যেভাবে ৯ মাস মহাকাশে কাটিয়েছেন তারা
Published: 19th, March 2025 GMT
প্রায় নয় মাস মহাকাশে আটকে থাকার পর অবশেষে পৃথিবীতে ফিরেছেন নভোচারী বুচ উইলমোর ও সুনিতা উইলিয়ামস। মঙ্গলবার রাত ৩টা ৫৭ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা উপকূল থেকে ৫০ মাইল দূরে সমুদ্রে অবতরণ করেছে এই দুই নভোচারীকে বহনকারী ক্যাপসুল।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) অতিরিক্ত সময় কাটাতে হলেও, তারা সময় নষ্ট করেননি। ৪০০ কিলোমিটার ওপরে ভেসে থেকে তারা মহাকাশ গবেষণা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং মহাকাশে হাঁটাসহ (স্পেসওয়াক), ভোট দেওয়া, ক্রিসমাস উদযাপন, শূন্য অভিকর্ষে শরীরচর্চা করেছেন। খবর- বিবিসির
মহাকাশ স্টেশনে ব্যস্ত সময়
৫৯ বছর বয়সী সুনিতা এবং ৬২ বছর বয়সী বুচ দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা ও স্টেশনের রক্ষণাবেক্ষণ কাজে ব্যস্ত ছিলেন।
তাদের কাজের মধ্যে ছিল—স্টেশনের অভিমুখ নিয়ন্ত্রণকারী যন্ত্রপাতি মেরামত, নিক্সার এক্স-রে টেলিস্কোপের জন্য আলোক ফিল্টার সংযোজন এবং একটি আন্তর্জাতিক ডকিং অ্যাডাপ্টারে প্রতিফলক ডিভাইস প্রতিস্থাপন।
পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে ভাবনার জগতে
নভোচারীদের প্রতিদিন ১৬ বার সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ হয়, কারণ আইএসএস প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ১৬ বার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে।
এই অনন্য দৃশ্য তাদের পৃথিবী সম্পর্কে নতুনভাবে ভাবতে শিখিয়েছে। সুনিতা বলেন, এটি আমাদের ভিন্নভাবে চিন্তা করতে শেখায়। পৃথিবী একটাই, আমাদের এটি রক্ষা করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, পৃথিবী থেকে অনেক মানুষ আমাদের বার্তা পাঠিয়েছে, যা আমাদের সবার সঙ্গে সংযুক্ত থাকার অনুভূতি দেয়।
মহাকাশ থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটদান
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বুচ, সুনিতা এবং আরও দুই আমেরিকান নভোচারী ডন পেটিট ও নিক হেগ মহাকাশ থেকে ভোট দিয়েছেন।
সুনিতা বলেন, ভোট দেওয়া একজন নাগরিক হিসেবে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
নাসা তাদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা সহজ করে দেয়। হিউস্টনের মিশন কন্ট্রোল সেন্টার তাদের কাছে এনক্রিপ্টেড ইমেলের মাধ্যমে ব্যালট পেপার পাঠায়। নভোচারীরা তা পূরণ করে উপগ্রহের মাধ্যমে নিউ মেক্সিকোর একটি গ্রাউন্ড টার্মিনালে পাঠান। সেখান থেকে এটি মিশন কন্ট্রোলে পৌঁছে এবং পরে সংশ্লিষ্ট কাউন্টি ক্লার্কের কাছে পাঠানো হয়।
শূন্য অভিকর্ষে শরীরচর্চা
বুচ প্রতিদিন ভোর ৪ টা ৩০-এ এবং সুনি সকাল ৬ টা ৩০-এ দিন শুরু করতেন। মহাকাশে থাকার কারণে শরীরের হাড় ও পেশির ক্ষয় রোধে তারা প্রতিদিন দুই ঘণ্টারও বেশি সময় শরীরচর্চা করতেন।
