯) ও বেথেলকে (৬)। এরপর কৃষ্ণার দুই উইকেটে দ্বিতীয় সেশনটা পুরোপুরি ভারতের হয়ে যায়। ইংল্যান্ড দ্বিতীয় সেশনে ১০৬ রান তুলতে হারায় ৬ উইকেট। তৃতীয় সেশনে আর ৩২ রান যোগ করতে পারে তারা।
আরও পড়ুনকাঁধের চোটে ভারতের বিপক্ষে আর খেলতে পারবেন না ওকস১১ ঘণ্টা আগেলোকেশ রাহুলকে আউট করার পর অ্যাটকিনসনের আনন্দ