রপ্তানিতে বছরে ক্ষতি হতে পারে ৮০০ কোটি ডলার
Published: 15th, March 2025 GMT
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত নয়। উত্তরণ পরবর্তী সময়ে শুল্ক সুবিধা না থাকায় বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে বছরে ৮ বিলিয়ন ক্ষতি হতে পারে। এ ছাড়া জলবায়ু অর্থায়নের ক্ষেত্রেও উন্নয়ন সহযোগিতা কমবে। শনিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এফডিসির একটি মিলনায়তনে ‘এলডিসি উত্তরণে চ্যালেঞ্জ’ নিয়ে আয়োজিত ‘ছায়া সংসদ’ নামে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের এক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে গবেষণা সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড.
ফাহমিদা খাতুন বলেন, গত সরকারের সময় যে অর্থনৈতিক তথ্য দেওয়া হয়েছিল, তা ছিল গোঁজামিলনির্ভর ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অর্থনৈতিক ডেটা কীভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায়, বাংলাদেশ ছিল তার মধ্যে একটি অগ্রগণ্য দেশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-কে নির্দেশ দেওয়ার মাধ্যমে তারা মনমতো ডেটা ব্যবহার করত।
তিনি বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পরে বাংলাদেশকে কমার্শিয়াল রেটে ঋণ নিতে হবে, যা পরিশোধ করা ও ঋণের শর্ত পূরণ করা কঠিন। চীনের ঋণের ব্যাপারে সব সময় একটা সংশয় থাকে। অন্যান্য দেশের ঋণের ক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্স স্পষ্ট থাকলেও চীনের ক্ষেত্রে তা থাকে না। কোনোভাবেই ঋণের ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। গত ১৫ বছরে ঋণের টাকা ব্যাপক অপচয়, দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে। ঋণ পরিশোধে বাস্তবভিত্তিক কোনো পরিকল্পনা না থাকায় এই ঋণ বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈদেশিক ঋণ গ্রহণে সতর্কতা ও ঋণ ব্যবস্থাপনায় সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেও প্রশ্ন হচ্ছে, আওয়ামী সরকারের আমলে ভুয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হতে যাচ্ছি কিনা। বিগত সরকারের আমলে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হতো। ভুল, মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত তথ্য দিয়ে উন্নয়নের মিথ্যা গল্প শোনানো হতো। দেশের রিজার্ভ, জিডিপি, রপ্তানি আয়, দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য উৎপাদন, বাল্যবিয়ে এমনকি প্রকৃত জনসংখ্যা নিয়েও মিথ্যাচার করা হয়েছিল বিগত সময়ে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আলোচনায় ‘রেফারি’ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টাকে চায় জামায়াত
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ নিয়ে মতভেদ কাটাতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনার যে প্রস্তাব দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ, তাকে স্বাগত জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। তবে এই আলোচনার জন্য একজন ‘রেফারি’র অভাব হতে পারে বলে মনে করছেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।
আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেছেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটিকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু একটা বিষয় যোগ করতে চাই, কারণ হচ্ছে উপদেষ্টা পরিষদ যদি এটা মনে করে যে তাদের আর কোনো দায়িত্ব নেই, তারা কিছুই করবে না, দলগুলোই মিলে করবে, তাহলে এখানে একটা রেফারির অভাব হতে পারে। তো সে জন্য আমি বলছি, আমরাও চেষ্টা করব, উপদেষ্টাদের পক্ষ থেকে বিশেষ করে চিফ অ্যাডভাইজর (প্রধান উপদেষ্টা) এখানে একটা রেফারির ভূমিকা পালন করবেন আগের মতো, এটা আমি আশা করি।’
আজ সোমবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সংবাদ সম্মেলনের পরপরই সমমনা আটটি দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে আবদুল্লাহ তাহের এ কথা বলেন। রাজধানীর পল্টনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
এর আগে উপদেষ্টা পরিষদের একটি ‘জরুরি সভা’য় জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্যে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এরপর সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, সরকার আর আলোচনার উদ্যোগ নেবে না।
রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, দলগুলো যদি এক সপ্তাহের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, তাহলে সরকার তার মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে যে সুপারিশ দিয়ে নিজেদের দায়িত্ব পালন শেষ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন, তাতে গণভোটের সময়সহ কয়েকটি বিষয়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী বিপরীত অবস্থানে রয়েছে। তাদের সঙ্গে কিছু বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টির।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে আবদুল্লাহ তাহের বলেন, ‘আমি তো গতকালকেই একটা আলোচনার আহ্বান করেছিলাম দলগুলোর ভেতরে। আজকে উপদেষ্টা পরিষদ সে রকম একটি আহ্বানই সব দলের কাছে জানিয়েছে। আমরা এখন দেখতে চাই মেইন স্টেকহোল্ডার, মৌলিকভাবে যেসব দল আছে, তারা এই আহ্বানে কীভাবে সাড়া দেয়। তারাও যদি একইভাবে আমাদের মতো সাড়া দেয়, তাহলে আমরা সবাই বসতে কোনো আপত্তি নেই। বসলেই আমি আশা করি একটা রাস্তা বেরিয়ে আসবে ইনশা আল্লাহ।’
বিএনপিকে নিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যে ঐকমত্যে পৌঁছেছিল, একটি দল হঠাৎ করে সেখান থেকে সরে এসেছে। সেই দলের ভেতরেও সংস্কার ও গণভোট বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য আছে। দলটির কোনো নেতা সংস্কার দরকার নেই, এমন কথা বলছেন। কেউ জুলাই সনদ চাইলেও ভিন্নমতের উল্লেখ চেয়েছেন। আবার কেউ সনদের আইনি ভিত্তি চাইলেও একসঙ্গে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট চাইছেন। তাদের দলীয় বক্তব্য স্পষ্ট করা দরকার। তারা যদি আলোচনার টেবিলে সমস্যার সমাধান করার উদ্যোগ নেয়, তাহলে জটিলতা কমে যাবে। সেটাকে জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো স্বাগত জানাবে।
দলীয় অবস্থান ব্যাখ্যা করে আবদুল্লাহ তাহের বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে গণভোট নির্বাচনের আগে বা পরে করে লাভ নেই। সনদটাই মূল বিষয়। সনদের জন্য গণভোট অপরিহার্য। এটি আলাদা হলেই জনমত যাচাই করা যাবে। একসঙ্গে করার ‘ষড়যন্ত্র বা কূটকৌশল’ করা হলে জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোটে কারও মনোযোগ থাকবে না।
আটটি দলের নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দিতে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছিল। তবে উপদেষ্টা পরিষদের সংবাদ সম্মেলনের পর তা নিয়েই দলগুলোর প্রতিক্রিয়া জানতে চান সাংবাদিকেরা।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক বলেন, ‘আমরা আন্তরিক। রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনার মাধ্যমে তারা একটা একমতের জায়গায় পৌঁছাবে, আমরা সেই স্পেস রাখতে চাই এবং সেই স্পেস রেখে আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে অগ্রসর হয়ে যাচ্ছি।’
বিএনপিসহ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমও (চরমোনাই পীর)।
আরও পড়ুনদলগুলো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে ব্যর্থ হলে সরকার নিজের মতো সিদ্ধান্ত নেবে৩ ঘণ্টা আগেএই সংবাদ সম্মেলনের আগে খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন আটটি দলের শীর্ষ নেতারা। দলগুলো হলো জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব ইউসুফ সাদিক হক্কানী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, জাগপার সহসভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান প্রমুখ।
আরও পড়ুন৫ দাবিতে ৬ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দেবে জামায়াতসহ ৮ দল১ ঘণ্টা আগে