বগুড়ার কাহালু উপজেলায় ৬ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ ও সমবয়সী আরেক শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে করা মামলার একমাত্র আসামি নুর ইসলামকে (৪০) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বগুড়া জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও কাহালু থানার পুলিশের যৌথ দল গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৯টায় উপজেলার পাইকর ইউনিয়নের শাহানাপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

নুর ইসলাম উপজেলার একটি আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা। তাঁর বিরুদ্ধে ১২ মার্চ আবাসনের একটি ব্যারাকে এক শিশুকে ধর্ষণ এবং অন্য শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে এক মা বাদী হয়ে গত শুক্রবার কাহালু থানায় ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন দমন আইনে নুর ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ঘটনার পর থেকে নুর ইসলাম পলাতক ছিলেন।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত বুধবার দুই শিশুকে কৌশলে শোবার ঘরে ডেকে নিয়ে এক শিশুকে ধর্ষণ এবং অপর শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন নুর ইসলাম। এ কথা কাউকে জানালে মেরে ফেলার ভয় দেখান। একটি শিশু অসুস্থ হয়ে পড়লে ঘটনাটি জানাজানি হয়। তখন পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করা হয়।
বগুড়া জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, গ্রেপ্তার আসামিকে আজ সোমবার আদালতে হাজির করা হবে।
শ্লীলতাহানি চেষ্টার অভিযোগে আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার

শ্লীতাহানির চেষ্টার অভিযোগে আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার

এদিকে বগুড়ার ধুনট উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার পথে এক নারী শিক্ষককে শ্লীতাহানির চেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় নুরুল ইসলাম (৪৮) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বিকেলে নিজ বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। নুরুল ইসলামের বাড়ি উপজেলা সদরের বেলকুচি গ্রামে। তিনি ধুনট সদর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী নারী স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। বিদ্যালয়ে যাতায়াতের পথে তাঁকে দীর্ঘদিন ধরে উত্যক্ত করে আসছিলেন নুরুল ইসলাম। ৫ মার্চ বিকেলে বিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে তাঁকে আবারও উত্যক্ত করেন ও কুপ্রস্তাব দেন নুরুল ইসলাম। এ সময় নুরুল ইসলামের অপকর্ম মুঠোফোনে ধারণ করেন ওই শিক্ষক। এতে নুরুল ইসলাম ক্ষুব্ধ হন। পরে বিদ্যালয়–সংলগ্ন দোকান থেকে ওষুধ কিনে ফেরার পথে ওই নারী শিক্ষকের শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালান নুরুল ইসলাম। এ সময় তাঁর চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছুটে এলে নুরুল ইসলাম কৌশলে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় ১০ মার্চ ওই শিক্ষক বাদী হয়ে নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ধুনট থানায় মামলা করেন।

ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল আলম বলেন, স্কুলশিক্ষককে শ্লীলতাহানির চেষ্টার মামলায় একমাত্র আসামি নুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে বগুড়া জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ন র ল ইসল ম ন র ইসল ম ইসল ম র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে