ডিয়েগো ম্যারাডোনার মৃত্যুর পর সেখানে প্রথম যে কজন উপস্থিত হন, পুলিশ কর্মকর্তা লুকাস ফারিয়াস তাঁদের একজন। গতকাল সান ইসিদরো আদালতে লুকাস সাক্ষ্য দেন, অস্ত্রোপচারের পর যে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন ম্যারাডোনা, সেখানে কোনো ‘চিকিৎসার সরঞ্জাম’ তিনি দেখেননি।

আরও পড়ুনরোজা রেখেই স্পেনের হয়ে খেলবেন ইয়ামাল১ ঘণ্টা আগে

কোকেন ও মদ্যপানে আসক্ত ম্যারাডোনা মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের সপ্তাহ দুয়েক পর ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। বুয়েনস এইরেসের এক অভিজাত এলাকায় ভাড়া করা বাড়িতে জীবনের শেষ দিনগুলো কেটেছে ফুটবল কিংবদন্তির।

ম্যারাডোনার চিকিৎসায় নিয়োজিত ছিলেন যে আটজন, তাঁদের মধ্যে সাতজনের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে বিচার চলছে বুয়েনস এইরেসের সান ইসিদরো আদালতে। কৌঁসুলিরা আদালতে ম্যারাডোনার শেষ দিনগুলোকে ‘হরর থিয়েটার’ বলেছেন।

লুকাস বলেছেন, ম্যারাডোনা যে কক্ষে মৃত্যু অবস্থায় পাওয়া গেছে ‘সে কক্ষে কোনো চিকিৎসার সরঞ্জাম দেখেননি’ তিনি, ‘আমি কোনো সিরাম দেখিনি, যেটা ঘরোয়া হাসপাতালের অংশ হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’ ইনজেকশনের মাধ্যমে শিরায় প্রদানের ওষুধের কথা বলেছেন লুকাস।

বুয়েনস এইরেসের উত্তরের উপকণ্ঠের শহর সান ইসিদরোয় গত সপ্তাহে এই বিচার শুরু হয়। গতকাল যে চারজন পুলিশ কর্মকর্তা আদালতে প্রমাণাদি দাখিল করেছেন, লুকাস তাঁদের একজন।

আরও পড়ুন২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত ফিট থাকতে বিশেষ যে খাবার খাচ্ছেন রোনালদো১২ ঘণ্টা আগে

আদালতকে তিনি বলেছেন, ‘ডিয়েগো ম্যারাডোনার যে বিষয়টি সবার আগে আমার নজর কেড়েছে সেটা হলো, তার মুখের অবস্থান এবং তলপেট এতটাই ফুলেছিল যে মনে হবে বিস্ফোরণ হবে। ওভাবে ম্যারাডোনাকে দেখে আমি চমকে গিয়েছিলাম। কখনো ভাবিনি আমি এই দৃশ্য দেখতে হবে।’

সর্বকালের অন্যতম সেরা এ ফুটবল হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যা ও ফুসফুসে তরল জমা হওয়ার কারণে মারা গেছেন।

ম্যারাডোনার চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন একজন নিউরোসার্জন, একজন মনোরোগবিদ, একজন মনোবিজ্ঞানী, একজন মেডিকেল কো-অর্ডিনেটর, একজন নার্স কো-অর্ডিনেটর, একজন চিকিৎসক এবং রাতের পালার নার্স। দিনের বেলায় ম্যারাডোনাকে দেখভাল করতেন যে নার্স, তাঁর বিচার করা হবে আলাদাভাবে। কৌঁসুলিদের অভিযোগ ‘দীর্ঘ এবং যন্ত্রণাকাতর সময়ে’ ম্যারাডোনাকে ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।

দোষী সাব্যস্ত হলে অভিযুক্তদের ৮ থেকে ২৫ বছরের জেল হতে পারে। এই মামলায় প্রায় ১২০ জনের সাক্ষ্যদানের কথা রয়েছে, যা চলতে পারে আগামী জুলাই পর্যন্ত।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বল ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে