হামজা বরণে প্রস্তুত বাফুফে, থাকছে বিশেষ নিরাপত্তা
Published: 15th, March 2025 GMT
জামাল ভূঁইয়া, তারিক কাজীর মতো প্রবাসী ফুটবলাররা লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন। তাদের সঙ্গী হওয়ার অপেক্ষায় হামজা দেওয়ান চৌধুরী। ২৫ মার্চ শিলংয়ে ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের ম্যাচ দিয়েই বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক হতে যাচ্ছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা এ ডিফেন্ডারের। বর্তমানে শেফিল্ড ইউনাইটেডে খেলা এ ফুটবলারকে বরণের সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন।
সময় কম থাকায় হামজার জন্য কোনো সংবর্ধনার আয়োজন করছে না বাফুফে। তবে হামজার সিলেট নামা থেকে শুরু করে ঢাকায় আসা, তার পর ভারতে যাওয়া পর্যন্ত তাঁর জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। হামজার চলাচলের জন্য বাফুফের একটি বিশেষ গাড়ি এবং সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য একজন অফিসিয়ালকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে গতকাল সমকালকে নিশ্চিত করেছেন বাফুফের অন্যতম সহসভাপতি ফাহাদ করিম, ‘তিনি (হামজা) ১৭ তারিখে সিলেট বিমানবন্দরে নামবেন। সেই সময় তাঁকে বরণ করে নেবেন বাফুফের তিন-চারজন নির্বাহী সদস্য। এর পর তিনি চলে যাবেন হবিগঞ্জ। সেখানে যাওয়ার ট্রান্সপোর্ট বাফুফে ব্যবস্থা করেছে। তাঁর জন্য বিশেষ একটি গাড়ি ও নিরাপত্তার জন্য একজন অফিস বয় থাকবে সারাক্ষণ। প্রশাসনকেও জানানো হয়েছে।’
বাংলাদেশের ফুটবলে অতীতে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা কাউকে দেখা যায়নি। আর বর্তমানে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এতবড় তারকাও নেই। বর্তমানে হামজাকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে সব জায়গায় উন্মাদনা বইছে। বাফুফে চাইছে সেই উন্মাদনা কাজে লাগাতে। প্রথমে হামজাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল।
সময় স্বল্পতার কারণে তা সম্ভব নয় বলে জানান ফাহাদ, ‘সংবর্ধনা দেওয়ার সুযোগ নেই। সরাসরি এসে ক্যাম্পে যোগ দেবেন। যদি ১৭ তারিখ সরাসরি কিংবা ১৮ তারিখেও ঢাকায় আসতেন, তাহলে সংবর্ধনা বা অন্য কিছু দেওয়া যেত।’
তবে ২০ মার্চ ভারত যাওয়ার আগে হামজাকে মিডিয়ার সামনে আনার পরিকল্পনা ফেডারেশনের। হবিগঞ্জ থেকে ১৮ তারিখ রাতে কিংবা ১৯ তারিখ সকালে ঢাকায় ফেরার সম্ভাবনা হামজার। এর পর ঢাকার একটি পাঁচতারকা হোটেলে দলীয় ফটোশুট হবে। দলের সঙ্গে ক্যাম্পে যোগ দেওয়া হামজা ঢাকায় অনুশীলন করবেন কিনা, তা নির্ভর করছে কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার ওপর।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