মহাকাশ স্টেশনে তিন ধরনের শরীরচর্চার যন্ত্র রয়েছে। অ্যাডভান্সড রেসিস্টিভ এক্সারসাইজ ডিভাইস স্কোয়াট, ডেডলিফট ও রো-এর মতো ব্যায়ামের জন্য ব্যবহৃত হয়। একটি ট্রেডমিল রাখা ছিল। এটি নভোচারীদের বেল্টের সাহায্যে আটকে রাখা হয় যেন তারা ভেসে না যান। আর ছিল সাইকেল আরগোমিটার যা ধৈর্য বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
বুচ এ সম্পর্কে বলেন, শূন্য অভিকর্ষে শরীরচর্চার মজাই আলাদা, কারণ এতে শরীরের জয়েন্টে ব্যথা হয় না।
ক্রিসমাস উদযাপন এবং বিদায়বার্তা
আইএসএস-এ থাকা অবস্থায় নভোচারীরা উল্লাসের মধ্যে ক্রিসমাস উদযাপন করেন। তারা সান্তা টুপি ও রেনডিয়ার হেডব্যান্ড পরে পৃথিবীর মানুষের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান। ক্যান্ডি ক্যান বাতাসে ভাসতে ভাসতে তারা একে অপরের কাছে মাইক্রোফোন ছুঁড়ে দিচ্ছিলেন। সুনিতার লম্বা চুল শূন্য অভিকর্ষে ভেসে থাকায় তাকে দেখতে ভিন্ন লাগছিল।
১৬ মার্চ স্পেসএক্সের একটি ক্যাপসুল নতুন ক্রু সদস্যদের নিয়ে আইএসএস-এ পৌঁছালে বুচ ও সুনিতার পৃথিবীতে ফেরার পথ উন্মুক্ত হয়। বুচ একটি আনুষ্ঠানিক ঘণ্টা বাজিয়ে সুনিতার কাছ থেকে কমান্ড হস্তান্তর করেন রুশ নভোচারী আলেক্সেই ওভচিনিনের কাছে।
দীর্ঘ নয় মাস পর, তারা পৃথিবীতে ফিরছেন। তাদের এই মহাকাশযাত্রা শুধুমাত্র গবেষণার জন্যই নয়, বরং মানবজাতির ভবিষ্যৎ মহাকাশ অভিযানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা হিসেবে বিবেচিত হবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সাবেক সচিব মিহির কান্তিসহ ১০ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
সাবেক সচিব ও উদ্দীপনের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিহির কান্তি মজুমদারসহ ১০ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্লকের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মো. তানজির আহমেদ এ তথ্য জানান।
নিষেধাজ্ঞা পাওয়া অন্যরা হলেন- উদ্দীপনের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জাকিয়া কে হাসান, সাবেক কোষাধ্যক্ষ ড. মো. গোলাম আহাদ, সাবেক সদস্য মো. মাহবুবুর রহমান, সাবেক সদস্য, মো. নজরুল ইসলাম খান, নাহিদ সুলতান, ভবতোষ নাথ, ডা. আবু জামিন ফয়সাল, শওকত হোসেন ও সাবেক নির্বাহী পরিচালক বিদ্যুৎ কুমার বসু।
আবেদনে বলা হয়, দায়িত্ব পালনকালে পরস্পর যোগসাজশে ব্যক্তিগত লাভ ও আত্মসাতের উদ্দেশ্যে মাইক্রোক্রেডিট আইন (২০০৬)-এর ২৪/৩ ধারা ও বিধি (২০১০) এর বিধি ১৯(১) লঙ্ঘন করে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ক্ষুদ্রঋণ তহবিল হতে অনুমোদনহীন নামমাত্র ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট গোল্ডব্রিকস ও ব্যাটারি প্রকল্পে যথাক্রমে প্রায় ৮ কোটি ৯৭ লাখ ৮১ হাজার ৩৭৭ টাকা ও ৪ কোটি ৪৮ লাখ ৪৬৬ টাকা বিনিয়োগ দেখিয়ে তহবিল হতে স্থানান্তর করেছেন। উক্ত জালিয়াতি সম্পর্কিত একটি মামলা দুর্নীতি দমন কমিশনে তদন্তাধীন।